আদিম ক্ষুধা

Reading Time: 5 minutes

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.comশুষ্ক পত্ররাশিভারাক্রান্ত বৃক্ষরাজিও যেন হিমের প্রকোপে বিপর্যস্ত। উত্তরী বায়ু হুহু করে প্রবাহিত হচ্ছে। বটবৃক্ষতলে উপবিষ্ট ঋষি বামদেব প্রবল শৈত্য অনুভব করছেন। উঠে এলেন ব্রাহ্মণ এবং গৃহের সামনের আঙিনায় এসে ডাকলেন, “শশীয়সী, আমার ব্যাঘ্র-চর্মটি দাও। বড় শীত লাগছে।”

শশীয়সী পুরাতন ব্যাঘ্র-চর্ম নিয়ে বাইরে এলেন। একটু মলিন আর স্থানে স্থানে সামান্য ছিন্ন। এই ব্যাঘ্র-চর্মটি বামদেবের অতীত শৌর্যের স্বাক্ষর। বহু বর্ষ পূর্বে বর্ষান্তে পর্যঙ্ক থেকে পূর্বদিকে বনানীতে আসবার সময় পথিমধ্যে তিনি একে শিকার করেছিলেন। তীক্ষ্ণ বর্শা বেঁধার ক্ষতচিহ্ন এখনও চর্মের গণ্ডদেশে ছিদ্রাকারে প্রকট।

এ-বৎসরের শীত ঋতু অতি রুক্ষ আর শীতল। এই রকম অধিক শীতলতায় আক্রান্ত হয়েছিলেন একবার, সে প্রায় দ্বাদশ বর্ষকাল পূর্বে। মনে পড়ে বামদেবের।

এক পক্ষকাল পূর্বে মারণ মড়কে গোষ্ঠীর অন্যান্যের মতো বামদেবের অধিকারস্থ দুগ্ধদাত্রী একমাত্র গাভীটির মৃত্যু হয়েছে। তাঁর আট মাস বয়সের বকনা বৎসটি সেই ভয়াবহ মহামারী হতে রক্ষা পেয়েছে। তাকে ওই কুম্ভী বৃক্ষের সাথে রশি দিয়ে বাঁধা। গোবৎসটির লোমশ চর্মের কম্পিত সঞ্চালন দেখলে বোঝা যায়, ও-ও খুব শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে। একদৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে আছেন ক্ষুধার্ত ঋষি বামদেব। গত তিন দিবস অন্নহীন উপবাসী তিনি, তাঁর স্ত্রী শশীয়সীও।

বামদেবের সন্নিকটে এসে দাঁড়ালেন শশীয়সী। তাঁর দিকে তাকিয়ে ঋষি জিজ্ঞাসা করলেন, “বলো শশীয়সী? দেখে মনে হচ্ছে তোমার কিছু নিবেদন আছে।“

বক্ষ সংলগ্ন হয়ে শশীয়সী বললেন, “বড় ক্ষুধা, দয়িত। দয়াকরে কিছু ভক্ষণের ব্যবস্থা করুন।”

নির্নিমেষ স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে রইলেন ব্রাহ্মণ। তারপর হঠাৎ বলে উঠলেন, “আমার একটি উপলাস্ত্র নিয়ে এসো, শশীয়সী। সর্বাধিক ধারলোটি আনবে।”

আঙিনা প্রান্তে বেদি নির্মাণ করে যজ্ঞে বসেছেন বামদেব। বেদির পূর্ব পার্শ্বে আহ্বানীয় অগ্নির স্থান। বেদি ও অগ্নির উত্তরপ্রান্তে উপবিষ্ট আছেন গোষ্ঠীর আরও পাঁচজন ঋষি। শুষ্ক উদুম্বর কাষ্ঠের সমিধে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। কুশ বিছানো বেদির উপর আজ্যস্থলীতে রাখা আছে স্বর্ণবর্ণ ঘৃত। আর রয়েছে ঋষি সোমদেবের সঞ্চিত যব হতে নির্মিত পুরোডাশ। বেদির উত্তর প্রান্তে দাঁড়িয়ে জুহূ হাতায় ঘৃত আর পুরোডাশের অংশ নিয়ে আহবনীয় অগ্নির দক্কিণপ্রান্তে এলেন ঋষি সোমদেব। তিনি একটু একটু করে অগ্নিগর্ভে সেই হব্য আহুতি দিয়ে হোম করছেন আর ঋকমন্ত্র উচ্চারণ করছেন স্বয়ং ঋষি বামদেব। তিনিই এই যজ্ঞের ব্রহ্মা, তিনিই হোতা।

ইতিমধ্যে অধ্রিগু জানালেন গোবৎসের সংজ্ঞপন সম্পন্ন হয়েছে। শশীয়সী এগিয়ে গেলেন সেই শ্বাসরুদ্ধ গো শাবকের কাছে। পাশুক বেদির উত্তরে যূপকাষ্ঠের পার্শ্বে চাত্বালে সে অসাড় হয়ে পড়ে আছে। তার গায়ে শশীয়সী ঢেলে দিলেন এক কলস জল। ধারালো উপলাস্ত্রটি সোমদেবের হাতে তুলে দিলেন বামদেব। সেই অস্ত্র দিয়ে বামদেব গোবৎসের উদরে নাভির পার্শ্বস্থিত ত্বক কেটে মেদ বের করে নিলেন। অস্ত্রটি অধ্রিগুর হাতে দিয়ে এই মেদ-বপা নিয়ে আহ্বানীয় অগ্নির নিকট ফিরে এলেন তিনি। একজন ঋষি দুই খণ্ড কাষ্ঠে সেই বপা গ্রহণ করে জলে ধুয়ে আহ্বানীয়াগ্নিতে তপ্ত করতে থাকেন। অগ্নির উত্তাপে বপা গলতে থাকে, বপা ক্ষরিত হয়ে পড়তে থাকে অগ্নিতে। সোমদেব তখন বপার উপর ঘৃত ঢেলে আহুতি দিতে থাকেন।  অগ্নি বিপুল উদ্যমে প্রজ্জ্বলিত হয়ে ওঠে। 

ইন্দ্রের উদ্দেশ্যে মন্ত্র উচ্চারণ করে উঠলেন ব্রাহ্মণ বামদেব, “অগ্নিই পরম অন্ন ও ধনের দাতা… তিনি দ্রুত আহরণ করে আনেন স্পৃহণীয় অন্ন…”

বামদেবের আকুতিতে বপা যেন আরও দ্রুত গলতে আরম্ভ করল। বামদেব এবার উচ্চস্বরে পাঠ করতে লাগলেন ঋকছন্দ, “নু ষ্টুত ইন্দ্র নূ গৃণান ইষং জরিত্র নদ্যো ন পীপেঃ।।”

“ইন্দ্রের স্তব কর, প্রশংসা কর, স্তবকের জন্যে ইন্দ্র যেন স্ফীত নদীর মতো অন্ন দান করেন।”

অপর দিকে গোবৎসের মাংসখণ্ড ধৌতপূর্বক নিয়ে যাচ্ছেন শশীয়সী। এখন সেগুলো পাক হবে দক্ষিণাগ্নিতে। গৃহপার্শ্বের তন্দুর হল এই দক্ষিণাগ্নি।

পাক শেষে সাতটি মৃৎপাত্রে সাত জনের ভোজনের উপযোগী মাংস এবং হবিঃশেষ পুরোডাশ ও ঘৃত রেখে, আগামী সাত দিবসের সংগ্রহ ভিন্ন একটি বৃহৎ জালায় তুলে রাখা হচ্ছে। দূরে দাঁড়িয়ে আছে গোষ্ঠীর কিছু বৃদ্ধ আর শিশু। যুবকরা সকলেই শিকারে গিয়েছে। কিন্তু তা ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ সমকালে এই বনানীতে মৃগ বড় অপ্রতুল হয়ে উঠেছে।

বুভুক্ষু শিশু, বৃদ্ধ আর ঋষিগণ ললুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পাককৃত গোবৎসের অতি উপাদেয় আর নরম মাংসের দিকে। কেবল বামদেবের যজ্ঞ সমাপন করার অপেক্ষা।

দুই

অন্নই জীবনের সমার্থক, উপলব্ধি করেছেন ঋষি বামদেব। এই বনস্থলীর প্রান্তে যে শস্যক্ষেত্র আছে তাতে গত হেমন্তে শস্য উৎপাদন করেছিল চণ্ডালরা। অগ্নিদেবের যজ্ঞ সম্পাদন করে গোষ্ঠীর যুবকরা গিয়েছিল সংঘর্ষে। অর্ধ দিবসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর খুব কম শস্য কেড়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছিল। সমবণ্টনের পর বামদেব যা পেয়েছিলেন সে সঞ্চয় নিঃশেষিত হয়েছে অনেকদিন। কেবল সোমদেবের কাছে সামান্য অন্ন অবশিষ্ট আছে। রন্ধনপূর্বক তা-ই ঘৃত সহকারে ভক্ষণ করছিলেন সোমদেব।

পুষ্করিণীর অপর প্রান্তে সোমদেবের পর্ণকুটির বটবৃক্ষতল হতে স্পষ্ট দেখা যায়। বামদেব যেন মানস চক্ষে দেখতে পেলেন, সোমদেবের ঘৃত মিশ্রিত স্বর্ণাভ অন্ন। আর অনুভব করলেন সেই উষ্ণ অন্ন হতে অতি উত্তম সুবাস নির্গত হচ্ছে। তিনি স্ত্রীকে আহ্বান করলেন, “শশীয়সী!”

শশীয়সী নিকটেই গত বর্ষা ঋতুতে অঙ্কুরোদ্গম হওয়া একটি আম্রচারাকে মনোনিবেশ সহকারে নিরীক্ষণ করছিলেন। তার তরুণ হরিৎ পত্রগুলো ভক্ষণের উপযোগী কিনা, তাই বোধ হয় বিবেচনা করছিলেন। স্বামীর আহ্বানে তিনি বটবৃক্ষতলে এসে দাঁড়ালেন। ঋষি জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমাকে এমন শীর্ণকায় দেখাচ্ছে কেন, ভত্রী?”

শশীয়সী করুণ স্বরে বললেন, “আমি বড় ক্ষুধার্ত, দেব।”

বামদেব স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন শশীয়সীর দিকে। তারপর পুষ্করিণীর অপর প্রান্তে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বললেন, “তোমার মতো আমিও অতি ক্ষুধার্ত। সোমদেবের নিকটে যাও। বলো, ঋষি বামদেব ক্ষুধার্ত, তোমার আতিথেয়তায় সে ক্ষুধা নিবৃত্তি করতে চায়। তাঁকে অন্ন দাও।”

সোমদেবের পর্ণকুটিরের দিকে রওনা দিলেন শশীয়সী। সেদিকেই দৃকপাত করে বটবৃক্ষতলে বসে রইলেন বামদেব।

কিন্তু একি! শশীয়সীকে চূড়ান্ত ভর্ৎসনা করছেন সোমদেব! এমনকি অন্নপাত্র রেখে উঠে এসে তিনি শশীয়সীর গণ্ডদেশ ধরে ধাক্কা দিলেন!

ক্রন্দনরত শশীয়সী বামদেবের নিকট প্রত্যাবর্তন করলেন। অগ্মিশর্মা হয়ে উঠলেন ঋষি। বললেন, “আমার ধনুক দাও, শশীয়সী। দেরি কোরো না।”

বহুদিন পরে ধনুক ধরলেন ঋষি বামদেব। যৌবন অতিবাহিত। কিন্তু যৌবনের কঠোর অধ্যাবসায়ের ফল তাকে পরিত্যাগ করে চলে যায়নি আজও। এখনও তীরের লক্ষ্য অভ্রান্ত।

সদ্য একটি মধুচকোষকে মধুমক্ষিকা-মুক্ত করে বৃহৎ আম্রবৃক্ষের উপরের ডালে বসেছে একটি শ্যেন। এবার ভক্ষণে প্রবৃত্ত হবে সে। আর তক্ষুণি তাঁর বক্ষদেশে গিয়ে বিঁধল বামদেবের সুতীক্ষ্ম তীর।

“পাত্র আনো শশীয়সী! আমাদের আহারের জন্য আজ দেখো আমি অমৃত পুষ্পমধু নিয়ে এসেছি!”

শশীয়সীর মুখমণ্ডল অতি উজ্জ্বল হয়ে উঠল। মধু ছেঁকে নেওয়ার জন্য একটি পরিচ্ছন্ন সছিদ্র বল্কল আর একটি মৃৎপাত্র এনে আঙিনায় এসে তিনি স্বামীর সম্মুখে দাঁড়ালেন।

 

তিন

অনাহারে গোষ্ঠীর জনসংখ্যা ক্রমহ্রাসমান। সোমদেবের সঞ্চিত অন্নও ফুরিয়েছে। এবং অপুষ্টিতে তিনি এখন যক্ষারোগাক্রান্ত। বনানী মৃগশূণ্য। পুষ্করিনী মিনহীন। বনস্থলীর সকল আহারযোগ্য ফল বাড়ন্ত।

সার্ধ পক্ষকালের উপবাসে মৃত্যুমুখে পতিত শশীয়সী। তীব্র ক্ষুধাক্লিষ্ট বামদেব বটবৃক্ষতলে শায়িত। সন্নিকটের পুষ্করিণী থেকে জল পানের সমর্থটুকু দেহে অবশিষ্ট নেই। অন্নই জীবিত থাকার সমার্থক, উপলব্ধিতে এ-বিশ্বাস দৃঢ় হয়েছে ঋষি বামদেবের। তাই শেষবারের জন্যে সচেষ্ট হতে চান তিনি।

বনভূমির প্রান্তে শস্যক্ষেত্রের ওপারে চণ্ডালদের বাস। অতি ঘৃণ্য বর্বর চণ্ডাল। সংঘর্ষের সময় ভিন্ন তাই চণ্ডালভূমিতে পদচারণ চরম পাপকার্য। তবু উদরপূর্তির তাগিদ আজ বেদজ্ঞানশূন্য করে দিয়েছে ঋষিকে। শস্যক্ষেত্র পার করে সেই চণ্ডালভূমিতে পা রাখলেন বামদেব।

ঝলসানো মাংসের ঘ্রাণ উতলা করে দিচ্ছে সার্ধ পক্ষকালের ক্ষুধাকে। আর সেই ঘ্রাণের উৎসের লক্ষ্যে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন ব্রাহ্মণ। এই দিকে ঘন জঙ্গল। হিংস্র বন্য কুক্কুরও আছে অনেক। তাই অতি সাবধানে অগ্রগামী হতে হচ্ছে। সামান্য অসতর্কতা মুহূর্তে কেড়ে নেবে অমূল্য জীবন।

এতক্ষণে পৌঁছানো গিয়েছে ঘ্রাণের উৎসমূলে। জঙ্গলের মধ্যে বৃক্ষছেদন করে পরিষ্কার করা একটি বৃত্তাকার ভূমি। তার-ই মাধ্যখানে চণ্ডালরা আগুনে ঝলসাচ্ছে মাংস। মহা অধম আর পশুসম এই চণ্ডালের দল। ক্ষুৎকাতর ঋষির শরীরও ক্ষুধা ভুলে যেন সাময়িক আন্দোলিত হয়ে উঠল ঘৃণায়। ছিঃ বন্য কুক্কুরের মাংস ঝলছে খাচ্ছে এই নরাধমের দল!

কিন্তু এখানে অতি সাবধানে অবস্থান করতে হবে। কারণ আর্যদের জন্য এই চণ্ডালরা অতি হিংস্র। যদিও সংঘর্ষে পরাজিত হলে আনুগত্য প্রদর্শন করে এরা। কিন্তু এখন একাকী ঋষিকে হস্ত-সম্মুখে পেলে সেই অনিচ্ছার আনুগত্যের প্রতিদানে ঋষির প্রাণদণ্ড দিয়ে দিতে পারে তারা।

শশীয়সী গৃহতলে অচেতন হয়ে পড়ে আছেন। সার্ধ পক্ষকালের অনশনে তাঁর প্রাণশক্তি প্রায় নিঃশেষ। তন্দুরে অগ্নিসংযোগ করলেন বামদেব। জলের স্ফুটন বৃদ্ধি পেলে তিনি ডাকলেন শশীয়সীকে, “শশীয়সী, লবন নিয়ে এসো।”

পতির উচ্চস্বর আহ্বানে শশীয়সীর সংবেদন ফিরে এল। কিন্তু স্বামী কী বললেন তা স্পষ্ট প্রবণ হল না। অতি দুর্বলতা নিয়ে তিনি টলায়মান অবস্থায় স্বামীর নিকট এসে দাঁড়ালেন, “কী অন্বেষণ করছেন, ভর্তা?”

“লবণ নিয়ে এসো।”

ম্রিয়মাণ শশীয়সী কোনওক্রমে বললেন, “গৃহে তো আর লবণ অবশিষ্ট নেই।”

ঋষির কশ ঈষৎ দৃঢ় হল বোধ হয়। কিন্তু মুহূর্তকালের মধ্যে নিজেকে সংযত করলেন তিনি। তারপর বললেন, “এখানে উপবেশন করো। আমি তোমার জন্য খাদ্য প্রস্তুত করেছি।”

উভয়ে পরিতৃপ্তি সহকারে ভোজন করলেন। সমপরিমাণ। ভোজনের শেষে করতল লেহন করতে করতে শশীয়সী বললেন, “এমন অমৃতসম খাদ্য আপনি কোথায় পেলেন, ঋষি? এ তো অতি সুস্বাদু আর উপাদেয়।”

ঋষি গম্ভীরমুখে বললেন, “অমৃতসম নয়, শশীয়সী। উপাদেয়ও নয়। এ অতি নিকৃষ্ট খাদ্য। এই খাদ্যে চণ্ডালেরও অরুচি।”

“কী বলছেন স্বামী! তাহলে আমি এত স্বাদ কেন পেলাম?”

“দীর্ঘ অনাহারে তোমার জিহ্বার স্বাদানুভূতি বিভ্রান্ত হয়েছে, ভার্যা! এ অতি নিকৃষ্ট খাদ্য।”

“এ কী খাদ্য, দেব?”

“চণ্ডালদের ফেলে দেওয়া কুক্কুরের নাড়িভুঁড়ি।”

ভুড়িভোজন হয়েছে ঋষি ব্রাহ্মণ বামদেবের। পুষ্করিণীতে হস্ত ধুয়ে যুক্ত করপুটে জল পান করেছেন আকণ্ঠ। তারপর বক্ষ টানটান করে বসেছেন বটবৃক্ষতলে। মুখ দিয়ে উদরস্থ বায়ুর উদ্গার হল দুই বার। পরিতোষের সাথে চক্ষু মুদলেন তিনি। তারপর তাঁর মুখ হতে উচ্চারিত হল নব-মন্ত্র—

“অবর্ত্যা শুন আন্ত্রাণি পেচে, ন দেবেষু বিবিদে মর্ডিতারম্। অপশ্যং জায়ামহীয়মানামধা মে শ্যেনো মধ্বা জভার।।

বুভুক্ষু আমি ভক্ষণ করেছি কুক্কুরের অন্ত্রাদি;

দেবতাদের মধ্যেও পাইনি কোনও সাহায্যকারী,

হায়! (নিজের) স্ত্রী হয়েছেন লাঞ্চিতা,

শুধু এক শ্যেন, বন্ধু আমার, আমার জন্য করেছে মধু আহরণ।”

***

তথ্যসূত্র

[ঋগ্বেদ ৪।১৩।৩; ৪।১৬।১৬; ৪।১৭।১২, ২১; ৪।২০।১৬]

[ঋগ্বেদ ৪। ১৮। ১৩]

 

 

 

0 thoughts on “আদিম ক্ষুধা

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>