| 20 এপ্রিল 2024
Categories
গল্প সাহিত্য

নাওয়াল

আনুমানিক পঠনকাল: 12 মিনিট

এক 

হাউ টু প্রিপেয়ার ফর দ্যাট জব? নিজের সাথে গল্প করা, না মোটেও সহজ কাজ নয়। কাজটা এখন পর্যন্ত করে দেখা হয়নি। অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্তটা নিয়েছে সে। ভেতরে ভেতরে এক ধরনের বোঝাপড়া চলেছে। এই উদ্দেশ্যেই সে স্থিরচিত্তে দাঁড়ায় বিশালাকৃতির আয়নার সামনে। শরীরের ভেতরও থাকে আরেকটা শরীর, সেই শরীর অনুভূতির, অনুভবের, সে দেখে নিতে চায় তার ভেতরের আকাঙ্ক্ষা, অপ্রাপ্তি, দ্বেষ, কলুষতা। কিন্তু সে যা দেখতে চায় তা দেখতে পাচ্ছে না, বরং তার দৃষ্টি জুড়ে শীতের একরোখা কুয়াশা ব্যতীত অন্য কিছুই দেখা যাচ্ছে না, রক্তমাংসের শরীরটা মাঝেমাঝে স্পষ্ট হয়ে ভেসে উঠছে আয়নায়, তবে কী শরীরের ভেতরের শরীর দেখার জন্য অন্য কোন দৃষ্টিশক্তি থাকা প্রয়োজন, সেই দৃষ্টিশক্তি কী সে হারিয়ে ফেলেছে? শরীরের ভেতরের শরীরে প্রবেশের অনুমতি সে পায় না, বাধ্য হয়েই সে দেখতে থাকে তার উনিশ বছর বয়সের যৌবন। চিকন চালের মতো ঠোঁট জুড়ে এক ধরণের মদাক্ত আকাঙ্ক্ষা। অবহেলায় বয়ে চলা চিবুক যেন মিহি বালির ধারালো শাঁস। অচঞ্চল গ্রীবা নেমে গেছে আগুন্তক পাহাড় অভিমুখে, পাহাড়ের গা জুড়ে রঙ বেরঙের ফুল। বাহু দুটো খুঁজে নিচ্ছে প্রান্তিক সীমানা। না, কোথাও অতিরিক্ত কোন ফ্যাট নেই। আগুনরঙা মসৃণ পেট যেন পুরাতন পেঁয়াজের খোসা। নাভিমূলে মুখ গুঁজে খেলা করছে সৌন্দর্য-লীলা। নিজেকে দেখে খুবই হতবাক হল সে। সে নিজেই আন্দাজ করছে নিজ শরীরের উত্তাপ।  নাহ, এভাবে হয় না। একটা সিগারেট ধরানো প্রয়োজন। সিগারেটের প্যাকেটটা হাতে নিয়ে ধীর পায়ে বিছানার দিকে এগিয়ে যায়, টান টান হয়ে শুয়ে পড়ে বিছানায়। লাইটারটা জ্বালাতে গিয়েও কি ভেবে জ্বালায় না। ঠিক কি বিষয়ে গল্প করবে? রি-উইন্ড করে দেখবে তার অতীত? কিন্তু রি-উইন্ড করবে কোন অংশ থেকে? তার জন্মের পূর্বে থেকে করতে পারে। চাইলে করতে পারে তার শিশু-বেলা থেকেও। টিন এজের আরম্ভ থেকেও করা যায়। আর যৌবনকাল থেকে তো করাই যায়। প্রত্যেকটা অংশই আলাদা আলাদা, আ কমপ্লিট স্টোরি। বাট সি উ’ডোন্ট এক্সপ্রেস অল দ্য থিংস। যেটুকু না বললেই না সেটুকুই বলবে। মা মারা গেছিলেন তার জন্মের সময়। ড্যাড আর দ্বিতীয় বিয়ে করেন নি। বিয়ে না করে তার লাভ হয়েছে। সে তার ইচ্ছেমত যা খুশী তা করে। হি ইজ আ ব্লাডি বুল-শিট, খুব খারাপ একজন মানুষ। নিজের বাবা সম্পর্কে বাজে বলা হচ্ছে? বাট দ্যাট ক্রুয়েল ম্যান ডিসার্ভ ইট। দ্যাট ম্যান জাস্ট কিলড হিজ ওয়াইফ। নাওয়াল তার মা-বাবার একমাত্র সন্তান। অনলি ড্যাড নোজ এবাউট হিজ ওয়েলথ, দ্যা সোর্স অব হিজ ই্ললিগ্যাল প্রোপার্টিজ। সে নিজেও জানেনা তারা কি পরিমাণ রিচ। একচুয়ালী সি ডি’ডোন্ট ওয়ান্ট টু নো। নাওয়ালের ঘরটা শাদা ওয়ালম্যাট দিয়ে মোড়ানো। ঘরটা বলতে ঘরের দেওয়াল-ফ্লোর সব। বাসিন্দা সাকুল্যে তিন জন- সে, একটা কিং সাইজের বেড সঙ্গে ড্রেসিং আয়না। অনিয়মিত বাসিন্দা হিসেবে খুব দুর্নাম তার। ধুর কিছুই ভালো লাগছে না নাওয়ালের। ব্লাকবেরি ডিটিইকে৫০ মডেলের মোবাইলটা হঠাৎ কেঁপে উঠলো। কে আবার  কল দিলো? অসময়ের ফোনে মেজাজটা খিচড়ে গ্যালো নাওয়ালের। অল দ্য ব্লাডি ফাকার আর সেইম। 

-হ্যালো, ইয়েহ, ওহ ডুড! এই সময়ে?’ লকলকে শাদা রঙের গাউনটা গায়ে জড়াতে জড়াতে বলল নাওয়াল।

-ইয়েহ বেবি, কাম অন, হারি আপ

-ক্যান ইউ সে হোয়াট হ্যাপেন্ড, ডিয়ার।

-এখুনি বেরিয়ে আয়, আই অ্যাম ওয়েটিং।

-হ্যাভ উ এনি আইডিয়া? বাজে ছেলে।

-নো প্রব বেব্বি, কাম অন, প্লিজ। বিপরীত দিক থেকে সাইমনের উত্তেজিত কণ্ঠ।

কি এমন হল এই মধ্যরাতে! নিশ্চয় কোন ওয়াইল্ড এডভেঞ্চারের খোঁজ পেয়েছে। একটা ইয়োলো কালারের টি-শার্ট পারলো নাওয়াল। সঙ্গে ব্ল্যাক কালারের ব্রুক শিল্ড’স জিনস। মানিব্যাগ, মানিব্যাগে সবসময়ই টাকা থাকে তার। টাকা না থাকলে কার্ড তো আছেই। নাওয়ালের বাবা এসব ব্যাপারে খুবই লিবারেল। বাবা লিবারেল হবেন নাই বা কেন?

-কি রে কই তুই? আয় জলদি। সাইমনের যেন তর সইছে না আজ। হোয়াট হ্যাপেন্ড উইথ দিজ ক্রেজি গাই। কে জানে কি হয়েছে আজ ওর।

-ফুপি-মা, আই অ্যাম গোয়িং উইথ সাইমন। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল কথাগুলো। ডুপ্লেক্স বাড়ির দোতালায় নাওয়ালের শোবার ঘর। ঠিক পাশের ঘরেই থাকেন তার ফুপি-মা।

-কখন ফিরবি, বলে যা মা; বিব্বি – কঁকিয়ে উঠল ফুপি-মা, তার ঘর থেকেই।

-আই ডোন্ট নো, প্লিজ ডোন্ট ওয়েট’ ওদিকে অনবরত ফোনে কথা বলছে সাইমন। সাইমনের কথাতে অবশ্য এখন মনোযোগ নেই। সে এখন কথা বলছে ফুপি-মার সাথেই।

-তোমার বাবা কিন্তু আজ তাড়াতাড়ি ফিরবে। চলে এসো বিব্বি, এত রাতে বাইরে?’ বাসাতে সবাই তাকে বিব্বি বলেই ডাকে। বন্ধুরাও সবাই এই নামেই ডাকে তাকে।

-হু কেয়ারস ফুপি-মা। তুমি-তো জানোই।’ ঝড়ের বেগে দৌড়ে নেমে যায় নাওয়াল।

হোয়াট অ্যা প্লিজ্যান্ট সারপ্রাইজ ইট ইজ? সাইমন ছাড়াও আরও তো অনেকেই এসেছে। নাওয়ালকে দেখেই সবাই একসাথে চিৎকার করল। হোন্ডা সি আর ভি-র দরজা খোলা। ভেতরে গাদাগাদি করে বসে আছে রহিয়া, সিনথিয়া, ইমরোজ, আনিফ, কুন্তল, রাজ। সামনের সিটে বসে আছে গাড্ডু নিখিল। ও একটা আস্ত শয়তান, ভীষণ ফাজিল।

-হাই বিব্বি, ইউ আর লুকিং ইরোটিক- সামনে থেকে পেছনে তাকিয়ে বলল নিখিল।

-ইউ বিচ, তোর ধান্দা তো এদিকেই, বলল সিনথিয়া, তার মুখে কপট হাসি।

-ইনফ্যাক্ট ইউ আল গার্লজ লুকিং সেক্সি। নিখিল মানেই এমন, অলওয়েজ ধান্দাবাজ, দুষ্টু।

-হোয়ার উই আর গোয়িং, প্লিজ মেক মি ক্লিয়ার। সাইমনের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলল নাওয়াল।

-গোয়িং টু টেস্ট আ নিউ এক্সপিরিয়েন্স’ ড্রাইভিং সিটে বসে আছে সাইমন, হাসছে।

-মিনস হোয়াট, কি হতে যাচ্ছে বলত? সিনথিয়া বলে উঠলো পেছনের সিট থেকে।

-মানে তুইও জানিস না, কিরে রিয়া?

১২৯ নাম্বার রোড থেকে বেরিয়েছে গাড়িটা। এক নম্বরে টার্ন নিয়ে ছুটে যাচ্ছে গুলশান এক থেকে দুই এর দিকে। রাস্তা চুপচাপ, খাবার দোকানগুলোর সামনে ভিড়। কোথায় যে যাচ্ছে এরা, কে জানে? মিনিট সাতেকের ভেতর গাড়ি থামাল সাইমন।

-এই নাম, নাম, হারি আপ, প্লিজ। গাড়িটা পার্ক করানোর সময় পর্যন্ত নাই।

-হোয়াট ইজ গোয়িং টু বি হ্যাপেন?

-হবে হবে, আগে নাম তো, আ বিগ সারপ্রাইজ!

গাড়ি থেকে সবাই হুড়মুড় করে নামলো। তাড়াহুড়া করে ঢুকে পড়লো বনানী এগারো নাম্বার রোডের হোটেল বারিন্দে। 

দুই 

লাইফ ইজ এক্সট্রিমলি বোরিং। যখন যেখানে যেতে ইচ্ছা করছে যাচ্ছে, যখন যা করতে ইচ্ছা তাই করেছে। এইতো গতমাসেই স্টেটস থেকে ফিরে এসেছে নাওয়াল। ড্যাড এসবে কখনও বাঁধা দেন নি। ইনফ্যাক্ট এই ভদ্রলোকের সেই সাহস নেই। মা বেঁচে থাকলে কি এমন হতো? মাঝে মাঝে আত্মহত্যার কথা ভাবে কিন্তু ফুফুম্মাকে ফেলে কোথায় যাবে নাওয়াল? 

-বিব্বি, কি ভাবছিস মা, ঘুমাবি না?এত রাতে ফুফুমা জেগে আছে কেন? নাওয়াল ভেতরে গিলে নেয় এলোমেলো ভাবনাগুলোকে।

-তুমি এতো রাতেও ঘুমাও নি, ফুপুম্মা!’ বিস্ময়ের ঢেউয়ে নিজেকে ঠেলে দেয় নাওয়াল।

-নারে ইদানীং ঘুম পায় না কিছুতেই।

-তুমি তো আমার কথা নকল করছো।

-তোর কথায় তো আমার কথা রে।

-ও মাই বেবি, কি পেলে জীবনে?

জীবন! তুই জানিস জীবন মানে কি? শ্লেষ মেশানো কণ্ঠে কথাগুলো বলেন হালিমা।

-বেবি, এই আমার জীবনের কথাই ভাব। মা মারা গেলো আমার জন্মের সময়েই। ড্যাড থেকেও নেই। আমিও কি কম?

-বিব্বি, মা আমার। সোনা মা, জীবন অনেক সুন্দর। নাওয়ালের মাথায় বিলি কেটে দিতে দিতে কথাগুলো বলে হালিমা।

-আচ্ছা তুমি বিয়ে না করে এ বাড়িতে থেকে গেলে ক্যানো? হোয়াই?

-মারে, তোর মা মারা যাবার সময় তোর বয়স মাত্র সাড়ে সাত মাস। তোর নানা-নানীও বেঁচে ছিলেন না। কার কাছে ফেলে যেতাম তোকে? আমার সোনা বিব্বিটা, ঘুমাও। আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। ঘুমা সোনা।

নাওয়াল ঘুমানোর ভান করে, কারণ সে ভালো করেই জানে সে না ঘুমানো পর্যন্ত এই মহিলা সারারাত তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই থাকবে। খামোখা তাকে কষ্ট দিয়ে লাভ কী? তার চেয়ে ঘুমানোর ভান করলে কিছু সময় পর এমনিতে ফুফুম্মা তার নিজের ঘরে চলে যাবে। ফুফুম্মার কথা ভেবে অবাক হয়ে যায় নাওয়াল। শুধুমাত্র নাওয়ালের কথা ভেবেই ফুফুম্মা এই সংসারে থেকে গেছেন, নিজের কথা এতটুকুও ভাবেননি, কিছু কিছু মানুষ ক্যানো এমন হয়, অন্যের জন্য সবকিছু বিলিয়ে দেয়। বাবা মায়ের বিয়ের প্রায় এগারো বছর পর নাওয়ালের জন্ম। ফুপির কাছে শোনা, নাওয়ালের বাবা চাকুরী করত। সরকারী চাকুরী। আর্কিটেক্ট। হঠাৎ তার মাথায় ব্যবসার ভূত চাপে। গভর্নমেন্ট জব ছেড়ে উনিশ ঊননব্বই সালের দিকে তিনি ব্যবসা আরম্ভ করেন। ডেভেলপারের ব্যবসা। বুয়েট থেকে পাশ করা মেধাবী জালাল উদ্দীন পাটোয়ারী খুব অল্প দিনেই ব্যবসায় ভালো করতে থাকেন। ধীরে ধীরে তিনি ব্যবসার পরিধি বাড়াতে থাকেন, অর্থের নেশা পেয়ে বসে তাকে। বৈধ-অবৈধ উপায়ে তিনি বছর বিশেকের মধ্যেই দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান। বর্তমানে প্রায় কুড়িটি ছোট বড় প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। টিভি চ্যানেল, পত্রিকার মালিকানা, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, গার্মেন্টস ব্যবসা, শেয়ার বাজার, ম্যান পাওয়ার রিক্রুটিং এজেন্সী বহুবিধ ব্যবসায় নিজেকে জড়িয়েছেন তিনি। সন্তান জন্ম দেওয়া খুব সহজ কাজ, যদিও জালাল আর মাধবীদেরকে সন্তান পাবার জন্য অপেক্ষা করেছে প্রায় এগার বছর। কত আদরে সন্তান, কত আরাধনার সন্তান। নাওয়ালের জন্মের মাত্র তিন মাসের মাথায় মারা যান মা। মায়ের সম্ভবত পোস্টপারটাম কার্ডিওমায়োপ্যাথী নামের অসুখ হয়েছিলো। নাওয়ালের জন্মের পরপর মায়ের নাকি একটু নড়াচড়া করলে বা একটু পরিশ্রমেই খুব শ্বাসকষ্ট হতো। বাবা মায়ের কষ্টকে গুরুত্ব দেয়নি, টাকার পেছনে ছুটতে ছুটতে সে অন্ধ হয়ে গেছিলো। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে মারা যান মা, হাসপাতাল পর্যন্ত নেয়ার সময় পাওয়া যায়নি। বড় হতে হতে এ কথাগুলো সে শুনেছে ফুপুম্মার কাছে। মা মারা যাবার পর বাবা আরও ব্যবসামুখী হয়ে পড়ে, জড়িয়ে পড়ে অবৈধ সম্পদ আহরণের দিকে, নারীসঙ্গ আর নেশায় ডুবে যায় সে। টাকা দেওয়া ছাড়া নাওয়ালের প্রতি কোন দ্বায়িত্বও পালন করেনি বাবা! সন্তান জন্ম দিলেই তো কেউ বাবা হয়ে যায় না, বাবা হওয়া খুব কঠিন কাজ। বাবা যেমন বাবা হয়ে উঠতে পারেনি, তেমনি নাওয়াল নিজেও সুসন্তান হয়ে উঠতে পারেনি। ইচ্ছামত টাকা উড়িয়েছে, নেশা, পার্টি, সম্পর্কে জড়িয়েছে, ভেঙ্গেছে, কয়েকবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে, সে চেষ্টা সফলতার মুখ দ্যাখেনি, যদিও ব্যাপারটা একবার হাসপাতাল অব্ধি গড়িয়েছিল।  

তিন

হোটেল বারিন্দের পার্টিটা অসাম পুরো পার্টি স্পন্সর করেছে সিনথিয়া। সীসার সাথে আফিমের নেশাটা জমেছে খুব। বাকার্ডি, কোরিয়ান রাম আরও কী কী যেন আছে মেন্যুতেসবাই যার যার পছন্দমত ড্রিঙ্ক করছে। রহিয়া, সিনথিয়া, ইমরোজ, আনিফসহ বন্ধুদের প্রায় সবাই সারারাত হোটেলেই, ডি-জে পার্টিটাও সেইরকম, কুল! নাওয়ালও মেতে উঠেছে। বন্ধুরা যে যার সাথে ইচ্ছামত ড্যান্স করছে, এসব পার্টিতে কোন বাইন্ডিংস থাকে না, এমনকি কেউ কারও সাথে বিছানা পর্যন্ত যেতে চাইলেও কেউ কাউকে নিষেধ করতে পারবে না, যার যা ইচ্ছা তাই করা যায়, এটাই শর্ত। নাওয়ালও এনজয় করছে খুব, ফুপিম্মা ফোন করছে বারবার, কিন্তু সবাইকে ছেড়ে বাসায় যেতেও ইচ্ছা করছে না নাওয়ালের। পার্টিতে সিনথিয়ার সাথে একটি ছেলে এসেছে, সম্ভবত সিনথয়ার কাজিন। এমন কোন পার্টি নেই যেখানে নাওয়ালকে নিয়ে এক্সট্রা ইন্টারেস্ট শো করে না ছেলেগুলো। আর এখনও পরিচয় করিয়ে দেয় নি সিনথয়ার, মাদারফাকার মনে হয় নিজের কব্জায় রাখতে চায়। মেজাজ ঠিক রাখতে পারছে না, মাঝে আনিফ ড্যান্স করার জন্য টানাটানি করছিলো। নাওয়াল একটু দূরে বসেছিলো, এক প্রচুর ড্রিঙ্কস করছে সে, সিনথিয়ার কাজিন একে ওকে জড়িয়ে ড্যান্স করছে, আর রহিয়া! আ হোর, ছেলেটির সাথে লেপ্টে আছে পুরোটা সময়। নাওয়াল ছেলেটিকে দেখেই বুঝেছে এ ছেলে কোন এক নিদৃষ্ট মেয়ের সাথে আটকে থাকার ছেলে নয়। তাই বলে একবারও নাওয়ালের দিকে তাকাবে না! এবস্যার্ড, হতেই পারে না। একবার ইচ্ছা হচ্ছিল রহিয়ার মতো ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরতে, কিন্তু খুব ইগোইস্টিক নাওয়াল। সে আরও মদ খাবে। কিছুতেই নিজে থেকে গিয়ে পরিচিত হবে না, না কিছুতেই না। ‘অল ব্লাডি আর মাদার ফাকার।’ মদের নেশায় জড়িয়ে যাওয়া শব্দগুলো হারিয়ে গ্যালো ডিজে মিউজিকের ভিড়ে।

-‘ডু ইউ ওয়ান্না সেক্স উইথ মি? বেবি, হেই, ইয়েস ইউ! বাট নট টু ডে, ইন এনাদার ডে, প্লিজ গো টু ইয়োর হোম ন্যাও, ইউ হ্যাভ ড্রিঙ্ক আ লট, ইউ হ্যাভ ভমিটেড।’ রহিয়ার লিপসের সাথে সেঁটে থাকা ছেলেটি, হ্যাঁ, সিনথিয়ার কাজিনই তো। কথাগুলো বলেই সে আবার জমে গ্যালো রহিয়ার ঠোঁটে।

-‘মানে কী? নিজেকে কী ভেবেছে সে! ব্লাডি, বুলশিট, তোকে দেখে নেবে আমি। আর ও কিভাবে জানল যে আমি বমি করেছি? আমি তো একা একা ফ্রেস রুমে গিয়ে ভমিট করলাম? তাহলে?’ কথাগুলো শব্দ হয়ে উচ্চারিত হবার আগেই আরেক পেগ চালিয়ে দিলো নাওয়াল। মেজাজ ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না, ইচ্ছা করছে উঠে গিয়ে ওর শার্টের কলার ধরে ইচ্ছামতো থাপড়াতে, কিন্তু পারছে না, ওর পা দুটো সায় দিচ্ছে না।

নাওয়ালের যখন ঘুম ভাঙল তখন ঘড়িতে দুপুর আড়াইটা। পাশে বসা ফুফুম্মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, ঠিকমতো চোখ তুলে তাকাতেও পারছে না সে। চারপাশ কেমন যেন ধোঁয়া ধোঁয়া, আবছা, তার জীবনের মতোই, ফুফুম্মার জীবনের মতোই, কেমন যেন ঘোলাটে। 

-‘ফুফুম্মা আমি কয়টায় বাসায় ফিরেছিলাম?’ ঘুম ঘুম কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল সে।

-রাত তিনটার দিকে, তোর মোবাইল থেকে একটা ফোন এলো, তোর বন্ধু সম্ভবত, কী যেন নাম? হ্যাঁ, মনে পড়েছে, মিনহাজ, হ্যাঁ মিনহাজই, বলল আন্টি ড্রাইভার পাঠিয়ে দিন, নাওয়াল আজ একটু বেশিই ড্রিঙ্কস করেছে, কয়েকবার বমিও করেছে।

-‘মিনহাজ? এ নামে তো আমার কোন ফ্রেন্ড নেই, হু দ্য হেল ওয়াজ দিস?’

-‘কী বলিস? পরে আবার ফোন করে জিজ্ঞেস করল, আন্টি, নাওয়াল ঠিকমত বাসায় ফিরেছে? ওকে গাড়ীতে তুলে দিয়েছিলাম তো!’ আমি হ্যাঁ বলতেই কেটে দিলো। ফুফুম্মার মুখে বিস্ময়।

-মানে? শালা কী ঐ মালটা? মানে সিনথিয়ার কাজিন? না, হতেই পারে না।’ মনেমনে কথাগুলো আওড়াল নাওয়াল। নাম্বারটা তো আছে, ফ্রেস হয়ে নিয়েই কল দিতে হবে, তার আগে সিনথিয়ার সাথে কথা বলা প্রয়োজন।

-বিব্বি, মা আমার নেশাটেশা ছেড়ে দে মা। জীবন অনেক সুন্দর। একে হেলায় হারাস না। কিছুতেই হারাস না মা। তোর মা সব দেখছে। সে কষ্ট পাবে।’

-বেবি, আমার ডার্লিং, আমি আরও নেশা করবো, আমার কেউ নেই, কেউ আমাকে ভালোবাসে না, মা ক্যানো আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমার কী দোষ ছিলো, আমি কী জন্মেই পাপ করেছি? আর বাবা! আমি হারিয়ে যাবো,’ কথাগুলো বলতে বলতে হালিমার কোলে মাথা গুজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকল নাওয়াল।

ফুফুম্মা আজ নাওয়ালের পছন্দের খাবার রান্না করেছে। তার টানাটানিতেই বিছানা থেকে উঠে শাওয়ার নিতে যায় নাওয়াল। শাওয়ার নেবার পর থেকে শরীরটা খুব ঝরঝরে লাগছে, খিদেটাও চনমন করে উঠেছে। সবসময়ই ফুফুম্মাই তাকে তুলে খাইয়ে দেয়। এই মহিলাকে দেখেই নাওয়াল বুঝতে পারে মায়েরা মনে হয় এমনই হয়। কত যত্ন আরা ভালাবাসায় নাওয়ালকে আগলে রেখেছে ফুফুম্মা, কোন স্বার্থ ছাড়া। জীবনে কোনকিছু পাবার আসা করে না এরা, শুধু অন্যকে দেবার জন্যই যেন জন্ম হয়েছে এইসব মানুষদের। মাঝে মাঝে ফুফুম্মার মতো ভালো মানুষ হয়ে যেতে খুব ইচ্ছা হয় নাওয়ালের। 

চার

-‘হেই বিচ, সিনথিয়া? ওয়াজ দ্যাট ইয়োর স্টুপিড কাজিন? আ ব্লাডি বুলশিট, ও তো একটা হারামি, কাল পার্টিতে কি বলেছিল জানিস?’ প্রায় চিৎকার করেই কথাগুলো বলল নাওয়াল।

-‘হ্যাঁ জানি তো, তোর সাথে সেক্স করার প্রপোজাল দিয়েছে।’ ওপার থেকে সিনথিয়ার ঠাণ্ডা মাথার জবাব।

-‘আই উইল কিল দ্যাট ব্লাডি, জারজ একটা। সে আমাকে এ কথা বলার সাহস পায় কোথা থেকে?’ চিৎকার এবার রাগে টার্ন নেয়। রাগে কাঁপতে থাকে নাওয়াল।

-‘ওহ, ইজ ইট? তুই আবার কবে থেকে তুলশি পাতা ধোঁয়া পানি হয়ে গেলি? মনে হচ্ছে তুমি কারও সাথে বিছানায় যাও না?’ ওপাশ থেকে ভেসে আসে সিনথিয়ার ঠাট্টা মিশ্রিত কণ্ঠ।

চুপসে যায় নাওয়াল, সত্যি তো সে নিজেও তো কতজনের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছে। ফিজিক্যাল রিলেশন তাদের ফ্রেণ্ডসার্কেলের কাছে এন্টারটেনমেন্টের আর পাঁচটা উপাদানের মতোই, যে কেউ যখন খুশী যেভাবে খুশী নিজেকে ইউজ করছে, ইউজড হচ্ছে।

-দ্যাট মিনস তুইও তোর কাজিনকে সাপোর্ট করছিস, বাই দ্য ওয়ে হারামিটার নাম কি? মিনহাজ?

-হি ইজ আ জেনুইন ম্যান, লেগে যা, ইউ উইল বি আম্যাইজড!

-মানে তুমিও? কাজিনের সাথে? দাঁড়া হারামিটাকে আমি দেখে নেবো, বলত নেক্সটে কে পার্টি থ্রো করেছে? প্রতিশোধের তীব্র আগুনে জ্বলছে নাওয়াল, মন মনে ভাবছে একে ছাড়া যাবে না, এমন প্যাঁচে ফেলবে যে হাঁসফাঁশ করতে করতে মরবে।

-‘ওর নিজের একটা ফ্ল্যাট আছে গুলশান একাত্তর নাম্বার রোডে, একা থাকে, চাচ্চুর সাথে বনিবনা হয় না বলে চাচ্চু ওকে এই ফ্ল্যাট দিয়ে দিয়েছে, ওটা ওর পারসোনাল ওয়ার্ল্ড,  কাউকে নেয় না ওখানে, কাউকেই না।’

-‘তো আমি কী করব? ওকে আমি দেখে নেবো।’

-‘নেক্সট পার্টি থ্রো করছে আনিফ, মিনহাজ থাকছে ওখানে।’

মনে মনে প্লান আঁকে নাওয়াল। কিভাবে ঘায়েল করা যায় মিনহাজকে, নিজেকে খুব স্মার্ট ভাবছে সে, নাওয়ালও কম যায় না, মিনহাজকে সবার সামনে অপমান না করলেই নয়, এ তার প্রতিজ্ঞা। আরেকটা প্রশ্ন মনের ভেতর ঘোরপাক খাচ্ছে নাওয়ালের, কী ভেবে ছেলেটি গাড়িতে উঠিয়ে বাসায় পাঠিয়েছিল তাকে? কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর হয়ত কোনদিনই মিলবে না, মেলে না।  

আজকে আনিফের পার্টিটাও জমবে খুব, আজ নাকি সেই মিনহাজ না ফিনহাজ ছেলেটাও আসবে, আজকেই কোপ মারতে হবে। নাওয়াল খুব করে সাজলো আজ, পোশাকের ব্যাপারেও খুব উদার আজ সে, তার রুপ দিয়ে আজ মিনহাজকে ঘায়েল করবে, যেভাবেই হোক। প্লান মোতাবেক সে পৌঁছে যায় পার্টি ভেন্যুতে। আজ ওয়েস্টিনে জন্মদিনের পার্টি থ্রো করেছে আনিফ। ততক্ষণে অনেকেই এসে পৌঁছেছে, নাওয়াল পৌঁছানো মাত্রই বন্ধুদের মাঝে একটা হুল্লোড় পড়ে গেলো।

-‘হাই ড্যুড, ইউ আর লুকিং সো ইরোটিক। আজ থাকবি? স্যুট বুক করা আছে। জমবে কিন্তু। সেইরকম!’ ইমরোজ অনেকটা দৌড়ে এসে হাগ করল নাওয়ালকে, কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল কথাগুলো।

একটু হাসল নাওয়াল, এই হাসির অর্থ হ্যাঁ হতেও পারে, না হতেও পারে। নাওয়াল মুহুর্তের মধ্যে চোখ বুলিয়ে নেয় পুরো হল রুমটার চারিদিকে। তার চোখ খুঁজছে অন্য কিছু, অন্য কাউকে। আজ তাকে একটা শিক্ষা দিতে হবে।

-‘এই যে সোনামণি, খুব তো সেজেগুজে এসেছো, ঐ দ্যাখো।’ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কথাগুলো বলে সিনথিয়া।

-দ্যাখ কী হাল করি আজ, আই উইল ব্লাস্ট দ্যাট ব্লাডি।’ রাগটাকে চেপে মুখের হাসিটা ধরে রাখার চেষ্টা করে নাওয়াল।

যা ভেবে এসেছিলো তার কিছুই হলো না আজ। কোন সুযোগই পেলো না সে। মিনহাজ আজ চুপচাপ বসে থাকলো, নাওয়াল খেয়াল করল পুরোটা সময়, না, একবারও ড্রিংক্স করেনি, কাউকে জড়িয়েও ধরেনই, কিস করেনি। নেতিয়ে পড়েছে মনে হয়, হয়ত বুঝতে পেরেছে নাওয়াল তাকে নাজেহাল করবে আজ। নাওয়ালও কোন জোশ পেলো না, পরাজয় স্বীকার করে নেয়া প্রতিপক্ষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার কোন ইচ্ছাই নেই নাওয়ালের, এতে মজা নষ্ট হয়ে যায়, আরেকদিন ধরতে হবে একে। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে আর ধরা হয় না মিনহাজকে, মানে ধরতে পারে না নাওয়াল, পরের সবগুলো পার্টিতে এসেছে মিনহাজ, সবগুলো পার্টিতেই সে চুপচাপ, মদ খায় না, কারও সঙ্গে ড্যান্স করে না। নাওয়ালের কী প্রতিশোধ নেয়া হবে না?  

পাঁচ

 

-‘হ্যালো, নাওয়াল আমি মিনহাজ বলছি, হাউ আর ইউ? তুমি আমার ফ্ল্যাটে আসবে? এড্রেস এস এম এস করে দিচ্ছি, ইচ্ছা হলে এসো, আই অ্যাম হেয়ার অল ডে লং।’ নি্লিপ্তভাবে কথাগুলো বলে লাইনটা কেটে দেয় মিনহাজ। ধন্ধে পড়ে যায় নাওয়াল। খুব অবাক হয়। প্রায় মাস তিনেকের পরিচয় এই ছেলের সাথে। পরিচয়ের আগেই এ ছেলে সরাসরি নাওয়ালকে তার সাথে বিছানায় যাবার প্রস্তাব দিয়েছিলো, আজ আবার সরাসরি ফোন করে নিজ ফ্ল্যাটে ডাকছে? সিনথিয়া তো বলেছিলো, মিনহাজ তার ফ্ল্যাটে কাউকে কোনদিন ডাকে না। যদি মিনহাজ তার প্রথম দিনের সেই প্রস্তাব করে বসে আবার? এই জন্যই কী সে নাওয়ালকে ডেকেছে নিজের ফ্ল্যাটে। সিনথিয়াকে একটা কল দিয়ে দেখবে? না এটা করা যাবে না, সিনথিয়া মুহুর্তেই রাষ্ট্র করে দেবে এই খবর। নাওয়াল ডাকাবুকো মেয়ে, সে ভয় পায় না, সে কী যাবে মিনহাজের ফ্ল্যাটে?

প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে বাথটাবে ডুবে আছে নাওয়াল, সিধান্ত নিতে পারছে না, যাবে কী যাবে না, শাওয়ার নেয়া শেষ করে দাঁড়াল আয়নার সামনে, একটা শাদা টি শার্ট সঙ্গে একটা ব্ল্যাক জিনস পরে নিলো নাওয়াল, বাবরি কাটের সদ্য স্নান সেরে নেয়া চুলগুলো এখনো ভেজা। ছোট ছোট চুল চুইয়ে এক ফোঁটা দুই ফোঁটা করে পানি ঝরছে, মাথাটা এদিক ওদিক ঝাঁকাল বার কয়েক। ভাবনাটা পিছু ছাড়ছে না, সে কী যাবে? নাকি যাবে না, এলোমেলো ভাবনারা একসময় স্থির হয়, নাওয়াল সিধান্ত নেয় সে যাবে মিনহাজের ফ্ল্যাটে। নাওয়াল ড্রাইভারকে সাথে নেয় না আজ।  

কলিং বেল চাপ দেবার আগেই ফ্ল্যাটের দরজা খুলে যায়, মিনহাজের মুখে হালকা হাসির ছটা ঘোরপাক খাচ্ছে। দরজায় কে আসছে না আসছে সব ভেতর থেকে ক্যামেরার সাহায্যে দেখছে সে!

-‘জানতাম তুমি আসবে, এসো, এসো। এদিকটায়, এখানে বসো। আমি আসছি একটু।’ মেজাজ খারাপ করার মতো কথা না- ‘আ-মি জা-ন-তা-ম তু-মি আ-স-বে!’ আজ নিজেকে শান্ত রাখবে এই সিদ্ধান্তে অনড় নাওয়াল। ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে পড়ে, প্রায় মিনিট তিনেক একা বসে আছে সে, এটা কোন ধরণের ইতরামি।

-‘তুমি শাড়ি পরতে পারো’ ভেতর থেকে একটা প্যাকেট আনে মিনহাজ। প্যাকেট থেকে বের করে একটা জলপাই কালারের শাড়ী।

নাওয়াল ভড়কে যায়, শাড়ী পরতে বলে ক্যানো, কী উদ্দেশ্য এই ছেলের, একটু ভয় ভয় করছে নাওয়ালের। না সাহস হারালে চলবে না।

-শাড়ী পরবো ক্যানো? কেন শাড়ী পরব!

-পরবে, আমি বলছি তাই পরবে।

-মানে?

-মানে কিছুই না, তুমি এই শাড়ীটা পরবে।

-আমি পারি না, কিছুটা কুঁকড়ে গিয়ে শব্দ কয়টা উচ্চারণ করল নাওয়াল, এই ছেলে এমনভাবে সব কথা বলে যেন সে যা বলে সেটাই নিয়ম, সেটা না মানলে কারও রক্ষা নাই। কী করবে নাওয়াল, চিৎকার করবে? না চিৎকার করলে কেউ শুনতে পাবে না, খুব তো সাহস করে এসেছিলো, এখন? ফোন দেবে কাউকে, সিনথিয়াকে, না কিছুতেই না, তাহলে ফুফুম্মাকে, ফুফুম্মাই বা কী করবে। ফোন দেবেই বা কিভাবে, মিনহাজের ফ্ল্যাটে ঢোকার কিছু সময় পরেই মিনহাজ নাওয়ালের কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে বন্ধ করে রেখে দ্যায়, রিং টোন নাকি তার অসহ্য লাগে। অসংখ্য দূর্ভাবনা নাওয়ালের মনে।

-ওকে, দ্যাটস লাইক আ গুড গার্ল। আমি পরিয়ে দেবো। জাস্ট দাঁড়াও, সোজা হয়ে দাঁড়াও, একটুও নড়বে না।

জলপাই রঙা শাড়ীটার ভাঁজ কোলে মিনহাজ, শুধু কী শাড়ী? শায়া, ব্লাউজও তো আছে।

-তুমি কী ফোর্স করছও আমাকে? নিজের ভেতর কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে কথাগুলো বলে নাওয়াল, কিন্তু সে খেয়াল করছে সময়ের সাথে সাথে তার ভেতরের সাহস শূন্যের দিকে দৌড়াচ্ছে।

-‘হ্যাঁ, জাস্ট ক্লোজ ইয়োর আইজ, আই সে ক্লোজ!

এখন নাওয়াল একজন হাল ছেড়ে দেয়া মাঝি। চোখ বন্ধ করে সে, কিছু করার উপায় নাই, হয়ত আরও খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে তার জন্য, এই ছেলে এতো রুড! 

-‘ওকে নাউ ইউ ক্যান ওপেন ইয়োর আইজ’ হঠাৎ কণ্ঠ পাল্টে ফেলে মিনহাজ, যেন প্লেগ্রুপ বা নার্সারী ক্লাসের কোন বাচ্চার ক্লাস নিচ্ছে সে, একেবারে সফট টোন কোথা থেকে এসে হাজির হলো? নিজেকে চিনতে পারে না নাওয়াল, এক অন্য ধরণের ভালো লাগা কাজ করে শাড়ী পরা নিজেকে দেখে, কিন্তু এক গাদা ভয়, শঙ্কা তাকে আবার বাস্তবে ফিরিয়ে নিয়ে আসে, চুপ করে থাকে সে।

-‘এদিকে আসো, এই ঘরে’ বলে নাওয়ালের হাত ধরে তাকে কোনার দিকের একটা ঘরের দিকে নিয়ে যেতে চায় মিনহাজ।

-‘আবার চোখ বন্ধ করো’ কোন কথাই বলার সুযোগ দিচ্ছে না নাওয়ালকে, যেন এটা তার টেরিটোরি, এখানে সেই রাজা। আর নাওয়ালও, যেন তার সব কথারা শুকিয়ে গেছে আজ।

রুমের ভেতরে নিয়ে কী করবে মিনহাজ?

-না, রুমে ক্যানো যাবো, আই ওয়ান্ট টু গো টু হোম, আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না, হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট ফর্ম মি?

-‘ভয় পেয়েছো? খুব না আমাকে শায়েস্তা করবে বলেছিলে?’ এই বলেই নাওয়ালের হাত ধরে টানতে থাকে তাকে, নিয়ে আসে একটা রুমের সামনে, রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে মিনহাজ, ‘এসো,

নাওয়াল বুঝে গেছে তার কিছুই করার নেই আর, মিনহাজ যা বলবে তাই করে যেতে হবে এখন। ঘরে ঢোকে সে। ঘরে ঢুকেই হতবাক হয়ে যায় সে। এই জীবনে এতোটা বিস্ময়াভিভূত সে কোনদিনই হয় নি। 

ঘরের দেয়াল জুড়ে অনেকগুলো পেইন্টিংস, কোনটায় ব্যবহার করা হয়েছে পেনসিল, কোনটায় ওয়াটার কালার, কোনটা আবার ওয়েল কালারে, কিছু কিছু প্যাস্টেল কালার, কোনটাতে ব্যবহার করা হয়েছে এক্রিলিক কালার, এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক ছবিই নাওয়ালের।

সামনে এসে দাঁড়ায় মিনহাজ, বলতে থাকে, “শাড়ীটা মায়ের, মাকে তো আমি দেখিনি, আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে মা আকাশ হয়ে গেছে, আকাশ থেকেই আমার সাথে কথা বলে মা, বাকি ছবিগুলো দেখছো না! ওগুলো মায়ের। আমিই এঁকেছি। আকাশ থেকে মা-ই তোমার কথা বলেছে, বলেছে, তোর জন্য একটা ‘উপহার’ আছে, নাওয়াল নামের অর্থ তুমি জানো? নাওয়াল অর্থ ‘উপহার’…” 

ফুফুম্মার কথা মনে পড়ে নাওয়ালের, ‘জীবন অনেক সুন্দর’ জীবন আসলেও সুন্দর। এই সুন্দর জীবনকে আরও সুন্দর করে সাজাবে নাওয়াল।

 

কিন্তু ভিডিও ক্লিপটা! যেটা ঘুরে বেড়াচ্ছে নেটে? 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত