যে কোনও শব্দ আর শ্রবণের গল্পে দু’টি মূল দৃষ্টিকোণ অথবা পার্সপেক্টিভ থাকে, তার চেয়ে বেশিও থাকতে পারে। যেখানে শব্দের উৎস, সেখান থেকে এক ভাবে গল্প বলা যায়। আর যিনি শুনছেন, তাঁরও একটা গল্প থাকে। আমার এই গল্পে তিনটি প্রধান পার্সপেক্টিভ, যে হেতু আমি রেকর্ডেড সাউন্ডের গল্প বলছি। এক, শব্দের উৎস যিনি, অর্থাৎ যিনি গান গাইছেন। দুই, যিনি রেকর্ড করছেন। তিন, যিনি শুনছেন। আবার, যিনি রেকর্ড করছেন, তিনি তো শুনছেনও বটে। ফলে, বিষয়টা জটিল। এই দৃষ্টিকোণ বিচ্ছিন্ন নয়, একক নয়, পরস্পর-সম্পর্কিত, এবং সবটা মিলেই একটা গল্প তৈরি হয়।
শ্রোতা
আমার শোনা দিয়ে গল্প শুরু করেছিলাম, সেখানেই ফিরে যাই। বছর কুড়ি ধরে আমি ব্রিটিশ লাইব্রেরির সাউন্ড আর্কাইভস-এ গিয়ে নানা রেকর্ডিং শুনি। সাউন্ড রেকর্ডিস্ট সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে ‘দ্য ট্র্যাভেলিং আর্কাইভ’ (www.thetravellingarchive.org) বলে নিজেদের একটি গবেষণা ও ফিল্ড রেকর্ডিং-ভিত্তিক চলমান আর্কাইভ ও ওয়েবসাইট তৈরি করেছি, সেও প্রায় অতদিনই হয়ে গেল। প্রথম দিকে এলোমেলো রেকর্ডিং শুনতাম, পেন্সিল দিয়ে নোটবইয়ে নানা কথা লিখে রাখতাম। তা করতে করতেই এক দিন অচিন্ত্য দাসী বলে এক জনের বাউল গানের উল্লেখ দেখি ক্যাটালগে, কেঁদুলিতে ১৯৩২ সালের রেকর্ডিং, ওয়াক্স সিলিন্ডার বা মোমের সিলিন্ডারে করা, রেকর্ড করেছিলেন যিনি তাঁর নাম আর্নল্ড বাকে।
বাকে (১৮৯৯-১৯৬৩) ছিলেন হল্যান্ডের মানুষ, ১৯২৫-এ শান্তিনিকেতনে পড়তে আসেন। পড়া শেষে দেশ ঘুরে আবার বাংলায় ফিরে আসেন, রেকর্ডিং যন্ত্র ফোনোগ্রাফ নিয়ে। ১৯৩১-এ ওঁর ফিল্ড রেকর্ডিং পর্বের শুরু, তা চলে, থামে, চলে বাকি জীবন ধরে। সারা ভারতে ঘুরে গান রেকর্ড করেছিলেন তিনি, নেপালে এবং শ্রীলঙ্কায়ও। ১৯৫৬-য় তিনি শেষ বার এ দিকে আসেন নেপালে একটি রেকর্ডিং অভিযান নিয়ে, তখন কলকাতা, শান্তিনিকেতনেও যান। এই সব শুরুতে আমি জানতাম না। জানতাম না মোমের সিলিন্ডার জিনিসটা কী, জানতাম না কী ভাবে বাকে-র নামটি উচ্চারণ করতে হয়।
২০১৩ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব কালচারাল টেক্সটস অ্যান্ড রেকর্ডস-এ আনুষ্ঠানিক ভাবে ১৯৩১ থেকে ১৯৩৪-এর পর্বে আর্নল্ড বাকের বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে রেকর্ড করা মোমের সিলিন্ডারের ওপর ডক্টরেট শুরু করলাম। সেই অনন্ত পিএইচ ডি শেষ কবে হবে বা কোথায়, আমি জানি না। তবে এই কাজ নিঃসন্দেহে আমার জীবনকে ফুলে-ফলে ভরিয়ে দিয়েছে।
আর্নল্ড বাকে-র দক্ষিণ ভারতের রেকর্ডিং এবং নেপালের রেকর্ডিং নিয়ে একাধিক গবেষক কাজ করেছেন ইতিপূর্বে, বাংলায় ওঁর কাজ নিয়ে সম্ভবত আমরা ট্র্যাভেলিং আর্কাইভ থেকেই প্রথম চর্চা শুরু করি। আমাদের কাজ নিয়ে আমরা লন্ডনে একটি প্রদর্শনী করি ২০১৫-তে। তাতে ব্রিটিশ লাইব্রেরি আমাদের সহযোগী ছিল। সেই বছরই ব্রিটিশ লাইব্রেরি এবং সোয়াস যৌথ ভাবে ওঁদের একটি রিসার্চ প্রোজেক্ট শুরু করেন বাকে-র বাংলার রেকর্ডিং নিয়ে। সেই গবেষণার ফলে বাকে-র ক্যাটালগে নানা পরিবর্তন চোখে পড়তে শুরু করে, যা আমায় ভাবাচ্ছিল। আর্নল্ড বাকে-র রেকর্ডিং সংক্রান্ত নিজস্ব নোট দেখার জন্য আমি ওঁদের কাছে আবেদন করি ২০১৮ সালে। তখন ওঁরা আমায় এক দিন অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেন, ‘ওয়র্ল্ড অ্যান্ড ট্র্যাডিশনাল মিউজ়িক’-এর প্রধান কিউরেটরের ঘরে বসে কাগজপত্র দেখতে পারব আমি।
সে দিন আমি সেই বিশেষ ঘরে বসে নানা কাগজপত্র দেখছি। টাইপ করা এবং হাতে লেখা বিবর্ণ সব নথি, তার মধ্যে দেখি ১৯৫৬ সালের সফরের এক রিপোর্ট। আমি পড়তে শুরু করি। ইংরেজিতে লিখছেন বাকে, ‘আমার খুবই সৌভাগ্য, কলকাতায় ২৪ ফেব্রুয়ারি পৌঁছনোর পর পরই আমরা একটি লোকসঙ্গীতের উৎসব পেয়ে যাই এবং সেখানে আমি বৈষ্ণব বাউলদের গান কিছু রেকর্ড করি।… শান্তিনিকেতনে প্রায় ২০ বছর পরে গেলাম। রবীন্দ্রনাথের ভাইঝির গলায় একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ড করি, তাঁর এখন ৮২ বছর বয়স।’
এইটুকু পড়ে আমি নড়েচড়ে বসি। রবিঠাকুরের ভাইঝির গানের ব্যাপারটা আমি জানি। আর তো মোমের সিলিন্ডারে রেকর্ডিং হয় না, নতুন রিল-টু-রিল (স্পুল) যন্ত্রে ইন্দিরা দেবী চৌধুরানীর ‘কতবার ভেবেছিনু’ রেকর্ড হয়েছিল, সেই গান শুরুর আগে বাকেকে বলতে শুনি, ‘শুরু করুন’। আর রেকর্ড করেছিলেন চিত্রলেখা চৌধুরীর ‘অমল ধবল পালে লেগেছে মন্দ মধুর হাওয়া’। সাদা মেঘের পাল ওড়ানো সেই গান, কী হালকা, কী স্বচ্ছ! কিশোরী চিত্রলেখার মন লেখা আছে রেকর্ডিংয়ের গায়ে।
কিন্তু বাউলদের গান? আমি লিড কিউরেটর জ্যানেট টপ ফ্যারজিয়নকে জিজ্ঞেস করি। জ্যানেট ওঁদের বাকে-গবেষক ক্রিশ্চান পস্কেকে ডেকে আনেন। তিনি তখন জানান, আছে বইকি সেই দিনের রেকর্ডিং! আমাকে দুটো ফাইল, C52/NEP/67 এবং C52/NEP/68 বার করে দেন। সে বারের মূল সফর ছিল নেপালে গবেষণার উদ্দেশ্যে, তাই ফাইল নেম ‘NEP’ দিয়ে লেখা। আমাকে জ্যানেট ওঁর ঘরে বসেই ওঁর কম্পিউটারে সেই গান শোনার সুযোগ করে দেন। রেকর্ডিংয়ের নোট হিসেবে যে ক’টা সামান্য কথা লেখা আছে, তা থেকে জানি, রেকর্ডিং হয়েছিল ফেব্রুয়ারির ২৯ তারিখ এবং ১ মার্চ। এর আগে পর্যন্ত বাংলার সব রেকর্ডিং ছিল আড়াই বা তিন মিনিটের, এই প্রথম পাচ্ছি পনেরো-পনেরো মিনিটের দু’টো ট্র্যাক।
শিল্পী
প্রথম গান, গানের সঙ্গে খমক, খমকের সঙ্গে কণ্ঠস্বর, কণ্ঠস্বরের সঙ্গে ঘুঙুর— সব খুব চেনা লাগে!
দেখো দেখো মন, থেকো সচেতন
জীবন হে নূতন নেয় না যেন চোরে।
পরের গানে অন্য গলা। অসম্ভব এনার্জি, ‘গুরুপদে প্রেমভক্তি হলো না’, কিন্তু চেনা সুরে নয়। তার পর অন্য ট্র্যাক, C52/NEP/68। আমি নোট লিখে রাখছি, আমাকে তো ফিরে গিয়ে লোকজনকে জিজ্ঞেস করতে হবে। পরের ট্র্যাক শুরু হয় প্রথম ট্র্যাকের প্রথম কণ্ঠ দিয়ে। ‘একটা সোনার মানুষ এসেছে গো দেখবি যদি আয়।’ পরের গান নারী কণ্ঠে: ‘কাল সকালে হরি বলে/ আমায় নিতাই প্রভু টেনে নেয়।’ খুব চেনা চেনা লাগে, শুনেছি হয়তো জর্জ লুন্যোর ফিল্মে। সেই গান শেষ হয়, সিগনেচার খমক আর আকাশ-ছুঁতে চাওয়া পুকার: ‘ওরে আমার অবোধ মন/ সর্বদাই চেতনে থাক রে মন।’ এ বার আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিত। এ গলা পূর্ণদাস বাউলের। তার পর আরও একটি গান, ‘বাঁকা নদীর গতিক বোঝা ভার’—এই সুরের চলন ভিন্ন, জিকিরের মতো, ঘোর লাগানো ভাব।
তা হলে কি প্রথম কণ্ঠস্বর নবনীদাস বাউলের?
আমি এতটাই উত্তেজিত বোধ করি যে আবেগ লুকোতে পারি না। জ্যানেটকে বলি, এই রেকর্ডিং দু’টি খুবই মূল্যবান। বলি, তোমরা এই রেকর্ডিং অনলাইন তুলে দেবে না, না? জ্যানেট বলেন, ‘না এক্ষুনি নয়, এখন তো অনেক কাজ পাইপলাইনে আছে।’ আমি আর কিছু বলি না। আমায় এখন খুব যত্ন করে কাজ করতে হবে, যাতে এই রেকর্ডিংকে আমাদের কাছে নিয়ে আসতে পারি। এই গান যদি নবনীদাসের হয়, তা হলে এর মূল্য ভাষায় প্রকাশ কঠিন। গত একশো বছরের বাউলচর্চায়, বাউল গানের পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রে প্রথম যে নাম উচ্চারণ করা হয়, সেই নাম নবনীদাস বাউলের। সেই নামের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ, শান্তিনিকেতন, পৌষ মেলা, ক্ষিতিমোহন সেন, অ্যালেন গিন্সবার্গ, দেবেন ভট্টাচার্য… এত এত কিছু জড়িয়ে আছে, এবং প্রত্যেকে এক-একটি প্রতিষ্ঠান।
১৯৫৪ সালে সঙ্গীত-সংগ্রাহক ও পরিব্রাজক দেবেন ভট্টাচার্য বঙ্গসংস্কৃতি সম্মেলনেই নবনীদাস বাউল, পূর্ণদাস আর লক্ষ্মণদাসকে রেকর্ড করেছিলেন, নবনীদাসের দুটো গান সেই রেকর্ডিং থেকে প্রকাশিত হয়েছে আলাদা আলাদা করে, বিভিন্ন অ্যালবামে। ‘গৌরচাঁদের হাসপাতালে’ আর ‘কত দোষী হই গে প্রভু তোমার আজ রাঙা পায়ে’। দেবেনবাবুর রেকর্ড করা পূর্ণদাস লক্ষ্মণদাসদের গান প্রকাশের ফলে বিশ্বের দরজা খুলে যায়—ওঁদের জন্য, এবং বাউল গানের জন্যেও। দেবেন ভট্টাচার্যের সঙ্গে সে বার ফটোগ্রাফার রিচার্ড ল্যানয় এসেছিলেন। মেলার পর দুজনে সিউড়ির কাছে নবনীদাসের আশ্রমে গিয়েছিলেন।
শ্রবণের এই তীব্র স্মৃতিকে বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে আমি ঘরে ফিরে এসেছি।
এর পরের কয়েক মাস তরুণ গবেষক অপূর্ব রায় আর আমি সেন্টার ফর স্টাডিজ় ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটা এবং ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে গিয়ে যাবতীয় খবরের কাগজ, পত্রপত্রিকা ঘেঁটে বার করি যে, সে বছর ফেব্রুয়ারিতে ২৯ দিন ছিল, ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বঙ্গসংস্কৃতি সম্মেলন শুরু হয়েছিল, আর সেই বছর মেলা শুরুর আগে মাঠে আগুন লেগেছিল। শিশির ভাদুড়ির নাটক ছিল, আঙুরবালা ইন্দুবালার গান… বিজ্ঞাপনে বাউল গানের কথা লেখা হয়েছিল, কিন্তু কারা বাউল গাইবেন লেখা ছিল না। অথচ আমি এভিডেন্স খুঁজছিলাম, যাতে আমরা ব্রিটিশ লাইব্রেরিকে বলতে পারি যে, এই দেখো প্রমাণ ওই রেকর্ডিংয়ে কাদের গান রয়েছে।
তার পর অনেক ভেবে আমি শ্রী পূর্ণচন্দ্র দাস বাউলের সঙ্গে দেখা করি গত বছর মে মাসে। আমার নোট দেখে দেখে সেই রেকর্ডিংয়ের গল্প বলি, আর জানতে চাই ওঁর স্মৃতিতে সেই দিনটি ধরা আছে কি না। পূর্ণদাস সে দিনের অনেক কথা বলেন। আমি তা রেকর্ড করে নিই। বাবার কথা, দিদির কথা, সুধানন্দর কথা, জামাইবাবুর কথা। বলেন, ‘‘এক বার শোনালেই আমি সব বলে দিই।’’ আমি বলি, শোনাব বলেই তো এত কিছু। যাতে আপনাদের কাছে থাকে আপনাদেরই গান। শেষে একটা চিঠি করে নিয়ে যাই লন্ডনে। বাউলসম্রাট পূর্ণচন্দ্র দাস বাউলের চিঠি।
জ্যানেট বলেন, ‘‘দারুণ ব্যাপার, এ ভাবেই তো একটি আর্কাইভ বেঁচে থাকে!’’ কিছু চিঠির লেনদেন হয়, Dear Baul Samrat Padmasree Purna Das Baul-এর সঙ্গে। পূর্ণদাসের পরিবারও যারপরনাই আপ্লুত হন, ব্রিটিশ লাইব্রেরির চিঠি পেয়ে, রেকর্ডিং পেয়ে, তাঁদের বদান্যতায়, এবং সেখানেই এই গল্প শেষ হয়ে যায় এক রকম।
রেকর্ডিস্ট
হয়, এবং হয়ও না। গল্প আরও বহু দিকে চলে যায়। পূর্ণদাস আর ওঁর ছেলে দিব্যেন্দুর সঙ্গে বসে আমি সেই রেকর্ডিং শুনি আর সেই শ্রবণকে রেকর্ড করি। শব্দের ওপর শব্দ এসে পড়ে, অর্থের ভিতরে অর্থ জন্ম নেয়। নবনীদাসের জীবনাবসান হয় ১৯৬৪-তে। ১৯৬২-তে অ্যালেন গিন্সবার্গ নবনীদাসের কাছে গিয়েছিলেন। তখন নবনী মৃত্যুশয্যায়। ওঁর সঙ্গে ছেলে লক্ষ্মণদাস থাকতেন। ২০০৯-এ আমরা লক্ষ্মণদাসের বাড়িতে গেলাম সিউড়িতে। এত দিন পর সেই কথোপকথন শুনতে গিয়ে একটা আশ্চর্য কথা আমাদেরই রেকর্ডিংয়ের ভিতরে শুনি। নবনীদাসের চরম নেশা করার কথা অনেকেই বলেছেন। লক্ষ্মণদাস বলছিলেন, “বাবার থ্রম্বোসিস হওয়ার পরে আর কিছু করতে পারেন না। বাবা খুব গাঁজা খেতেন, আর খেতে পারতেন না। আমি গাঁজা কিনে নিয়ে এসে, বানিয়ে, কল্কে ভরে, মুখে করে টেনে বাবার মুখে ভরে দিতাম। আর সেইটুকু খেয়ে বাবার শান্তি হত। এত দূর করেছি। সেই সময় অ্যালেন এসেছিল। এ দিকে লাল ঝরে পড়ে, অ্যালেন হাত দিয়ে পরিষ্কার করে দিয়েছে।”
তাঁর অকৃত্রিম সাধক প্রকৃতি, উদাসীন ভাব, সারল্য, মুখভরা হাসি, উচ্চণ্ড রাগ, সামান্য উঁচু দাঁত, আধো আধো বোল, বিষ্ণুপুরের ক্লাসিক্যাল শিল্পীদের গান শুনে গানের ভিতরে তানানানা করা, বঙ্গসংস্কৃতিতে শুধু কৌপীন পরে অদ্ভুত নাচ, যে নাচ ওঁর ছেলেরাও কখনও দেখেননি বলে বলেছেন।
‘পথের মধ্যে দিয়ে চলেছে এক বাউল,
হাতে তার একতারা, পরনে আলখাল্লা… দেখে বড় ভাল লাগলো, ছবি এঁকে ফেললাম। গুরুদেব দেখে বললেন, বাঃ! সেই বাউলটি কে? নবনীদাস।… গান গাইতে গাইতে সংজ্ঞাহারা হয়ে যেত। দেখে তো আমি ভয়ে মরি। চোখেমুখে জলের ছিটে দিয়ে জ্ঞান ফেরাতুম। আবার সেই হাসিমুখ, সেই গান। কী গলা!’ শিল্পী মুকুল দে এমন করেই লিখেছিলেন তাঁর স্মৃতিকথায়।
এই মানুষটাকে শান্তিনিকেতনের ভিতরে অনেকেই এই ভাবে দেখেছেন। আর্নল্ড বাকে নিজে থাকতেন আশ্রমে বিশ আর তিরিশের দশকে। কিন্তু তাঁদের হয়তো কখনও দেখা হয়নি। কারণ এক বার দেখলে মনে হয়, মানুষটাকে ভোলা সম্ভব ছিল না। তখন ১৯৫৬-তে দেখামাত্র বাকে বুঝতে পারতেন তিনি কাকে রেকর্ড করছেন! অথবা, তিনি জানতেন, হয়তো তাঁদের কথাও হয়েছিল সে দিন। সব কিছুর রেকর্ড আসলে থাকে না। ফলে, কেন নবনী-পূর্ণদের নাম ছিল না বাকের রিপোর্টে, তা নিয়ে অনুমান করা যায় শুধু, হলফ করে বলা কঠিন।