গীতরঙ্গ: একটি খননের গল্প । মৌসুমী ভৌমিক
এটি একটি খননের গল্প। গল্পের কেন্দ্রে রয়েছে দু’টি বেওয়ারিশ অডিয়ো রেকর্ডিং, যা এক ঝলক শুনেছিলাম লন্ডনে, ব্রিটিশ লাইব্রেরির সাউন্ড অ্যান্ড অডিয়োভিস্যুয়াল আর্কাইভস-এ বছর দুয়েক আগে, সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ভাবে।
অজস্র নামহীন শব্দ প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে আমাদের পাশ দিয়ে চলে যায়, আমরা ফিরেও দেখি না। কানে ঠুলি পরে, অজস্র শব্দকে পাশ কাটিয়ে চলে যাই আমরা। কিন্তু এই রেকর্ডিংটি ঠিক তেমন ছিল না আমার কাছে। সে দিনের শ্রবণ আমার মনে আর মননে তার চিহ্ন রেখে যায়। আমি বুঝতে পারছিলাম এ কোনও বিমূর্ত অবয়বহীন শব্দতরঙ্গ নয়। একটি সাউন্ডট্র্যাক ১৬ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের, অপরটি ১৫ মিনিট ১১ সেকেন্ডের। হঠাৎই অন্য কাজ করতে করতে রেকর্ডিং দু’টি শুনতে পেয়েছি, এক বারই, সঙ্গে করে নিয়েও যেতে পারব না। তাই যত দূর পারি, একাগ্র হয়ে শুনি আর নোট নিই।
স্পষ্ট করে চিনতে না পারলেও বুঝতে পারলাম, ওই রেকর্ডিংয়ের ভিতর একটা জরুরি সময় ধরা আছে, আর সেই সময়ের ভিতরে জরুরি অনেক মানুষের বাস। তারা আমার ঘরের লোক। কোন বিদেশ-বিভুঁইয়ে হিমশীতল আর্কাইভের শেল্ফে পড়ে আছে মৃত শব্দ হয়ে। গান নিয়ে, শব্দ নিয়ে কাজ করি, তাদের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা থাকবে না? ওই সাউন্ডট্র্যাক দু’টিই আমার খননের ক্ষেত্র হয়ে যায়। যেন আমি সুরের ও শব্দের প্রত্নতাত্ত্বিক। সময়ের মাটি খুঁড়ে, ধুলো সরিয়ে, খননের ক্ষেত্র থেকে তথ্য উদ্ঘাটন আর সত্য নির্মাণ আমার কাজ।

