| 29 মার্চ 2024
Categories
এই দিনে কবিতা সাহিত্য

কবিতা-ভাবনা ও কবিতা

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

আজ ০৩ জানুয়ারি কবি ও কথাসাহিত্যিক সুবীর সরকারের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।


 

 

কবিতাভাবনা

 

০১

আলস্যমন্থর এক বিপন্নতায় খেঁজুররসের জায়মানতার ঘোরে দাঁড়িয়ে থাকার অচলায়তনে আশ্চর্‍য কুহককুয়াশা ঘিরে ধরে। দাহ ও যন্ত্রণাময় সময় পর্বে শূণ্য পরিসরে আশ্চর্‍য জেগে উঠতে থাকে অন্তহীন সব ধান্যক্ষেত। তার সমুহ সোনালিরঙের উজ্জ্বলতায় যেন উজলধারার চিরন্তনতায় পাখিঝাঁক ভেসে আসে কবেকার রহস্যময় এক পৃথিবীর ওপার থেকে। আর এই ভাবে বিনির্মিত হতে থাকে সোনালি ধানের পথ। পথসকল ছুঁয়ে থাকে নবান্নের হাওয়া।

০২

পাকা ফসলের সব ভরভরন্ত মাঠঘাট।শান্ত উত্তরের লোকায়ত গ্রাম-গঞ্জে ফসলের ঘ্রান ভাসে। সোনালি রঙের জাম্পকাটে অত্যাশ্চর্‍য এক লোকায়ত জংশনের মধ্য দিয়ে খুঁজতে থাকি সোনালি ধানের পথ যা লোকোলোকত্তরতায় লীন হতে থাকে। আবার  সোনালি ধানের পথ মাড়িয়ে তরাই-ডুয়ার্সের জঙ্গল থেকে হাতি বেরিয়ে আসে। হাতি মাহুতের গানও বাজে সোনালি ধানের পথে পথে-হাতিরে তুই দমিয়া দমিয়া নাচেক রে/মধুমালার  হাতিরে…মনে পড়ে সোনালি ধানের ধুলোমলিন আলপথ ধরে একদিন পৌঁছে গিয়েছিলাম ভোটপট্টি রাজারহাটের সাহেববাড়ির উঠোনে। এই আমার জীবন,আমার কবিতাযাপন।

…………………………………………………………………………………………………..

কবিতাগুচ্ছ 

 

ফরচুন টেলিং

বেড়ালের মতো পেরিয়ে এলে জোড়া বাঁশের
সাঁকো
কাকের বাসায় ডিম রেখে আসা কোকিল
সারারাত দাঁড়িয়ে ছিলাম খেজুর গাছের
নীচে
ধোঁয়াশায় মুখ ঢাকছেন চিরবিষন্ন
মানুষেরা,
গতি না কমিয়েই প্রকান্ড লাফ
তাঁবুতে শীত ফিরছে
হাওয়ার ধাক্কায় খুলে যাওয়া
জানালা
রোদে পোড়া লালমুখ
ঝলসে ওঠা আলোয় ডগ- শো
নিখাদ ইয়ারকি তবু প্রেষ্টিজ ডুবে
যাচ্ছে
কাঠের টুল,দরজায় বেল নেই
মেঘ সরতেই চাঁদের ফোটা
শীত শীত ভাব,মাথা দুলিয়ে গান
শুনছি
ঠোঁট বাঁকিয়ে কথা বললে গলাব্যাথা
হয় না
ভিড়ের রাস্তায় ফেলে আসা একাকীত্ব
চাপাস্বরে কথা বলছে কাঁঠাল পাতার
জঙ্গল
মিছিমিছি উল্কি আঁকা করতল
এনে দেবে চুলের উঁকুন !
গুলতানির ভিতর কহিনির মোচড়
হন্টেড হাউজ।গল্পের পোকা ঘোরে
ঘরময়
আমাদের অ্যাটাক করছে বাদুড়
আবার মেঘের আড়ালে চাঁদ
গ্যাপ দিয়ে দিয়ে টিকমার্ক
গতি কমাও বাঁকের মুখে
ভরা বর্ষায় ডিঙিনৌকো

 

০২

রাবার ব্যান্ড লাগানো মুখোশ
হাতে হাতে ঘুরছে রেকর্ডেড
ভয়েস
শব্দ করে উড়িয়ে দেওয়া হয়
পাখিদের
পাথরে ধাক্কা খেয়ে নবীকৃত
ফরচুন টেলিং

 

০৩

তীব্র ক্রোধ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছি
গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যে করতালি
চিরাগদান,পানের বাটা
ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দেওয়া
পথবাতি
কবেকার চুলের ফিতে
ভগ্নাংশ হয়ে বিছিয়ে পড়ছে
মেঘ
উদ্ভট আগুনের পাশে জিরাফ
ছিটকে আসা গানগুলিতে টানটান
ক্রোধ

 

বিজ্ঞাপনবিরতি

অতএব নিজেই লাগিয়ে নেব সমস্ত বোতাম
প্রতিরোধ জারি রাখলে যথাযথ এসে যাবে
হলদে খবর । ধীরগামী বাসে ঠায় দাঁড়িয়ে
থাকতে হয়।ধন্যবাদ ছাড়া একটি কথাও
নয়।শ্যাম্পুর বিঞ্জাপন থেকে উড়ে আসছে
চাঁদ ও চিরাগ

 

ঘুঙুর

যে কোনো রাস্তায় যাও দেখবে
মরণপণ লড়াই। নদীর ধারে কুড়িয়ে
পাওয়া পাথর নদীতেই ছুঁড়ে দিচ্ছি
রাত জাগি, টোকা মেরে শীত সরাই
সেতুতে ওঠার আগে অবস্থান বদল
আর ভ্রু-সন্ধির ঘাম ঘুমের ভিতর
আর ঘুঙুরের মতো বাজছে বিদ্রূপের
সিটি। কিছু কলঙ্ক লেপে দাও, নিচু হয়ে
কুড়োই।

 

গৌরচন্দ্রিকা

রক্ত ডানা মেলে উড়ছে। ডানা জেটপ্লেন। ডানা
ছায়া ফেলে জেলা হাসপাতালের ওপর। আর
ফাটাফাটি রাস্তা। গ্রন্থাগার আগলে রাখে
বাঁশবাগান। আর সেনাঘাঁটি ডিঙোলেই বাতিঘর।
জলকলস।
বরং রে রে  করে তেড়ে আসুক রোদ
বরং গৌরচন্দ্রিকা শেষ এবার ঘটনায় ঢুকি
আর পাখিপ্রকল্পের মুখোমুখি বধূবরণের গেট

 

তথ্যছবি

টানা রিকসায় চালু হচ্ছে দিন, বাক বিদ্যুৎহীন
যুগলবন্দী ভেস্তে যায় বুঝি তবু এই শহরেই আছে
তথ্যচিত্রের সূচনাতে হাজার কলসি গান গায়
স্বপ্ন দেখাচ্ছে মাঝখান থেকে তুলে আনা কয়েক লাইন
আর পিচরাস্তায় ছুটে চলে শব্দ ও হারমোনিয়াম

 

শোকচিহ্ন

হারিয়ে যাবার কথা উঠলেই একটা গোটা
হাসপাতাল। জন্মদিন পালন করি রক্ত
ও ডেটল দিয়ে। অ্যাপ্রন পরা নার্স। অপারেশন
টেবিল থেকে গড়িয়ে নামছে বেড়াল। আর
হাসপাতাল এগিয়ে আসে শিশিবোতল ও
গিটারের দিকে

 

দিদির মৃত্যুর দিন

দিদির মৃত্যুর দিন বৃষ্টি হচ্ছিলো, বৃষ্টি হচ্ছিলো আর
থেকে থেকে হাওয়া, প্রবাল প্রাচীরের ওপর দিয়ে
হেঁটে আসতে গিয়ে দেখি বৃষ্টি টেনে নিয়ে  যাচ্ছে
সবাইকে। আর গোল হয়ে এগিয়ে আসছে
শোকচিহ্ন দিদির মৃত্যুর দিন।

 

আপেলগুচ্ছ

মেঘের ছায়ায় মেঘ মেখে বসে আছি
পুকুরের জলে বয়াতির চুল
কাদামাটির টিপ, শ্যাওলা জমবে পায়ের
পাতায়
শিস বাজিয়ে চলাটা অভ্যেস
যতদূর যাও ধাওয়া করবে সপর্দংশন
নদীকিনারায় পাখি, আপেলগুচ্ছ

 

ধানচাষির ডাইরি

ধানচাষি মাপছে ধানের সবুজ
দূরত্ব মান্য হলে
গা ডোবানো মহিষ
অনন্তের গল্পে বয়ে যাওয়া গন্ধ
কিংবা স্যালোপাম্প, সেচপ্রকল্প

 

শিকারখেলা

০১

ইঁদুরকে তাড়া করছে বেড়াল
বেড়ালকে তাড়া করছে কুকুর
মেঘকে আড়ালে রাখে বৃষ্টি
চাউনিমায়ার পাশে কথার
আলো

 

বাঘের আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে এসে
ভয়ংকর দিন শুরু হয়
ডোরবেল না বাজলেও করাঘাতে কেঁপে
ওঠা

 

০৩

প্রিয় শিকারখেলা,তুলতুলে লোমে
ভরা বেড়ালছানা
জঙ্গল প্রায় শেষ,
নালায় পড়ে থাকে খুন হওয়া
মানুষ

 

০৪

শব্দ ধরে ধরে দৃশ্য ও ঘটনায়
একে একে উঠে আসবে ঝাঁকের
কই
বেচারি হরিণ,ডিয়ার পার্কের সামনে
গুলি খেয়ে মরে গেল
সবশেষে গামবুট,পায়ের
ছাপ

 

হরফলিপি

সীমারেখা টানা হলো।বেশ রাতের দিকে তুমি চলে গেলে।মাঠের শূন্যতায় এগিয়ে দিলাম ঠান্ডা হাত-পা

 

০২

পালকের গন্ধ আছে।গানমাঠের সুর ওড়ে।
ঝরাপাতাদের দেখে মুচকি হাসির ঢেউ।আগুন পিঠে চেপে হুংকার ছাড়ি। চাপা কান্নার তালে তালে বিষাদ নামে

 

০৩

বাক্যগঠন অসম্পূর্ণ।হাওয়া খেতে বেরোয় ফুলমণি এক্কা।রক্তবমির শীতলতায় অশ্রুদানা। আমরা গুজব গুজব বলে চিৎকার করে উঠি।
 
 
০৪
হাওয়াকলের পাশে মোরগডাকা বিকেল।আর রেলিং ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে উপকথার নায়ক।

 

০৫

মোদ্দা কথা সময় দেখতে হবে অথচ দেখতে পান না। আর রাষ্ট্রবিপ্লবের অংশে এসে হোঁচট খায় পথনাটক।

 

০৬

তালুতে বন্দীনি চাঁদ। সতর্ক। মাঝে রাত্রি,গড়াগড়ি মদের বোতল। পিচকারি। খোলামেলা দুপুর ধাঁধালো। আমরা ব্যবহৃত হচ্ছি সাবানের বিজ্ঞাপনে।
 
 
 
 
 
 
 
 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত