১
মোমরঙের ঠিক সামনে একটি স্মৃতিভ্রষ্ট ঘর। দৃশ্যশাবক এই হাত ছুঁতে পারছে না তোমার অন্নের অন্ধকার। আলোয় ভেসে থাকা অস্থিরতার ওপর দু’টি তিয়াসা ভেঙে পড়েছে ঈশাবাস্য রক্তনালীতে।
শিহরণ কোথায় যায়? তোমার ভিক্ষান্তক আলো থেকে আমি তুলে এনেছি উপবাস। খিদের ছবি থেকে সরে যাওয়া রঙে প্রেম জমা হচ্ছে। রঙ থেকে সরে যাওয়া সদ্যমৃত মাংসে নেমে আসছে ফোঁটা ফোঁটা অস্বপ্ন। জয়নুল আবেদিনের ক্ষুধার্ত আঙুল থেকে উড়ে যাচ্ছে অন্ধ পাখিরা।
দৃশ্যের আস্তরণে মরে গিয়েছে আমাদের প্রেম। রক্তাক্ত খাদ্যের ওপর থেকে ঈশ্বরবিম্বের দু’টি হাত সরাতে সরাতে থেমে গিয়েছে বোবা কান্না। মোমরঙে ঘষে ফেলা এই অভিনয়সুখ থেকে এবার সরিয়ে নাও উত্তর।
২
মহাকালের সংসার ও একটি করতোয়া পড়ে আছে দারিদ্র্যদহনের নীল রঙে। মোমের পুতুল খেলছে স্মৃতিহীনতার পিপাসায়। এই প্রেমের বর্ণান্ধতায় ঈশ্বরের কঙ্কাল দেখে চমকে উঠেছো তুমি। আর সন্তানপ্রভ অভিনয় ঢুকে গিয়েছে রঙের বাক্সে।
বেহিসাবী রঙের সামনে একটি জানালা। তার শান্ত ফ্রেমে লেগে আছে মোৎজার্টের তীব্র নকটার্ন। মাংসের প্রাকৃত রঙ ফুটিয়ে তুলতে হাজার বছর ধরে এই ঘর ছাড়ছি আমরা। এলোমেলো শব্দ নিষ্ঠুর হয়ে উঠছে বারবার।
প্রতিরূপে অন্ধ এক মৌনতা উঠে আসছে। প্রশ্নের মতো কঠিন হয়ে গিয়েছে এই মৃগব্যাধনক্ষত্রের রঙ। ক্ষয় হতে হতে তার পূর্ণতায় পুড়ে উঠছে দৃশ্য ও অবশিষ্ট ঈশ্বরের প্রসববেদনা।
৩
আলোর দিকে এতদূর রঙ নিয়ে এলে তুমি। শস্যপূর্ণ আমাদের যন্ত্রণা চুঁইয়ে জন্মান্তর নেমেই চলেছে শব্দের ইজেল থেকে দৃশ্যের শূন্যতায়। দুধধান ও মাটির ইচ্ছাগন্ধে জলাকাঙ্খী আলোর জটে নেমে যাচ্ছে বর্ণমাতৃকার নিঃসরণ।
নীল ও সবুজ স্পর্শরচনার শেষে স্রোতে ভেসে যাচ্ছে তোমার বর্ণহীনতা। প্রচ্ছায়ারঙ থেকে ক্রমাগত উড়ে চলেছে একটি পাখি। অপলক প্রান্তরে পড়ে আছে পাখির অন্ধ শস্যকণা। আরেক ছায়াস্বাদ ও উত্তাপজনিত ইতিহাস থেকে আমাদের সম্পর্কে ব্যস্ত হয়ে উঠছে অগণন বীতংস।
সন্ধিপ্রস্তাবে বারবার জড়ো হয় খেলার রঙ। ভ্যান গঘের তীব্র মৃত্যুযন্ত্রণা বৃত্তাকারে ঘুরতে থাকে আমাদের মাংসের ভিতরে।
৪
রঙের ক্ষয় ছাড়াই শুরু হয় রক্তের ফিসফাস। রঙ গুছোতে গিয়ে আজীবন মাছ হয়ে যাচ্ছো তুমি। অনন্ত সাঁতারে ধরে রাখছো স্মৃতিহীন ফোঁটা ফোঁটা যন্ত্রণা। ঢেউয়ের অন্ধত্ব থেকে অদ্ভুত নীল রঙ সরিয়ে নিচ্ছেন নন্দলাল বসু।
ঢেউয়ের কঙ্কালের নীচে বারবার আমরা রঙ হারিয়ে ফেলছি আলতামিরার অন্ধকারে। মশাল হাতে চমকে উঠছে একটি শিশুর মুগ্ধতা। উদভ্রান্ত বাইসন ছুটে আসছে আমাদের মূকাভিনয় লক্ষ্য করে।
রঙের শ্রমিষ্ঠতা ফিরে আসে বাক্সে। ছবির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ঈশ্বরবিরুদ্ধ দু’জোড়া চোখ।
অনন্ত এক উদ্বাস্তু ঘরে জন্ম। তাই পরিচিতিটুকুও সঙ্কীর্ণ পরিসরে বাঁধতে রাজি নন। ঘটনাচক্রে আবহবিদ্যা ও জলবায়ুবিদ্যা সংক্রান্ত গবেষক। ২০০২ সাল থেকে ছোট পত্রিকায় লেখালিখির জগতে। কবিতায় অক্ষম প্রয়াসের পাশাপাশি জনপ্রিয় বিজ্ঞানরচনা, শিশুসাহিত্যেও হাত পুড়িয়েছেন। ‘উষ্ণিক’ নামের একটি কবিতা-ওয়েবজিনের সম্পাদনা করেন। এযাবৎ প্রকাশিত হয়েছে পাঁচটি কবিতার বই। শখ – দূরবীনে অনন্ত আকাশযাত্রা, হিমালয়ের অচেনাপথে অভিযাত্রা, নক্ষত্রখচিত আকাশের নীচে শুয়ে দরবারী, মালকোষ, চন্দ্রনন্দন শুনতে শুনতে রাবড়ি, সীতাভোগ, সরভাজা, রসমালাই ইত্যাদি খাওয়া।