| 24 এপ্রিল 2024
Categories
কবিতা সম্পাদকের পছন্দ সাহিত্য

উৎপলকুমার বসু’র কবিতাগুচ্ছ

আনুমানিক পঠনকাল: 10 মিনিট
নবধারাজলে ১
মন মানে না বৃষ্টি হল এত
সমস্ত রাত ডুবো নদীর পাড়ে
আমি তোমার স্বপ্নে-পাওয়া আঙুল
স্পর্শ করি জলের অধিকারে।
এখন এক ঢেউ দোলানো ফুলে
ভাবনাহীন বৃত্ত ঘিরে রাখে–
স্রোতের মতো স্রোতস্বিনী তুমি
যা-কিছু টানো প্রবল দুর্বিপাকে
তাদের জয় শঙ্কাহীন এত,
মন মানে না সহজ কোনো জলে
চিরদিনের নদী চলুক, পাখি।
একটি নৌকো পারাপারের ছলে
স্পর্শ করে অন্য নানা ফুল,
অন্য দেশ, অন্য কোনো রাজার,
তোমার গ্রামে রেলব্রিজের তলে
ভোরবেলার রৌদ্রে বসে বাজার।
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
নীলকুঠি
১.
তোমার সঙ্গে ছিল ব্যক্তিগত রমণীয় আলোছায়াময় টানা দিনগুলি
        গোল বারান্দার দিকে চেয়ে থেকে চোখে জল আসে
উদ্ভিদের, বটপাকুড়ের তলে অপর্যাপ্ত দিন ছিল, রাত্রি ছিল আমাদের
সকালে পায়ের কাছে অ্যাসিডের মতো তীব্র রোদ এসে নামত তখন
জৈষ্ঠে আমাদের ছিল ব্যক্তিগত রমনীয় আলোছায়াময় টানা দিনগুলি
গোশালায় সে-সময়ে কখনো-বা ঝলসে যেত গোরু ও গোয়ালা
       বাতাসে নরম মাংস পোড়ার গন্ধে আমাদের বিষণ্নতা লেগেছিল
দূরে আধো-অন্ধকারে, আগুনে ও সন্ধ্যার মেঘে
        ডুবে যেত তোমাদের লাল বড়ো বাড়ি।
২.
জামের বনের মধ্যে আমি এক চিরস্মরণীয়
বাঘের হলুদ ছোপে সাথীহারা সন্তান বাঘের
ঘোরাফেরা দেখি। পুরনো জামের বনে আমি শুধু মানুষের
শোভাযাত্রা দেখেছি শৈশবে। সে-সব জামের বন আজ আর
উপদ্রবহীন নয়।
৩.
নগরে নগরে তুমি গান গাও রমণীবিজয়ে।
ওদিকে পোকার স্তুপ জমে ওঠে–তারা আজ যাযাবর
স্ত্রী-পাখিদের দলে মিশে গিয়ে বাতাসনির্ভর
প্রাণবন্তের মতো শুয়ে আছে।
যদিও লাম্পট্য নয় ঔপনিষদিক তবু, সাথি, মহার্ঘ রেশম
রেখেছ কাঁধের পরে এবং বৃদ্ধের দলে
আধোভাঙা জীবদ্দশায় তুমি ডুবে গেছ। আমি বা কী কম?
যুবার পেশির তলে সদ্যজন্ম, ক্ষুধার্ত ইঁদুর
কবির মনীষা বলো, ছন্দোময়–লক্ষ্য সে-রেশম।
৪.
কিছু কিছু ঘোড়া আজ নেই
এবং সহিস একা প্রাসঙ্গিক নয়
এজন্যই ফিরে আসে ঘাস আর ঘাসের জন্ম হয়
শরতকালীন
আবহাওয়ায় আমাদের ক্লান্তিবোধ হতে থাকে।
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
প্রগলভতা
ঝাঁকাও যে-ডাল ইচ্ছে, গাছ তার চেনা ফলগুলি
উপহার দিতে থাকে, আমরা লাফিয়ে উঠি, দৌড়ে যাই,
যা-কিছু প্রত্যক্ষ তাকে পিছু ফেলে হেঁটে যাই দ্বিধার ভিতর–
সেখানেও ফল পড়ে, ফাটা ত্বক, আঁকশি অনন্ত
আকাশে দুলছে দ্যাখো, এ তো বল্লভপুরের সেই কালবৃক্ষ নয়
যার ফলগুলি স্বতন্তর, বিদ্যুৎপাতিত।
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
সুখ-দুঃখের সাথী / ভূমিকা
সুখ-দুঃখের সাথী, তুমি আমার সঙ্গে চলো।
বাতাস বইছে বেরিয়ে-পড়ার বাতাস, গাছের কাছে বলো
আমার সঙ্গে বেরিয়ে পড়ুক, পথের কাছে বলো
আমার ফিরতে অনেক রাত্রি হবে–যেন অপেক্ষা না ক’রে
সদর দরজা বন্ধ করে।
                                তুমি গাইতে পারো গান
কিন্তু সে গান মহাশূন্যে মিলিয়ে যাবে। তুমি অনেক রূপকথা
মাথার মধ্যে বয়ে বেড়াও–কাকে বলবে? শুনবে কারা?
শোয়ার আগেই ঘুমে ঢুলছে মানুষ-জন, পশু ও পাখি, চন্দ্র, তারা।
এমনি করেই জীবনভর কত সময় নষ্ট হল।
এবার সুখ-দুঃখের সাথী, তুমি অন্য কোথাও চলো।
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
সুখ-দুঃখের সাথী / ৩৭
শীত এসেছিল। শীত চলে গেছে।
একটি অতীত। আরেকটি সে যথার্থ সুদূর।
দু-দেশেই লেপতোষকের গল্প। তাই ভাবি। রোদে বসে।
তাপ বেশি হলে দেয়ালের কোণে সরে যাই।
ছোটোরাও ঘোরে-ফেরে। সঙ্গে থাকে।
দুই অতীতচারিতার মাঝে আছে এক হানাবাড়ি।
সেইখানে আমগাছ। রাতারাতি মুকুল ধরেছে।
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
যব
কবিতায়, মেঘের ভিতরে, আমি পেতে ধরি করপুট, জল পড়ে, জলে
হাড় অব্দি ভিজে যায়, পান করি, আরো চাই, খাও খাও ; এমন শুনেছি–
এর নাম জলসত্র, অথবা কবিতা, অথবা আতুর
মানুষের পিত্ত-কফ-নিবারণ–আমার কিছুই নয়–আমি অনেক দূরের যাত্রী,
সহজাত তেষ্টা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি পথে,
               এই তৃষ্ণা, এই হারামজাদী, কিছুতেই সঙ্গ ছাড়ে না।
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
আকাশযান
তুমি সম্রাট, প্রভু ও যাতায়াতকারী পথিকের দেবতা
                               তুমি এক কাঠা মদ দাও আর আমাদের
                                         দাই-মাকে ফিরে দাও
দু’চারবার আলোছায়া মেলে ধরো পথে তুমি
                                                   তোমারই প্রস্তাব
             কুরুক্ষেত্র গ্রাম থেকে সিপাহীর হাঁক শোনা যায়
‘সাধ ছিল’ বলে আজ কাগজসন্ন্যাসী
              তার মানে এই নয় বৃষ ও মানুষ
দু’চার বছর শুধু স্তন ও স্তন্য নিয়ে খেলেছিল
                      তাকে ফিরে পেতে হয়েছিল ‘মদ’ যাকে বলে
           অর্থাৎ আদর তাকে পেতে হয়েছিল
কুকুরের ল্যাজ নাড়া দেখে তাকে প্রীত হতে হয়েছিল
            বনের ভিতরে গিয়ে মনিব হারায় আর
                                          নিশ্চেতন পড়ে থাকে বৃষ ও মানুষ
তুমি সম্রাট, প্রভু ও যাতায়াতকারী পথিকের দেবতা
             ঝুড়ি থেকে তুলে নাও শুল্ক ঠিক
                                              তুলে নাপ বজ্রসেগুন পাতা
              মুখে বলো ‘দেখহ বিচারি’
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
দুঃখী মানুষ
দুঃখী মানুষই বোঝে দুঃখিত মানুষের কথা, তারা
আপন ভাষায় বাক্যালাপ করে, হাসে, কাঁদে, পরস্পরে
সাহস যোগায়, মেঘলা আজ সকালবেলায় তেমনই এক
ব্যক্তির দেখা পাই, অফিস যাওয়ার পথে, সে আমাকে
কিছু যেন বলবার চেষ্টা করে, আমি না-বুঝেই সব কিছু
বুঝলাম এ-রকম ভান করি, দু-একটা উপদেশও না দিয়ে
পারি না, সে-ও শোনে, ম্লান হয়ে থাকে, জানি আমার
ভাষাই তাকে জব্দ করে, প্রতারণা করে।
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
সতর্কবার্তা
সমুদ্রসাঁতার মেয়েদের ক্লান্ত করে। শুধু একজন
ভাসছে সহজ নীল জলের ভিতর। তার জামাখোলা স্তন
ঢেকে যায় বুদবুদে। আমার পায়ের নীচে সরে যাক বালি :
তার এই কথা ফুরোতেই আরেক বিশাল ঢেউ বলে : এসো, চালি
নতুন পাশার দান। তুমি নাকি ভালো খেলোয়াড়?
ঢেউ অটুট দাঁড়িয়ে থাকে। ভাঙে শুধু বালির পাহাড়।
সমুদ্রসাঁতারে নৌকার ক্লান্তি কত–আমি একদিন
ওর কাছে জেনে নিতে যাই। আমারো তো কিছুটা প্রবীণ,
কিছুটা গভীর সত্য শোনবার ইচ্ছা হয়।
আমার স্তনের দিকে চেয়ে থাকো, এর চেয়ে বেশি সত্যময়
খুঁজো না অন্য কিছু : হেন উক্তি তার।
আমি অটুট দাঁড়িয়ে থাকি। ভাঙে শুধু বালির পাহাড়।
সমুদ্রসাঁতারে শ্মশানের কালো কাঠ ক্লান্ত হয় নাকি?
প্রশ্নের মতো জেনো উত্তরেও যথেষ্ট চালাকি
লুকানো থাকতে পারে। আমাদের কৌতূহল তত কালো নয়
যতটা আগুনে পোড়া। আজ খোলা-গিট হাঙরের ভয়
উপকূল স্তব্ধ রাখে। সম্ভবত আর
সমুদ্রে নামো না যারা, জাপ্টে ধরো বালির পাহাড়।
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
সলমা-জরির কাজ / ৭
বন্ধু, তোমার হাতের উপর হাত রাখলেই আমি টের পাই তোমার বাজারে অনেক দেনা, ছেলেটা উচ্ছন্নে গেছে, মেয়ে রাত করে বাড়ি ফেরে, আজ যা-বলার আছে তুমি আমাকেই বলো, স্ত্রীর মুখরতার কথা বলো, সহকর্মীদের শঠতার কথা বলো, রাতে ঘুম হয় না সেই কথা বলো, আর যদি কাঁদতেই হয় তবে এই কাঁধে মাথা রেখে কাঁদো, বন্ধু।
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
সৌরলতা / ৬
হায়, আজ কবিতা লিখতে গিয়ে দেখি
                                 হাত কাঁপছে
অক্ষরগুলি ছিটকে-ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে
         আর লেখার খাতার সব ক’টি পাতা
                  এমন হেনস্থা দেখে হেসেই আকুল
তাই সেই মেয়েটির কথা ভাবি
           যে আমাদের একতলার ঘরের জানালা দিয়ে
                     হাত গলিয়ে
দু-দুটো বাঁধানো বই তুলে নিয়ে গিয়েছিল
শীতের ভোরে সে যেন এসেছে ফিরে–
সবকিছু একদিন চুরি হয়ে যাবে
           এই বিশ্বাসে ও অনাস্থায় এলোমেলো লিখে রাখি–
                 ‘আমাদের গ্রহ-তারাগুলি বৈধ নয়।’
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
চৈত্রে রচিত কবিতা / ১
নিঃসঙ্গ দাঁড়ের শব্দে চলে যায় তিনটি তরণী।
শিরিষের রাজ্য ছিল কূলে কূলে অপ্রতিহত
যেদিন অস্ফুট শব্দে তারা যাবে দূর লোকালয়ে
আমি পাবো অনুপম, জনহীন, উর্বর মৃত্তিকা
তখন অদেখা ঋতু বলে দেবে এই সংসার
দুঃখ বয় কৃষকের। যদিও সফল
প্রতিটি মানুষ জানে তন্দ্রাহীনতায়
কেন বা এসেছো সব নিষ্ফলতা, কবিতা তুমিও,
নাহয় দীর্ঘ দিন কেটেছিল তোমার অপ্রেমে–
তবুও ফোটে না ফুল। বুঝি সূর্য
যথেষ্ট উজ্জ্বল নয়। বুঝি চিরজাগরুক
আকাশশিখরে আমি ধাতুফলকের শব্দ শুনে–
সূর্যের ঘড়ির দিকে নিষ্পলক চেয়ে আছি
এখনি বিমুক্ত হবে মেঘে মেঘে বসন্ত-আলোর
নির্ভার কৃপাকণা। সমস্তই ঝরেছিল–ঝরে যাবে–
যদি না আমার
যদি না আমার মৃত্যু ফুটে থাকো অসংখ্য কাঁটায়।
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
অন্নদাতা যোসেফ / ১২
তুমি বৃদ্ধ কুকুরের মতো আমার অন্তঃকরণে প্রবেশ করো–
ওখানেই গুটিসুটি মেরে নির্বিঘ্নে ঘুমাও।
আমি অবাক হয়ে শুনব
তোমাদের শুকসারীর দ্বন্দ্ব–
তুমি যদি সারী হও আর শুক পাখির সঙ্গে বাসা বাঁধো
এই হৃদয়পিঞ্জরে।
তুমি আমার মনের নিভৃতে ভাসমান শালতি হয়ে
বন্যাপীড়িত গ্রামবাসীদের উদ্ধার করো,
তাদের শুকনো খাদ্য পৌঁছে দাও–জল দাও–
কিন্নর লাফিয়ে নামে গাড়ির দরজা যেই খোলা হল।
অর্ধছাগ নেমেছিল ধীরেসুস্থে–সে তো বনের দেবতা,
অতিরূপ, রমণীলাঞ্ছন
এরাও আশ্রয় চায়, মনোবাসী হতে চায়।
এত জায়গা আমার কোথায়?
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
চেনা-অচেনা
এত ভোর-ভোর। কাউকে কি টেলিফোনে পাব?
ভাবতেই যন্ত্রটা বেজে ওঠে। ওদিকের কণ্ঠস্বর
সরাসরি প্রশ্ন করে : ‘ঘুম ভাঙালাম নাকি?’ কার গলা?
খুব পরিচিত মনে হচ্ছে। ‘আমি বাঘের ঈশ্বর—
হরিদেবপুরে দেখা হয়েছিল।’ চট করে মনে পড়ে
গোসাবা যাওয়ার পথে, ঐ গ্রামে, চা-বিস্কুক্ট খেয়েছিলাম,
দোকানের লোকটিকে কিছুটা অপ্রকৃতিস্থ এবং আমরাও
অল্পবিস্তর হেথা নয় হেথা নয় অবস্থায় টলমল করছিলাম।
তাহলে তিনিই সেই।
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

সলমা-জরির কাজ -১০

শ্বাসকষ্ট উঠলেই বুঝতে পারি ফুলডুঙরি পাহাড় আর বেশি দূরে নয়

নইলে এমন হাঁপাচ্ছি কেন? কেন ওসুধে সারে না?

ঐ পাহাড়ের মাথায় উঠলে এ-বছর কী দেখব কে জানে-

যে-পাথরে আমরা সবাই নাম লিখিয়েছিলাম সেটি হয়ত

নিচে গড়িয়ে পড়ে গেছে,

যে-জলস্রোত লাফিয়ে পার হয়েছিলাম তাকে ঘুরি

চাষজমির দিকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল-

যদি তাই হয়ে থাকে তবেআর তাকে আমি খুঁজে পাবো না,

এইসব ভাবি আর হাসপাতালের বিছানা শুকনো ডালপালায়,

ছেঁড়া কাগজে আর পরিত্যক্ত সাপের খোলসে ভরে োঠে-

এত জঞ্জাল সরাবে কে? আমি কি সময় করে উঠতে পারবো?

আমি তো ফুলডুঙরি পাহাড়ে প্রায় পৌঁছে গেছি।

চেপারামের ঘরটা

এখান থেকে দেখা যাচ্ছে। আরেকটু পা চালিয়ে

উঠে গেলেই হয়।

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

 

 

কয়েকটি সাম্প্রতিক কবিতা-১

গাছে উঠে বসে থাকি। ফল খাই। ব্যক্তিমানুষের দিকে

আটি ছুঁড়ে মারি। নিচে হাহাকার পড়ে যায়। বেশ লাগে।

মাঝে মাঝে ধ্রুপদী সংগীত গাই। ওরা শোনে। বাদ্যযন্ত্র

নিয়ে আসে। তাল দেয়। বোধ হয় ছবিও তুলেছে। সেদিন

এক গবেষক বাণী চাইল। ভাবলাম বলি : আমার জীবনই

আমার বাণী। কিন্তু এটিও নাকি বলা হয়ে গেছে। অতএব

নিজস্ব ভঙ্গিতে, কিছুটা বিকৃত ভাবে, বিড় বিড় করি-

“দেখেছি পাহাড়। দেখে জটিল হয়েছি।”

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

 

 

কয়েকটি সাম্প্রতিক কবিতা-২

চলো মর্মরসাথী, চলো ভ্রমণে, কান্তারে,

চলো বিদেশীর বেশে কেউ যেন কাউকে না চিনি-

 

ফলিত জ্যোতিষরূপী, তুমি গানের দেবতা, তুমি জানো

আমার লেখার খাতা অজ্ঞান অনিশ্চয়তায় ভরে গেছে,

এসো নতুন প্রজন্ম হয়ে, এই ভুলভ্রান্তিময়

লেখাগুলি পাঠ করো, অর্থ করো, পর্বতবাসীদের মতো

বিশাল প্রান্তর প্রথম দেখায় অভিভূত হও।

এ-অববাহিকা, বস্তুত জমির ঢাল, ধীরে ধীরে নদীতে নেমেছে।

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

 

 

কয়েকটি সাম্প্রতিক কবিতা-৩

ভোরবেলা পার্কে বেড়াতে গিয়ে কী দেখব কে জানে, এই ভয়ে

রাত থেকে কাঁপি, ভুল পায়ে জুতো পরি, ছাতা নিতে মনেই

থাকে না, হায় সেই দুর্ঘটনার জীপ-গাড়ি থানার সামনে তেমনই

পড়ে আছে, মরচে ধরেছে, চাকায় বাতাস নেই, গাছ থেকে

ঝুলন্ত দড়িটা ওখানে কীভাবে এল, ফাঁস নাকি, লকআপ-য়ের

জানলা থেকে উড়ে আসে দুটো পাখি, ভাঙাচোরা এঞ্জিনে ওদের

বাসা, আপাতত ডিমহীন, নীড়ে শাবক আসে নি, আজ ঝড়ের

আঁধার মেঘে দিন শুরু, এলোমেলো বৃষ্টি নামছে।

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

 

 

কয়েকটি সাম্প্রতিক কবিতা-৫

কত-না রুদ্ধ ক্রোধ বাক্সে লুকানো থাকে, বাঁধা থাকে বিছানায়।

চেকিঙে পড়েনি ধরা, বৈদ্যুতিক কৌশল এড়িয়ে গিয়েছে,

বিমানবন্দর তারা অকাতরে পার হয়, এমনকি দেহরক্ষীদের

বেষ্টনী এড়িয়ে বহু হতবাক প্রেসিডেন্ট-মুখ্যমন্ত্রী-নগরপালের

সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে, বলে-‘অ্যাই, তোরা ভেবেছিসটা কী?’

সৈন্যরা বৃথাই বন্দুক ছোঁড়ে, কৃপাণ নিজেরা লড়াই করে।

ক্রোধ অদৃশ্যই থেকে যায়।

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

 

 

রাক্ষস

সেদিন সুরেন ব্যানার্জি রোডে নির্জনতার সঙ্গে দেখা হল।

তাকে বলি : এই তো তোমারই ঠিকানা-লেখা চিঠি, ডাকে দেব, তুমি

মন-পড়া জানো নাকি? এলে কোন ট্রেনে?

 

আসলে ও নির্জনতা নয়। ফুটপাথে কেনা শান্ত চিরুনি।

দাঁতে এক স্ত্রীলোকের দীর্ঘ কালো চুল লেগে আছে।

 

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

 

 

পুরী সিরিজের শেষ কবিতা

 

তারপর ঘাসের জঙ্গলে পড়ে আছে তোমার ব্যক্তিগত বসন্তদিনের চটি ।এবং

আকাশ আজ দেবতার ছেলেমেয়েদের নীল শার্টপাজামার মতো বাস্তবিক ।

একা ময়ূর ঘুরছে খালি দোতলায় । ঐ ঘরে সজল থাকতো।

সজলের বৌ আর মেয়েটি থাকতো। অরা ধানকল পার হয়ে চলে গেছে।

এবার বসন্ত আসছে সম্ভবনাহীন পাহাড়ে জঙ্গলে এবার বসন্ত আসছে

প্রতিশ্রুতিহীন নদীর খাঁড়ির ভিতরে নেমে দু’জন মানুষ তামা ও অভ্র খুঁজছে।

তোমার ব্যক্তিগত বসন্তদিনের চটি হারিয়েছ বাদামপাহাড়ে।

আমার ব্যক্তিগত লিখনভঙ্গিমা আমি হারিয়েছ বাদামপাহাড়ে।

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

 

চেয়ে দেখো

প্রত্যক্ষ করেছ? সেই ভোর থেকে হাত পেতে আছি। ভরে গেছি

দানে ও অবজ্ঞায়। পেয়েছি ক্ষুধার শস্য, প্রেমকণা, দাতার ধিক্কার,

কিছু যেন স্বততই এসেছে – কিছু রাস্তায় কুড়িয়ে পেলাম। সহজ হয়নি।

দৌড়ে গেছি রুষ্ট শ্বাপদের অত্যাচারে। বসে গেছি বিবাহের ভোজে।

এ-মুহূর্তে সন্ধ্যার সানাইটুকু উদ্বৃত্ত। যাকে বলে না-চাইতে পাওয়া।

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

 

 

কহবতীর নাচ ১

একাধিকবার এই সৈকতে এসে

বলেছি আমার মতো পুরুষকে তো কিছু

কলঙ্কের ভাগ তুমি দিতে পারো। হয়নি,

শোননি কেউ, শুধু বালিয়াড়ি ধসে

পড়েছে সাগরজলে।

 

স্তব্ধতা থেকে কোলাহলে

আবার যাত্রা শুরু, পাপ থেকে

পাপের স্খালনে। ঝাউবনে উড্ডীন

পতাকাবিদ্রোহ থেকে রঞ্জনরশ্মির অনলে–

চলেছি সকলে।

 

এই মদ কিভাবে করব পান–

বলে দাও। দাঁড়িয়ে জলের ধারে?

ছিঁড়ে-আনা এই ফুলগুলি

ঘুমন্ত খ্রিস্টগাছে ফুটেছিল–

কীভাবে ভাসবে তারা মাতৃসমা জলে?

 

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

 

 

কহবতীর নাচ ২

যে তমসা নদীর তীরে আমি আজ বসে আছি তার বালুকণাগুলি আমাকে

জানাতে চাইছে আমি জল থেকে কতটা পৃথক–তার ঢেউগুলি আমাকে

বোঝাতে চাইছে আমি গাছ নই, আর গাছের আড়ালে ঐ ধাঙরবস্তির এক

মদ্যপানরত যুবক আমাকে বলতে চাইছে আমি পক্ষীরাজ, মেঘ থেকে নামলাম,

এইমাত্র, সাক্ষাৎ তারই চোখের সামনে–

 

হবেও-বা। তাহলে বর্ষার আঁধার সকালে আমি ডানা গুঁজে বসে থাকি। রোদ

উঠলে উড়ে যাব।

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

 

 

কহবতীর নাচ ৩

দু-হাত শূন্যে তুলে কেঁদে উঠি, ‘প্রভু, ওটা আমাকেই দিতে হবে।’

লোকে প্রচণ্ড আমোদ পায়–বলে, ‘তোর আমড়াগাছির যেন শেষ নাই,

আবার দেখা তো দিকি ঐ খেলা’, আমি আবারো দেখাই

মাঝে-মধ্যে অতিরিক্ত কিছু হাঁপ জুড়ে দিই, যথা, ‘ এসেছিনু ভবে’

অথবা ‘নিঠুর’, এ-সব গৌণ গান তুমিও গাইতে পারো;

লোক হাসে–এর চেয়ে বড় কথা আর আছে নাকি?

দিনের প্রখর রৌদ্রে বনতলে পড়ে রয় অজস্র জোনাকি

মূক ও মৃত্যুমুখী, শরীরের নীল আলো জ্বলে কারো কারো।

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

 

কহবতীর নাচ ৫

হাড় ও কঙ্কাল শুধু, আমি তাকে পাঁজাকোলে করে

চেয়ারে বসিয়ে দিই, অম্নিই বসে থাকে,

ঝঞ্চাট করে না, কখনো হেলান দিয়ে দেয়ালে

সাজিয়ে রাখি–বেশ থাকে কোনাভাঙা, চাটগাঁ-র ভাষায়

এটা-সেটা বলে, তবে কোনো দাবিদাওয়া নেই,

যেসব পুরুষদের বৌ-রা চাকরি করে তাদের মুখের দিকে

অপলক চেয়ে থাকে–ভয় পায় বিসর্জনের

ঢাক শুনে, ভাবে বুঝি তাকেও নদীর জলে ফেলে দেওয়া হবে।

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

 

কহবতীর নাচ ৭

এবার যদি আমি ফিরে আসি তবে আমি নীল রঙ হয়ে ফিরে আসব।

বৃষ্টিশেষে মেঘের ফাঁক দিয়ে বাংলার আকাশে যে নীল রঙটুকু দেখা যায়

আমি তারই মতো হাল্কা কিছু বলার চেষ্টা করব–

যে-কথায় কোনও জড়তা নেই–যাকে না বুঝলে

কারো ভাতকাপড়ে টান পড়বে না–কেউ বলতে পারবে না

তোমাকে বুঝলুম না হে, তোমাকে একেবারেই বোঝা গেল না।

 

তখন তুমিও সাদা রঙ হয়ে ফিরে এসো।

হাতে-বোনা খদ্দরের হিংসাহীনতা হয়ে তুমি যেন আমাদের

সবার চৈতন্যে ছড়িয়ে পড়তে থাকো–যে সাদা রঙ দাবি করে

‘আমাকে বুলেটবিদ্ধ করো, আমাকে রক্তছাপে ভরিয়ে তোলো,

আমাকে স্বাধীনতা দাও।’

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত