ড্রাই মাউথের উপসর্গ ও নানা রোগের ভোগান্তি

আজকে আমি একটা বিষয় উপস্থাপন করব যেটা বেশির ভাগ মানুষের কম বেশি সমস্যা, আপনি কি লক্ষ্য করেছেন আপনার মুখ, গলা,জিহবা শুকিয়ে যাচ্ছে কেন?
তাহলে আসুন কেন এমন হচ্ছে জেনে নিই…
“তৃষ্ণার্ত মুখ/অনাদ্র মুখ/অসার -নীরস মুখ/জেরোস্টোমিয়া /ড্রাইমাউথ “
আমাদের মুখ গহবরের ভেতর কিছু লালাগ্রন্থি আছে যেখানে লালা উৎপন্ন হয় এবং সেখান থেকে কিছু নালীর মাধ্যমে আমাদের লালারস বের হয় যা আমাদের মুখ গহবরের চারপাশ ভেজা রাখে,আমাদের তৃষ্ণা নিবারন করতে সাহায্য করে।কিন্তু যখন কোনো কারনে আমাদের ওই লালাগ্রন্থি গুলো কাজ করতে পারেনা তখন লালারস বের হতে পারেনা,তখন বারবার আমাদের মুখ শুকিয়ে যায়,তৃষ্ণা লাগে, গলা শুকিয়ে যায়,জিহবা শুকিয়ে গ্রীষ্মকালের খরার মত ফেটে ফেটে যায়,তখন আমরা মেডিকেলের ভাষায় বলে থাকি জেরোস্টোমিয়া অথবা ড্রাই মাউথ।সাধারন বাংলায় যাকে বলে তৃষ্ণার্ত মুখ/অনাদ্র মুখ /অসার -নীরস মুখ।
কেন হয়? কারন গুলো জানা সকলের দরকার…
১,আমাদের শরীরে কিছু সিস্টেমিক রোগ এর প্রধান কারন
➤ডায়াবেটিস টাইপ-১ এবং টাইপ-২
এইসব রোগীদের বারবার অল্প অল্প করে প্রস্রাব হওয়াতে পিপাসা বেশি পায়।
➤অটোইমিউন ডিজিজ
যেমনঃজোগ্রেন সিন্ড্রোম (Sjogren’s Syndrome)
২,ভাইরাল কিছু সমস্যা
-মাম্পস
-এইচ আইভি
-হেপাটাইটিস
৩,রক্তজনিত সমস্যা
-থ্যালাসেমিয়া
৪,ডিহাইড্রেশন বা পানিশুন্যতা
-ত্বক ফেটে যাবে
-ঠোঁট ফেটে যাবে
৫,ফ্লুয়িড বের হয়ে যাওয়া অথবা পানি বের হয়ে যাওয়া
-ডাইরিয়া
-বমি হওয়া
৬,রক্তশূন্যতা
-হঠাৎ দুর্ঘটনা হয়ে অনেক রক্ত বের হয়ে গেলে
৭,সাইকোলজিক্যাল সমস্যা
-যেসব মানুষ দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ, নানা কারনে চিন্তায় থাকেন,অথবা হতাশায় ডুবে থাকেন তাদের এই সমস্যা হয়ে থাকে।
৮,কিছু ওষুধ গ্রহনের কারনেও হয়ে থাকে যেমন যারা বেশি বেশি এন্টি হিস্টামিন জাতীয় ওষুধ সেবন করেন।
৯,ক্যান্সারের রোগী যারা কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি পেয়েছে বা পাচ্ছেন।

উপরোক্ত কারন ছাড়াও হতে পারে
✔যারা মুখ হা করে ঘুমায়।কেন হা করে?
-ঠাণ্ডাজনিত কারনে নাক দিয়ে বাতাস যাওয়া আসা করতে পারেনা তখন মুখ দিয়ে বাতাস যাওয়া আসা করে
-যাদের সাইনাসের প্রদাহ হয়ে থাকে
-যাদের এলার্জি সমস্যা থাকে
-যাদের নাকের হাড়জনিত সমস্যা থাকে
✔ভিটামিন বি–২(রিভোফ্লেবিন) এবং ভিটামিন বি–৩ (নিয়াসিন) এর অভাব জনিত সমস্যা থাকে।
✔যারা বেশি ঘামে, ঘামের কারনে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যাওয়ার কারনে
✔যাদের কিডনিজনিত সমস্যা থাকার কারনে পলিউরিয়া অর্থাৎ প্রস্রাব মাত্রা অতিরিক্ত হয়।যারা বেশি লবন সেবন করেন অথবা কোল্ড ড্রিংক্স বা পানীয়জল বেশি ব্যবহার করেন তাদের বেশি প্রস্রাব হয়ে থাকে, যা শরীর পানি শূন্য করে দেয়।
একটা গবেষনায় দেখা গেছে যেসব মেয়েরা বেশি লিপস্টিক ব্যবহার করে তাদের দাঁতের সাথে লেগে লেগে মুখের লালা ঘন হয়ে শুকিয়ে যায়।
কাদের বেশি হয়?
সাধারনত বয়স্কদের এই সমস্যা বেশি হয়ে থাকে,আর যারা বেশি চিন্তা করেন,যারা বেশিদিন রোগে ভোগেন আর বিভিন্ন ওষুধ গ্রহন করেন তাদের বেশি হয়ে থাকে।
কিভাবে বুঝবেন আপনি এই সমস্যায় ভুগচ্ছেন?
১,আপনার বারবার পিপাসা লাগবে
২,গলা, জিহবা শুকিয়ে যাবে।।
৩,কথা বলতে সমস্যা হবে।
৪,খাবার গিলতে ও চিবাতে সমস্যা হবে।
৫,খাবারের স্বাদ ঠিক ভাবে পাবে না।
৬,মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হবে।
৭,গলার স্বর পরিবর্তন হবে।
৮,লালা বা থুথু ঘন থেকে ঘনতর হবে।
আপনি যদি এই সমস্যায় ভোগেন তাহলে আপনার মুখে কি কি সমস্যা হতে পারে?
১,মুখে জীবাণু সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাঁতের ক্ষতি হতে পারে।
২,মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হবে।
৩,মাড়িতে প্রদাহ বা ইনফেকশন হতে পারে।
৪,জিহবা ফেটে যেতে পারে।
৫,খাবারের স্বাদ পাবেন না।
যদি আপনার এই সমস্যা থাকে তাহলে আপনার করনীয় ঃ
✆একজন ডাক্তারের শরানাপন্ন হন।
☞আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে সেটা চেক করুন, সেটার জন্য ভাল চিকিৎসা নিন, দরকার হলে একজন বিশেষজ্ঞ দেখান।
☞আপনার অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা থাকলে সেটার জন্য চিকিৎসা নিন।
☞এলকোহল মুক্ত মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করুন।
☞তামাক সেবন নিষিদ্ধ।
☞আপনার ওরাল হাইজিন ঠিক করুন।
☞সুগার ফ্রি চুইংগাম অথবা ক্যান্ডি ব্যবহার করুন।
যেটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, প্রতিদিন পরিমান মত পানি গ্রহন করুন,কিছুক্ষন পরপর পানি পান করুন।মনে রাখবেন স্বাস্থ্যই সকল সুখের মুল।আতংক নয় সচেতন হোন।সুস্থ দেহ সুন্দর মন, ব্যস্ত জীবন সুখী হোন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট