Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

ইরাবতী অনুবাদ প্রবন্ধ: সিলভিয়া প্লাথ

Reading Time: 3 minutes

আত্মাহুতির পরই তিনি মূলত বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। যেমনটা তার স্বামী কবি টেড হিউজ ১৯৯৮ সালে জন্মদিনের এক চমৎকার পত্রে লিখেছিলেন- ‘খ্যাতিকে উপেক্ষা করা যায় না / এবং যখন তা এল / তুমি তোমার সমস্ত সুখ থেকে দূরে সরে গেলে / এমনকি তোমার স্বামীর জীবন থেকেও।

পচা খাবারে বসা মাছির মতো আত্মহুতি অনেক লেখকের চিন্তা ও অস্থির কৌতূহলকে আক্রান্ত করেছিল। যেসব লেখক আত্মহত্যা করেছিলেন তাদের অধিকাংশই মৃত্যুর আগে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, ডেভিড ফস্টার ওয়ালেস, স্প্যাল্ডিং গ্রে ও ভার্জিনিয়া উলফের নাম উল্লেখ করা যায়। কিন্তু সিলভিয়া প্লাথ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তিনি মৃত্যুর পরই মূলত আকাশচুম্বী খ্যাতি অর্জন করেন। এমনকি তার লেখায় নিজস্ব জীবনযাপনের প্রতিবিম্ব যতটা লক্ষযোগ্য তা অন্য কোনো লেখকের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় নয়। তবে সেই ছায়া গভীর অন্ধকারের। মেরিলিন মনরোকে যেমন হলিউডের উজ্জ্বল ট্র্যাজিক নারীর আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তেমনি সিলভিয়া প্লাথও অস্থিরচিত্ত কবিদের প্রত্নপ্রতিমা হয়ে উঠেছেন।

সুতরাং তার মৃত্যুর অর্ধশত বর্ষে তীব্র ইচ্ছার আগুনে আত্মহুতি নিয়ে গার্ডিয়ানের বই বিভাগে যে তুমুল বিতর্ক চলেছিল তা খুব অস্বাভাবিক নয়। এ বিতর্কের একদিকে ছিলেন তার বন্ধু এলিজাবেথ সিগমান্ড, অন্যদিকে স্বভাবগতভাবে তর্কপ্রবণ অলওয়ান হিউজ। যিনি টেড হিউজের বোন এবং ‘প্লাথ’স এস্টেট’-এর লিটারেরি এক্সিকিউটর। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন একাডেমিক ব্যক্তিবর্গ ও ভক্তরাও যোগ দিয়েছিলেন। এসব তর্ক-বিতর্ক অনেক ক্ষেত্রে আবেগ ও অজ্ঞতাকে উস্কে দিয়েছিল।

টেড হিউজের প্রেমিকা ছিলেন আছিয়া উইভিল, যাকে টেড কখনও বিয়ে করেননি। আছিয়াও তার কন্যা সন্তানসহ আত্মহত্যা করেছিলেন ১৯৬৯ সালে।

প্লাথের কাছে এটা খুব বিব্রতকর বিষয় ছিল যখন তিনি জানতে পেরেছিলেন (বাইরের লোকজন যা আরও ভালোভাবে জানত এবং হয়তো গভীরভাবে উপলব্ধিও করত) টেড হিউজকে অনেকেই ইংরেজি সাহিত্যের ব্ল–বিয়ার্ড (চার্লস প্যারটের বর্ণিত একটা চরিত্র, যিনি একের পর এক বিয়ে করে স্ত্রীদের হত্যা করতেন। এবং মৃতদেহ একটা বদ্ধ ঘরে জমিয়ে রাখতেন) হিসেবে অভিহিত করতেন।

অ্যান্ড্রু উইলসন রচিত সিলভিয়া প্লাথের জীবনীগ্রন্থ ‘ম্যাড গার্লস লাভ সংগ’-এ তার জীবনের শুরুর দিকটায় আলো ফেলা হয়েছে। তখনও তিনি টেড হিউজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েননি। লেখক হিউজের সঙ্গে আবেগী সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার আগের প্লাথকে উদ্ধার করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। প্রশংসনীয় উদ্যোগ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তিনি আবার সেই পুরনো বিতর্কে ফিরে গেলেন যে, টেড হিউজ কীভাবে প্লাথের মৃত্যুর পর তার রচনা সম্পাদনা করলেন। যখন প্লাথের আত্মাহুতির জন্য সরাসরি তার দিকেই অভিযোগের আঙুল তোলা হয়। আর সম্পাদনার ক্ষেত্রেও তিনি সুবিচার করতে পারেননি। অনেক ক্ষেত্রে তিনি সংস্কারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। উইলসন উদ্বেগের সুরে বলেন, হিউজ প্লাথের প্রথমদিকের সবগুলো রচনা প্রকাশ করেননি। এবং এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে, হিউজ প্লাথের মরণোত্তর সংকলনে শ্রেষ্ঠ লেখাগুলো স্থান দিতে সমর্থ হয়েছেন। খুব কম সংখ্যক লেখকই চান যে তার সব রচনা প্রকাশিত হোক। হিউজ এ ক্ষেত্রে দায়সারা গোছের কাজ করেছেন।

সবকিছু মিলিয়ে পুরনো বিতর্ক আবার নতুন করে জোরেশোরে শুরু হল- কে একজন লেখকের রচনার প্রকৃত স্বত্বাধিকারী : তার পরিবার নাকি জনগণ। যখন প্লাথের কন্যা ফ্রিদা হিউজ ‘সিলভিয়া’ চলচ্চিত্রের নির্মাতাকে তার মায়ের কবিতা ব্যবহারের অনুমতি দেননি, তখন তা জনমতকে আঘাত করার শামিল হয়ে ওঠে। ব্রিটেনের জাতীয় কবিতা দিবসে প্রকাশিত একটি সংকলনের জন্য লিখিত প্রবন্ধে ‘সিলভিয়া’ চলচ্চিত্রের নির্মাতা দাবি করেন যে ‘কবিতা সবার জন্য’। একইভাবে প্লাথের সর্বশেষ রচনা ধ্বংস করার বিষয়ে হিউজের দিকে যে অভিযোগের আঙুল তোলা হয় তাও আমাদের বিস্মিত করে। তার অধিকাংশ ভক্ত-পাঠক মনে করেন প্লাথের মৃত্যুর পর হিউজের মূল চিন্তা ছিল তার খ্যাতি ধরে রাখা এবং সন্তানকে রক্ষা করা। যদি এটি সত্য হয় যে হিউজ সত্যিকার অর্থে তার সুনাম রক্ষার জন্যই ব্যস্ত ছিলেন, তাহলে বলতে হয় এ ক্ষেত্রে তিনি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ প্লাথ ও তাকে ঘিরে যে গল্প সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে তা তার লিখিত রচনার চেয়ে বেশি প্রচারিত। যেহেতু কবিতা পাঠের চেয়ে বিবাহ সম্পর্কিত রোমাঞ্চকর গল্প মানুষকে বেশি আকৃষ্ট করে তাই বিষয়টা খুব স্বাভাবিক।

বিবাহে আসলে কী ঘটে, তা যারা এর সঙ্গে জড়িত তারা ছাড়া অন্যরা কখনও জানতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে অবাঞ্ছিত প্রবেশকারীদের দ্বারা- বলতে হয় এটা খুব ট্র্যাজিক বিষয় নয়- ফ্রিদা হিউজ ও তার পিতা যেসব যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন তা তারা নিজস্ব বোধশক্তি ও বিচক্ষণতা দ্বারা মোকাবেলা করার যোগ্য ছিলেন।

প্লাথ তার মৃত্যুবিষয়ক ভাবনাকে তুলে ধরেছিলেন এভাবে- ‘একটা পেঁচার তীক্ষ্ণ নখর আমাকে চেপে ধরেছে এবং আমার হৃদয়কে সংকুচিত করে তুলছে’। হিউজ তার জীবন কাটিয়েছেন তার ভাষায়- ‘চিরতরে / তোমার খোলা কফিনের ক্ষুদ্র বাঁকে’ (দ্য ব্লু ফ্ল্যানেল স্যুট)। প্লাথের মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপনের মাহেন্দ্রক্ষণে তার রচনা পাঠ জরুরি। এছাড়া যারা তার ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন দিক অবলোকন করে বিকৃত আনন্দ লাভে উৎসাহী তাদের উদ্দেশে হয়তো ফ্রিদা হিউজ ও টেড প্লাথের রচনা ধার করে বলবেন- ‘চীনাবাদামের কচকচানির মতো ভিড়’।

[সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান ]

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>