আজ ২৬ জুন কবি শাশ্বতী ভট্টাচার্যের জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
কবির জন্মদিনে চলুন পড়ে নেয়া যাক কবির কয়েকটি কবিতা।
আমার কাব্য
মনের সবুজ মাঠে এক্কাদোক্কা খেলে
ভাবনার দল শব্দেরা ভিড় করে দর্শক হয়ে,বেশ খেলা চলে
আমি যেই মাঠে নামি শব্দের খোঁজে, যত কোলাহল
খেলা সব থেমে যায়,আমার শব্দগুলো লুকোচুরি খেলে ı
মাঝেমাঝে মেঘ জমে, মনের আকাশ রেগে লাল হয়,
ভাবনার মাঠ জুড়ে তোলপাড় শুরু, শব্দেরা ভিজে
নতুন শব্দ এনে জব্দ করার এই দারুন সময় ,
তখনি আমার হাতে নতুন আকাশ, রং করি নিজেı
মনের আকাশ জুড়ে রামধনু আঁকি, মেঘগুলো হাসে
হাজার রঙের ভিড়ে সাত রং তার উঁকিঝুঁকি দেয়,
আলোয় কালোয় মিশে একসাথে থাকে, বড় ভালোবাসে,
ভাবনার বুক থেকে সেই ভালোবাসা শব্দ তুলে নেয়।
তারপর রাত নামে, শব্দের পরিসরে তারার প্রকাশ –
আমিও সখের চোর, সেই তারা চুরি করে সাজাই আকাশ।
খিদে
হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখলাম
আধখাওয়া চাঁদটা ঝুলে রয়েছে আকাশে ı
সূর্যটা দাঁড়িয়ে আছে লম্বা লাইনে –
চাপা উত্তেজনা তাই নিরক্ষীয় বাতাসে।
রাস্তায় বেরিয়ে অবাক হলাম আরো,
মানুষগুলো উল্টে হাঁটছে দেখে –
মাটির সাথে মাথা মিশে যাচ্ছে ক্রমশই।
উনুনে আগুন নেই, আঁচ উঠলো কই,
তবু পোড়াগন্ধ নাকে এসে লাগে।
ক্ষেত জুড়ে নীল ফসল – পকেটে লাল নোট
পঙ্গপালের নাচ আকাশের ভাগে ভাগে।
সত্যিই তো, আকাশেও মানচিত্র উঠেছে গজিয়ে,
বহুবিভক্ত আকাশের এক একটা ভাগ
খুলে খুলে পড়ছে মাটিতে, রাস্তায়,
মানুষগুলোর বুকে, মাথায়…
ওরা সহ্য করে , কথা বলে না বুঝিয়ে।
রক্তাক্ত দেহে এগিয়ে চলে ঐ পাহাড়ের দিকে,
যে পাহাড়টার চুড়োয় একটা দাড়িপাল্লা ঝোলে,
এক দিকে রুটি আর এক পাল্লায় মাংস…
পাহাড়ের অন্য পথে উঠে আসে
নেকড়ে আর হায়না – লোভে চোখ জ্বলে,
মানুষগুলোর ভাগে পড়লো টুকরো কিছু রুটি,
লুটে নেবার লড়াই-
নেকড়ে, হায়নার ক্ষমতায় দম্ভে
মিশে গেল মানুষের বুকচেরা গোঙানি ;
এ যুদ্ধে কে পিতা,কারা ভাই ভাই…
সেই আওয়াজে মাথার ভিতর শুরু হল
নিউটনীয় সুত্রের প্রবল ধিক্কার –
ঘুম গেল ভেঙে, কোথায় সে চাঁদের পাহাড়?
বুঝলাম স্বপ্নে রুটি সেজে ছিল চাঁদ-
সূর্যের অপেক্ষা ছিল রাত পেরোনোর সাধ…
আকাশের মানচিত্রে ছিল বস্তুতন্ত্রের বাটোয়ারা,
আর রাস্তায় নেমে বুঝেছিলাম – ওরা,
মানুষ হোক বা পশু, কথা শোনে শুধু তার ,
বাঁকা পথে হোক বা সিধে –
যার নাম “খিদে”…
আবেশ
আবেশ, একটা কিশোর বেলার নাম,
আবেশ, এখন আবেশহীন পরিনাম।
আবেশ, এখন নিউজ পেপারে হিট,
আবেশ, টিভির হেডলাইনেও ফিট।
আবেশ আর নেই, মারা গেছে সেইদিন,
আবেশ কি ছিল আমাদের কোনদিন?
আবেশ আজ নয়, কবেই তো মরে গেছে
সমাজের অতি আধুনিকতার কাছে।
কৈশোর কাল যেদিন মেশিনে মেশে,
আবেশ সেদিন জাহান্নমের দেশে।
আবেশ মরেছে, যেদিন চিনেছে টাকা
হাত খরচের বহর হাজারে রাখা ı
আবেশ মরেছে, যেদিন দিনে বা রাতে
ফুর্তি করেছে রঙিন বোতল হাতে।
পার্টি, রেস্তোরা, রাত করে বাড়ি ফেরা
জবাবদিহির আইনে হয়নি ঘেরা,
রাত জাগা নেশা, পড়া নয় , স্মার্টফোন
সোশাল সাইটে সবুজ সারাক্ষণ।
দাদু ঠাকুমাকে যেদিন লাগেনি ভালো,
আবেশ সেদিনই হুট করে একা হল ;
বাবার শাসন যেদিন গেছিল থেমে
দোষের উপর মার স্নেহ এল নেমে।
সেদিনই আবেশ মরে গিয়েছিল – প্রাণে
বিষ মিশেছিল আধুনিকতার ঘ্রাণে।
এমন অনেক আবেশ প্রতিটি দিন
মৃতের সমাজে বাড়ায় ভ্রুনের ঋণ।
মা বাবা যেদিন লাগামটা দিল ছেড়ে,
যৌবন সুখে চাহিদা গেছিল বেড়ে –
সেদিন শহরে আবেশ-রা হল শেষ
কোন বিচারের আশায় তাকিয়ে দেশ?
আমার মানসী
চতুর্দশপদী সনেট
কোন সে মানসী, দিনের আলোর ভিড়ে
তারাদের খোঁজে , জীবনের বাঁকে বাঁকে
কখনো পাহাড়ে, কখনো নদীর তীরে
মনের আকাশে মেঘেদের ফাঁকে ফাঁকে ı
মানসীর সাথে দুর দেশে পাখা মেলি
মানসীকে ডাকি, মনের আসন পেতে
মানসীর সাথে কত লুকোচুরি খেলি
মানসীর সাথে সুরে সুরে উঠি মেতেı
তারপর চোখে আলোদের লুটোপুটি
তুমুল হাওয়ায় স্বপ্নেরা ধুলোমাখা,
আমার মানসী , হঠাৎ পেল কি ছুটি?
পাওয়ার হিসেবে কেবল বিয়োগ রাখা ı
আমার মানসী ঘুমিয়ে পড়েছে চাঁদে
আলেয়ার বুকে আলো গুমরিয়ে কাঁদে ıı
দৈনন্দিন
এই যে নাছোড় অন্ধকার এক
তবুও তো বেঁচে থাকা,
ভাঙছে আকাশ , ভাঙছে পাহাড়
ভাঙছে উপত্যকা।
সবাই তো আজ বাক্যমুখর
সবাই তো আছে বেশ,
ভঙ্গুর পথে, চলা থেমে গেলে
আঁতকে উঠবে দেশ।
দেশের খবর দেশের খাবার
বড় বড় সব কথা,
আমরা কেবল চর্চা করবো
পাখিদের নীরবতা।
মাস শেষ হলে মিলে গেলে খুশি
পাওনাগণ্ডা যত,
দিনের আলোয় মুখ ঢেকে বলি
আমি তো আমার মত।।
সভ্যতা সংকট
ঘোলাটে চোখের মাঠে সারারাত ধরে
নিকষ আঁধারগুলো রোজ খেলা করে,
এক্কা দোক্কা ঘর কালো কালো দাগ
অলিন্দে জমা হয় রক্তের রাগ ı
প্রকৃতির ঔরসে মৃত সঞ্জীবনী-
অমৃতের আহ্বানে বিপুলা বনানী
সঞ্চিত জীবনের নিয়ত প্রয়াস,
সভ্যতা লেখে ব্যবসার ইতিহাস ı
অর্থের ঘুনপোকা চাহিদার গায়,
লোভের উনান গড়ে আগুন জ্বালায়-
সে আগুনে ঔষধি বিষ হয় পুড়ে
মৃত্যুর হাতছানি আশ্বাস জুড়ে ı
তখন ভরসাগুলো অর্থের ঘরে
নিয়মিত হতাশায় ডাক্তারি করে ıı
