বাঙলাদেশে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’র ঘাতক

Reading Time: < 1 minute

 

এরশাদ খুব সম্ভবত ৩০ জুন রাতেই মারা গেছেন। কোনো একটা কূটনৈতিক কারণে খবর গোপন রাখা হয়েছিল বলে আমার ধারণা। তাকে নিয়ে যারা কান্নাকাটি করছেন, তারা নিতান্তই শিশু। কান্নাকাটির কিছু নাই। ৮৯ বছর অনেক সময়। আর একটা লোক মারা গেলেই শুদ্ধ হয়ে যায় না।

এরশাদকে আমার মনে পড়ে গুলির শব্দে। ১৯৮৬ সাল। আমার বয়স ৫। আমরা থাকি চট্টগ্রামে আগ্রাবাদে, জাম্বুরা মাঠের পাড়ে, ফরেস্ট কলোনির চারতলার একটা ফ্ল্যাটে। ভোট চলছে। বাবা গেছেন প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করতে। দ্রিম দ্রিম শব্দ হচ্ছে। আমরা ভয়ে কাঁপছি। একটা শব্দ হলে ভয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়ি, আমার সহজ বুদ্ধি বলছিল যদি জালনা দিয়ে গুলি এসে গায়ে লাগে। তারপর এরশাদকে আমাদের চোদ্দো ইঞ্চি শাদাকালো টেলিভিশনে দেখা যায় গলায় মালার পর মালা। এই মাল্যবরণ দেখে হয়তো কুরবানির গরুরাও তাকে ঈর্ষা করতো। এইসব হচ্ছে তাকে নিয়ে আমার প্রথম স্মৃতি।

লেজেহুমু এরশাদ খুব দ্রুতই হয়ে গেলেন স্বৈরাচার, বিশ্ববেহায়া, আদুভাই, বিশ্বপ্রেমিক ইত্যাদি। তারপর হয়ে গেলেন কবি। তিনি ৮০ দশকের কবিদের একজন। যৌবনে তিনি কবিতা লিখতেন না। উৎপলকুমার বসুর একটা স্মৃতিকথায় এরশাদের কথা আছে, কুচবিহারের দিনাহাটায় শৈশবে তার পাড়াতেই উৎপল থাকতেন। উৎপলের লেখায় যৌবনে এরশাদের কবিতা লেখার কোনো কথা বা ইংগিত তিনি দেন নাই। ওখান থেকে এরশাদের ডাকনাম জানতে পারি, এরশাদের ডাক নাম ছিল পেয়ারা।

মূলত কবিতা ছিলো এরশাদের একটা ভান, জনগণ আর নারীদের ভোলানোর অস্ত্র।

এরশাদকে আমরা ভুলবো না, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারির মতো তিনি অবস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার কারণেই ১৪ ফেব্রুয়ারি আমরা অনেকেই ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করতে পারি না। ক্ষমতা দখলের কিছুদিন পরেই ১৯৮৩ সালের ওইদিন তিনি ছাত্রদের হত্যা করে রাজপথ লাল করে ফেলেছিলেন। এইটা মাত্র একটা কারণ। বাকি কারণগুলি বলা বাহুল্য।

 

 

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>