Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

৬০০ টাকার অভাবে ক্রিকেটার না হওয়া ছেলেটি

Reading Time: 2 minutes

ব্যাটে-বলে অল-রাউন্ড দক্ষতার জন্য সিকে নাইড়ু ট্রফিতে (অনূর্ধ্ব-২৩) খেলার সুযোগ পেয়েছিল ছেলেটা। যে ট্রফিটা ক্রিকেটারদের কাছে রঞ্জি সহ অন্যান্য ঘরোয়া ক্রিকেটের ‘স্টেপিং স্টোন’ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু ভাগ্য নাকি উপর থেকে ঠিক করেই পাঠান ভাগ্যবিধাতা। তাই সুযোগ পেয়েও অর্থাভাবে সেবার সিকে নাইড়ু ট্রফিটা খেলা হয়ে ওঠেনি ইরফানের। ৬০০ টাকা জোগাড় করতে পারেননি সেদিন। বড় হয়ে জাহির আব্বাস হওয়ার স্বপ্নে বুঁদ সেই ছেলেই পরবর্তীতে হয়ে গেলেন জাতীয় পুরস্কার জয়ী অভিনেতা ইরফান খান।

এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ”সেদিন ৬০০ টাকার জন্য কার কাছে যাব বুঝতে পারিনি। তাই সচেতনভাবেই ক্রিকেটের রাস্তা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল।”

সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেটের প্রতি একটা অদ্ভূত বিতৃষ্ণা জন্মে গিয়েছিল ইরফানের। না একেবারেই নিজে ক্রিকেট থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে নয়। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে ‘পান সিং তোমার’ অভিনেতা বলেছিলেন, ‘দুর্নীতির চাদরে মোড়া ক্রিকেট এখন সময় নষ্ট মাত্র।’ টি-২০ ফর্ম্যাট জেন্টলম্যান’স গেমের মারাত্মক ক্ষতি করছে বলে মনে করতেন ইরফান। ছোটবেলায় একবার ভারত-পাক ম্যাচ দেখতে গিয়ে অভিনেতা ছুটেছিলেন জাহির আব্বাসের অটোগ্রাফ নিতে। ওটাই ছিল ইরফানের জীবনে প্রথমবার কোনও ক্রিকেটারের অটোগ্রাফ। হ্যাঁ, জাহির আব্বাসের এতটাই ভক্ত ছিলেন তিনি।

ইমরানও কম যেতেন না। ইমরানের লম্বা সুঠাম চেহারা আকৃষ্ট করত ইরফানকে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে ইরফানের পছন্দের তালিকায় ছিলেন ডেভিড বেকহ্যামের মতো ফুটবলারও। তবে ফুটবলটা ওনার ‘কাপ অফ টি’ ছিল না একেবারেই। এরপর একে একে ভালোলাগার লিস্টে সচিন তেন্ডুলকর, কপিল দেব, মহেন্দ্র সিং ধোনি। তবে সাম্প্রতিক সময় অবসরে টেনিসে মজে থাকতেন লাঞ্চবক্সের সজন ফার্নান্ডেজ কিংবা কারওয়ানের শওকত। রাফায়েল নাদালের অন্ধ ভক্ত ইরফানের টেনিস দেখা শুরু যদিও পিট সাম্প্রাসের জন্য। টেনিসের আলোচনা হলেই মার্কিনীর পাওয়ালফুল সার্ভিসের কথা ইরফান বলবেনই। পছন্দের তালিকায় ছিলেন রজার ফেডেরারও।

অর্থাভাবে সম্পূর্ণ সচেতন হয়েই ক্রিকেটকে যেদিন ‘গুডবাই’ জানিয়েছিলেন ইরফান। সেদিন তাঁর উপলব্ধিটা ছিল ভারি অদ্ভূত। ‘সারা দেশে ১১ জনের মধ্যে সুযোগ করে নেওয়াটা ভীষণই কঠিন। সেদিক থেকে অভিনেতাদের এমন কোনও গন্ডি নেই। যতদিন পরিশ্রম করতে পারবে টিকে থাকবে। তুমি নিজেই তোমার অস্ত্র।’ সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন ‘বিল্লু বার্বার’। আর এসব ভেবেই ভগ্ন হৃদয়ে বাইশ গজের থেকে মুখ ফিরিয়ে ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা’র ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৮৪ মাস্টার ডিগ্রি চলাকালীন ন্যাশনাল স্কুল ড্রামা’র স্কলারশিপ পেয়েছিলেন ইরফান। বাকিটা ইতিহাস।

লন্ডনে মারণ ক্যান্সারের যখন চিকিৎসা চলছিল ইরফানের, তাঁর হাসপাতালটা ছিল লর্ডসের বিপরীতেই। হামেশাই তাঁকে হাতছানি দিত ক্রিকেট মক্কা, তাঁর ছোটবেলার স্বপ্ন। স্টেডিয়ামের বাইরে স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডসের একটি হাসিমুখের ছবি দেখে এক লহমায় ক্রিকেটের প্রতি সব রাগ-অভিমান চলে গিয়েছিল ইরফানের। সম্ভবত পরদিনই ছুটেছিলেন ইংল্যান্ড-পাকিস্তান ম্যাচ দেখতে। সেই অভিজ্ঞতার কথা নিজেই জানিয়েছিলেন জানিয়েছিলেন খোদ অভিনেতা।

ক্রিকেটটা পেশা হয়ে ওঠেনি কারণ, সঠিক সময়ে ইরফানের উপলব্ধিটা হয়তো এক্কেবারে সঠিক ছিল। এমন বিচক্ষণ, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, আত্মবিশ্বাসী ক’জনই বা হতে পারেন। ছোটবেলার স্বপ্ন ক্রিকেটকে বিসর্জন দিয়ে অভিনেতা হিসেবে ভালোবাসা কুড়িয়ে নিলেন এক পৃথিবী মানুষের। হ্যাঁ, এক পৃথিবী। কারণ ইরফানের মতো অভিনেতার ব্যপ্তি শুধু এদেশে ছড়িয়ে নেই, থাকতে পারে না। ঝুলিতে রয়েছে জাতীয় পুরস্কার, পদ্মশ্রীর মত সম্মান। ইরফান তোমার প্রাপ্তির ভাঁড়ার হয়তো পূর্ণ, কিন্তু অনুরাগীদের কথা ভেবে ‘কিছুক্ষণ আরও না হয় রহিতে কাছে’।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>