| 25 এপ্রিল 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত কবিতা

তিনটি সিরিয়ান অনুবাদ কবিতা । ভাবানুবাদ : রেজাউল ইসলাম হাসু

আনুমানিক পঠনকাল: 4 মিনিট

মধ্যপ্রাচ্যের বাগানে সিরিয়া যেন কোনো এক রক্ত গোলাপ। অথবা যুদ্ধ থেকে উদগত কোনো এক রক্তকরবী। স্বগৃহেই যারা রক্তাভ বারবার। অনির্ণীত হারগোরের উপর  যাদের ইতিহাস নির্মীত। মৃত্যু-সাঁকো পেরোতে পেরোতেই অ্যাডোনিসের মতো যাদের পুনর্জন্ম। অথবা অডিসুয়েসের মতো পুনর্মৃত্যু। কবিদের  চোখ দিয়েই যারা পৃথিবীর আধুনিকতা দেখেছে। সুপ্রাচীন গোরামি ও কদর্য কুসংস্করতা ভেঙে হয়েছে তিতিরের উড়াল। ছুঁয়েছে উন্মুখ আকাশ ও অর্বাক অন্তর। নীলাভ নক্ষত্রে বুনতে শিখেছে স্বাধিকারের স্বপ্ন ও সাধ। ডায়াসপোরা সাহিত্যের পথে হাঁটতে হাঁটতে বিকশমান যাদের সুদীর্ঘ কাব্য-ইতিহাস। সেকেলে যাপনের বাইরে এসে যারা মরচে পড়া জীবনকে ঘষেমেজে দানিয়েছে নতুন উদযাপন। ওই শোনো, আলেপ্পোর দুর্গ থেকে অ্যাডোনিস আমাদের বলছে—

এই প্লাবনই আমাদের গ্রহ,
যার কোনো আবর্তন নেই
বিনাশী আর সুপ্রাচীন।
এখানেই হয়তো পাওয়া যাবে
সমাহিত শতাব্দীর ঈশ্বরের ঘ্রাণ।

 

[প্লাবন, অ্যাডোনিস, তর্জমা- বিদ্যুত খোশনবীশ]

 

ফুয়াদ মোহাম্মদ ফুয়াদ

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,Syrian poetry bangla anubad kobitaফুয়াদ মোহাম্মদ ফুয়াদ একজন সিরিয়ান চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য গবেষক এবং কবি। তিনি ১৯৬১ সালে আলেপ্পোতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮০ সালে আলেপ্পো বিশ্ববিদ্যালয় সম্মেলন অংশগ্রহণ করেন। ঐ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দল সিরিয়া এবং আরব অঞ্চলে আধুনিক কবিতায় অভিনব অবদান রাখে।

তার বেশ কয়েকটা কবিতাবই প্রকাশ হয়েছে। তাগুত আলকালাম (দ্য আইডল অব স্পিচ, ১৯৯০), মাতরুক জানিবান লেফট অ্যাসাইড, ১৯৯৮), কল বায়দাবা (বায়দাবা সেইড, ২০০৪) এবং আজজা আলহায়ওয়ান (দ্য পার্টস অফ দ্য অ্যানিমল, ২০১০)

তিনি মার্সেইলে কবিতা অনুবাদের জন্য আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের অনুবাদ সম্পর্কিত একটি কর্মশালায় অংশ নেন। যার ফলশ্রুতিতে ২০০২ সালে আমদানি/রফতানি, দামেস্ক—মার্সেই শিরোনামের একটি সংকলন প্রকাশিত হয়। উক্ত সংকলনে তিনজন সিরিয়ান এবং তিনজন ফরাসি কবিদের কাজ সংকলিত হয়। আরবি জার্নাল এবং ম্যাগাজিনে তার অসংখ্য কবিতা এবং সমালোচনা প্রকাশ হয়েছে।

তিনি দুর্দান্ত কাজ করছেন : ইচ্ছা, কৌতূহল এবং তাঁর পেশা তাকে চল্লিশেরও বেশি দেশে নিয়ে গেছে। দার্শনিক, কবি, এবং ডাক্তার অ্যাভিসেনারের কথায়—

এসব তাঁকে বাঁচতে শিখিয়েছেদীর্ঘজীবী নয় বরং প্রশস্ত এক জীবনের জন্য

সিরিয়ার যুদ্ধের পরিস্থিতিতে লেবাননের আলেপ্পো ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন।  বর্তমান তিনি বৈরুতে আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের পরিদর্শক অধ্যাপক হিসাবে কাজ করছেন। আরবি থেকে আতেফ আল-শাহেরের ইংরেজির তর্জমা থেকে দ্য কিং’ দ্য কড়িডোর’ কবিতা দুটির ভাবানুবাদ করা হলো।

 

সম্রাট

আমি সেই সম্রাট

প্রভাতের ধূলিকণা যার মুকুট,

পৃথিবীটাই যার প্রাসাদ।

যাকে কোনো শব্দে ধারণ করা যায় না,

যে রাজকীয় দরজার মতো

সটান দাঁড়িয়ে থাকে।

আমার জানালাময় দিনগুলি

আর আস্তাবলের চি-হি ধ্বনি

যেন কুয়াশায় ঢেকে যাওয়া

কোনো এক আদিম কথাকার!

                         *

আমি আমার পূর্বপুরুষদের সম্রাট!

আমি কোনো আরামকেদারা নই,

না সেইসব মিথ্যে বার্তা,

কিংবা না কোনো স্নিগ্ধতায় আঙুলের  পিছলে যাওয়া;

আমার স্বাধিকারের চেয়ে

না অন্য কিছু।

                         *

আমি তোমাদের দরজা

এবং ক্লেদাক্ত আয়ুর সম্রাট,

এবং দেয়ালে সাঁটানো

আলোকচিত্রের ক্ষত;

প্রজাপতির মতো

আমি সেই উড়ন্ত পঙক্তির সম্রাট,

সমূহ শীত

আর গ্রীষ্মের সম্রাট

এবং আমি সেই নিঃসুন্দর নিঃঙ্গতা;

সেই ভয়দ জ্বরের,

রুগ্ন চোয়ালের,

এবং রক্তে খরিদ করা

সেই শাশ্বতকালের সম্রাট

যে মাঝে মাঝে বিভ্রান্ত হয়;

আমি সেই ধূলি-ধূসর

যৎসামান্য এক সম্রাট…

 

 


আরো পড়ুন: চারটি মিয়ানমার কবিতা । হান লিন


 

কড়িডোর

(কোনো এক করিডোর, যা আলেপ্পোর কোনো এক হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের পথ প্রদর্শন করে )

প্রেতাত্মার ন্যায়

করিডোরে অন্ধকার,

শশ্রুষালয়ে

নিস্ক্রিয় সমূহ জীবাণু নাশক

এবং পথচারীরা নতজানু

যেতে যেতে পেছনে ফেলে

এইসব।

           *

জরুরী বিভাগে

চলো ব্যান্ডেজের পাক খুলি,

অনুসরণ করি প্রতিটা রক্তের ফোঁটা।                         

তারা উৎফুল্লতায় অসুস্থ্,

তাদের শয্যায় পচা চর্বির গন্ধ!

            *

করিডোরে অন্ধকার

দেয়ালে তার আবছায়া;

তারা আঘাত করছে ছোট্ট মেয়েটাকে

এবং তার মাতামহীকে

             *

রক্তাক্ত অ্যাপ্রনের উপর

ঘুমিয়ে যেয়ো না,

কোনো এক মা

দরজার পেছনে ক্রন্দনরত;

অহেতুক আঘাত করো না তাকে।

                  *

করিডরে অন্ধকার

মিউজিক থামাও

কেউ মারা যাচ্ছে

আমির আলহুসেইন

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com, Syrian poetry bangla anubad kobita

আমির আলহু্সেইন একজন সিরিয়ান কুর্দি কবি। তিনি কুর্দিশ ও আরবি উভয় ভাষায় লিখেন। সিরিয়ায় যখন তার মাতৃভাষা কুর্দি নিষিদ্ধ করা হয়, তখন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই তিনি এই ভাষা শিখেন। তিনি সিরিয়ায় সেন্সর করা কুর্দি এবং আরবি কবিতা-ম্যাগাজিন ইনফার্নো সম্পাদনা করেন। তিনি বর্তমানে ইরাকি কুর্দিস্তানের শরণার্থী হয়ে ইরাকের এরবিল শহরে আছেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন আরবি সংবাদপত্রে লেখালেখি ও অনুবাদের কাজ করেন। ‘অভিষ্যন্দ প্রজাপতি ’কবিতাটি আরবি থেকে অ্যালিস গুথরির ইংরেজির তর্জমা ‘বাটারফ্লাইস ইন আবানডান্স ’ থেকে ভাবানুবাদ করা হলো।

অভিষ্যন্দ প্রজাপতি

সেখানে

যেখানে একটা গাছ

(সিঁড়ি হিসাবে ব্যবহার না করা)

একজন লোক,

যাকে পরিচিত মনে হচ্ছে;

আমি তাকে তার মুষ্ঠিতে দেখেছি।

সে তার পাপড়ি ছড়িয়ে দেয়

এক-এক করে

যেন তাকে অঞ্জলি দানের সুযোগ দিচ্ছে

অথবা অন্যকে অতল অশ্রুতে

হারিয়ে যাবার ফুরসত দিচ্ছে।

আমি বলছি না

 ‘পাপড়ি তৈরি করে নিখোঁজ ডানা’।

সেও বলছে না

‘আমি কেবল কোনো এক কেটে যাওয়া ক্ষত’।

সেখানে

(যেখানে রেইনকোটগুলি অযত্নে ঝুলে থাকে)

দেবদূতের মতো,

তাকে অপেক্ষমান

অথবা বিভ্রান্তকর মনে হচ্ছে না।

আমি বলছি না

‘তোমার জুতোর ফিতা খুলে দেওয়া হয়েছে’।

 সেও বলছে না

‘আমার জুতো খুব ভারি’।

আমি তাকে নীরব, নম্র হাতে দেখি।

এবং আমাকেও,

আমি যেন সেই গান

যার স্বরতন্ত্রীকে ফাঁসকাষ্ঠে ঝোলানো হয়েছিল

কোন এক সান্ধ্য-হাওয়ায়।

সে দূরতম নির্জন দ্বীপেও নেই,

যেখানে আমি অনুমান করতে পারি

সে অপেক্ষা করছে।

আমি বলছি না

 ‘নক্ষত্রগুলি আমাদের হারানো মা,

অথবা লজ্জার অভিসম্পাত।

সেও বলছে না

‘প্রতিটি নক্ষত্রই ফ্যাকাসে হয়ে গেছে’।

লোকটি

সেখানে

যেখানে তার দীর্ঘ চুলের গোছা,

তার ছায়াবতী চোখের টুকরা-টাকরা।

তবে গোলাপেরা ভোলে না

সেখানে সৌরভ ছড়াতে,

যেখানে শাদা এক পাথর

আর কেউ একজন

যে কোনো পাখির গল্প জানে না;

পৃথিবীর সীমানা নির্ধারণ করে দিচ্ছে

সেখানেই…

উৎস : পোয়েট্রি ট্রান্সলেশন সেন্টার

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত