| 20 এপ্রিল 2024
Categories
এই দিনে কবিতা সাহিত্য

সুমন সাধুর কবিতা

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

আজ ১৪ নভেম্বর কবি,সম্পাদক ও নাট্যকর্মী সুমন সাধুর শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার কবিকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।



একটি তরমুজের হত্যা
লাল থেকে গাঢ় লাল বুলেটিনে
ঢেকে যাচ্ছে সোহাগী গা-গতর
এমন অসম্ভব দৃশ্যে মানুষ ছুটছে রঙের নেশায়
নেশায় শান দিয়ে তামাম এক দুনিয়া দেখাচ্ছে বটে
যাই হোক, উপরের খোলস পার করে
এ এক দীর্ঘ সিঁড়ি
হাঁটছ তো হাঁটছই
কিছুতেই পলক থেকে নেশারা নড়ছে না
সন্ধের
প্রতিটা সন্ধের হাওয়া মুখর হয়ে ওঠে
হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয় বাড়ি ফেরার পথে
রাস্তায় ছড়ানো ছেটানো কালো কালো মাথা
কীভাবে ছাতার বোঝাপড়ায় ব্যস্ত
কী আলোয় দেখা প্রতিবেশী ঘর
ফিরি জন্মদিন নিয়ে, ক্যালেন্ডারের ওল্টানো
পাতা দিনের হিসেবে মজবুত হয়ে যায়
জন্মদিন এখানে নুইয়ে পড়ে
ততটাই ঋণী হয়ে ওঠে আয়ু
সিনোপসিস- তিন 
বন্ধু আমাকে তার ডায়েরি পাঠায়। একা একা সমুদ্র-ধার কী কঠিন আওয়াজ তুলছে দ্যাখো। দ্যাখো, কী বিস্তৃত হিজলের বন। একটা বক উড়ে যাচ্ছে ছাইরঙের ডাল নিয়ে। সমুদ্রে শুধু ডানার ছায়া। বন্ধুর ডায়েরি উপচে সেইসব মোহময় দৃশ্য বেশ ভাবাচ্ছে। ধরো এইখানে একটা পিয়ানো সুর। একঘেয়ে করুণ। তবু আলগাভাবে বন্ধুর ডায়েরিতে চলে আসছি আমি আর আমার দুটো কাটা ডানা।
ঝিমরাতের অপেক্ষা 
লুকোনো বাড়ির পাশে ফাঁদ পেতে রেখেছি।
সেখানে, রুমাল থেকে বেড়াল হয়ে যাবে সময়।
করুণ বয়সের রাজনীতি না জানা জীবটি
বেড়ালের মতো করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
টাল আর বাহানায় ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে
আমার নিজস্ব গা-ঘেঁষা আদুরে স্বভাব।
বেড়াল আর আমি রাজনীতির অঙ্ক কষব বলে
একে অপরের জন্য অপেক্ষা করছি।

সংসার

কতটা কাটাকুটি আঁকলে নিরাপদে যাওয়া যায়! কতটা কাঁসাই ভরা অভিমান নিয়ে শৈশবে যাওয়া যায়! অথচ এইভাবে স্বভাবে স্বভাবে চিনে নেব একে অপরকে। দুজনে দুপুরবেলায় রোদ্দুর আঁকব আর এক থালায় যাপন করব স্মৃতি-সত্তা-ভবিষ্যৎ। অথচ এইভাবে আমরা পালিয়ে যাব চুপি চুপি। কাশ দেখব, রেলপথ দেখব, ভোর দেখব, অভিনয় করব আর চরিত্র খুঁজব। এক চন্দ্রগ্রহণ পালা শেষ হলে কি গান ধরব “কত জন্মের চেনা”?


আমি এভাবেই চেয়ে থাকি তোমার মতো। মফস্বলে সন্ধে নামলে আস্ত একটা শাঁখা-নোয়া-আলতা ভরা সংসার কাঁটাতার ভেদ করে ছুটে আসে। আলো জন্ম দেয়। আমরা লালন করি সেই আলো, পালন করি রেলপথ। ভোর হবে একটু পর। আর এই ভোরে তুমি দেখে নেবে একফালি জানলার শিক ভেদ করে কীভাবে ওপার এসে পড়েছে জলচৌকিতে। একটা ছবি আঁকব। পুরনো জলচৌকির উপর আমরা সবাই গল্প আর কবিতা হয়ে বসে আছি।


অনেকগুলো কথাবার্তা আর একটুকরো উত্তরপাড়া নিয়ে বসে থাকা যাক আজ গোটা রাত্তির। মাঝখানে নদী নিজের নিয়মে বয়ে চলুক না। আমাদের ইচ্ছেগুলো বরং এপার-ওপার জুড়ে প্রতিমা গড়ুক। প্রতিমা গড়া শেষ হলে হাতের উপর হাত রেখে মাস্তুল ছোটাই। ছুটতে ছুটতে…এক আকাশ কালো দিঘি আর কচুরিপানা… ছুটতে ছুটতে… কত কত লেখা, কত কত না লেখা আর ‘কিচ্ছু হচ্ছে না’ নিয়ে ভেবে যাচ্ছি। এখন বিশ্রাম নেওয়ার পালা..এক এক করে। এক এক করে একটু পর একফালি উত্তরপাড়া ঘেঁষে লেখা হয়ে কাটিয়ে দেব। সন্ধে হয়ে এল…


পাড়ায় পাড়ায় চরিত্র ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা চরিত্রের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাই। তুলে আনি রং, আলো। সেই রং গায়ে মেখে আলো হয়ে সিঁড়ি পেরোয়। সিগারেট ধরাই আর হেঁটে যাই। আলো ক্রমশ বাড়ছে। জানিনা শেষ কাউন্টারে কতটা সংলাপ ছিল, কতটা নিস্তব্ধতা ছিল; হয়ত আমরা কোন চিত্রনাট্য অথবা সংলাপ ছাড়াই হেঁটে যাচ্ছি। হয়তো আমরাই রং আর আলো হয়ে চরিত্র সেজে ভিড় হয় দাঁড়িয়ে রয়েছি পাড়ায় পাড়ায়।

(উৎসর্গ: সুপ্রিয় মিত্র, তন্ময় ভট্টাচার্য, আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়, মৌলিকা সাজোয়াল)

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত