Categories
গীতরঙ্গ গুপ্তচর সংখ্যা: বিশ্বের সেরা সব গুপ্তচর
আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
গুপ্তচর…। আড়ালেই যাদের কর্মকাণ্ড। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করলেও তাদের শনাক্ত করা খুবই মুশকিল। গল্পের জেমস বন্ড, জেসন বোর্ন কিংবা টম ক্ল্যানজি’র জ্যাক রায়ানের মতো রোমহর্ষক জীবন না হলেও বাস্তবের গুপ্তচরদের জীবন কিন্তু কম ঝুঁকিপূর্ণ নয়। নিজের পরিচয় জলাঞ্জলি দিয়ে জীবনের মায়া তুচ্ছ করে তারা বের করে আনেন গোপনীয় সব তথ্য। গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া গুপ্তচরদের এমনই কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে এবারের আয়োজন।
স্পাই বনাম ট্রাম্প: যুক্তরাষ্ট্রের নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর উপর মহাখাপ্পা হয়ে রয়েছেন। অভিযোগ করছেন, তার চরিত্রের উপর কালিমা লেপনের জন্য নির্বাচনের পর থেকেই পেছনে লেগেছিল এসব সংস্থা। তবে আসল কারণ হচ্ছে, নির্বাচনে জয়ের পেছনে তিনি যে রাশিয়ার সাহায্য নিয়েছিলেন তা জনসমক্ষে প্রকাশ করে ফেলে তারা। এমনকি তথ্য প্রমাণসহ। আর এই কাজটি যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচরেরাই করে। তারা সন্ধান পায় যে, আবাসন ব্যবসায় আগেও রাশিয়ার সাহায্য নিয়েছেন ট্রাম্প। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ব্ল্যাকমেইল করতে পারে এমন অনেক উপাদান মজুদ আছে রাশিয়ার কাছে। এরমধ্যে রাশিয়ায় সফরকালে ট্রাম্পের কিছু যৌনসম্পর্কীত উপাদানও নাকি রয়েছে।
ভ্যালেরি পাম: মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ কভার্ট অপারেটর হিসেবে কাজ করেছেন এই নারী। দেশটির সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের কল্যাণে ২০০৩ সালে তার পরিচয় ফাঁস হয়ে যায়। ওয়াশিংটন ডিসি’তে অন্য পেশায় লুকিয়ে ছিলেন তিনি। গণমাধ্যমে ২০০৭ সালে দেওয়া ১ ঘণ্টার সাক্ষাৎকারে তার গুপ্তচর জীবনের অনেক কথাই জানান ভ্যালেরি। সংবাদমাধ্যমকে জানান, মূলত তার কাজ ছিল তথ্য সংগ্রহ করা এবং গুপ্তচর পেশায় লোক নিয়োগ দেয়া। এছাড়া এই বিষয়টি নিশ্চিত করা যে, কোনো পক্ষ পরমাণু অস্ত্র সংগ্রহ করছে না। তবে তার এই গোপন কর্মকাণ্ড ভেস্তে যায়, যখন দেশটির সাংবাদিক রবার্ট নোভাক প্রকাশ করে ফেলেন যে ভ্যালেরি পাম সিআইএ’র গুপ্তচর। পরিচয় প্রকাশের পর তাকে বিচারের আওতায় আনা হয়। পরে ৩০ মাসের জেলও হয় তার। বর্তমানে তিনি নিউ মেক্সিকো’তে বসবাস করছেন।
আলেক্সান্ডার লিটভিনেনকো: রাশিয়ার গুপ্তচর সংস্থা এফএসবি (Federal Security Service)এর সদস্য ছিলেন আলেক্সান্ডার। অবশ্য শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য নিজ দেশেই তিনি দু’বার গ্রেফতার হন। ২০০০ সালে তিনি যুক্তরাজ্যে চলে যান। পরবর্তীতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচনা করেও আলোচনায় আসেন তিনি। ২০০৬ সালের নভেম্বরে মারাত্মক অসুস্থ্য হয়ে পড়েন এই গুপ্তচর। পরে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানায়, লন্ডনের মিলেনিয়াম হোটেলে থাকাকালে তার চায়ে মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ পোলোনিয়াম দেয়া হয়। আর সেই বিষই কাজ করে ধীরে ধীরে। তিন সপ্তাহের মাথায় তার মৃত্যু হয়। পরে ব্রিটিশ গোয়েন্দারা জানতে পারে, পুতিনের নির্দেশেই পোলোনিয়াম দেয়া হয় আলেক্সান্ডার লিটভিনেনকো।
জুলিয়াস ও ইথেল রোসেনবার্গ: গুপ্তচরদের মধ্যে এই দম্পতি বেশ বিখ্যাত। জন্মসুত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলেও অভিযোগ আছে, তারা রাশিয়ার পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি করতেন। অভিনয়, সঙ্গীত নিয়ে মেতে থাকলেও ভেতরে ভেতরে তারা গোপন তথ্য সংগ্রহ করতেন। ধরা পড়ার পর ১৯৫৩ সালে তাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। যদিও স্ত্রী সত্যিই গুপ্তচর ছিলেন কিনা এ বিষয়ে এখনও বিতর্ক রয়েছে। এই বিষয়ে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে তাদের দু’সন্তান বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ওবামার কাছে একটি পিটিশনও দায়ের করে।
ভার্জিনিয়া হল: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে যারা গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িত ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ভার্জিনিয়া হল। সিআইএ’র হয়ে কাজ করা এই নারী এমন সব কাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন যা কল্পনাকেও হার মানায়। শিকার করতে গিয়ে একবার নিজেই নিজের পায়ে দুর্ঘটনাবশত গুলি করেন তিনি। এ জন্যে খুঁড়িয়ে হাটতেন বলে তাকে কুথবার্ট নামেও ডাকা হত। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় তিনি ‘লিমপিং লেডি’ ছদ্মনামে। বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান বাহিনী তাকে মিত্রপক্ষের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর গুপ্তচর আখ্যা দিয়েছিল। শুধু তাই নয়, যে কোনো মূল্যে তাকে হত্যার চেষ্টা করে নাৎসি বাহিনী।
