অপরের প্রতি ঘৃনার আর একটি চরম নজির আমরা দেখলাম। নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলায় মৃত্যুর বীভৎসতা নরকতুল্য। শোক সন্তপ্ত প্রতিটি পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।
ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষকে ঘৃনা করাটা প্রাচীন একটা ব্যাধি। প্রাচীন রোমে বহুবার দাঙ্গায় অভিবাসীদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করা হয়েছে শিশুদের সহ। ইংল্যান্ডেও পুঁজিবাদের সূচনা জমির মালিক কিংবা কারখানা মালিকরা দেশী শ্রমিকদের আন্দোলন কিংবা বাড়তি মজুরি দমন করতে আইরিশ সস্তা নাগরিকদের ভাড়া করতে আনতো। ফল ছিল আইরিশের প্রতি সাধারণ বৃটিশের প্রবল ঘৃনা।
ঘৃনা দিয়ে সঙ্কটটা অতিক্রম করা যায় না, এটা যখন পরিস্কার হলো, বৃটিশ শ্রমিক শ্রেণির আন্দোলন অভিবাসীকেও ভাই কিংবা বোন বলে স্বীকার করে নিলো, তারও অধিকারের জন্য আন্দোলন শুরু করলো। দেশীয় শ্রমিককে ঠকাবার জন্য বিদেশী শ্রমিক আনাটা তখন বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ালো। বলা যায়, ইউরোপীয় রাজনীতিতে গত শতকে যতটুকু বিদেশীদের প্রতি সহিষ্ণুতা এসেছে সমাজে, তা শ্রমিক রাজনীতির ফল। যদিও সমস্যাটা বহু মাত্রিকতা নিয়ে আবির্ভূত হয় বলে এই টুকুতে সীমিত থাকে না। কিন্তু তার শেকড়টা এইখানে, নিজের জীবিকা নিয়ে আশঙ্কা ডালপালা মেলে সংস্কৃতি-ভাষা-সভ্যতা নিয়ে আশঙ্কার কল্পনাতে।
আত্মঘাতী যে খুনিকে আমরা দেখি শ্বেতাঙ্গদের ওপর ট্রাক চালিয়ে দেয়, সেও একই রকম ঘৃনার ফল। বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদের দখল যে রক্তপাত আর মানবতার অবমাননা ঘটিয়েছে, এবং তার সাথে অভিবাসী হিসেবে ব্যক্তিগত মর্যদাহীনতা আর বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি যুক্ত হয়ে বহু আত্মঘাতী হামলা আমরা অভিবাসীদের দিক থেকেও দেখেছি গত এক দশকে। এটা বরং একটা সাম্প্রতিক প্রবণতা, অভিবাসী ও দুর্বলতর সম্প্রদায়ের ওপর হালাই প্রধান প্রবণতা।
পশ্চিমে ঘৃনার রাজনীতি শক্তিশালীতর হবে নাকি অভিবাসীকে অন্তর্ভূক্ত করে নেয়ার রাজনীতি শক্তিশালী হবে, তার ওপর আসছে দুনিয়ার হালচালের অনেকটাই নির্ভর করবে। জাতিশ্রেষ্ঠত্ববাদ যদি বর্তমান চেহারা নিয়ে রাজনীতিতে প্রভাব রাখে, যুদ্ধনীতি বা অভিবাসিতের অধিকার সংকোচনের পাশাপাশি এই রকম ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঘটানো রক্তপাতও বহুবার আমাদের দেখতে হবে। কিন্তু ওদিকে পুঁজির প্রয়োজন সস্তা শ্রমিক, ফলে অভিবাসনও একটা বাস্তবতা। ফলে এই দ্বন্দ্ব রাজনীতির যেমন অন্যমত নিয়ামক হতে যাচ্ছে, তেমনি ঘৃনার থেকে উত্তরিত হয়ে সহিষ্ণুতার পৃথিবী গড়ার দর্শন দুনিয়া জুড়ে মানুষের জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য, গণসংহতি আন্দোলন
সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন