বন্দে যাব
বেশ গরম পড়েছিল। কোথাও বাতাস ছিল না। কোন গাছের পাতা নড়ছিল না। সারাদিন প্রখর রোদের পর চরাচর ঝিম ধরে ছিল। মাটি উগরে দিচ্ছিল তাপ আর ছোট্ট ছেলেটা কাঁদছিল। ছেলেটার মা চেষ্টা করছিল ওকে ঘুম পাড়াতে, কিন্তু তার কান্না পুরো লোকালয়কে সন্ত্রস্ত করে তুলছিল। চার বছরের ছেলেটাকে নিয়ে তার মা বেড়াতে এসেছিল গ্রাম থেকে মফস্বল শহরে- আত্মীয় বাড়িতে। পাকা মূলঘরের পেছনে টিনের বেড়া আর ছাউনি দেয়া ঘরটায় তাদেরকে থাকতে দেয়া হয়েছিল। টিনের ঘরটাতে যেন দোযখ নেমে এসেছিল।
‘বাবাগো, আর কাইন্দ না গো! এহন ঘুমাও। অনেক রাইত হইচে।’
কিশোরী মায়ের এই কথায় ছেলেটা হঠাৎ কান্না থামালো। অন্ধকারে মায়ের মুখের দিকে তাকালো। তারপর বলল: মা, বন্দে যাব।
*বন্দ: কৃষিজমির মাঝে খোলা জায়গা
তথাপি ভালোবাসা
অবশেষে তারা সাব্যস্ত করল তাদের মধ্যে ভালোবাসা বলে কিচ্ছু নেই। তবু তারা টেনে টেনে খুলে ফেলল সবকটি দেরাজ। আলগোছে বের করে আনল শার্ট, প্যান্ট, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, আংরাখা, আন্ডারওয়ার শাড়ী, সায়া, কামিজ, ব্লাউজ, ব্রা, ব্লেজার। তারপর তন্নতন্ন করে খুঁজে দেখল তাদের হারানো ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া যায় কিনা। শুঁকে দেখল স্থিরচিত্রের যতসব এলবাম, ডায়েরির রংচটা পাতা। ব্যর্থ হয়ে তারা বের হয়ে পড়ল ঘর থেকে। খুঁজে দেখল পার্কের বেি , বৃক্ষরাজি, তারপর ছুটল সিনেমা হলের দিকে। তথাপি তারা ঘরে ফিরে এলো খালিহাতে। তার পর পরই নিজেদের উপর হামলে পড়ল শারীরিক ক্রিয়ায়। প্রতিবার সমাপ্তির পর তারা পরস্পর পরস্পরকে ধিক্কার দিল, ঘৃণায় কুঁচকে উঠল তাদের মুখ। অতঃপর তারা ক্লান্তদেহে ঘুমিয়ে পড়ল আর স্বপ্ন দেখল ভীষণ জলোচ্ছ্বাসের মুখোমুখি দুটি মানুষ- পরস্পর সংলগ্ন। নারীটির স্তনের ওমের ভেতর দাঁড়িয়ে পুরুষটি তার সমস্ত পৌরুষকে একত্রিত করল সাপের ফণার মতো জলোচ্ছ্বাসের বিপরীতে। নারীটি পুরুষটির দেহের দীপ্তি গায়ে মেখে তার সমস্ত সত্ত্বাকে ডেকে আনল এই সমূহ সংগ্রামে, হাত রাখল পুরুষটির হাতে।
ঘুমিয়ে থাকা নারী-পুরুষ তাদের নিজ নিজ স্বপ্নের ভেতরে হাতড়ে বেড়ালো জলোচ্ছ্বাসের-মুখোমুখি নারী আর পুরুষটির হাত, পড়তে চাইল তাদের চোখের ভাষা আর খুঁজে চলল ভালোবাসা। যদি পাওয়া যায়!
কবি, গল্পকার
প্রকাশিত বই:
কবিতা: ভরা কটাল
ছোটগল্প: হাসিকান্না স্টোর