আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
বসন্তকাল এলেই সিরাজুলের মাথার পোকাগুলো কিড়মিড় করে ওঠে। আপারা কয় পাগলামি বেড়ে গেছে গিয়া, কিন্তু সে জানে ওরা স্মৃতিপোক, কুরে কুরে খেতে এসেছে। কবরে না পুঁতা পর্যন্ত শেষ নাই ওদের!
ইচ্ছেকামারির বিলের আদিগন্ত দেখা যায় না, এতো মেলা ছড়ানো। সিরাজুল কিন্তু দিব্যি সেখানে জলের মধ্যে ঢুকে যেতে পারে। শামুক ঝিনুক গুগলির সাথে জলের মধ্যে কিলবিল করে নানা পোকারা! সত্যি মিথ্যে রাগ, আদর ভালোবাসা, বিশ্বাস অবিশ্বাস , সব মিলে জুলে সাঁতার দিতে থাকে। সিরাজুল নিজের পোকা গুলোও ওখানে নিশ্চিন্তে ছেড়ে দেয়। জমিরা বিবি যেমন নিশ্চিতে সায়া সেমিজ খুলে ধুঁধল দিয়ে গা রগড়ায় ঠিক তেমনি! আরামে চোখ বুজে যায়। সে দেখে সব দেখে, তাকে দেখতে পেলে মোটেই গা ঢাকে না,হ্যাট হ্যাট করে, বলে যা পাগলা! যাহ! যাহ!
সে পোকা দেখে জলের ভেতর, গাছ দেখে জমির উপর, আগুন দেখে আকাশে, আর মানুষ দেখে বাড়ির ভেতর! বাবা হাঁটুর মধ্যে মুখ গুঁজে দাবনা চুলকায়, তাকে ওষুধ গুলিয়ে খাওয়াচ্ছে বউদি, মা বিন বিন করে কাঁদছে, বাধাও দিচ্ছে!, দাদা যেদিন রাজিয়াকে চেপে ধরেছিল ধানঘরে সেদিনও ! রাজিয়া কমনে বিষ খেয়েছিল নাকি। ওতো পাগল, ওর ইচ্ছাকামারির বিল আছে! পোকা ছাড়ার। কিন্তু রাজিয়ার তো কিচ্ছু নেই না! কিচ্ছু! অনাথ, তাই হাসপাতালে না নিয়ে দাদা রাজিয়ার গলার নলিটা কুচ করে কেটে দিয়েছিল! এই বসন্তকালেই! সে দেখেছে না! দেখেছে তো! জমিরার শরীরের মতো!
হাওয়া দিচ্ছে শির শিরে, গা ঘেষে গাছেরা বিকেলের সাথে। ইচ্ছাকামারির শরবনে ঘসঘসে শব্দ! বেদম ভালো লাগছে সিরাজুলের! তার হঠাৎ খুব গরম লাগতে লাগল, ঘামতে লাগল দরদর করে, মাথার সত্যি পোকা গুলো বড্ড জ্বালায়!
— সেদিন মিথ্যে পোকাদের ছেড়ে দিয়েছিল সবাই! নইলে দাদাকে তো — কি রক্ত কি রক্ত ধানঘরে! জমিরার কোমরেও রাজিয়ার নির্ভুল ভাঁজ বসানো! রাজিয়াকে সেও তো দেখতে চেয়েছিল কোনো বসন্তকালে! নাব্যতায় মাটি দিতে চেয়েছিল শিকড়ে! ঝরা পাতাগুলো সরিয়ে সবুজ পাতায় নূপুর পরাবে বলেছিল।
রাজিয়া আসে! আসে বইকি! এই বসন্তকালেই, কেউ জানে না! হি হি হি! সারা শরীর জ্বলে যায় তার বসন্তকালে, পোড়ে! পোড়ে!
উদোম হয়ে বিলের জলে ভাসতে লাগল সিরাজুল।