আজ ৩০ অক্টোবর কথাসাহিত্যিক,সম্পাদক ও প্রকাশক ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায়ের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
জানলার বাইরে দিয়ে ঝড়ের মতো হাওয়া ঢুকছে। আরামে শরীর জুড়িয়ে যাচ্ছে। এয়ার পিলোয় হেলান দিয়ে আধশোয়া হেলেন। মুম্বাই মেল এখন ছুটছে দুরন্ত বেগে। আলোর চকিত চকিত ঝলকানিতে পেরিয়ে যাচ্ছে ঘুমিয়ে থাকা অচেনা স্টেশনরা। তারপরেই অন্ধকারের মাঝে জোৎস্নার রুপোলি আলো ছুঁয়ে যাচ্ছে ঘুমন্ত কামরাদের।
এই প্রথম বাবা-মাকে বাদ দিয়ে এতদূর যাওয়া! পনেরো দিনের লম্বা এক্সকারশন। লোনাভালা, খান্ডালা, পুনে, মুম্বাই…৷ সব বন্ধু, ক্লাসমেট। মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ছে সবাই। বটানি ডিপার্টমেন্টের অ্যানুয়্যাল ট্যুর। কতরকম কথা দিয়ে, ওর দুই ক্লোজেস্ট ফ্রেন্ড মিনি-কল্পনাকে দিয়ে বলিয়ে বাবাকে রাজি করাতে হয়েছে।
হেলেনের বাবা অসম্ভব গোঁড়া! ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টরা সবাই একসাথে এডুকেশনাল ট্রিপে যাচ্ছে, উনি মেয়েকে ছাড়বেন না। অথচ উনি জানেন, ওদের গ্রুপের সঙ্গে দু-দুজন অধ্যাপকও যাচ্ছেন।
আসলে ওর বাবা মেনে নিতে পারেন না, তাঁর একমাত্র মেয়ে আর ছোট নেই। এখন সে তেইশ। হেলেন অনেকবার বলেছে, “বাবা, তুমি আমার ওপর রিলাই করো। আমি দুম করে যে সে ছেলের পাল্লায় পড়ব না। যদি পড়ার হতো, বিএসসি পড়ার সময়েই লটকে যেতাম।” কথাটা হান্ড্রেড পার্সেন্ট সত্যি। বিএসসিতে সিনিয়র দাদারা ওর পিছনে কম লাইন লাগিয়েছিল! অনাদিদা, শৈবালদা, সৌমিত্রদা, ওদিকে জিওলজির অজয়… কতভাবে যে তিনটে বছর ওদেরকে ট্যাকল করেছে হেলেন। একজনকেও ঠিকঠাক লাগেনি।
অনাদি অবশ্য এখনও হাল ছাড়েনি। সে এখন বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজেই রিসার্চ স্কলার। হেলেন যেদিন প্রথম এল, সেদিনই ঠিক ওকে পাকড়াও করেছে বাস স্ট্যান্ডে। ‘বুঝলে হেলেন, আমি মাইক্রো-প্যাথোতে আছি। এনি প্রবলেম, আই মিন, কোনো কিছু আটকে গেলে স্ট্রেট আমার ল্যাবে চলে আসবে। নো হেজিটেশন, কেমন?’ হেলেন মিষ্টি হেসে ঘাড় নেড়েছে।
কিন্তু এবারে, এই ট্যুরে… হেলেন…নিজেই একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে আছে। খুব সমস্যা। কাল রাতে ট্রেন ছাড়ার পর থেকেই অকারণ খুশি খুশি লাগছে… হঠাৎ হঠাৎ জ্বর জ্বর ভাব… কানের লতি, হাতের পাতা গরম… মনে হচ্ছে… মনে হচ্ছে…
‘অ্যাই, শুনছিস? ঘুমিয়ে পড়লি?‘ কানের গোড়ায় ফিসফিস।
পলাশ! ঠিক এসে গেছে! গায়ে কাঁটা ফুটল। ও দুদিকে মাথা নাড়ল।
‘কীরে, মনে আছে তো? আমি কিন্তু ওয়েট করছি।… তুই আপার বার্থে উঠবি না?’
‘উঠব তো। ওয়েটিং ফর কল্পনা। ও সমিতের সঙ্গে আড্ডা দিতে গেল। বলল, পনেরো মিনিটের মধ্যে ফিরছে।’
‘পনেরো মিনিটে! তুইও যেমন, যা বলে বিশ্বাস করিস! এরকম সুযোগ ওরা আর পাবে? আজকের থেকে রিলেশন ওদের! এই তো দেখে এলাম দুজনে সমিতের আপার বার্থে চড়ে…সে যাক…শোন, আমি ওদিকে ছেলেদের ক্যুপেতে চলে যাচ্ছি। কল্পনা ফিরলে তুই ফাইনালি বার্থে উঠে একটা মিসড কল দিস। আমি জেগে থাকব। নো জোক, আবার বলছি সত্যি সত্যিই তোর সঙ্গে জরুরি কথা আছে রে। একজন বিচ্ছিরি সমস্যায় পড়েছে। প্লিজ, কল করিস কিন্তু।’ পলাশ পা টিপে টিপে চলে গেল। হেলেনের শরীর দিয়ে ফের জ্বর জ্বর…
আজ সন্ধেবেলা। ট্রেন নাগপুর ক্রস করেছে। স্টেশন থেকে চা, সামোসা দিয়ে বিকেলের জমজমাট নাস্তা। তারপর ঝাড়া দু’ঘণ্টা সববাই মিলে গানের অন্তক্ষরী, ডাম্ব শারাড এইসব খেলা হয়েছে। তারপর চবিবশজনের দল এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে। ট্রেনটা আপাতত একটু ফাঁকা। ছোট ছোট গ্রুপে আড্ডা চলেছে। চার জোড়া প্রেমিক প্রেমিকা আলাদা আলাদা জানলার ধারে বসে বকবকম করে যাচ্ছে। কয়েকজন ছেলেবন্ধু আবার লুকিয়ে চুরিয়ে বোতলে পানীয় মিশিয়ে ঢোক দিচ্ছে আর বেসুরে গানটান গেয়ে চলেছে।
হেলেন বেসিন থেকে চোখেমুখে জল দিয়ে ফিরছিল। হঠাৎ সামনে… হ্যাঁ, পলাশই তো। ছেলেটার মুখখানা কী মায়াবী। একমাথা কোঁকড়া চুল, উজ্জ্বল স্বপ্নালু চোখ। মুখে ঝকঝকে হাসি।
‘তোর সঙ্গে আলাদা একটু কথা ছিল হেলেন। খুব জরুরি।’
হেলেন চোখ বড় করে হেসে বলেছে, ‘তাই? বাববা! জরুরি কথা!‘
‘হ্যাঁ রে। বিশ্বাস কর। সামনাসামনি বলতে হবে। তবে তুই নাও শুনতে চাইতে পারিস।’
‘না না, শুনব না কেন?‘ হেলেনের ভিতরটা কাঁপছে। ও কি যে কথাটা ভাবছে, সেই কথাটাই পলাশ বলতে চাইছে? নিজেকে কোনওক্রমে সামলে নিয়ে বলেছে, ‘চল তাহলে একটু বসি। এদিকটা বেশ খালি হয়ে গেছে।’
‘হ্যাঁ, তা হয়েছে। তবে খালি থাকবে না। নিশ্চয়ই পরের স্টেশন থেকে কোটা আছে। প্যাসেঞ্জার উঠে পড়বে।‘ পলাশ করুণভাবে বলে, ‘এভাবে হবে না রে। এক-দু’মিনিটে আমার কথা শেষ হবে না। আর একটু দেরি হলেই বন্ধুগুলো হই হই করে খুঁজতে চলে আসবে। তখন কী, কেন…এমন করে চেপে ধরবে যে…মানে এ কথাটা কিছুতেই সবার সামনে বলা যাবে না। কেবল তোর আর আমার।’
‘তাই? ‘হেলেন কিছুতেই গলার কাঁপুনি বুঝতে দেয়নি। হাসি ঝুলিয়ে রেখে বলেছে, ‘তাহলে? মানে কখন, কীভাবে বলতে চাস?’
‘হ্যাঁ রে, সেটা ভেবেছি। অফকোর্স তুই যদি অ্যালাও করিস।’
‘অ্যালাও! মানে?’
‘মানে অনেক রাতে যখন সববাই ঘুমিয়ে পড়বে, আমি তোর কাছে যাব।’
‘আমার কাছে? কো-কোথায় আসবি?’
‘তোর বাঙ্কে। না-না হেলেন, প্লিজ অন্যভাবে নিস না। হ্যাঁ, তোর আপার বার্থে আমি উঠব।…তারপর নিজেদের মধ্যে ফিসফিসিয়ে কথা বলে তোর মতটা জেনে নেব।…যাব্বাবা, তুই ব্লাশ করছিস কেন? ঘাবড়ে গেলি? দ্যাখ হেলেন, উই আর ম্যাচিওরড এনাফ, এমএসসি পড়ছি। আমার একটা ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড আছে, তোরও। রেস্ট অ্যাশিওরড, এমন কিছু করব না, যাতে তোর কোনো অসম্মান হয়।’
‘হুঁ।’
‘কী হুঁ? ফ্র্যাঙ্কলি বল। আই’ল নট মাইন্ড। তুই কি আমায় তোর বাঙ্কে অ্যালাও করবি?’
কয়েক মুহূর্ত কথা আটকে গেছিল। তারপর মুখ নিচু করে মৃদু গলায় বলেছে, ‘আচ্ছা।’
পলাশ নিজেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। হঠাৎ ওর বুকপকেটে থাকা ফোনটা কয়েকবার ভাইব্রেট করতে করতে থেমে গেল। হেলেন।
রাত নিঝুম। নিকষ কালো তমিস্রা চিরে ছুটে চলেছে মুম্বাই মেল। পা টিপেটিপে পুরুষ ছায়ামূর্তি এসে দাঁড়িয়েছে একটা আপার বার্থের সামনে। একবার দুদিক দেখল। লোয়ার মিডল বার্থের মেয়েরা অঘোরে ঘুমিয়ে। তারপর নিঃশব্দ পায়ে টুকটুক করে উঠে পড়ল।
বড্ড ন্যারো স্পেস। হেলেন ইশারায় ওর দিকে মাথা নিয়ে যেতে বলছে। কিন্তু…কিন্তু…ওর কাত হয়ে শোওয়া শরীরে এই শরীর ছুঁয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ইলেকট্রিক শক! পলাশ উঠতে চাইল। হেলেন থামিয়ে দিল।
‘প্লিজ পলাশ, নড়াচড়া করিস না।‘ অস্ফুটে বলল, ‘সবাই জেগে গেলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। আই ডোন্ট মাইন্ড। কানে কানে বল।’ নরম মেয়েলি মুখের খুব কাছে পুরুষের মুখ। তীব্র ভালো লাগায়, না চাইলেও শরীর বিদ্রোহ করতে চাইছে।
‘কীরে? বল!’
‘বলব? আচ্ছা, শোন। একজন খুব বিচ্ছিরিভাবে তোর প্রেমে পড়েছে। তোকে বলতে সাহস পাচ্ছে না। এদিকে তোকে ছাড়া তার চলবে না।’
‘কেন? কেন? আমায় দেখে কি তার খুব অহংকারী মনে হয়?’
‘তা একটু হয় বইকি। তুই যদি তাকে রিফিউজ করিস, সে নিতে পারবে না।’
‘কেন? আমি তাকে রিফিউজ করব, সে এমনটা ভাবছে কেন? সে কি নিজেকে খুব ফালতু মনে করে?’
‘না, তা নয়। তাকে দেখতে বেশ ভালো। গুড স্টুডেন্ট। আসলে তোর যদি কোনো স্টেডি বয়ফ্রেন্ড থেকে থাকে, সেটা সে জেনে নিতে চাইছে।’
‘বুঝলাম। না রে, আমার আপাতত কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই। আমার বাবা এখন এডুকেশন ডিপার্টমেন্টের উঁচু পোস্টে আছেন। অ্যান্ড হি ইজ ভেরি কনজারভেটিভ৷ আমিও তাই, খুব চুজি। তাই এখন রিফিউজ করব কিনা, সেটা কে সেই ছেলে, তার উপর ডিপেন্ড করছে।’ অন্যপক্ষ নিশ্চুপ। বড়-বড় প্রশ্বাস ছুঁয়ে যাচ্ছে প্রায় লেগে থাকা দুই শরীরকে।
‘কীরে? চুপ করে গেলি? আমি তো তোকে অ্যালাও করেছি এই বার্থে। ভয় পাচ্ছিস কেন?’
আবার একটা বড় শ্বাস পড়ল। দ্বিতীয়জন মৃদুস্বরে বলল, ‘ভাবছি নামটা বলব কিনা।’
‘তুই না বললেও আন্দাজ করতে পারছি। সব কথা কি আর মুখে বলতে হয়! মেয়েরা আলাদা ইন্সটিঙ্কট নিয়ে জন্মায়৷ তারা পুরুষদের চোখের ভাষা পড়তে পারে। তবে তারও আমার চোখের ভাষা পড়া উচিত ছিল। বিলিভ মি, আমি তার প্রোপোজালের জন্যে ওয়েট করছিলাম।’
‘তুই…তুই ওয়েট করছিলি? দ্যাট মিনস, তুই রাজি?’
কড়াং! প্রচণ্ড জোরে ব্রেক কষেছে মুম্বাই মেল। পলাশ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে হেলেনের ওপর। আঃ! মারাত্মক ইলেকট্রিক শক! শরীর শিহরিত। ওর ঠিক মুখের নীচে হেলেনের মুখ। কয়েক মুহূর্ত। হেলেন ফিসফিস করে ওঠে, ‘ডু ইউ ওয়ান্ট টু কিস মি?’
‘না-না।‘ পলাশ ছিটকে নিজেকে সরিয়ে নেয়।
‘কী রে? সরে গেলি কেন? তোর…তোর আমাকে খারাপ মেয়ে মনে হচ্ছে, নারে?’
‘কী যে বলিস!‘ বলেই পলাশ ফের নিঃশব্দ। হেলেনের নরম আঙুলগুলো খেলা করছে ওর চুলের মধ্যে।
‘হেলেন, তোকে একটা গল্প বলতে চাই। না না, গল্প নয় রে, সত্যি ঘটনা। শুনবি?‘
‘তুই কী চাস বল তো পলাশ? এরকম সুযোগ আর কখনও পাওয়া যাবে?’
‘হ্যাঁ রে। সেইজন্যেই বলতে চাই। তার আগে বলি, আমাকে গে ভাবিস না। দুটো ছেলের মধ্যে যে সম্পর্ক, যাকে বন্ধুত্ব বলা হয়, তাতে কোনো সেক্স থাকে না। তেমনই ওরা দুজন। একাত্মা, এক প্রাণ। একজন পাশে না দাঁড়ালে অন্যজন কোথায় হারিয়ে যেত! তার এমএসসি পড়াই হতো না। ওরা কেউ কাউকে ছাড়া ভাবতে পারে না। তাই একজন যখন কথায় কথায় দুম করে বলে দেয়, তার এই বোটানিতে বিশেষ একজনকেই ভালো লেগেছে, সে ওই মেয়েটাকে ভালোবাসতে চায়, অন্যজন চুপ করে যায়। সে বন্ধুকে কষ্ট দিতে পারবে না৷’
‘এসব কী বলতে চাইছিস পলাশ? কেন?’
‘কারণ এই ছেলেটারও ক্লাসে ওই মেয়েটাকেই সবচেয়ে ভালো লেগেছিল। কিন্তু সে কথা সে কখনও মুখ ফুটে বলে উঠতে পারবে না। এবার কিছু বুঝলি? আমি কিন্তু তোকে বিশ্বাস করে এসব বললাম। সে যেন কখনও না জানে। ছেলেটার নাম এবার বলি?’
হেলেন নিরুত্তর। সময় বহে যায়…ঝমঝম শব্দে ট্রেন ছুটে চলেছে… বয়ে চলেছে রাত্রির অনন্ত নৈঃশব্দ্য…৷
‘কী রে? নামটা শুনতেও চাস না?’
অস্ফুট স্বর ফুটে উঠল, ‘জানি। তুই বলতেই বুঝে গেছি। ফার্স্ট ডে থেকে পুরো সায়েন্স কলেজ তোদের মানিকজোড়কে দেখেছে। তুই শিমূলের কথা বলছিস, তাই তো?’
আস্তে আস্তে মাথা নাড়ে পলাশ। তারপর থেমে থেমে বলে, ‘মানুষ হিসেবে ও কিন্তু আমার চেয়ে অনেক উঁচুস্তরের। ওর মতো লায়ন্স হার্ট আমি দেখিনি। স্টুডেন্ট হিসেবেও তুই তো জানিস-’
‘জানি।‘ হেলেন ম্লান হাসে, ’ও আর মঞ্জু বিএসসিতে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট র্যাঙ্ক করেছে। ওকে আমারও বেশ লাগে৷ কিন্তু-’
‘কিন্তু-?’
‘কিন্তু প্রেম কি নিয়ম মেনে হয় রে? আমি কি বুঝতে এতটাই ভুল করলাম?’
‘না রে। ভুল করিস নি। আমি তো তোর কাছে কিচ্ছু লুকোই নি রে। তুই কি রাজি হবি না হেলেন?’
‘আমায় একটু ভাবতে সময় দে…গুড নাইট।’
দুধসাদা জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে চরাচর। রিসর্টের সামনে ঢালু পথ। একটা মোষের গাড়ি এগিয়ে চলেছে। তাদের গলায় ঝোলানো ঘণ্টা থেকে বেজে উঠছে অদ্ভুত সুর। টুং টাং টুং টাং। জলতরঙ্গ। আরও অনেকখানি নীচে ফুটফুটে আলোয় ভেসে উঠেছে ধবধবে বিশাল লোনাভালা লেক। নিস্তব্ধ অপরূপ নিসর্গ।
এখন অনেক রাত। বন্ধুরা সব ঘুমিয়ে পড়েছে অনেকক্ষণ। ওরা দুজন পাশাপাশি বসে আছে বাগানের বেঞ্চিতে। আলতো ঠান্ডা বাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছে ওদের। কারও মুখে কোনো কথা নেই। শুধু একজনের হাত অন্যজনের হাতের উপর। দূ-র থেকে একটা গান এগিয়ে আসছে ধীরে ধীরে। খুব চেনা গলা, বড় প্রিয় গান। ‘আমার এ পথ তোমার পথের চেয়ে অনেক দূরে…গেছে এঁকে গেছে বেঁকে…আমার এ পথ…’
হেলেন আধো আধো গলায় বলল, ‘উঃ! কী ভালো গায় পলাশ!’
শিমূল বড় শ্বাস ফেলল, ‘হ্যাঁ রে। ওর অনেক গুণ। জানিস, ও খুব ভালো ছবি আঁকে, তেমনি দারুণ কবিতাও লেখে। কেন যে পাগলটা সায়েন্স পড়তে এল!’
হেলেন নিজের মনেই বিড়বিড় করল, ‘ছেলেটার বড় কষ্ট! ও যে তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে!’
শিমূল স্তব্ধ। দুজন দুজনের দিকে গভীর চোখে চাইল। চেয়েই রইল। শিমূলের কত কথা হেলেনকে বলার ছিল। ভেবে এসেছিল। এখন সব ফুরিয়ে গেছে। রবি ঠাকুর ভেসে চলেছেন দিগদিগন্ত জুড়ে, ‘সাথিহারার গোপন ব্যথা… বলব যারে সে জন কোথা-’