Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,Suman Chowdhury Biku Short story chhad

ইরাবতী সাহিত্য অণুগল্প: ছাদ । সুমন চৌধুরী বিকু

Reading Time: 2 minutes
চারপাশ নিস্তব্ধ।পঞ্চমীর চাঁদ সেই কবে মেঘে লুকিয়েছে। ঝিরিঝিরি একটানা বৃষ্টি। চারপাশে মাথা তুলে ঝিমিয়ে থাকা গাছগুলোর পাতা চুইয়ে টুপটাপ জল পরার শব্দ।অনেক কিছু বদলে যাবার সাথে সাথে ঘরের পেছনে মান কচুর গাছটাও স্মৃতির অংশ হয়ে গেছে। এমন বৃষ্টি দিনে রান্নাঘরের বেড়ার বড়বড় ফোকরগুলো দিয়ে তাকালেই দেখা যেত বৃষ্টি থামার পরও উপরের আমগাছটার পাতা বেয়ে একেকটা জলের ফোঁটা টপটপ শব্দ করে মানকচুর বিশাল সবুজ পাতার উপর পড়তো। আর জলের ভারে পাতাটা কেঁপে উঠতো।
সকালে প্রচন্ড রোদের তাপে ছাদের কার্নিশে রাখা গোলাপ গাছের টবে যে গোলাপটা বড্ড নিষ্প্রাণ হয়ে নেতিয়ে ছিল সেটা এখন নিশ্চয় বৃষ্টিজলে সতেজ হয়ে উঠেছে। অন্ধকারে দেখার সুযোগ নেই। ভাবছি ভোরে উঠে সবার আগে গোলাপটাকেই দেখবো। বৃষ্টি বাড়ছে ক্রমশ:। সামনের পুরনো মাটির ঘরটায় এখন সবসময় তালা ঝুলে।না হয় খাটের উপর শুয়ে টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ শোনা যেত। ছাদের সিঁড়ি ঘরের উপরে ক’টা টিনের যে চালাটা রয়েছে তাতে কিছুটা হলে ও অনুভব হচ্ছে। সিঁড়িঘরের ভারি টিনের দরজাটা একটুখানি ভেজিয়ে টিনের চালার শব্দ শুনতে শুনতে খালি গায়ে বৃষ্টিজলের ছাঁট গায়ে লেগে হিমশীতল পরশ অনুভব হচ্ছে।
বৃষ্টি থেমে আসছে ধীরে ধীরে। মেঘেদের ফাঁকে ফাঁকে দু’একটা তারা উঁকি দিচ্ছে। এক টানা ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকে কানে তালা দেয়ার উপক্রম হয়েছে।সমস্ত নীরবতা ভেংগে মাঝেমাঝে শোনা যাচ্ছে শ্যাওলা বাঁধানো পুকুর এর জলে দু’ একটা মাছের ঘাঁই। অনেকক্ষণ থেকে একটানা বিদ্যুৎ নেই। মেঘে ঢাকা অন্ধকারে চারপাশ জুড়ে একধরণের  ভূতুড়ে স্তব্ধতা। মনে পড়ছে ছোট বেলায় মা দরজা খুলে হারিকেন হাতে দাঁড়াতো।আর বলতো একেবারে উঠোনের ওপারে যা। চোখের সামনে হারিকেন এর আলো পরলে দূরের কিছু ঠাহর করা যেতোনা বলে হারিকেনটা উপরে তুলে দেখতো আমি ঠিকঠাক আছি কিনা। মা বেশ ভালই বুঝতে পারতো ছেলে অন্ধকারে ভয় পাবে। আমার ঠিকই  ভয় হতো। তার উপর হারিকেনের আলোয় নিজের ছায়া দেখে ভেতরটা আঁৎকে উঠতো।কতো কি মনে পড়ে যেতো। লোকেদের মুখে শোনা কতোসব আজগুবি গল্প। ওই যে বিধান কাকা সন্ধ্যেবেলা শ্মশ্মান কালী মঠে যখন পূজো দিতে যান। তখন বড় পুকুরের বটগাছটার নীচ দিয়ে যাবার সময় ইয়া বড় একটা ভূত রাস্তার দু’পাশে দু’পা ছড়িয়ে উনাকে বলতো দু’ পায়ের মাঝখান দিয়ে যাবার জন্য।উনি নাকি তখন একটা মন্ত্র পড়তেন আর মাটি থেকে মুঠো করে বালি নিয়ে ভূতটার দিকে ছুঁড়ে মারতেন। তবেই নাকি ভূতটা সরে যেত। এসব মনে করে করে বারবার পেছন ফিরে মা’র দিকে তাকাতাম।উঠোন না পেরিয়েই একেবারে ঘরের কাছেই কোন রকমে হাফ প্যান্টের চেইনটা খুলে জবজব শব্দে জলবিয়োগ শেষে ঘরের দিকে দৌড় দিতাম।
প্রায় মধ্যরাত হয়ে গেছে।দূরের রাস্তায় যে দু’একটা যন্ত্রযানের ছুটে চলার শব্দ এতোক্ষণ কানে আসছিল তাও থেমে গেছে।পাশের বাড়িতে সোলার প্যানেলের যে আলোটুকু দেখা যাচ্ছিল তাও আর নেই। রাতের সব কাজকর্মের পাট চুকিয়ে তারাও ঘুমিয়ে গেছে।
অবশেষে ঘরের বাইরের বাতিটা জ্বলে উঠেছে। বিদ্যুৎ এলো বলে।না জানি কতোক্ষণ স্থায়ী থাকে। কাল আবার ভোরে উঠে ছুটতে হবে।
এ ক’দিনে ছাদটা আমার ভীষণ আপন হয়ে গেছে।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>