Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

সুজিত দাসের কবিতাগুচ্ছ

Reading Time: 3 minutes

আজ ১০ নভেম্বর কবি সুজিত দাসের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার কবিকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।


 

আনপ্লাগড্‌/১৮

মাদমোয়াজেল,
আপনি কেঁদে ফেললেন। মুক্তোদানা গড়িয়ে পড়ল আপনার কুলচেরা চোখ দিয়ে। সে এক অপার্থিব দৃশ্য। কেঁদে ফেলার পর মানুষ কষ্টিপাথরের দেবতা হয়ে যায়। অথচ আপনি আরেকটা পুরস্কারের প্রত্যাশায় এই অশ্রু বিসর্জন করলেন। চয়েস ইজ ইয়োর্স, মাদমোয়াজেল কিন্তু আপনি তো লিখতে পারেন। সবাই অধম বলে আপনি উত্তম হইবেন না!

সেনোরিটা,
সাহু নদীর পাশে শেফালি বৌদির দোকান আছে। তিন কুড়ি দশের দোকান। ওখানে গাছের ছায়াগুলি দীর্ঘতর হয়। ওখানে বিষণ্ণ যুবকেরা চৌকো কবিতা লেখে। হিট হয়। হট থেকে হিট। উত্তাপ বড় কঠিন চিজ্‌, সেনোরিটা। ‘আহা উত্তাপ কত সুন্দর তুই থার্মোমিটারে মাপলে’… শ্রীজাত। মনে পড়ে?

টেঁপির মা,
ছুঁয়ে থাকতেই হবে? মেসেজ করতেই হবে? আছি তো, ছায়ার মতো। পুষি বেড়ালের মতো। ওই যে সয়েডের টিপ,সেঁটে রেখেছ আয়নায়, আছি ওইখানে। তোমার মাইগ্রেনে আছি, রাত দুটোর ব্যর্থ সঙ্গমে আছি। ব্যারেন আইল্যান্ডে আছি। তীব্র ভলক্যানোতে আছি।

ফুজিম,
পেঁয়াজের খোসা ছাড়াও যখন, যখন নিউট্রালে রাখো তোমার হেমন্ত স্কুটি … তখনও দেখি তোমাকে। ইনস্যাস রাইফেল থেকে গানপাউডারের চরম সুবাসে তোমাকেই খুঁজি আমি। এই মাঝবয়েসে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হয়ে উঠি। লাইন অফ কন্ট্রোল তুচ্ছ করে ফেলি এক লহমায়। বারুদ, মাদামে, বারুদ। গৃহস্থের কুলুঙ্গিতে লুকিয়ে রাখা গীতা যেন।

সেনোরা,
চোখের জলের অপচয় করবেন না। আপনার কোমর থেকে অলকানন্দার জন্ম। অকৃতজ্ঞ প্রেমিকদের আপনি তুচ্ছ করুন, এইবেলা। অর্কিডের জন্মদিনে শহরের সব মাফিয়াকে কফির কাপে নিমন্ত্রণ জানান। ফোনে ডেকে ফেলুন তামাম কার্টেল বাহিনীকে। মিহি টোনে ডাকুন। আপোষ করে ফেলুন। এক দশকে সংঘ ভেঙে যায়, আপনি দশক ভেঙে ফেলুন অশুভ সংঘে। নিঃশর্তে।
সুচরিতা,
আপনি আমার আয়ুরেখা দেখে ফেলেছেন। জন্মদাগও। এবারে এপিটাফ লিখে ফেলুন। আপনার সিল্কের আঁচলে রাইনের মারিয়ার কবিতা দিয়ে জিওমেট্রিক ডিজাইন বানান। আপনার নীল রক্তে কোনও মানডে ব্লু নেই। মানডেন দৃশ্যকল্প আছে, অনেক। ক্যান্টারবেরি টেলসের ভূমিকা আছে। চাওলাও।

তে আমো, কেরিদো। আদিওস্‌।

 

 

অ্যাসফল্ট ম্যাস্টিক আর বাদামি রঙের বুনোফুল

তিতিদি, বালাসন নদী তোমার কথা শুনত। শুনতই।
তুমি শিখিয়েছিলে, কীভাবে নদীর ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া যায়
তুমিই বলেছিলে, তীব্র আলিঙ্গন মানে অনেকদিন বাদে বৃষ্টি।
জলাপাহাড়ের ওই নির্জন রাস্তায় স্পিড কমাতে তুমিই না করেছিলে
বলেছিলে, অ্যাসফল্ট ম্যাস্টিক আপনা থেকেই শুকিয়ে যাবে একটু বাদে।
তোমার বাংলা উচ্চারণ পুরো লোরেটোর অথচ গান গাইতে যখন
একেবারে জ্যোত্‌স্নাময়ী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রেয়ার লাইন
আমি সামান্য রায়গঞ্জ কলেজ, ইউনিয়ন করি, কাফকা পড়া হয়নি, সুধীন দত্তও।
জীবনে প্রথম চশমা পরা নারী তুমি, কী অনুপম আলস্যে সিগারেট খেয়ে যেতে
তবু তিতিদি, টয়ট্রেনের হুইসেল যে এত তাড়াতাড়ি বেজে যাবে, ভাবিনি।
ভাবিনি, দার্জিলিংয়ের জলাপাহাড় থেকে পুরুলিয়ার ভালপাহাড় এত কাছে
ভাবিনি কারণ ২৫শে ডিসেম্বর আমাকে বাদামি বুনোফুল উপহার দেবে বলেছিলে।
বলেছিলে, ক্যারল গাইতে গাইতে হারিয়ে যাবে শিমুলবাড়ির চা-বাগানে।

 

 

 

গুড মর্নিং, কলকাতা/ ৩৪ 

ভুটানঘাট পর্বতমালার বয়স বাড়ে না। একবার যদি  তল্লাটে যাও বুঝবে পাহাড়ছোট হোক বা বড়তার বয়স বাড়ে না। ভুটানঘাট হিমালয়ান রেঞ্জে। চুলের কাঁটার মতো বেন্ট। হেয়ারপিন স্টিয়ারিং রেডিয়াস। চিরসবুজ।

আরাবল্লী পাথুরে পাহাড়। ন্যাড়া। মাঝে ছবির রাস্তা। কবিতার বাঁক। ফুলস্টপের ভিউ পয়েন্ট।

বর্ষায় রামধনু। সিলেবাসে রং। আকাশ ফিরোজা।

পশ্চিমঘাট পর্বতমালার বয়স থেমে আছে সেই চৌত্রিশেই। একদিক বৃষ্টিচ্ছায়। অনেক পাখি। প্রচুর  জনজাতিধামসা মাদল কে সিরিজকাউন্টার সপিয়োনেজ ইত্যাদি।

এসব আলোচ্য নয়। মোদ্দা কথা পাহাড়ের বয়স  বাড়ে না। চিরহরিৎচিররুক্ষ… এসব বৃত্তের বাইরে।পাহাড়ের বয়স বাড়তে নেই। পাহাড় মানে ৩৪(), বড়জোর ৩৬(বি), ইনার ওয়্যার নেইপিওর কটন। মাঝে মাঝে দু – একটাপিকচার পোস্টকার্ড গ্রাম।  ঝুম চাষ। প্রজাপতি মেয়েগালে লোহিতকণিকার ম্যাপ। ক্যাকটাসের গ্রীনহাউস যেন নৈবেদ্যের চূড়া

এদেশে ক্যাকটাস থেকে টাকিলা (মনান্তরে টেকিলা)হয় না। সেটা মেক্সিকোতেই হয়। এদেশে ক্যাকটাস থেকে লাল ভারমিলিওন কিংবা ভায়োলেট মিসচিফ ফুল হয়। সেসব ফুলের ঘ্যামই আলাদাবৃন্ত নেই।  তবু পাহাড় আছেনৈবেদ্যেরচূড়া আছে। মেঘের  বোঁটা চুইয়ে ঝরে পরা অসময়ের বৃষ্টি তো আছেই। পাহাড়ের আয়তন ৩৪(), বড়জোর ৩৬ (বি)  যাদের চৌত্রিশে আপত্তি (চৌত্রিশ যাঁদের কাছে  একটি অস্পৃশ্য শব্দ), তাঁরা ছত্রিশে মন দিতে  পারেন। চয়েস ইজ ইয়োর্স।

ভুটানঘাট পর্বতমালার বয়স বাড়ে না।

আরাবল্লী পুরনো বোতলে নতুন মদ। দিন গেলে  নেশা বাড়েরাত বাড়লে নেশা হা ডু ডু খেলে।

পশ্চিমঘাটের মাধ্যমিকের রেজাল্ট এখনও  বুকলেটেই আসে। এই তিনটে পাহাড়ের সামনেই  বিকেলের দিকে সাইকেলের গতি শ্লথ হয়। তিনটে পাহাড়ের লেটারবক্সেই ভুল বানানে প্রেমের চিঠি  আসে। এই তিনটি পাহাড়ের বাবারা ড্রেসিংগাউন  পরেনপাইপ খান এবং ঠোঁট না নাড়িয়ে কথা  বলতে পারেন। একজন পাহাড়ি স্যান্যাল হলে  অপরজন কমল মিত্র বা বিকাশ রায়।

পাহাড়ের বয়স বাড়তে নেইমেয়েদেরও।

মেয়েদের বয়স বাড়লে ঘোর অশৈলীমেয়েদের  বয়েস বাড়লে ‘ল্যাম্পপোস্ট থেকে খসে পড়ে বাতিবালিকার ঝুমকো বরেলি বাজারে হারাবে বলেই না এত কবিতার আয়োজন। বরেলি কি বাজার মে ফিফটিন পয়েন্ট হিরেকুচির স্টাডহারাবে বলেই না  মরণ রেতুহুঁ মম শ্যামসমান।

কোনও পাহাড়ই কাল্পনিক নাকোনও শৃঙ্গ অজেয় নয়। চেস্টা করোসবার হবে। কৃষ্ণ বলোসঙ্গে চলো ওবে দ্য ট্র্যাফিক রুল। হর্ণ প্লিজ অ্যান্ড বি হর্নি।  মেটাল রোড আছেপাকদন্ডী আছেচোরাবাটো আছেমুথা ঘাস আছে। যেকোনও একটা পথে টপে পৌঁছনো যাবেই। শেষ ল্যাপে হৃদয় মুখে চলে  আসবেইয়োর হার্ট উইল কাম টু ইয়োর মাউথ।  হ্যামস্ট্রিং ছিঁড়ে যেতে চাইবেতবু মাউথ অরগ্যানে শেখা প্রথম গানেই তো ইরানি বালিকার মরুঝড়ের মত ডেবিউ।ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড। সে কারণেই পাহাড়ের  বয়েস বাড়ে নাপাহাড়ে প্রচুর পাখিএজ মিরাকল নেই। পাহাড় একটি রিঙ্কলফ্রি চ্যাপটার। পাহাড়ে একটিই ন্যাশনাল হাইওয়ে।  ৩৪(), বড়জোর ৩৬(বি) হেরিটেজ হাইওয়ে।  স্বপ্নের রোপওয়ে।

ভুটানঘাট একটা উদাহরণ মাত্র।

আরাবল্লীর নাম নিতেই হয়তাই। পশ্চিমঘাট  ছটফটে টুয়েলভথ উয়োম্যান।

ইন ফাইনযে কোনও ঋজু পাহাড়ই আসলে একটি কোমল নারী। তার বাঁকে বাঁকে পপলার আর  পাইনের সারি। পাহাড়ে বিউগল বাজেআবার এই পাহাড়েই জলতরঙ্গ বাজায় স্কুল পালানো ঝর্ণা।  পাহাড়ের অ্যাডমিট কার্ড নেইবার্থসার্টিফিকেট  কবে হারিয়ে গেছে। পাহাড় একটি ৩৪(তম  ফেয়ারিটেল।

পাহাড়ের বিয়ে পালিয়ে হয়মিস্টি খেয়ে নয়। দ্যাট ইট।

 

 

 

 

আমাদের কফি ও কামান একসাথে ঠান্ডা হয়


অনেক দূরে, তিনদিক ঘেরা এক ওলন্দাজ সিটাডেলে লুকিয়ে রাখব তোমাকে। পাহারা দেবে অবসর নেওয়া জলদস্যুর দল। তাদের অনেকেরই একচোখে ঠুলি, অন্যটি সমুদ্রনীল। গোপন ডেরা থেকে আমরা সংকেত পাঠাব প্রিয় মানুষজনকে। পায়রার পায়ে, হ্যান্ডমেড কাগজে। আমাদের চিঠি, মেসেজ এসব উড়তে উড়তে, ভাসতে ভাসতে গোবিন্দপুর কিংবা সুতানুটির নগরে, বন্দরে হেডলাইন হয়ে উঠবে। জারি হবে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ।


এই শহরের সব ইনবক্স ভরে উঠবে কেচ্ছায়, নখদর্পণে ভেসে উঠবে তোমার সমুদ্রস্নানের ছবি। সেই মাহেন্দ্রক্ষণে, কফিকালো এক সন্ধ্যায় স্যাডসং গাইব আমরা। তুমিই গাইবে। আমি শুনব, শুনব, শুনবওওওও। আমাদের কফি ও কামান ঠান্ডা হবে একসাথে। ঢেউয়ের মাথায় নেচে উঠবে ফসফরাস। স্লো-মোশনে উড়ে যাবে সাদা বানদানা।


ঠিকানা জানে না কেউ, মোবাইল নম্বর তো দূরের কথা। তবু উড়ন্ত বানদানার দিকে স্বপ্নের বিটাক্যাম তাক করবে ঝুঁটি বাঁধা তরুণ ডিরেকটর। হিংসায় জ্বলে পুড়ে ছত্রখান হতে হতে তোলা সমস্ত লংশট-ই এন জি হবে। কিন্তু এই ডাচ দুর্গের ভেতরে কোনও রি-টেক নেই, রাশ প্রিন্ট নেই। কমলা জার্সি পরা ফ্লোর বয় নেই। কলকাতা পিনকোড থেকে অনেক দূরে, এই দিনেমার রূপকথায় কফি ও কামান একসাথে ঠান্ডা হয়।

বুঝলে নটবর,
সেকথা তুমিও জানো না। আমিও জানি না। পিরিয়ড।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

One thought on “সুজিত দাসের কবিতাগুচ্ছ

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>