| 29 মার্চ 2024
Categories
গল্প সাহিত্য

মুলো বিষয়ক

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

আকালের দিনে একটা বড় মুলো নিয়ে তিনজন বালকের মধ্যে হাউকাউ লাগে, তুলকালাম অবস্থা তৈরি হয়ে যায় বাটোয়ারা নিয়ে, কে এই মুলোর প্রকৃত মালিক হবে সেই ব্যাপারটা যখন ঘোলাটে থেকে ক্রমশ ঘোলাটেতর হয়ে ওঠে তখন শোনা যায় একজন অন্যদুজনকে বলছে, আমি প্রথম মুলোটা দেখছি, মুলো আমার! অন্যজন বলছে, আমি দেইখে তোগের দেখাইছি, মুলো আমার! অন্যজন বলে, আমি কাইল রাইতে খোয়াবে দেখিছি এইখানে একটা মুলো আছে, মুলো আমার! ফলে ঘটনা রাতারাতি হাতাহাতির দিকে যেতে থাকে ক্ষুধার্ত তিন বালকের খ্যাঁকানিতে! ঠিক তখন ফেরেশতার মতন এক লোক এসে তার কোমর থেকে একটা ধারালো ছুরি বের করে মুলটাকে তিন টুকরো করে তিনজনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়! লোকটা যেতে না যেতেই তারা তিনজন আবার ঝগড়া শুরু করে, এবার তাদের ঝগড়ার বিষয় কে আগা পেলো, কে গোঁড়া আর কে মাঝখানেরটুকু! এবং যে আগা পেলো সে মাঝখানেরটুকু চায়, কিংবা যে গোঁড়া পেলো সে মাঝখানেরটুকু চায় অথবা মাঝখানেরটুকু পেলো যে সে আগা নিতে চায় অথচ গোঁড়া পেলো যে সে সেটা পেতে দেবে না কিংবা মাঝখানেরটুকু পেলো যে সে হয়তো গোঁড়া পেতে চায় কিন্তু আগা পেলো যে সে সেটা পেতে দেবে না! এই অবস্থার মধ্যে সেই লোকটার ফেলে যাওয়া চাকু তুলে নিয়ে একজন অন্য দুজনের দিকে তাক করে বলে, তোদের অংশের মুলো আমাকে দিয়ে দে নইলে রক্তারক্তি হবে! ফলে পুরো মুলোটা যখন সে হাতে পায় ঠিক তখন সেই লোকটা তার ফেলে যাওয়া ছুরি নিতে আসে, কিন্তু ছুরি হাতে বসে থাকা বালকটি কোন প্রশ্ন না শুনেই লোকটার পেটের মধ্যে ভচ করে ছুরিটা পুরে দিয়েই বলে, নে তোর ভাগেরটা! ফলে লোকটা কাৎরাতে কাৎরাতে মরতে থাকে যখন ঠিক তখন অন্য দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে একটা অনুভবের সন্ধিতে পৌঁছায় এবং এক মুহূর্তের মধ্যে তারা দুজন ঝাঁপিয়ে পড়ে ছুরি মারা ছেলেটার উপর এবং তারা দুজন মিলে গলা টিপে মেরে ফেলে খুনে ছেলেটাকে! এখন তারা দুজনে পড়ে মহা বিপাকে, তিন টুকরো মুলো দিয়ে তারা কি করবে? ফলে তারা দুজন মাঝখানের টুকু বাদ দিয়ে অন্য দুই টুকরো টচ করে বাটোয়ারা করে নেয়! কিন্তু আকালের দিনে খিদে বেশি পায় ব্যাপারটা টের পেয়ে তারা দুজন খুন হওয়া লোকটার পেট থেকে রক্তমাখা ছুরিটা বের করে, ফেলে দেয়া মুলোর মাঝখানের টুকরোটাকে সমান ভাগে ভাগ করে নিয়ে নেয়! ফলে প্রত্যেকে দেড় টুকরো মুলোর মালিক হয়! কিন্তু যার হাতে ছুরি ছিল মাঝখানের টুকরো কাটবার সময় তার হাতে রক্তমাখা ছুরিটা তখন জ্যান্ত হয়ে ওঠে! ফলে মুহূর্তের চমকে সে অন্য বালকের পেটের মধ্যে পুরে দেয় ছুরিটা এবং ছেলেটা সমস্ত মুলোর মালিক হয়ে যায়! ছুরিটাকে সে ফেলে দিতে গিয়ে অনুভব করে, আকালের দিনে একটা ছুরি থাকলে খাবার জোগাড় সহজ হবে, ফলে সে ছুরিটা মুলোর সঙ্গে নিয়ে নেয়!

এই পর্যন্ত গল্পটা পড়তে পড়তে পাঠকের যদি মনে হয়, মুলোর সিজনে গল্পটা লেখা কিংবা আকালের সময়ে কি মুলো জন্মায়? তাহলে আপনি মুলো সাইজের অন্য যেকোনো জিনিস কল্পনা করে নিতে পারেন (যা ক্ষুধা মেটায়)! কিংবা আপনার যদি মনে হয় লোকটা যে এলো তার কাছে ছুরি ছিল কেন? সেও কি তবে ঐ বালকটার মতো খাবারের খোঁজে বেরিয়ে ছিল? তবে সে ছুরি দেখিয়ে মুলোটা নিয়ে গেলো না কেন? নাকি মুলোতে তার আগ্রহ নেই? আমার কেবল মনে হচ্ছে পুরো ব্যাপারটাই একটা ষড়যন্ত্র এবং যা ইঙ্গিত দেয়, আকালের দিনে ন্যায় বলে একটা জিনিসই জ্যান্ত থাকে তা হল, খাবার জোগাড়! কিন্তু সমস্ত মুলোটার কি হয়েছিল? বালকটা কি শেষমেশ খেয়েছিল? নাকি রক্ত মেখে যাবার ওজুহাতে সে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলো? তবে কি মুলোটার জীবনটা বৃথা গেলো কারোর পেট ভরাতে না পারার ব্যর্থতায়? যেহেতু মুলোর বিনিময়ে একটা ধারালো ছুরি বালকটি পেয়েছিলো যা দিয়ে খাবার জোগাড় করার সম্ভাবনা অনেকগুণ বেশি বলেই সে আবিষ্কার করেছে!

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত