সুলতান স্যান্নালের একগুচ্ছ কবিতা

Reading Time: 2 minutes

সুঁড়িপথ

কেন ভাঙো জলপাই ডাল। শিশুর হাতের ছিনিমিনি ধনুক। জারিজুরি হাতের ভেতর তাস আর প্রেম সিঁধকাঠি খেলতে খেলতে কোথায় গিয়ে ছিটকে পড়ো? কেন হয়রান, অঝোরঝর ভাবনা, ভুলচুকে অমন হুটহাট ঝরে পড়ো!

 

বরং, আমাকে ভাবনা করো। সুঁড়িপথ খুঁড়ে খুঁড়ে চলো আমারি মতন। আছড়ে পড়ো। ছাদ থেকে ঝাঁপ দাও মুর্শিদী সুর মূর্ছনায়। ভোগ করো প্রেমের দুর্বহ কষ্ট, লার্ভা দশা থেকে মাছ যেমন পূর্ণাঙ্গ দশা পায়!

 

আর দেখো, ব্রহ্মান্ডের কোন প্রান্তের কোন গ্রাউন্ড স্টেশনই নিয়ন্ত্রণহারা নয়। সঙ্গীহারা নয়! যেনবা গভীর থেকে গভীরতর এক ঋতুচক্রীয় ওঠানামা শুধু!

 

সুইচ অফ করি যদি

 

জেনানা মহল থেকে বেড়ে ওঠা লাউগাছ-  যত্ন করে কঞ্চি দিয়ে সোজা করো আমায়। ভবিষ্যতের নেশায় বুদ এক কেয়ারলেস ইনসান আমি। আমার নামে লিখে দিয়ো কিছু তুখোড় ঘোড়ার নাম! সবুজ সাপের সাথে শুয়ে থাকা লাউগাছ- যত্ন করে শুইয়ে দাও জাঙ্গলায়। সততা আর সিরিয়াসনেসের পার্সটা পকেটমারী হয় যদি, ফোন কেটে সুইচ অফ করি যদি । দিয়ো তবে আমার সকল সুখের মধ্যে,  তোমার একটা কাঁটার খোঁচা!

 

প্রালজাক

*

ভরা আদালতে বিষের বোতল খুলো না প্রালজাক, খবরটা ভুল, ভুল ভেঙে গেলে সুড়ঙ্গপথ, তারপর ঘুরেঘুরে কাঠপুতুলের বিয়ে।

 

এইযে আয়ুরেখা, দূরপাল্লার দূরত্ব, বাড়িঘর। এসবই তো জলের ন্যায়, পথে বাজাবার ভেঁপু বাঁশিটির মতো মেথডোলজি যেনো, কখনো রংরুটে, কখনো রংমশালে, যেনো যোগ বিয়োগের উর্ধ্বে একেক পতঙ্গ বিশেষ। বস্তুত, ভরা সংসারের নেপথ্যে মানুষ, মানুষকে সংখ্যা হিসাবেই দেখে! ইতিহাসে, হৃত অবস্থান পুনরুদ্ধার করেছে কেউ ?

 

হোক না আরেকটি নক্ষত্রের পতন, বাড়ুক না হয় কিছু টাটানি, তবু ভরা আদালতে বিষের ওই বোতল খোলোনা প্রালজাক, সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছে শুনানি, চন্দ্রাকাম, আর ঘুরেঘুরে ওইরূপ কাঠ পুতুলের বিয়ে!

 

কাগজের তরোবারি

*

এইখানে খেলাঘরে উড়ে গিয়ে ফিরে আসে ধূপগন্ধি আর্তনাদ হাওয়ায় হাওয়ায়। এই ভাবে কেউ কেউ আরশের ছায়া খুঁজে ছুঁতে চায় বুকের পাঁজর। তবু রাতভর জানালায় আসেনি সন্ধির মিনতি নিয়ে নির্ভার জোসনা জোনাক, চন্দনমনও বোঝেনি কেন চন্দ্র সূর্যের এই মূল্য প্রভেদ। শুধু ধেয়ে আসে অনিবার্য আমন্ত্রণলিপি সময়ের আল ভেঙে…

 

কে যেন বলেছিলো ক্লাস প্লেয়ারদের হোমসিকনেস থাকতে নেই, এই শুনে কোন কোন মিলিশিয়া মুসাফিরও যেতে চায় ভাবস্রোতের ভিন্ন মুলুকে। যেখানে  হাত বাড়ালেই প্রজননজাত, যেখানে ঝংকার হুংকার একাকার মেকআপ-নেকাব!

 

সিঁড়ি গড়ে সিঁড়ি ভাঙ্গার তাশের দেশের অবাক সেপাই, আর কত আশা-পাশা, সংকেত তুলনায় জিতে যাওয়ার জোর তাড়া?

 

জানো কি, তোমার ওই রণভবের তরোবারিটি বড়ই কাগজের, বড়ই বেওয়ারিশি?

 

 

মার্গসংগীত

 

খানেক বাদেই ভোর। দোকানি ঝাঁপ ফেলো। আরো ফাঁকা হও আশপাশ, বাহিরের ভেতর , দেখো আরো একা কারা অদ্ভুত বাঁচে, আদ্র অভিমানে।

 

এ রাত ছবির চাতুরী। এমন রাতে বিশ্বাসী বলাকারা উড়ে যায়। জাগিয়ে দিয়ে পুরোনো ক্রান্তির গান, উড়ে যায় পরীদল। উড়ে যায় অহংকার। হিরে সমেত আপন আঙুল ইশারা।

 

এমন রাতে লেনদেন হয় না। দরজা আউজে দিয়ে বরং উঠে আসো সাক্ষী কুমোর। দেখো, খণ্ডিত পরিপার্শ্ব,  অনন্তের নিমজ্জন। দেখো, এই নিরালা ঘর গেরস্থি কেমন বিশাল হয়ে, ব্যাপক, ছড়ায় চতুর্দিক। এমন রাতে, দেখো, কতটা সহজ ওই রাজ্যপাট!

 

খানিক বাদেই ভোর। শেষ করো মার্গসংগীত। সানাই থেকে আনো সুখ ভৈরবী। আর, কাদা দিয়ে, শব্দদের আত্মা দিয়ে লিখে চলো । বল্লমের ভিতর থেকে একটি আদম ফুলের মাতাল-বেতাল বেড়ে ওঠার গল্পগুলো!

 

 

 

 

 

 

0 thoughts on “সুলতান স্যান্নালের একগুচ্ছ কবিতা

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>