সুহিতা সুলতানা’র একগুচ্ছ কবিতা 

Reading Time: 2 minutes

আজ ১৯ সেপ্টেম্বর কবি সুহিতা সুলতানা’র জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।


 

দুঃসময়ে অদ্ভুত ধারাপাত খুলে বসেছে যে জন 

পুনর্জন্ম নেই তাই মাকে ফিরে পাবার বিষয়টি চিরতরে স্থগিত হয়ে গেল!

এখন কেবল স্মৃতির ভেতরে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা! এই মহাশূন্যতার ভেতরে

যাকে আমি ভালোবাসতে চাইলাম সে এক মহাজ্ঞানী চৌদিক আঁধার করে 

রাখে! এখন ভোরের হাওয়ায় ভেসে আসে লোবান আর ঔষধের মিশ্রিত রঙ

সামান্য জীবনে শুধু বেঁচে থাকার জন্য কে কার কাছে অবনত হয়ে থাকতে 

চায়? জীবন বড় রহস্যময়, ঘাসের চেয়ে আরো ছোট! এখন চারপাশে আমি 

ছাড়া কেউ নেই। কষ্টগুলো মৃত্যুর মতো নির্ধারিত! মা শিখিয়েছিলেন, 

অসত্যকে ঘৃণা করতে আর অন্যায়ের সাথে আপোষ না করতে! দিনরাত্রির 

ভেতরে মানুষের স্বার্থপরতা কত ভয়ঙ্কর তা একটু একটু করে এখন উপলব্ধি 

করা যায়। ব’র বদলে যে অক্ষরটি লেখা যায় তার কোনো মানে হয় না 

দুঃসময়ে অদ্ভুত ধারাপাত খুলে বসেছে যেজন সে-কি মানুষ না-কি যমদূত?

প্রিয় পাঠক যারা রাত জেগে আমার কবিতার পাশে বসে থাকেন তারা 

কোনো প্রতিযোগিতায় নেই, সহজ সাবলীলভাবে আমার শব্দসমূহ শেষবার 

অবলোকন করতে চায়। অতএব আমার একান্ত ভাবনার ভেতরে তুমি নেই! 

 

 

রক্তাক্ত জলের কাতরতা

তুমি যেদিকেই যেতে চাও সবদিকে সমান সংকট!

তোমার দীর্ঘ অপেক্ষার ভেতরে যেদিন তোমার ছিঁপে 

হাঙর উঠে এলো তখন চৌ-দিকে রক্তাক্ত জলের 

কাতরতা আর সবুজ অরণ্যের বলিরেখা ধীরে ধীরে 

তোমাকে মাঠভর্তি অন্ধকারের দিকে নিয়ে যেতে 

থাকে! হাওয়ায় উড়তে থাকে শূন্যতা! আর না দেখা

অরণ্য। তোমার উদাসীন মন বৃষ্টিকে তুচ্ছ ভেবে 

আকড়ে ধরলো ধু ধু মরুভূমি। ছায়া ও দিগন্তের দিকে 

নাগরিক মধ্যবিত্ত জীবন! প্রতিদিন তোমার বাসভর্তি 

মানুষের সাথে বাউলের মতো ঘরে ফেরা, পথের প্রচ্ছদে

জলের নিঃশ্বাস। ঘুমন্ত হাওয়াকল তোমাকে স্তব্ধতার 

ভেতর দিয়ে মাঝরাতের দৃশ্য সীমার কাছে নিয়ে যায়। 

অনন্ত মৃত্যুর সাথে 

ঘোড়াটি অবশেষে পাথরের পাহাড়ের কাছাকাছি পৌঁছোতে পেরেছিল!

অদ্ভুতভাবে তার বা-পায়ের ভাঙা হাড়টি রক্তাক্ত পথের ওপর অনন্ত 

মৃত্যুর সাথে মিশে যাচ্ছিল; বিস্ময়করভাবে যুদ্ধে যাবার আশায় 

ঘোড়াটি তার মৃত মনিবকে পাহাড়ের ঢালুতে শুইয়ে দিয়ে পিঠে 

পর্যাপ্ত পানির জার নিয়ে যুদ্ধমাঠের দিকে ছুটে যেতে চাইছিল! 

রাত্রির ম্লান অন্ধকারে জেরুজালেমের পথ কোনদিকে ঠাওর না হলেও

তার মন ও চোখের দিব্য দৃষ্টি তাকে একটু একটু করে স্বজনের 

কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছিল! এক অদম্য শক্তি তাকে শহীদ 

আসকারের রক্তাক্ত নিথর দেহের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল ঠিকই; 

ততক্ষণে ডানায় ভর করে বীর যোদ্ধা আসকার উড়ে যাচ্ছিল 

সাত আসমানের দিকে…পেছনে পড়ে ছিল আগুনের নদী, 

হাবিয়া দোযখ আর অসংখ্য যোদ্ধার মৃত দেহ! ক্রন্দনরত 

ঘোড়াটির অবসন্ন দেহ মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল 

ঘাতকের অট্টহাস্য তাকে ক্রমশ লোহার খাঁচার ভেতরে পর্নোগ্রাফির 

মতো ঝুলিয়ে লাল মদের সাথে শূকরের মাংস ভক্ষণে মেতে উঠেছিল!

 

 

 

অসমাপ্ত কবিতা 

গভীর রাতে ভ্যানগঘের কর্তিত কান ও প্রদোষ পালের দাঁত উঠে

বসলো আমার কবিতাগ্রন্থের ঠিক পাশে!

এ দৃশ্যটি যদিও আমার কাছে সুখকর নয় তারপরও-

দু’জন প্রিয় শিল্পীর কান-দাঁত বলে কথা! 

ভ্যানগঘের কর্তিত কান বেয়ে লাল রক্ত চুঁইয়ে পড়ছিল আর
প্রদোষ পালের অর্ধ দাঁতসমগ্র ল্যাপটপের স্ক্রিনে ভেসে বেড়াতে লাগলো! 

এই হলো নিয়তি! তবু অনিদ্রার কালে এঁদের আগমন আমাকে

নতুন দিগন্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল!
দৃশ্যত আমি কী আরও কিছুর জন্য অপেক্ষা করছিলাম?

র‌্যাবোর নরকে সেদিন ঢু মেরে দেখলাম তিনি

আগের মতই আছেন! সমুদ্রের জলে ভেসে যাচ্ছে রিলকের প্রেম 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>