সিলভিয়া প্লাথ-এর একগুচ্ছ কবিতা
লেটার ইন নভেম্বর
আয়শা ঝর্না
ভালবাসা আমার পৃথিবীকে
অকস্মাৎ পাল্টে দিয়েছে, করেছে রঙিণ
রাস্তার বাতিগুলো
ইদুরের লেজে চূর্ণবিচূর্ন,
বিষবৃক্ষের পাত্র সকাল নয়টায়।
এটি সুমেরীয়,
ছোট্ট কালো বৃত্ত, এর চারপাশে নরম ঘাস
যেন ছোট্ট শিশুর চুল।
বাতাস যেন সবুজ
নরম, আনন্দদায়ক।
এটি ভালবেসে আমাকে বসিয়ে রাখে নরম তাকিয়ায়।
আমি উৎফুল্ল এবং উষ্ণ
আমার মনে হচ্ছে আমি হতে পারি বিশাল,
বোকার মত সুখী আমি,
আমার বুটজুতা যেটি কিনা ঘোড়ায় চড়ার সময় পরি
প্যাচ প্যাচ করছে এর সুন্দর লাল রঙের ভেতর।
এটি আমার সম্পদ
দিনে দু’বার এতে পায়চারী করি, গন্ধ শুকি এর কর্কশ খোলসের,
ঝিনুক, বিশুদ্ধ আয়রন
এবং পুরনো লাশের দেয়াল
তাদের ভালবাসি
ইতিহাসের মতো,
আপেলগুলো সোনালি
মনে করো—–
আমার সত্তরটি বৃক্ষ
ধরে আছে তাদের সোনালি লালাভ বল
ছাইরঙা মৃত্যময় গাঢ় সু্পে
তাদের লক্ষ
সোনালী পাতা ধাতুর, প্রাণহীন।
ও ভালবাসা, ও অভিষেক
কেউ নয় শুধু আমি
হেটে যাই কোমর পর্যন্ত ভিজে।
যা অপ্রতিস্থাপনীয়,
সোনালী রক্তাক্ত, গভীরে।
আব্বু
তুমি তো পরো না, তুমি তো পরো না
আর মোটেই, কালো জুতাখানি
যার মধ্যেই আমি বাস করতাম পায়ের মতো
তিরিশ বছর ধরে, নিঃস্ব আর নিষ্পাপ,
সাহসও হতো না সচরাচর নিশ্বাস নেওয়ার কিংবা হাঁচি দেওয়ার।
আব্বু, তোমাকে আমার হত্যা করার কথা।
আমি সময় করার আগেই তুমি মরে গেলে—
মর্মর পাথরের মতো ভারী, বস্তা ভর্তি ঈশ্বর,
বিকট আকার মূর্তি একটা ধূসর পায়ের আঙুল নিয়ে
সানফ্রান্সিসকোর বিশাল সীল মাছের মতো
আর মাথাখানি ক্ষেপাটে আটলান্টিক সাগর
যেখানে সীমের মতো সবুজ ছড়ায় নীলের ওপর
সুন্দর নসেট সৈকতের পানিতে।
আমি প্রার্থনা করতাম তোমার কাছ থেকে মুক্তি পেতে,
আহ, তুমি
জার্মান ভাষায়, পোলিশ শহরে
রোলারে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে মাটিতে
যুদ্ধে, যুদ্ধে, যুদ্ধ সমূহে।
কিন্তু শহরের নামটি ছিল চেনা
আমার পোলিশ বন্ধু
বলেছিল সেখানে দুয়েক ডজন আছে।
তাই আমি কখনোই বলতে পারিনি তুমি কোথায়
রেখেছো তোমার পা, তোমার শিকড়।
আমি কখনো কথা বলতে পারিনি তোমার সঙ্গে।
আমার জিব আটকে যেত চোয়ালে এসেই।
সেটা আটকে যেত সীমান্ত কাটাতাঁরের ফাঁদে।
আমি, আমি, আমি, আমি,
আমি বহু কষ্টে কথা বলতে পারতাম।
আমি ভাবতাম প্রত্যেকটা জার্মান লোকই তুমি।
আর ভাষাটা অকথ্য
একটা ইঞ্জিন, একটা ইঞ্জিন
একটা ইহুদির মতো আমাকে কাটছে কর্কশ শব্দে
দাখাউ, আউসভিজ, বেলসেনের একটা ইহুদির মতো।
আমি ভেবেছি আমি বোধ হয় ইহুদি হলেই ভালো করতাম।
টাইরলের তুষার, ভিয়েনার পরিষ্কার বিয়ার
খুব খাঁটি কিংবা সত্য নয়।
আমার ইহুদি বংশধরদের কাছে এবং আমার আজব ভাগ্যের কাছে
আর আমার ট্যারক তাসের প্যাকেটে আমার ভাগ্যের তাসের প্যাকেট
আমি হয়তো একটুখানি ইহুদি হতে পারতাম।
আমি বরাবরই তোমার ভয়ে ভীত থাকতাম,
তোমার লুফতাফি যুদ্ধবিমানে, তোমার গোবেলডিগোতে,
তোমার পরিপাটি গোঁফে
তোমার আর্য চোখে, তীব্র নীলে,
পাঞ্জার মানব, পাঞ্জার মানব, ওহ, তুমি—
ঈশ্বর নয়, তবে সোয়াস্তিকা
এত কালো যে এর মধ্য দিয়ে কোনো আকাশ ভেদ করতে পারে না।
প্রত্যেক নারীই একটা ফ্যাসিস্টের বন্দনা করে,
মুখের মধ্যে বুটজুতা, বর্বর,
বর্বর হৃদয় তোমার মতো বর্বর।
তুমি ব্ল্যাকবোর্ডের পাশে দাঁড়ানো, আব্বু,
তোমার যে ছবিটা আমার কাছে আছে
পায়ের বদলে তোমার মুখের কাছে একটা ফাটল আছে
কিন্তু তাতে শয়তানের চেয়ে কম মনে হচ্ছে না তোমাকে
কোনো কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের চেয়ে কম না যে কিনা
আমার সুন্দর হৃদয়কে দু’ফালি করে দিয়েছিল।
আমি ছিলাম দশ যখন তোমাকে ওরা কবর দিল।
বিশে এসে আমি মরতে চেষ্টা করলাম
আর ফিরে এলাম, ফিরে, ফিরে তোমার কাছেই।
আমার মনে হয়েছিল এমনকি হাড়গুলোও চলবে।
কিন্তু তারা আমাকে বস্তা থেকে টেনে বের করল
আর আমাকে আঠা দিয়ে জুড়ে দিল।
আর তখন আমি জেনেছিলাম কী করতে হবে।
আমি তোমার একটা মূর্তি বানিয়েছিলাম,
মাইন কাম্ফ চেহারার একটা কৃষাঙ্গ মানুষ
আর ভালোবাসা জন্মাল দাঁতাল যন্ত্র আর যন্ত্রণার প্রতি
আর আমি বললাম কবুল, কবুল।
তাই আব্বু, আমি শেষতক মুক্তি পেলাম।
কালো টেলিফোনখানা সমূলে উৎপাটিত,
সেই কণ্ঠ আর আর পেরোতে পারল না।
যদি আমি একজনকে হত্যা করে থাকি, তবে দুইজনকে হত্যা করতাম—
যে ভ্যাম্পায়ার বলেছিল তুমিই সে
আর রক্ত পান করেছিল বছরের পর বছর,
সাত বছর, যদি তুমি ঠিক করে জানতে চাও।
আব্বু, তুমি এখন শুয়ে পড়তে পারো।
একটা গজাল পোতা আছে তোমার মোটা কালো হৃদয়ে
আর গ্রামবাসীরা কোনোদিনই তোমাকে পছন্দ করেনি।
তারা তোমাকে পা দলেছে আর নেচেছে তোমার ওপর।
তারা সব সময়ই জানত এটা তুমি।
আব্বু, আব্বু, তুমি হারামি, আমি মুক্ত।
অ্যারিয়েল
মুম রহমান
অন্ধকারে স্থবির,
তারপর অবয়বহীন নীল
বয়ে আসে দূর পাহাড় থেকে।
ঈশ্বরের সিংহিনীরা,
কেমন করে আমরা একেকজন বেড়ে উঠি
গোড়ালি আর হাঁটু রাখি ঘোড়ার কেন্দ্রে!— পথরেখাটি
ভেদ করে যায় আর গিরিপথ, সহদোরা
বাদামি বাঁকের
সেই ঘাড়ের যা আমি ছুঁতে পারি না,
কালো চোখ
গাঢ় তুতফলে মোড়া
খুড়—
কালো মিঠে রক্তে ভরা মুখ,
ছায়ারা,
অন্য কোনো কিছু
বাতাসের মধ্য দিয়ে আমাকে টানে—
ঊরুযুগল,
চুল;
গোড়ালি থেকে ওঠে তুষার কণা
শ্বেত
মুম রহমান
গোডিভা, আমি উন্মুক্ত করি—
মৃত হাত, মৃত কাঠিন্য।
আর এখন আমি
গমের ফেনা, সমুদ্রের একছটা দীপ্তি।
শিশুটির কান্না
দেয়ালে গলে যায়
আর আমি
আমি সেই তীর,
আর উড়ে যাওয়া শিশির
আত্মহত্যাপ্রবণ, তাৎক্ষণিক অনুপ্রেরণায়
লালের মাঝে
চোখ, সকালের এক বিরাট মিশ্রণ পাত্র।
নারী ল্যাজারাস
মুম রহমান
আমি আবার এটা করেছি।
প্রতি দশ বছরে একবার
আমি এটার ব্যবস্থা করি—
একধরনের চলন্ত অলৌকিক, আমার চামড়া
নাৎসিদের ল্যাম্পশেডের মতো উজ্জ্বল,
আমার ডান পা
একটি পেপারওয়েট,
আমার মুখ বৈশিষ্টহীন, মিহি
ইহুদি লিনেন।
ন্যাপকিনের ছিঁড়ে ফেলা
ও শত্রু আমার।
আমি কি আতঙ্কিত হই?
নাকখানি, চোখের গভীর খাদ, পুরো দন্তপাটি?
চুকা ঢেকর
আজই হয়ে যাবে শেষ।
শীঘ্রই, শীঘ্রই এই মাংসপিণ্ড
এই কবরের গুহা খেয়ে ফেলবে
আমাকে কবরে আত্মীকরণ
আর আমি এক হাস্যমুখী নারী।
কেবল তিরিশ বছর বয়স।
আর বিড়ালটির মতোই আমি নয়বার মরবার চেষ্টা করেছি।
এইটা তৃতীয়বার।
কী অপচয়
প্রতিটি দশককে বিনষ্ট করা।
কত লক্ষ সুতার মতো আলোর ফিলামেন্ট।
বাদাম-মুচমুচে ভিড়
ঠেলা-ধাক্কা দিয়ে দেখতে আসে
আমাকে উন্মোচিত হতে হাত আর পাসহ—
বিরাট স্ট্রিপটিজ।
ভদ্রমহোদয়, ভদ্রমহিলাগণ
এই হলো আমার হাতেরা
আমার হাঁটু।
হয়তো আমি হাড্ডিসার,
তবু আমি সেই একই, অভিন্ন নারী।
প্রথমবার এটা যখন ঘটেছিল তখন আমি মাত্র দশ।
সেটা ছিল একটা দুর্ঘটনা।
দ্বিতীয়বার আমি চেয়েছিলাম
এটা স্থায়ী হোক আর যেন ফিরে আসতে না হয়।
আমি পাথুরে বন্দী
একটা ঝিনুকের খোলের মতো।
তাদেরকে ফোন করতে হয়েছে আর ফোন করতে হয়েছে
আঠালো মুক্তার মতো পোকাগুলোকে আমার ভেতর থেকে তুলে ফেলতে।
মরে যাওয়া
একটা শিল্প, অন্য সবকিছুর মতোই।
আমি এটা বিশেষ ভালোভাবে করতে পারি।
আমি এটা করি কারণ আমার নরক অনুভূতি হয়।
আমি এটা করি কারণ এটা সত্যি মনে হয়।
আমার মনে তুমি হয়তো বলবে এটা একটা আহ্বান।
একটা কারাকক্ষে এটা করা যথেষ্ট সহজ।
এটা করা যথেষ্ট সহজ এবং স্থির থাকা।
এটা নাটকীয় ভঙ্গি
দিনের আলোতে ফিরে আসা
একই জায়গায়, একই মুখ নিয়ে, একই বর্বর
বিনোদন চিৎকারে:
‘একটা অলৌকিক!’
এটাই আমাকে এক ঝটকায় ফেলে দেয়।
এর একটা মূল্য আছে
আমার ক্ষত চাক্ষুষ দেখার, এর একটা মূল্য আছে
আমার হৃদয়কে শোনার—
এটা সত্যিই চলে।
আর এর মূল্য আছে, একটা বড় বিনিময় মূল্য আছে
একটা শব্দের কিংবা একটা স্পর্শের
কিংবা একটুখানি রক্তের
কিংবা আমার চুলের একটা টুকরা কিংবা আমার কাপড়ের
তাই, তাই জনাব ডাক্তার,
তাই জনাব শত্রু।
আমি তোমার রচিত গান
আমি তোমার মূল্যবান সম্পদ,
আর খাঁটি সোনার শিশু
যে গলে যায় এক তীক্ষ্ণ চিৎকারে।
আমি ঘুরি আর পুড়ি
এমন ভেবো না যে তোমার মহৎ উদ্বেগকে আমি খাটো করছি।
ছাই, ছাই—
তুমি তাকে খোঁচাও আর নাড়া দাও।
মাংস, হাড়, সেখানে কিচ্ছু নেই—
এক টুকরো সাবান,
একটা বিয়ের আংটি,
একটা সোনার দাঁত।
জনাব ঈশ্বর, জনাব শয়তান
সাবধান
সাবধান।
ছাই থেকেই
আমি জেগে উঠি আমার লাল চুল নিয়ে
আর আমি পুরুষ খাই বাতাসের মতো করে।
চাঁদ ও ঈয় গাছ
মুম রহমান
এটা হলো মনের আলো, ঠান্ডা আর অস্থিরমতি
মনের গাছেরা হলো কালো। আলো হলো নীল।
ঘাসেরা তাদের দুঃখ ঢালে আমার পায়ে যেন আমি ছিলাম দেবতা
আমার গোড়ালিতে শিহরণ তোলে আর তাদের নম্রতার মর্মরধ্বনি
ধোঁয়াময়, মরমি কুয়াশা বাস করে এইখানে।
আমার বাড়ি থেকে তারা বিচ্ছিন্ন একটা সমাধিফলক দিয়ে।
আমি নেহাত দেখতে পাই না কোথায় যেতে হবে।
চাঁদ কোনো দরজা নয়। সে তার নিজের অধিকারেই একটা মুখাবয়ব,
আঙুলের মাথার মতো সাদা আর ভীষণ রকমের মর্মাহত।
সে টেনে আনে সমুদ্রকে নিজের দিকে একটা কালো অপরাধের মতো, সে নীরব তার সম্পূর্ণ উধাও হা-মুখ নিয়ে। আমি এখানেই বাস করি।
রবিবারে দুইবার, ঘন্টাধ্বনি আকাশকে চমকিত করে—
আটটি মহৎ কথা পূনরুত্থানের নিশ্চয়তা দেয়
সবশেষে, তারা শান্তভাবে তাদের নাম ফুঁকে দেয়।
ঈয় গাছ ওপরের দিকে, এর আছে একটা গথিক আকার।
চোখ তার ওপরে যায় আর সেখানেই চাঁদকে পায়।
চাঁদটি হলো আমার মা। সে ম্যারির মতো মধুর নয়।
তার নীল পোশাক খুলে বের হয় ছোট্ট বাদুর আর পেঁচাদের।
আমি কেমন করে কোমলতায় বিশ্বাস রাখব—
প্রতিমার মুখ, কোমল হয় মোমবাতির আলোতে,
ঝুঁকে আসে, বিশেষত আমার দিকে, তার নরম চোখ।
আমি অনেক দূরে পড়েছি। মেঘেরা ফুল ফোটাচ্ছে
নীল আর মরমি নক্ষত্রদের মুখের ওপরে
চার্চের ভেতরে, সন্তরা সবাই হয়ে যাবে নীল
ভাসবে তাদের পলকা পায়ে গির্জার ঠান্ডা বেঞ্চের আসনের ওপরে,
তাদের হাত আর মুখ অনমনীয় হয়ে আছে পবিত্রতায়।
চাঁদটি এসবের কিচ্ছু দেখে না। সে ন্যাড়া আর বন্য।
আর ঈয় গাছের বার্তা হলো কৃষ্ণতা—কৃষ্ণতা আর নীরবতা।
প্রান্তরেখা
মুম রহমান
নারীটি সার্থক পূর্ণতা পেয়েছে।
তার মৃত্যু
শরীর তার সাধনার হাসি পড়েছে,
অপরিহার্য গ্রিক মায়া
তার আলখেল্লার ভাঁজে প্রবাহিত,
তার নগ্ন
পা মনে হয় বলছে:
আমরা অনেক দূর এসেছি, এখন সমাপ্তি।
প্রত্যেক মৃত সন্তান কুণ্ডলী পাকানো, একটা সাদা সাপ,
একেকজন ক্ষুদ্র
দুধের পাত্র ছিল, এখন শূন্য।
সে ভাঁজ করেছিল
তাদেরকে আবার তার শরীরে পাপড়ির মতো
একটি গোলাপ যখন বাগানে ঝরে যায়
শীতল আর সৌরভেরা রক্তাক্ত
রাত্রি কুসুমের মিষ্টি, গভীর কণ্ঠ থেকে।
চাঁদের বিষণ্ণ হওয়ার কিছু নেই,
তার হাড়ের অবগুণ্ঠন থেকে দেখে শুধু।
সে এমন বিষয়ে অভ্যস্ত।
তার কৃষ্ণতা ফাটল ধরায় আর টেনে নেয়।
সাগরবেলা ম্যাগনোলিয়া
কল্যাণী রমা
উপরে এই এখানে সীগাল কাঁদছে আর আমরা হেঁটে চলেছি –
বিবর্ণ লাল ছোপ ছোপ ধ্বংসাবশেষ, সামুদ্রিক প্রাণীদের দাঁড়া,
আর খোলসের গোলকধাঁধার ভিতর দিয়ে
যেন এখনও গরমকাল।
ওই ঋতু ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
যদিও সমুদ্রে সবুজ বাগান
পথ থমকে, মাথা নুইয়ে ফিরে
পেয়েছে নিজেদের মুখচ্ছবি – যে ছবি
আঁকা এক প্রাচীন বই-এর পাতায়, অবিনশ্বর বাগানে
কিংবা হয়ত দেয়ালে ঝোলানো ট্যাপেস্ট্রির নকশায়,
ফেলে আসা গাছের পাতাগুলো দুমড়ে, মুচড়ে ঝরে পড়ে।
এমনকি শুকায় সময়, ফেলে আসা মাস।
আমাদের নিচে
এক শাদা সীগালের দখলে আগাছায় পিছল পাহাড়ের খাঁজ,
তাড়া করে উড়িয়েছে সে অন্য সীগাল। কাঁকড়ারা
ঘুরে মরে পাথর সাম্রাজ্যে;
আঙ্গুরের মত থোকা, থোকা ঝিনুকঃ
ঠোঁটে করে ঘরে আনে সীগাল শিকার।
ছবি আঁকে শিল্পী – জলরঙ,
মাতাল বাতাসে আঁকড়ে ধরে তুলি।
দিগন্তে জাহাজ নেই,
সাগরবেলা, পাথর-স্তূপ শূন্য।
শীতে ডানা ঝাপটানোর শব্দ, শিল্পী আঁকে
এক প্রবল তুষারঝড় – অসংখ্য সীগাল
শব্দাবলি
আবদুর রব
ধারালো কুঠারের আঘাতে বাজে বনভূমি,
আর প্রতিধ্বনি!
চলমান
উৎস থেকে ছুটে যাচ্ছে দূরে, অশ্বখুরে ।
ঘাম
রোমকূপের অশ্রুবিন্দু
পাথরে আয়না বসানোর মতো
কঠিন সাধনায় লিপ্ত
ফোঁটা ফোঁটা ঝরে এবং সাদা খুলি হয়ে যায়
সবুজ শ্যাওলায় খেয়ে ফেলে তা।
বছর কয়েক বাদে
তাদের সাথে দেখা হলো পথে…
শব্দ শুকিয়ে যায় এবং আরোহীশূন্য,
অক্লান্ত খুরের আওয়াজ।
যখন
শান্ত জলের নিচ থেকে
গুটিকয় নক্ষত্র চালায় এ জীবন।
আরশি
আবদুর রব
আমি রূপা, খাটি রূপা। নই কোনো পূর্ব ধারণার বশবর্তী।
যা দেখি আত্মস্থ করি হুবহু,
সে দেখায় থাকে না কোনো ঘৃণা ও ভালোবাসার হেঁয়ালি ।
আমি নিষ্ঠুর নই, সত্যবাদী।
ক্ষুদ্র ঈশ্বরের চোখ, চারদিকেই খোলা।
প্রায়ই উল্টোদিকের দেয়ালে নিবিষ্ট।
বেগুনি ছোট্ট একটা তিল। সারাক্ষণ দেখতে দেখতে
সে আমার হৃদয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জ্বলজ্বল করে।
বারবার হারিয়ে যায় মুখ আর আঁধারে।
আমি এক হ্রদ। আমার ওপর ঝুঁকে পড়ে এক নারী
নিজেকে দেখতে চায়।
সে দেখে মিথ্যুক মোমবাতি চাঁদ।
আমি তার অতীতটাকে প্রতিফলিত করি, সততা আর বিশ্বস্ততার সাথে।
চোখের জলে হাত নেড়ে সে আমায় কৃতজ্ঞতা জানায়।
আমি তার অনেক কিছু। সে আসে ফিরে যায়।
রোজ সকালে মুখ থেকে কালিমা মোছে
দিনের পর দিন সে আমার ভেতরে এক বালিকাকে বিসর্জন দেয়,
আর বয়স্কা নারী হয়ে উঠে আসে, যেন বিকট দর্শন এক মাছ।
সিন্ডারেলা
সোনালী চক্রবর্তী
আরক্তিম রেকাবের মেয়েটির উপর রাজপুরুষটি ঝুঁকে থাকে,
যখন তালের সম কিছুটা মন্দ হয়ে আসে আর উল্টে যাওয়া বেহালায় ঘূর্ণিরা প্রসারিত হতে থাকে,
মেয়েটির সবুজ চোখ চমকে ওঠে,
রুপোর পাতের মতো চুলগুলো ফ্যানের হাওয়ায় ঝলসায়।
সুউচ্চ কাঁচ প্রাসাদের ঘরটিতে সবকিছুরই যেন অবিরাম পুনরাবৃত্তি,
যেখানে অতিথিরা মসৃণ আলোয় পিছলে যায় মহার্ঘ্য সুরার মতো,
ফুলেল বেগুনি দেওয়ালে গোলাপ সুগন্ধি মোমেরা ঝিকিয়ে প্রতিফলিত করে
লক্ষ লক্ষ বিপুলাকৃতি বোতলের উজ্জ্বলতা।
স্বর্ণখোদিত মিথুনেরা যেন এক ঘূর্ণন সম্মোহনে
অনুসরণ করে চলে সুদূর অতীতে শুরু হওয়া ছুটির দিনের আমোদ প্রমোদ,
যতক্ষণ না কাঁটা বারোটার কাছাকাছি পৌঁছায় আর আজব মেয়েটি হঠাত করে বিরতি নেয় অপরাধের অবদমন রুখতে,
ফ্যাকাশে হয়ে যায়,
আঁকড়ে ধরে তার রাজপুত্তুরকে।
কারণ,
বিভ্রান্তিকর সঙ্গীত আর মন্থিত পানীয়ের ভিতরে মেয়েটি অনিবার্য শুনতে পায়
দেওয়াল ঘড়ির মর্মান্তিক টিকটিকানি।
এক অভ্যুদয় বিশেষ…
সোনালী চক্রবর্তী
রেফ্রিজারেটরদের মৃদু হাসি আমায় সম্পূর্ণ বিনষ্ট করে দেয়,
আমার প্রেমিকাটির শোণিত শিরায় এমনই অশ্লীল বিদ্যুৎপ্রবাহ,
আমি শুনতে পাই তার বিশাল হৃদয়ের গরগর আওয়াজ।
তার ঠোঁট থেকে প্রতি মুহূর্তে আর শতাংশে চুম্বনের মতো সঙ্কেতের নিষ্ক্রমণ হয়,
তার প্রবৃত্তিতে কি সপ্তাহের সূচনা এখন? নীতিশাস্ত্র?
সাফাইয়ের পর ইস্ত্রি করে নিজেদের উপগত করা,
এই স্ববিরোধিতায় আমার করণীয় কি?
আমি পরিধান করি সফেদ হাতকড়া আর নুয়ে পড়ি।
এই কি তাহলে প্রেম? এই রক্তাভ বাস্তব?
ইস্পাতের সূঁচ থেকে উৎসারিত হয়ে যা কানামাছি হয়ে যায়?
এটি তো ছোট্ট ছোট্ট পোষাক আর আচ্ছাদনের নির্মাণকারী।
এটি রক্ষা করে একটি সাম্রাজ্যকে,
কীভাবে তার দেহ আবৃত আর অনাবৃত হয়,
একটি শৌখিন দুর্মূল্য হাতঘড়ি,
প্রতিটি কবজাই রত্নখচিত।
হৃদয় আমার… এ তো অরাজকতা,
নক্ষত্রেরা ঝলসাচ্ছে যেন করাল সংখ্যাসমূহ,
আর তার চোখের পাতারা গতের নামতা পড়ছে।
স্বকামিনীর অন্তর্জগতে…
সোনালী চক্রবর্তী
প্রাণবন্ত, প্যাঁচানো, পরিণত-অতিক্রান্ত দুরত্বের খণ্ডগুলি যেমন,
নাবিকের মোটা খসখসে ওভারকোটের মধ্যে, স্বকামনার অভ্যন্তরে, পার্সি বশ্যতা স্বীকার করে,
ফুসফুসের কিছু থেকে পুরুষটি তখন ক্রমশ আরোগ্যলাভের দিকে।
স্বকামগুলিও অবনত হতে থাকে বৃহৎ কিছুতে,
তারা বিহ্বল করতে থাকে সবুজ উপত্যকার উপর তার নক্ষত্রগুলিকে যেখানে পার্সি সূঁচের ফোড়ের তকলিফকে পরিচর্যা করে আর হাঁটতে থাকে, হাঁটতেই থাকে।
বিষয়টিতে একটি সম্ভ্রম রয়েছে, একটি নিয়মানুগত্য,
ফুলগুলি পটির মতো তীব্র আর পুরুষটি সংস্কারে রত,
তারা আনত হয় আর টিঁকে থাকে,
তারা বরদাস্ত করে আকস্মিক আক্রমণ।
অশীতিপরটি ভালবাসে ক্ষুদ্র যূথগুলিকে,
সে যথেষ্ট অভিজাত,
নিদারুণ হাওয়া তাকে শ্বাসের চেষ্টা দেয়,
স্বকামিনীটি চোখ তুলে তাকায় যেমত শিশু,
রক্তশূন্য দ্রুততায়।
মৃত্যু এবং আসঙ্গ
সোনালী চক্রবর্তী
দুজন, অবশ্যই তারা ‘দুই’জন পুরুষ,
এটা এখন সম্পূর্ণ স্বাভাবিকই ঠেকে,
প্রথমজন কখনও চোখ তুলে তাকায় না,
তার চোখগুলো ঢাকনাওয়ালা, ব্লেকের পাঁচালির মতো,
সে প্রদর্শনীতে বিশ্বাসী।
বণিকী মালিকানার সুপরিচিত সিলের মতো হয়ে গেছে তার জন্মদাগগুলো,
বাষ্প প্রদাহের ক্ষতচিহ্ন,
নগ্নতা,
শকুনির তাম্রমল,
আমি রক্তাভ মাংসখণ্ড, তার খাঁড়ার মতো নাক।
পাশে পড়ে থাকে হাততালির শব্দ,
আমি এখনও তার অধিগত হইনি।
সে আমায় বলে স্থিরচিত্রে আমি কতটা কদাকার,
ভীষণ স্বাভাবিকভাবে সে বলতে থাকে হাসপাতালের বরফ বাক্সে শোয়ানো শিশুগুলি কত মধুর।
ঘাড়ের কাছে ঝালর,
তারপর আদিম উপত্যকার বাঁশি,
মৃত্যুর আলখাল্লারা
আর ছোট্ট দুটো পা
সে হাসে না, ধূমপানও করে না।
অপরজন সেগুলো করে,
তার চুল দীর্ঘ কিন্তু আদতে নকল,
বেজন্মা
একটা ঝলকানিকে নিয়ে স্বমেহনে মেতে থাকে,
তাকে ভালোবাসা হোক, এটা তার চাহিদা।
আমি উত্তেজিত হই না,
ব্যর্থতা একটি ফুলের নির্মাণ করে,
হিম তৈরি করে একটা নক্ষত্র,
মৃত্যু ঘণ্টাটি,
মৃত ঘণ্টাটি,
কেউ তার কাজ শেষ করে ফেলেছে।
আমি শীর্ষদেশীয়
সোনালী চক্রবর্তী
কিন্তু আমার হওয়ার কথা ছিল সমতল,
মাটির গভীরে শিকড় ছড়ানো কোনও বৃক্ষ আমি নই
যে প্রতিনিয়ত খনিজ ও মাতৃপ্রেমের স্তন্য পান করে
যাতে প্রতি বসন্তে আমার সমস্ত রশ্মি পাতায় বিকিরিত হয়।
মুগ্ধতায় নিজের অংশকে প্রলুদ্ধ করা, দর্শনীয়ভাবে চিত্রিত
কোন লাবণীও আমি নই
যে উদ্যান শয্যাকে খোলতাই করে।
জানতে পারার আগেই খুব দ্রুত আমার পাঁপড়িদের ছিঁড়ে ফেলা হবে।
আমার সঙ্গে তুলনায়, একটি বৃক্ষ অবিনশ্বর
আর একটি গর্ভমুণ্ড, নাতিদীর্ঘ কিন্তু অধিক বিস্ময়কর।
আমি একটির পরমায়ু কামনা করি এবং অপরটির স্পর্ধা।
আজ রাতে, নক্ষত্রদের অতি সামান্য আলোয়,
বৃক্ষ আর ফুলেরা তাদের শীতল ঘ্রাণ ছড়িয়ে চলেছে।
আমি তাদের মধ্যে দিয়ে হাঁটছি,
কিন্তু তারা কেউ আমায় লক্ষ করছে না।
কোনও কোনও সময় আমার মনে হয়,
যখন আমি ঘুমিয়ে থাকি,
আমি অবশ্যই সবচেয়ে নিখুঁতভাবে তাদের মতো হয়ে উঠি।
চিন্তাগুলো ক্ষীণ হয়ে আসে।
আমার জন্য সবচেয়ে প্রকৃতিসম্মত হল শুয়ে পড়া,
তখন আমি আর আকাশ মুখোমুখি আসতে পারি মুক্ত সংলাপে।
আর আমি অবশ্যই বেশ ব্যবহার্য হয়ে উঠব যখন চূড়ান্তভাবে শুয়েই পড়ব।
তখন হয়তো বৃক্ষেরা একবারের জন্য হলেও আমায় স্পর্শ করবে,
আর ফুলেদের কাছে সময় থাকবে আমায় দেওয়ার জন্য।
নির্ভীক সৈনিক
শাহনূর শহীদ
যুগ যুগ ধরে নিজ ভূমে রুদ্ধ জনপদ
হানাদার বুলেট যখন ঝাঁঝরা করে বুকের পাঁজর —
রক্তশোভিত মরুকণা গুলো ভাসে আর্তনাদে
কাঁধে নিথর দেহ —
চোখ দুটো ভিসুভিয়াস জ্বালা মুখ
দুখের ভয়াল তরঙ্গে ক্ষত-বিক্ষত
হৃদয় তাঁদের ভঙ্গিল পর্বত
আজন্ম মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা–
হাতে লাশ সনাক্তকরণ চিহ্ন বরাভয়
ওরা রক্ত দিতে শিখেছে
বুকের তাজা সতেজ রক্ত
চারিদিকে মর্ত্যের অমানিশা
বন্ধুর বাধা দমাতে পারে না
লক্ষ্য স্থির দৃঢ়-অটল হিমাচল
ভয় আতঙ্ক জয় করে আজ
সবাই বীর সালাউদ্দিন
বায়ান্নের পিছ ঢালা পথ
একাত্তরে বাংলার সবুজ শ্যামল মাঠ
রঞ্জিত খুনে–
তাঁদের স্তুতি প্রতি পদে
উচ্চ শির ইতিহাসে,
দেয়ালে পিঠ ঠেকে রক্তস্নাত বিপ্লব
মুক্ত ভিয়েতনাম, আফগান,
জল্লাদের অত্যাধুনিক মারণাস্ত্রের মুখে;
এক টুকরো পাথর হাতে গাজার আগুন শিশু
অমিত নির্ভীক সৈনিক।
ক্যাঙ্গারু সময়
মান্নান নূর
সময় হাঁটে না, দৌড়েও যায় না, লাফায়।
লাফাইয়্যা লাফাইয়্যা চলে,
গাড়ি গতিতে সময় গেলে সময়ের দুর্নাম হয়
সবুর মিয়া কয় সময়ডা বালা নারে বেঢা
ক্যাঙ্গারু সময় বারো আঠারোতে, পঁচিশ তিরিশে, চল্লিশ পঞ্চাশে ঠেকে।
সময়ের ট্যারা চোখ অকাল বার্ধক্য আনে
তারপরও আমরা কেহই দেখি না
সময় সময়ের মতো চইল্যা যায়
ক্যাঙ্গারু সময় –
খোলা সূর্য আর কালাধোঁয়া
রেশম লতা
ওদের একটা ঘর ছিল কুমোরপাড়ায়
এহন ওইখানে ঢেঁকির ঢেঁকুর শুধু!
হা করা গাছের ভিত্রে পরগাছা। আহ্ কি বিশুদ্ধ মরণ!
জীবন সিঁড়ি ধইরা আসমানে ঘর লইছে; খালি মেঘ আর মেঘ! জলভরা রাইত ছিল্লায় কয়, কাদার দিনে ঘাও না হইলেও আইজ এসি রুমের মগজে কিরার ঘা।
উফ্ রাষ্ট্র কি-ই-না অন্ধত্বের তকমা নিল!
আমি তো ইতিহাস পড়েও রাজনীতি শিখতে পারি নাই।
ড্রেসিং করা সমাজে মাছির পাখনা হয় ঈগল
সাপ হয় চৌচালা শকুন
তোমগো আক্কেলহীন পৃথিবীর কান্ড য্যান হোমোস্যাপিয়েন্স ব্যাপারস্যাপার; দাভাই তুই বুজ্জা ল!
শুনলাম, যুক্তিহীন সময় কলের লাহান কল বয়ে সুরত নিছে।
না, ওগো নিচে কোনো সবজির দাম নাই!
এসিল্যান্ড হক কথার ভাত কুত্তারে খাইতে দিয়া নিজে চাইনিজ খায়, ওরা গিলে খোলা সূর্য আর কালাধোঁয়া!
খেয়া ঘাটে ওঠে গান
উৎপলেন্দু পাল
তোর্ষার ঘাটে রোজ খেয়া বায় মথুরানাথ দাস
তবুও তার ঘরপোড়া মনডা পইড়া থাকে সেই
টোক নয়ানবাজারের পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের ঘাটে
সাত পুরুষের ইজারার ঘাট ছাইড়া আইছে কবে
তবুও মনে আছে কাসেম চাচা , সালেমার কথা
মঠখোলার বংশীদাস বাবাজির পবিত্র আশ্রম
আর বাড়ির আঙিনায় আম কাঁঠালের বাগিচা ।
এই বুড়ো বয়সেও ভুটভুটির হাল ধইরা বসে সে
যেমনটা গোলুইয়ে বসতো তার বাপ বৃন্দাবন দাস
বাঁশের লগি ঠেলতো তরুণ মথুরা তার নৌকায়
কাসেম চাচা প্রাণপনে দাঁড় টানতো হেঁইয়া হো …
ঢেউ তুইলা বাইয়া যেতো পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের জলে
শীতলক্ষ্যার স্রোতে কিংবা বানারের তিরে তিরে
কাওরাইদ , বর্মি বাজার , মঠখোলার ঘাটে ঘাটে ।
তারপর সত্তুরের দশকের সেই আগুন ঝরা কালে
বাপ মা ভাই বোনের হাত ধইরা দেশান্তরী হওয়া
কুমিল্লা – আগরতলা – আসাম হইয়া কোচবিহার
এতকাল ধইরা এই দেশেই ঘর সংসার তবুও যেন
কাঁটাতারের ওপাড়েই রইয়া গেছে তার নিজ দ্যাশ
কাসেম চাচা , নলিন মাঝি , ফারুখ সরকারেরা
এখনো দাঁড় টানে যেন তার বাপের সেই নৌকায় ।
ছেলেরা কতশত বার কয় অবসর নেওয়ার কথা
তবুও মনটা হু হু কইরা ওঠে মথুরানাথ দাসের
ঘুম ভাঙলেই তাই নৌকার গোলুইয়ে গিয়া বসে
তার ঝাপসা চোখের সামনে ভাইসা ওঠে ছবি
বাজারের দূর্গাপূজায় নবীন চক্রবর্তির চন্ডীপাঠ
বড়ো মসজিদে রফিক মুন্সির আজানের সুর
আর মা শৈলবালার কন্ঠের সন্ধ্যাবাতির উলুধ্বনী ।
এখনো কি আছে সেই ঘাট , সেই খেয়া পারাপার ?
এখনো কি আছে তীর্থ ডাক্তারের ডিসপেনসারি ?
বেত হাতে এখনো কি দাঁড়ায় মকসেদুল মাষ্টার ?
কাসেম চাচার পোলাপানেরা কি এখনো নাও বায় ?
ব্রহ্মপুত্র কি ঠিক এখনো আগের মতোই বইয়া যায় ?
কত স্মৃতি ভাইসা ওঠে মনে , কত প্রশ্ন জাগে রোজ
কে ই বা তার খবর রাখে , কে ই বা তার উত্তর দ্যায় ?