একটি শ্রুত গল্প

Reading Time: 7 minutes

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.comকথামুখ

কবি তামিম হাসানকে শিল্প-সাহিত্য জগতের কে না চেনে? বয়সে প্রায় তের বছরের বড় হলেও তিনি আমার বন্ধু। বন্ধুত্বের বয়সও প্রায় পনের বছর হতে চলল। বরিশাল থেকে ঢাকায় আসার পর যে ক’জন মানুষ সবসময় আমার পাশে থেকেছেন, তামিম ভাই তাদের একজন। সহজ মানুষ। কুটিলতা, সংকীর্ণতা, পরশ্রীকাতরতা, হিংসা, বিদ্বেষ…এসব মানবীয় দুর্বলতা তার মধ্যে তুলনামূলক কম। এই শহরের কবিরা তো একেজন আরেকজনের পেছনে কাঠি মারে, নানা সিন্ডিকেট করে বেড়ায় আর পদক-পুরস্কার বাগিয়ে নেওয়ার জন্য মদের পার্টি দেয়। তিনি এসবের মধ্যে নেই। নিজের জগতে নিজের মতো করে থাকেন। সাহিত্য সভাগুলোতে তাকে দেখা যায় না বললেই চলে। সহজে টেলিভিশনেও যান না। বিটিভিতে কবিতা আবৃত্তির জন্য কবিরা তো মঙ্গাকবলিত মানুষের মতো লাইন ধরে। তিনি কখনো যাননি। একবার খোদ বিটিভির ডিজি ফোন করেও তাকে নিতে পারেননি। নব্বই দশকে যারা কবিতাচর্চা শুরু করেন তিনি তাদের অন্যতম। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা সতের। পনেরটি কাব্য, বাকি দুটি স্মৃতিগদ্য। চাকরি করেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে। উপপরিচালক। অফিস সেগুনবাগিচায়। আমি দৈনিক কলাকালে। সহকারী সম্পাদক। অফিস পল্টনে। উপ-সম্পাদকীয় পাতা দেখি। অফিস শেষ করে প্রায়ই তামিম ভাইর অফিসে চলে যাই। কতক্ষণ আড্ডা মেরে আর কতক্ষণ রমনা পার্কে হাঁটাহাটি করে বাসায় ফিরি।

তামিম ভাই গল্প লিখতে পারেন না, তবে গল্প বলতে পারেন ভালো। কত গল্প যে তার স্মৃতির ভাড়ে জমা! তার কাছ থেকে শোনা তিনটি গল্পকে আমি লেখ্যরূপ দিয়েছি। তিনটি তিন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং আমার সর্বশেষ গল্পগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করেছি। একটি গল্প নিয়ে তো তুমুল হৈচৈ পড়ে গিয়েছিল। গল্পটি ছিল ফেসবুক সেলিব্রেটিদের নিয়ে। ফেসবুকে গল্পটির লিংক শেয়ার নেওয়ার পর লাইক পড়েছিল সাড়ে তিন হাজার, কমেন্টস দেড় হাজার এবং শেয়ার চার শ চুয়াত্তর। একজন গল্পবোদ্ধা সেটিকে পোস্টমর্ডান গল্প বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। লিখেছিলেন, বাংলা ছোটগল্প অতিব্যবহারে জীর্ণ যে ফর্মে ঘুরপাক খাচ্ছিল, এই গল্পের মধ্য দিয়ে সেই ফর্ম থেকে মুক্তি পেল।

তামিম ভাইর কাছ থেকে শোনা একটি গল্প লিখব লিখব করেও লেখা হচ্ছিল না। ফর্মটা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ফর্ম আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। একই ফর্মে দুটির বেশি গল্প আমি লিখি না। গল্পটি শোনার প্রায় দু-বছর পর একদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরে রবীন্দ্র সংগীত শুনছিলাম। শ্রীকান্ত আচার্যের গাওয়া। শুনতে শুনতে হঠাৎ লেখার মুড এসে গেল। খাতা-কলম নিয়ে বসে গেলাম লিখতে। মাত্র দেড় ঘণ্টায় লিখে ফেললাম গল্পটি। নাম দিলাম ‘তাহিয়া, একজন নারী।’

তাহিয়া, একজন নারী

তামিম ভাই তখন সাংবাদিক ছিলেন। কাজ করতেন একটি সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনে। জয়েন করেছিলেন সহকারী সম্পাদক হিসেবে, পাঁচ মাসের মাথায় পদোন্নতি পেয়ে সহযোগী সম্পাদক। ম্যাগাজিনটির এডিটিং, মেকআপ, প্রিন্টিং, পাবলিকেশন, বিজ্ঞাপন, সার্কুলেশন…সব কিছু তিনিই দেখভাল করতেন। সম্পাদক খুব একটা সময় দিতেন না। দেওয়ার মতো সময় আসলে তার ছিল না। সকালে অফিসে এসে ঘণ্টাখানেক থেকে বেরিয়ে যেতেন। ফিরতেন পাঁচটা ছ’টার দিকে। কোথায় যেতেন, কী করতেন, ম্যানেজিং এডিটর ছাড়া অফিসের আর কেউ কিছু জানত না। ম্যানেজিং এডিটর তার চাচাতো ভাই। চল্লিশের মতো বয়স। সম্পাদকের চেয়ে বছর চারেকের ছোট। গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ। সহজে মুখ খুলতেন না। সম্পাদকের ব্যাক্তিগত ব্যাপারে অফিসের কেউ কিছু জানতে চাইলে এড়িয়ে যেতেন। বলতেন, আমি আপনাদের মতোই এই অফিসের একজন কর্মী, আপনাদের চেয়ে বেশি কিছু জানি না। কে জানে, সম্পাদকের হয়ত ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল। ওদিকেই সময় দিতেন বেশি। সপ্তাহে এক-দুবার পত্রিকার বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে মিটিং করতেন। কীভাবে বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বাড়ানো যায় সে ব্যাপারে কথা বলতেন বেশি। কখনো কখনো সংবাদিক-জীবনের নানা অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণ করতেন। মিটিং শুরু করলে শেষ করার কথা খেয়াল থাকত না। বিকেলে বসলে কখনো কখনো রাত আটটা-ন’টা বেজে যেত।

সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি পূর্ণ মনযোগ দিলেন সাংবাদিকতায়। পত্রিকাটি আরো ভালো করা দরকার। তিন বছর ধরে টাকা ঢেলেই যাচ্ছেন, লাভ তো দূরের কথা, এখনো ব্রেক ইভেনেই এলো না। এভাবে আর কত? যে করেই হোক, লাভে আনতেই হবে। ভবিষ্যতে একটা দৈনিক বের করার ইচ্ছে তার। নামও ঠিক করে রেখেছেন, দৈনিক যুগবার্তা। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক, তারপর ডিক্লারেশনের জন্য আবেদন করবেন। সাপ্তাহিক পত্রিকার ভাটা শুরু হয়ে গেছে। মানুষ আগের মতো আর পড়ে না। পাঁচ বছর আগেও সাপ্তাহিকের রমরমা ছিল। একেকটার সার্কুলেশন ছিল তিরিশ-চল্লিশ হাজার। সাপ্তাহিক কাননচিত্র’র সার্কুলেশন তো প্রায় পঞ্চাশ হাজার ছিল। ঢাকা শহরের এমন কোনো স্টল ছিল না যেখানে কাননচিত্র পাওয়া যেত না। এখন ঠিকমতো দশ হাজারও চলে না। পত্রিকা প্রায়ই ফেরৎ আসে। তিরিশ পার্সেন্ট কমিশন দেওয়ার পরও হকাররা টাকা দিতে গড়িমসি করে। দু-চার বছর পর সাপ্তাহিকের সার্কুলেশন হয়ত পাঁচ হাজারও থাকবে না। তা ছাড়া সাপ্তাহিকের চেয়ে দৈনিকের পাঠক যেমন বেশি, পাওয়ারও তেমন। সম্পাদক হলে পাওয়ারফুল সম্পাদক হতে হবে। পুঁচকে সম্পাদক হয়ে লাভ নেই। তার চেয়ে বরং ব্যবসা-বাণিজ্য উত্তম।

সাপ্তাহিকটির অফিস ছিল রাজাবাজারের একটি দোতলা বাড়িতে। নিচতলার পুরোটা জুড়ে রিসেপশন, নিউজ, মেকাপ, সার্কুলেশন ও বিজ্ঞাপন বিভাগ। দোতলায় একাউন্স, কনফারেন্স ও সম্পাদকের রুম। নব উদ্যমে গোটা অফিস নতুন করে সাজালেন সম্পাদক। নতুন ডেস্ক নতুন চেয়ার দিলেন। পুরনো কম্পিউটারগুলোর বদলে দিলেন নতুন কম্পিউটার। কিছু ছাঁটাই করে নিয়োগ দিলেন নতুন কর্মী। রিপোর্টার ছিল পাঁচ জন। দুজন ছাটাই করে নতুন নিলেন তিনজন। বিজ্ঞাপন সেকশনে ছিল চার কর্মী, নিলেন আরো তিনজন। ছেলে নয়, মেয়ে। বিজ্ঞাপনে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা ভালো করবে বলে তার বিশ্বাস। অফিসটা ছিল নারীবান্ধব। অধিকাংশ সম্পাদকের তো স্ক্যান্ডাল থাকে, তার ওসব কিছু ছিল না। তার অফিসে মেয়েদের কেউ ডিস্টার্ব করার সাহস পেত না। এক নারী ফটোগ্রাফার ছিল। সুন্দরী। জিন্স, টপস্ আর ক্যাডস্ পরতো। একবার তাকে আপত্তিকর কথা বলেছিল এক রিপোর্টার। ফটোগ্রাফার নালিশ করল সম্পাদককে। সেদিনই রিপোর্টারকে চাকরিচ্যুত করেন সম্পাদক। বাকিরা সতর্ক হয়ে গিয়েছিল ওই ঘটনায়।

নতুন উদ্যোগ শুরুর সময় জয়েন করেছিল তাহিয়া মিমি। চারুকলা থেকে পাস করা। তেইশ বছরের তরুণী। লম্বা-চওড়া। চোখে হাই পাওয়ারের চশমাটি না থাকলে পত্রিকার ফ্যাশন পাতায় তাকে মডেল বানানো যেত। তার বাবা ছিল প্যারালাইসিসের রোগী। বিছানা থেকে নামতে পারত না। মা গৃহিনী। ছোট ভাইটি পড়ত ক্লাস নাইনে। বাবা রিটায়ারে যাওয়ার আগে গ্রামের বাড়ির জায়গা-জমি বিক্রি করে মোহাম্মদপুরে বারো শ স্কয়ার ফিটের একটা ফ্ল্যাট কিনেছিল, নইলে ঢাকা শহর ছাড়তে হতো। মিমির রোজগারেই সংসারটা কোনোমতে চলত। ফ্যাশন, রান্না, রুপচর্চা―এই তিনটি বিভাগ দেখত মিমি। এডিটিং ও মেকাপ সেন্স ছিল খুব ভালো। তামিমকে খুব একটা হাত দিতে হতো না। এই কারণে তাকে সমীহ করতেন তামিম। ছোটবোনের মতো। মিমিও তাকে বড় ভাইয়ের মতো শ্রদ্ধা করত।

মিমি জয়েন করেছিল সাত হাজার টাকায়। তিন মাসের মাথায় সম্পাদক তার সেলারি বাড়িয়ে দিলেন তিন হাজার। তামিমের সঙ্গে আলপ না করেই। তামিমের মন খারাপ হয়েছিল। তার সঙ্গে আলাপ না করে কখনো কারো বেতন বাড়াননি সম্পাদক। পরে ব্যাপারটা আর মাথায় রাখেননি তামিম। পত্রিকার মালিক যখন যা ইচ্ছা করবেন। সব ব্যাপারে যে সহযোগী সম্পাদকের সঙ্গে আলাপ করতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই। তা ছাড়া মিমি তো দক্ষ কর্মী। তিন মাসেই সে দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে। দক্ষ কর্মীদের সেলারি বাড়ালে তারা আরো বেশি উৎসাহিত হয়। অন্য হাউজে চলে যাওয়ার চিন্তা করে না।

চার মাস পরে এলো কোরবানির ঈদ। শর্ত অনুযায়ী মিমির বোনাস পাওয়া কথা নয়। চাকরির বয়স এক বছর না হলে কেউ বোনাস পায় না। কিন্তু মিমি পেল। শুধু তাই নয়, বেতন-বোনাসের বাইরে সম্পাদক তাকে বাড়তি পাঁচ হাজার টাকাও দিলেন। মিমি নিতে চাইছিল না। সম্পাদক বললেন, তোমার বাবা অসুস্থ মানুষ, কেন নেবে না? টাকাটা তার হাতে দিয়ে আমার জন্য দোয়া করতে বলবে।

টাকাটা মিমি নিল। সম্পাদকের প্রতি বেড়ে গেল তার শ্রদ্ধা। আরেকটু হলে আনন্দে কেঁদে ফেলত। সম্পাদক বলেছিলেন এই টাকার কথা অফিসের কেউ যেন না জানে। জানলে নানাজন নানা সমস্যা নিয়ে তার কাছে হাজির হবে। মিমি জানিয়েছিল শুধু তামিমকে। তামিম বলেছিলেন, সম্পাদক বড় দিলখোলা মানুষ। দানবীর। এলাকার গরিব-গুর্বোদের সাধ্যমতো সাহায্য-সহযোগিতা করেন।

পাঁচ মাসের মাথায় মিমিকে পদোন্নতি দিয়ে সহকারী সম্পাদক করলেন সম্পাদক। বেড়ে গেল সেলারি। দশ থেকে এক লাফে পনের হাজার। সম্পাদককে মিমি ধন্যবাদ দিয়ে বলল, খুব ক্রাইসিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম ভাইয়া। প্রমোশনটা খুব দরকার ছিল। সম্পাদক বললেন, মন দিয়ে কাজ করো। সেলারি নিয়ে একদম টেনশন করবে না।

পরদিন লাঞ্চের পর চেয়ারে হেলান দিয়ে এক বন্ধুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলছিলেন তামিম। ঘর্মাক্ত মুখে ডেস্কের সামনে এসে মিমি অস্থিরকণ্ঠে বলল, ভাইয়া, আপনি কি ব্যাস্ত?

ফোন রেখে তামিম বললেন, কেন বলুন তো?

আপনার সাথে একটু কথা বলা দরকার।

নিশ্চয়ই, বলুন।

এখানে নয়, একটু বাইরে চলেন প্লিজ।

ওকে, চলুন।

বাইরে গ্যারেজ। দুটি প্রাইভেট কার পার্ক করা। গাড়িগুলোর পেছনে গিয়ে দাঁড়াল দুজন। একটা সিগারেট ধরালেন তামিম। ওড়নার একটা কোণা ডান হাতের আঙুলে পেঁছাতে পেঁছাতে মিমি বলল, ভাইয়া, আমি জবটা আর করব না।

বুঝলাম না! চমকে উঠলেন তামিম।

জি ভাইয়া। ফাইনাল ডিসিশন।

হুট করে জব ছাড়ছেন কেন? অন্য কোথাও হয়েছে?

না।

আশ্চর্য! জব ছাড়লে ফ্যামেলির কী হবে?

জানি না। বলেই মাথা নোয়াল মিমি। ওড়নার কোণাটা খুলে আবার পেঁছাতে শুরু করল। অস্থির হাতে।

সত্যি করে বলুন তো কী হয়েছে?

না ভাইয়া, কিছু হয়নি।

কিছু না হলে আপনার চোখে পানি কেন?

দ্রুত ওড়নায় চোখ মুছল মিমি।

তামিম বললেন, মানুষের পার্সোনাল প্রবলেম থাকতেই পারে। তবে সেই প্রবলেমের কথা কাউকে না কাউকে বলতে হয়। আমার উপর আস্থা রাখতে পারেন। বড় ভাই মনে করে নির্দ্বিধায় বলতে পারেন। আমি আপনাকে সৎ পরামর্শটাই দেব।

মিমি মাথা তুলে বলল, প্লিজ কাউকে বলবেন না। আমি ঝামেলা পছন্দ করি না। সম্পাদক একটু আগে তার রুমে ডেকে নিয়েছিল। আমাকে জড়িয়ে ধরে জোর করে কিস করেছে।

ফুঁপিয়ে উঠল মিমি। দু-হাতে মুখ ঢাকল।

তামিম খাণিকক্ষণ চুপ করে থেকে আধ খাওয়া সিগারেটটা দূরে ছুঁড়ে ফেলে বললেন, শালা লম্পট! তারপর মিমির মাথায় হাত রেখে বললেন, আপনি আজই রিজাইন করুন।

শেষকথা

গল্পটি ছাপা হলো জনপ্রিয় দৈনিক দেশমানব’র শুক্রবারের সাহিত্য সাময়িকীতে, শিল্পী তরুণকান্তি সমদ্দারের ইলাস্ট্রেশনসহ। পাঠকমহলে বেশ প্রশংসতি হলো। অনেকে ফোন করে পাঠ-প্রতিক্রিয়া জানাল। ফেসবুকে লিংক শেয়ার নেওয়ার পর অনেকে পড়ল, লাইক কমেন্ট করল বিস্তর। পরিচিত এক সিনিয়র সাংবাদিক ফোন করে বললেন, ঠিকই লিখেছেন। মিডিয়া হাউজগুলোতে আজকাল এসব ঘটনা হরহামেশাই ঘটে। বলতে পারেন ওপেন সিক্রেট। আমি বললাম, হয়ত ঘটে। তবে আমি ঘটে বলে লিখিনি। বাস্তবতার সঙ্গে এর কোনো মিল নেই, এটি ¯্রফে একটি গল্প।

তামিম ভাই গল্পটি পড়ে হাসতে হাসতে বললেন, ভালোই তো লিখেছ মিয়া। ঘটনার একেবারে হুবহু বর্ণনা। ভাগ্যিস সম্পাদকের নামটা বলিনি তোমাকে।

কিন্তু কে এই সম্পাদক? আমার জানার খুব কৌতূহল। ঢাকা শহরের সাপ্তাহিক বা দৈনিকের এমন কোনো সম্পাদক নেই, যাকে আমি চিনি না। তামিম ভাইর কাছে সম্পাদকের নামটি কতবার জানতে চেয়েছি, তার সেই একই উত্তর, নাম বলা যাবে না। নাম প্রকাশ করে কাউকে তিনি ছোট করবেন না। তিনি এমনই। এই শহরের অনেক কবি লেখক আর সংবাদিকের বহু গোপন কথার সাক্ষী তিনি। আড্ডায় বসলে প্রায়ই বলেন। কিন্তু মানুষটি জীবিত থাকলে ভুলেও তার নামটি প্রকাশ করেন না, প্রকাশ করেন মৃতদের। কারণ মৃতরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। কে তাদের সুনাম করল আর কে দুর্নাম করল, তাতে তাদের কিছু আসে-যায় না।

মাস তিনেক পর দৈনিক কালাকালের সম্পাদক মারা গেলেন। প্রবীণ সাংবাদিক। দীর্ঘদিন কোলন ক্যান্সারে ভুগছিলেন। সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়েছিল। লাশ হয়ে ফেরেন। কে হবেন কালাকালের নতুন সম্পাদক? হাউজের সবাই নির্বাহী সম্পাদক কাওসার আহমেদকে চাচ্ছিল। পত্রিকাটির শুরু থেকেই তিনি কর্মরত। কিন্তু মালিকপক্ষ চাইছে নামডাকঅলা কোনো সম্পাদক। শেষতক তাই হলো। মাসখানেক পর জয়েন করলেন বিখ্যাত সাংবাদিক আজহারুল হক। এর আগে দুটি দৈনিকের সম্পাদক ছিলেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবেও সুখ্যাতি আছে। টিভির টক শোগুলোতে নিয়মিত যান।

তিনি জয়েন করার সপ্তাহখানেক পর একদিন এডমিন থেকে আমাকে ডাকা হলো। ধরিয়ে দিল একটি খাম। অব্যাহতিপত্র। হঠাৎ কেন আমাকে ছাঁটাই করা হলো বুঝলাম না। জানামতে কোনো ভুল তো করিনি। দেখা করলাম কাওসার ভাইর সঙ্গে। তিনি বললেন, জানি না। সম্ভবত আরো বেশ ক’জন ছাঁটাই হবে। সম্পাদক বোধহয় নতুন সেটাপ চাচ্ছেন। আপনি বরং একবার তার সাথে দেখা করুন।

আমি গেলাম সম্পাদকের রুমে। কফি খেতে খেতে তিনি টিভির সংবাদ দেখছিলেন। রুমজুড়ে কফির ঘ্রাণ। আমাকে দেখেই বললেন, কী চাই? আমি বললাম, ভাইয়া, এডমিন থেকে আমাকে অব্যাহতিপত্র দিয়েছে। এগার বছর ধরে এই পত্রিকায় কাজ করছি, এভাবে হুট করে ছাঁটাই হবো কখনো ভাবিনি।

সম্পাদক কাপটি টেবিলে রাখলেন। চোখমুখ লাল করে বললেন, বাইঞ্চোৎ! কত বড় সাহস তোর, আমাকে নিয়ে গল্প লিখিস! এক্ষুণি বের হ ইডিয়ট। 

 

 

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>