উদ্ভট
দলটার নাম “ সবাই রাজা”। বেশ কিছু কবি-সাহিত্যিক, চিত্রকর, মাতাল আর অবশ্যই সর্বদা কাঠি করা কিছু ফিচেল সারাদিন হোয়াটস আপে গজর গজর করে। মাঝে মাঝে উচ্চস্তরের খাদ্য পানীয় নিয়ে রসেবশে থাকে।আজ তাঁদের গেট্টু। চিত্রকর অমিতা দত্ত, সিরিয়ালের স্ক্রিপ্ট লেখক শ্রীশ , মাতাল পরাগ সিংএর সাথে দাপুটে প্রাবন্ধিক নারায়ণী মিত্র, আর কবি সৌরভ সমাদ্দার আছেন এই দলে। সৌরভবাবু আবার রাজনৈতিক শক্তিপুঞ্জের আশেপাশে সর্বদা ঘোরাঘুরি করেন। সর্ব রকম ফুর্তি করে নেওয়ার পর এই দলে যে ফুর্তি টা সর্বোৎকৃষ্ট বলে মনে করা হয় সেটা হল- অন্তু, কবি অন্তু দাস।সে কোথায় কখন থাকে, কি করে কেউ ঠিক করে জানে না। কেবল কি এক অদ্ভুত কারণে অনেক বড় পত্রিকার সম্পাদকরা তাকে খুব পছন্দ করে। তার কবিতাও ছাপা হয়। শ্রীশ প্রামাণিক অন্তু কে দেখে বলে ওঠে,“ কি বে অন্তু কবি কি কবিতা প্রসব করলে?”অন্তু সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো,
“ আমি হিয়ার মাঝে তোমায় দেখেছি
দেখেনি তো কেউ
দেখেনি তো কেউ
কেবল ভোর বেলা দোর খুলে মেহের আলী ফিস ফিস করে
পাতায় পাতায় টুপটুপ করে আলো পরে …
আল্লা কে বন্দে আল্লা কে বন্দে ”। পরাগ সিং
অন্তু কে জড়িয়ে ধরে বলল, “আরে কেয়া লিখা হ্যাঁয় রে দিল জিত লিয়া।”নারায়নী মিত্র বলল, “এগুলো ছাপে কি করে অন্তু। এতো খুব খারাপ ধরণের লেখা।” অন্তু তার রোগা শরীর নিয়ে সাঁত করে ঘুরে তাঁর সামনে থ্যাপ করে বসে যায়। “ওমা নারায়ণী দি… আমার নাম দেখেই ছেপে দেয় তো।আমি কি করবো!” খুব লজ্জা লজ্জা করে বলে অন্তু। পরাগ সিং অন্তু কে আবার জড়িয়ে ধরে।
অমিতার বিরক্ত লাগছিল। ডান হাতের তর্জনীতে লক্স জড়িয়ে সেলফি তুলতে তুলতে সে বলে উঠল, “ হ্যাঁ রে অন্তু ভ্যালেন্টাইন ডে তে তোর বৌ এসেছিল?” অন্তুর বৌ অন্তুর সাথে থাকে না। মাঝে মাঝে দেখা করে যায়। “ আমি মালাই চিকেন রেঁধেছিলাম” খুব আবেগ প্রবণ হয়ে অন্তু বলে। সৌরভবাবু জিজ্ঞেস করলেন “তোর তখন নিজেকে কি মনে হচ্ছিল?” অন্তুর একটা বিশেষ সমস্যা আছে। ও নিজেকে নানান ভাবে দেখতে পায়। ওর যখন প্রথম মাইনে বাড়ল তখন মালিকের সামনে ওর নাকি একটা লেজ বার হয়েছিল। ও সেটা টুকটুক করে নাড়ছিল।সেটা নাকি সব্বাই দেখেছে। অমিতা জিজ্ঞেস করলো , “তোর বৌ এলে কি পুস্প বৃষ্টি হচ্ছিল নাকি রে অন্তু ?”অন্তু এক লাফে সবার মাঝ খানে বসে পরে , “ এবার সত্যি হল। বৌ যখন খাওয়ার পর আঙুল চাটছিল তখন আমি পরিস্কার দেখলাম আমার হাতে শাঁখা পলা, বাম হাতে নোয়া।” আমার বৌ অবাক হয়ে আমার হাত আর কপালের দিকে তাকাচ্ছিল। হাসির ফুলঝুরি ছড়িয়ে পড়ল। এরমধ্যে টিভি খুলতে হল। সরকার থেকে একটা দলকে জাপান পাঠানো হবে। সৌরভ সমাদ্দার , নারায়ণী দত্তের সেই দলে থাকবার প্রবল সম্ভাবনা আছে। টিভির সঞ্চালিকা নানান খবরের মধ্যে এই খবরটাও দিলেন। কারোর নাম নেই। কিন্তু সব্বাই কে অবাক করে জানালেন নবীন কবি অন্তুদাস এই দলের সাথে জাপান যাবে। সব চুপ। কিছুক্ষণ পর সৌরভবাবু খুব কদর্য একটা গালি দিয়ে উঠলেন। নারায়ণী দত্তের মুখ রাগে লাল। অন্তু দাঁত বার করে বলল , “ঐ দ্যাখো আবার হচ্ছে। বলছি না ওটা আমার হয়” অমিতা কাষ্ঠহাসি দিয়ে বলল, “নিজেকে গুরুদেব মনে হচ্ছে?” “না না আমার নিজেকে ট্রাক মনে হচ্ছে”,বলে নিজের পিঠের জামা উঠিয়ে দ্যায় অন্তু। কালো পিঠে সাদা দিয়ে লেখা ফুটে উঠেছে, – দেখবি আর জ্বলবি, লুচির মত ফুলবি।
নদীর এপার এবং ওপার
টুয়ার মা, মা আজ একটু আসবে গো? টুয়ার আবার জ্বর এসেছে।
টুয়ার দিদিমা, দিব্যি তো ছিল, আবার কেন জ্বর এলো? ওষুধ দিতে ভুলে যাসনি তো।
টুয়ার মা, আমাকে অফিস যেতে হবেই । প্রোডাক্ট ডেলিভারি আছে। প্লিজ এসো। সকালে বমি করল।আয়ার কাছে কিছুতেই থাকবে না। খুব ঘ্যান ঘ্যান করছে।আজ ফিরতেও রাত হবে।
টুয়ার দিদিমা, মাধ্যমিক খাতা এসেছে। আমি হেড এক্সামিনার । আমি না গেলে চলবে না। তোর সেই বন্ধু আছে না অলি একটু বল না। টুয়াবাবু ঠিক থেকে যাবে। ওষুধ দিয়ে যা।
টুয়ার মা,এ ভাবে রেখে যাওয়া যায়। তুমি আজকাল কেমন হয়ে যাচ্ছ। বমি করছে… কাঁদছে। আমি কি করে যাব।
টুয়ার দিদিমা, তুই আজ যাস না অফিস।আমি তো কিছুতেই যেতে পারবো না।
টুয়ার মা, তুমি আজকাল জঘন্য হয়ে যাচ্ছ মা। যাচ্ছেতাই। আমি কি করে ছুটি নেবো? তুমি কি একটুও ভাব্বে না আমার কথা? বাবা নেহাৎ ভালো মানুষ তাই তোমাকে সহ্য করে।ডিসগাস্টিং
যোগাযোগ বিছিন্ন হয়।টুয়ার দাদু জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে আছেন। টুয়ার দিদিমার চোখে মেঘ তাও হেসে বললেন, টুয়াবাবুর আবার জ্বর এসেছে। বমি করছে। আমাকে যেতে বলছে। আমি তো আজ যেতে পারবো না। পক্ষাঘাতগ্রস্থ টুয়ার দাদু বিপন্ন চোখে বললেন, তাই তো, তোমার ও তো কাজ। আমি তো আর কিছুই পারি না।আজ তোমার কি ফিরতে অনেক দেরী হবে?
টুয়ার মা অলি কে ফোন করে। তুই একটু আসতে পারবি?
অলি সব কিছু জেনে উত্তর দেয়, তুই অফিস যাবি এই অবস্থায়।আমি কিছুতেই পারতাম না। ঐ জন্যে চাকরি করি নি।
টুয়ার মা মনে মনে বলে, কে যে চাকরি দিত তোকে। অলি বলে, আজ আমাদের বাড়ি পেস্ট কন্ট্রোলের লোক আসবে রে। আমি তো যেতে পারবো না।তুই ওকে আমার বাড়ি পাঠিয়ে দে।
টুয়াকে কোলে নিয়ে ,টুয়ার মা অলির ফ্ল্যাটে বেল বাজায় আর মনে মনে বলে, কেন যে আমার মা হাউস ওয়াইফ নয়!