‘প্রাণের বান্ধব রে, দাও দেখা দয়া ক’রে। গুরু না ভজিলে সন্ধ্যা সকালে মন প্রাণ দিয়া রে…’
সুখেন খোলা জানলাটা দিয়ে রাস্তা দ্যাখে। চাঁদ নয়, টিউবলাইটের জ্যোৎস্নায় রাস্তাটা ভেসে গেছে। রাস্তাটাকে নদী ব’লে মনে হয় আর উবু হয়ে ব’সে পোড়াবিড়ি ফুঁকছে ভিখারিটাকে মাঝি বলে মনে হয়। সমস্ত নদী জুড়ে একটা নৌকাকে ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে। নদীটার নাম দিতে ভালো লাগে না সুখেনের। মনে হয় পৃথিবীর সব নদ-নদীর নাম থাকার কোনও মানেও হয় না। সুখেনের ভিতর থেকে কে যেন কথা বলে, ও মাঝি নাও ভাসাইয়া কই যাও। খাড়াও আমি যামু – পানিতে ডর নাই / আমারও ডর নাই।
এ-সব কথা সুখেন বলতে পারে না। আজ সকালে যে বাবুর বাড়ি নর্দমা পরিষ্কার করতে গেছিল, তাদের বাড়ির ছেলেটা টেপরেকর্ডারে কেমন অদ্ভুত সুরের সাথে বলে যাওয়া এই কথাগুলো শুনছিল আর চোখ বুজিয়ে বসেছিল। সুখেনও কাজ থামিয়ে শুনছিল কথাগুলো। ভাবছিল, ছেলেটা যদি আবার বাজায় কথাগুলো। না, ছেলেটা আর বাজায়নি। সুখেন নর্দমা থেকে অনেক দিনের পচা ময়লাগুলো ঝুড়ি করে ফেলছিল আর বিড়বিড় করছিল কথাগুলো। ব্যস্ ভেতরে ঢুকে গেল। ভেবেছিল, গঙ্গাকে একবার শোনাবে। কিন্তু শুনে হয়তো এখন খিস্তি করবে। তার থেকে নিজেকে নিজে শোনানোই ভালো।
ভিখারিটা উঠে দাঁড়িয়েছে। এবার অন্য গান গাইছে – ‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি’। সুখেনের মনে হলো নৌকাটা দুলে উঠলো। ভিখারিটা হেঁটে-হেঁটে চলে যাচ্ছে। হয়তো আবার কোনো নদীর খোঁজে। রাতের বেলায় কালো পিচের রাস্তার নদী, নদীর উপর নৌকা, নৌকার উপর পাল তোলা ছই।
– এই গঙ্গা স’রে শো, গায়ে পা তুলছিস কেন?
– ধ্যাৎ, মাগ্ তার ভাতারের গায়ে পা তুলবে, নাকি অন্য ভাতারের গায়ে তুলবে?
– তুই ঘুমিয়ে-ঘুমিয়ে খিস্তি করছিস!
গঙ্গা সটান উঠে বসে, এলোমেলো চুলে একটা হাতখোপা করতে-করতে বলে – শোনো আমি বেবুশ্য লাইনের মেয়ে, অনেকদিন বিহার থেকে সোনাগাছিতে ঘর ক’রে এসেছি, তোমাদের মতো ন্যাকরাবাজি কথা আমার আসে না। করে শালা মেথরের কাজ, ভাব দ্যাখো। দ্যাকো বাপু, অনেকদিন পরে পেট পুরে খেইছি, শরীর ভ’রে পিরীত পেইছি, এখন ঘুমোতে দাও।
সুখেনের একটা বিড়ি খেতে ইচ্ছা করে। সেও উঠে বসে, মাথার কাছে ঝোলানো জামার পকেট থেকে দেশলাই বিড়ি বার করে। ধরায়। জানলাটা দিয়ে রাস্তার দিকে তাকায়। এখন রাস্তাটাকে কোনও নদী ব’লে মনে হয় না। রাস্তাটা এখন শুধুই রাস্তা। পিচ খোয়া দুরমুশে পেটানো রাস্তা। অসংখ্য মানুষের পায়ের তলায় পড়ে থাকা রাস্তা, অসংখ্য গাড়ির চাকায় রক্তাক্ত হওয়া শুধুই একটা রাস্তা। নদী নয়, নদীর মতো কিংবা সম্পূর্ণ নিজেই নিজের মতো এক মেয়েমানুষ তার পাশে ব’সে আছে, সুখেনের মতোই জানলা দিয়ে রাস্তা দেখছে। টিউবলাইটের জ্যোৎস্না দেখছে। হাই তোলে গঙ্গা।
– তুই থেকে যা গঙ্গা। আমি তোকে বউ ক’রে নেবো।
– না বাবা ও-সব চালাকিতে ভুলছি না। এখন জোর আছে, গতর খাটিয়ে কিছু পয়সা ক’রে নিতে পারব। তোমার বউ সেজে মরি আর কী। তোমার নিজেরই পেট চলে না। সখ কত, বউ বানাবে। অ্যাই শোনো, চুলকুনি ছাড়ো। কালকেই আমি কেটে পড়বো। এখন একটা বিড়ি ছাড়ো। ঘুমটা মাইরি চটকে দিলে। যত্ত সব।
– গঙ্গা, তোকে সত্যি বিয়ে করব। থেকে যা আমার কাছে।
গঙ্গা একটু সরে আসে সুখেনের কাছে, মুখটা শুঁকে নিয়ে বলে – উঁহু মাল তো খাওনি, ভুল বকবে কেন? আচ্ছা এতবার বলছে যখন, সাতদিন থেকে যাবো। তবে হ্যাঁ, পেট চুক্তি খাওয়া আর গতরের জন্য রোজ কুড়ি টাকা। তারপর ফিক ক’রে একটু হেসে, ফুঃ করে বিড়ির ধোঁয়ার একটু ছেড়ে ব’লে চলে – যাওয়ার সময় একটা নতুন শাড়ি কিনে দেবা, দ্যাখো গায়ের শাড়িটা ত্যানা হয়ে গেছে।
এই দু’দিন সুখেন ঘরে ফেরার তাগিদ বোধ করে। প্রথম দিন পাঁচুর দোকানের প্রচণ্ড ঝাল তড়কা আর রুটি কিনে আনে। অত ঝাল খেয়ে চোখমুখ লাল ক’রে গঙ্গা বলে – এই শোনো, এই শোরের গু তুমি খেতে হয় খাও, কাল আমারে চাল আলু কিনে এনে দেবা, ফুটিয়ে খাবো।
সুখেন টুকিটাকি অনেক কিছুই এনে দেয়। গঙ্গা নিজের মতো ক’রে ব’সে যায়। সুখেন বাধা দেয় না। দ্যাখে, চেয়ে চেয়ে দ্যাখে, বড় সুখ পায়। আরাম হয় মনে। গঙ্গা তার নিজের মেয়েমানুষ নয় তবু সারাদিন অন্যের বাড়ির নালা নর্দমা পায়খানা পরিষ্কার করা টাকায় গরম গরম জিলাপি কিনে এনে গঙ্গার হাতে তুলে দিতে খুব ভালো লাগে।
ভিখারিটা একদিন আসে না, রাতের বেলায় রাস্তাটাকে তাই নদী ভাবতে ভালো লাগে না, মনে হয় রাস্তাটা যদি শূন্য হয় তাহলে তার দশফুট বাই দশফুট ঘরটাই হয়ে যাক না কোনও দ্বীপ। গঙ্গা সাপের মতো পেঁচিয়ে থাকে সুখেনের শরীর মনে।
গঙ্গার সাতদিন পার হয়ে গেছে। দশদিনে পড়েছে। রাঁধছে, চুল বাঁধছে, সুখেনের জামাকাপড় একটুখানি সোডা পাউডার দিয়ে ধপধপে ফরসা বানিয়ে ছাড়ছে। মাঝেমধ্যে খিস্তিও করছে এবং রোজ সকালে উঠে তার নিজের ভাষায় ‘আমার গতর খাটুনির কুড়ি টাকা দাও’ ব’লে চেয়ে নিয়ে কোনও একটা কৌটোর মধ্যে জমিয়ে রাখছে। কিন্তু রাতের বেলায় জানলা দিয়ে দেখা টিউবলাইটের জ্যোৎস্নায় বুড়বুড়ি কাটা নদীর মতো রাস্তাটা এগারো দিনের মাথায় সুখেনের হঠাৎ মনে হয় কোনও কালো রঙের পিচ্ছিল একটা অজগর সাপ। সুখেনের কেমন ভয় হয়, তারপর ভেবে নেয় ‘কৃষ্ণপক্ষ পড়ে গেছে তাই বুঝি আলকাতরা রঙের রাস্তাটাকে অমন মনে হয়’। সেইরাতে গঙ্গাতে অবগাহন করে না সুখেন।
গঙ্গা নিজের দিকে সুখেনকে ফেরায় – কী হল কাল তো টাকা দেবে না তাহলে।
বারোদিনের মাথায় সুখেনের কাজ হয় না। বাইরে গরম বাতাসের হল্কায় জানলা দিয়ে দেখা নিচের রাস্তার নদীটা শুকিয়ে মরা গাঙ মনে হয়। চুলো জ্বলে না, গঙ্গা মুড়ি খায়। সুখেনকে মুড়ি দেয়। সন্ধ্যাবেলা চৌকাঠে হেলান দিয়ে সুখেন বসেছিল আর গঙ্গা টেমি জ্বালিয়ে সুখেনের খাকি রঙের হাঁটুর কাছে ছেঁড়া প্যান্টটায় তাপ্পি মারতে-মারতে ভাতের কথা ভাবছিল। থালায় ভাত বাড়লে গঙ্গার একরাশ জুঁইফুল মনে হয়। মনে হয় এক খাবলা শরীরে ঘ’ষে নেয়।
রাতের বেলা দুজনেই পেট ভরে জল খেয়ে শুয়ে পড়ে। গঙ্গাকে ভীষণ পেতে ইচ্ছা করে সুখেনের। সুখেন গঙ্গাপ্রাপ্তি চায়। কিন্তু গতর খাটুনির কুড়ি টাকা না থাকায় ইচ্ছাটা চেপে থাকে। গঙ্গা সুখেনের দিকে ফিরে শুয়ে থাকে আর মনে-মনে সরকারি অফিসের জমাদারটার কথা ভাবে। সুখেন সারা রাত ইচ্ছাটা গোপন রেখে ভোর রাতে পিচের রাস্তাটা যখন দুধ-ওথলানোর মতো করে ক্ষেপে ওঠে, সুখেন আর পারে না, গঙ্গাকে সাপটে ধরে বলে ফ্যালে – গঙ্গা আমার কাছে কুড়ি টাকা নাই।
উ-উ-উ ক’রে উঠে গঙ্গা বলে – যাও আজকে ফাউ দিলাম।
সুখেন বড় স্বস্তি পায়।
সকালবেলা স্নান সেরে নেয় গঙ্গা। একটা প্লাস্টিক ব্যাগে তার নিজস্ব সম্পত্তি গুছিয়ে নিয়ে জানলা দিয়ে রাস্তাটার দিকে তাকায় আর মনে মনে সরকারি অফিসের জমাদারটার কথা ভাবে। সুখেনও রাস্তা দ্যাখে, মনে হয় মাংস খসে যাওয়া হাড় বার করা কঙ্কাল।
গঙ্গা জানলার দিকে তাকিয়ে বলে – চললাম।
– কোথায় যাবি?
– আর একজন জমাদার, তবে এ তোমার মতো বাবুর বাড়ির গু-মুত সাফ করে না। সরকারি অফিসের জমাদার। সরকার মাস গেলে ট্যাকা দেয়।
সুখেন চুপ করেই থাকে।
গঙ্গা আবার বলে – নতুন শাড়িও জুটলো না একটা।
গঙ্গার বয়ে যাওয়ার দিকে চেয়ে থাকে সুখেন। এক সময় পিচের রাস্তায় শুধু একজন ফেরিওয়ালা হেঁকে যায় – হরেক মাল সাড়ে ছ’টাকা।
তিনমাস শেষ হলো। সুখেনের মাঝেমধ্যে কাজ হয়। কাজ হ’লে দিনের বেলা বাবুর বাড়ি বউ-ঝিদের হাতের তৈরি চমৎকার স্বাদের তরকারি দিয়ে পেট ভ’রে ভাত খায়। রাতের বেলা পাঁচুর দোকানের ঝাল দেওয়া তড়কা-রুটি এবং মিলনী সিনেমা হলের পেছন থেকে জরির পেপারে বিক্রি হওয়া বাংলা মদ। এঁটো হাতেই রাস্তা দ্যাখে সুখেন। ভিখারিটা সেই যে মাঝি হয়ে নৌকা নিয়ে চলে গেল আর এলো না। সুখেন বসে বসে তার অপেক্ষায় ঢোলে, ব’সে ব’সে স্বপ্ন দ্যাখে। রাস্তার উপর প্রচুর পাখি। ইচ্ছামতো হুটোপুটি করছে। ছোট-ছোট মুরগির মতো দেখতে। দু’হাঁটুর ফাঁকে মুখ গুজে সেই বাবুর বাড়ি টেপরেকর্ডারে শোনা কথাগুলো বিড়বিড় করে সে। কী যেন হাতড়ে চলে সুখেন; জলের ভেতরের তরল অন্ধকার – মাঝি নাও ভাসাইয়া কই যাও – আর মনে করতে পারে না সুখেন। একটা জাহাজের ভোঁ শোনার মতো মাথায় ঝিঁঝি ডাকে। ঘুম আসে, অনেক ঘুম। ঘুমাবেশ ঘিরে সুখেন পিচের রাস্তার তৈরি গঙ্গার মতো নদীটা খোঁজে।
ভালো কাজ হয় সুখেনের। সেই বাবুর বাড়ি টেপরেকর্ডারে অদ্ভুত সুর করে বলা কথা শোনা ছেলেটার বিয়ে। সেই জন্য বাড়ি সাফসুতরো করার জন্য ডাক পায় সুখেন। তালি লাগানো খাকি প্যান্টটা পরে। তালি দেওয়া জায়গাটায় হাত বুলিয়ে আরাম পায়। বাবুর বাড়ির ছেলেটা আজও চোখ বুজিয়ে টেপরেকর্ডারে সেই সুর করে বলা কথা শুনছে। তবে এ অন্য কথা, বিড়বিড় করে সুখেন
– পানিতে ডর নাই / আমারও ডর নাই
ও মাঝি খাইবা হাতের মুঠায় বিষ।
ছেলেটা বর সেজে গাড়িতে করে বিয়ে করতে চ’লে যাওয়ার পরে বাবুর বউ এসে সুখেনের হাতে একটা নতুন শাড়ি দিয়ে বলে – বউকে দিও।
পাঁচুর দোকানের রুটি-তড়কা আর শাড়িটাকে চৌকির উপর ফেলে মাটিতে ‘দ’ হয়ে ব’সে থাকে সুখেন। এই প্রথম জানলা দিয়ে নিচের রাস্তাটা দেখতে ভালো লাগে না। চৌকির উপর হলুদ খোলের লাল পেড়ে শাড়িটার গায়ে পড়া টিউবলাইটের আলো মনে হয় রক্ত ঝলকাচ্ছে। সেইদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সুখেনের মাথা ধ’রে যায়। আর ঠিক সেই সময় একটা জলজ শব্দ শুনতে পায় – ছলাৎ ছল, ছলাৎ ছল, ছলাৎ ছল…
– কে রে ওখানে?
– আমি।
– কোন্ মুরগিটা?
– মুরগিই বটে। তবে ডিম এনেছি পেটে ক’রে।
সুখেন তিন পা এগিয়ে এসে সাত পা পিছিয়ে যায়।
– তোর দু’হাতে ও দুটো কী?
– থান ইট, সেই কোথা থেকে বয়ে আনছি জানো। হাঁপ ধ’রে গেছে। একটু বসতে দেবা?
আহা রে! মায়া হয় সুখেনের। বোস্ গঙ্গা, তুই আমার ঘরে বোস্!
– তবে ইট কেন তোর হাতে?
– তুমি ঘরে না-নিলে গলায় বেঁধে জলে ডুবে মরবো।
– তোর সেই সরকারি জমাদার?
গঙ্গা ফুঁসে ওঠে।
– আরে মাগ-ভাতারে ছিলাম তা ভালোই, শালা তোমাদের ঐ সরকারের জন্য। সে নাকি ছাঁটাই করা শুরু করেছে। তা মিন্সে তো জমাদার, তাই তার ছাঁটাই সবার আগে হলো। সে বললো, গঙ্গা কেটে পড়্।
– কিন্তু তোর যে পেটে!
– তিনশো টাকা দিয়েছে খালাসের জন্য। তা ভাবলাম খালাস করার আগে তোমার কাছে একবার যাই। যদি থাকতে দাও তো ডিম আর নষ্ট করি কেন।
– তড়কা-রুটি খাবি গঙ্গা? তোর সেই শোরের গু।
অনেকদিনের বুভুক্ষু গঙ্গা পেট ভ’রে খায়। সুখেন গঙ্গার খাওয়া দ্যাখে। আহা রে! সরকার যদি ছাঁটাই না-করতো তাহলে গঙ্গা হয়তো সুখেই থাকতো সরকারি জমাদারটার কাছে।
গঙ্গার হাই ওঠে। বলে – নাও বাপু কী করবা বলে ফ্যালো। শরীর দিচ্ছে না। ঘরে না থাকতে দিলে আবার এই ইট দুটোকে বয়ে নিয়ে গিয়ে গলায় বেঁধে পুকুর খুঁজে ডুবে মরতে হবে।
চৌকির উপর প’ড়ে থাকা শাড়িটার দিকে নজর যায় গঙ্গার।
– আরে এ তো নতুন শাড়ি। কার জন্য?
– তোর জন্য।
– তুমি জানতে আমি আসবো?
– জানতাম।
শাড়িটা কোলে তুলে, গন্ধ শোঁকে গঙ্গা, তারপর বলে – জানো, আমার কাছে ঐ ছাঁটাই হওয়া শুয়োরের বাচ্চা জমাদারের তিনশো টাকা আর তোমার কাছ থেকে গতর খাটুনির ২০০ টাকা আছে। তুমি ধূপের ব্যবসা করবা।লোকের বাড়ির গু-মুত ঘাঁটতে হবে না। ধূপ বানাবা, ধূপের কাঠিতে সুগন্ধী দেবা, তারপর ফেরি ক’রে বেড়াবা।
সুখেন এই প্রথম সমস্ত সাহস সঞ্চয় ক’রে বলে – জানলা দিয়ে নিচের রাস্তাটা দ্যাখ্ গঙ্গা তোর মতো লাগছে।
গঙ্গার ঠোঁটের সামনে একটা খিস্তি ঝুলে পড়ে এবং গঙ্গা সাথে সাথে গিলে ফেলে আবার একটা হাই তোলে।
– তুই শুয়ে পড়্ গঙ্গা।
– ইট দুটো ফেলে দাও তো বাইরে।
– তবে একটা শর্ত আছে গঙ্গা।
গঙ্গা চোখ দিয়ে কী শর্ত জানতে চায়।
– তুই আর খিস্তি করতে পারবি না।
এই প্রথম ঘাড় কাৎ ক’রে বাচ্চা মেয়ের মতো সায় দেয় গঙ্গা।
সুখেন কী যেন একটা দেখে জানলার কাছে দৌড়ে যায়। এবং নিজেকে নিজে বলে – আরে, সেই ভিখারিটা একই রকম উবু হয়ে ব’সে আছে!
মাঝি হয়ে থাকে ভিখারিটা। টিউবলাইটের নরম জ্যোৎস্নায় কালো পিচের রাস্তাটা ফেনা তোলা হয়ে যাচ্ছে। আর ভিখারিটা গান গেয়ে চলেছে – প্রাণের বান্ধব রে দাও দেখা দয়া ক’রে….
সুখেন এসে গঙ্গাকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ে।
– হ্যাঁ রে গঙ্গা তোর সেই সরকারের জমাদারের নামটা কী রে?
– কেন?
– ডিম ফুটে ছানা বের হ’লে নাম মিলিয়ে নাম রাখবো।
গঙ্গা ফুঁসে গিয়ে উঠে বসে – ডিমে তা দেবা তুমি আর নাম থাকবে ঐ খান্কির ছাওয়ালের নামের আদলে?
সুখেন চোখ পাকিয়ে বলে – আবার?
গঙ্গা ফিক্ ক’রে হেসে জিব কেটে বলে – থুড়ি।
এ সময়ের অন্যতম কথাসাহিত্যিক তন্বী হালদার পশ্চিমবঙ্গের বাংলা আকাদেমির ‘সোমেন চন্দ স্মৃতি পুরস্কার’ পেয়েছেন ‘মজুররত্ন’ গল্প সংকলনের জন্য। জলাভূমি উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমির ‘সুতপা রায়চৌধুরী স্মারক পুরস্কার’। এ পর্যন্ত লিখেছেন শতাধিক ছোটো গল্প এবং ৮ টি। নাটক লেখেন। লেখেন কবিতাও।