| 29 মার্চ 2024
Categories
ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধ

ভিয়েতনাম যুদ্ধ: যে যুদ্ধে আমেরিকা শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

ভিয়েতনাম যুদ্ধের পটভূমি সেই ১৯৫০ এর দশকের গোড়ার দিকে শুরু হয়। যখন ভিয়েতনাম ছিলো ফরাসি কলোনি। ফরাসিরা চলে যেতে বাধ্য হলেও ডিভাইড অ্যান্ড রুল নীতি রেখে যায় (Divide and rule. That refers such a condition where, there will be always collision among them)। ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত ভিয়েতনামের জনগণ ফ্রেঞ্জ উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভের জন্য যুদ্ধ করেছিল এবং সফল হয়ে ছিলো। এই যুদ্ধের শেষে ভিয়েতনাম ফরাসি শাসন থেকে মুক্ত হয়। আর রেখে যায় অন্য আরেক সংঘাতের বীজ। আর তাই ভিয়েতনামকে তখন উত্তর ও দক্ষিণ নামে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল। প্রথমেই যদি ২ ভিয়েতনাম এক সাথে থাকত তবে এই হাজার হাজার মানুষ মারা যেতো না। এই বিভাজনে সমাজতান্ত্রিক দল উত্তর ভিয়েতনামের নিয়ন্ত্রণ পায় এবং সমাজতন্ত্র মানেই রাশিয়া – চীনের উঁকিঝুঁকি।

অন্যদিকে দক্ষিণ ভিয়েতনাম পায় সমাজতন্ত্র-বিরোধী দল। এই দল সমাজতন্ত্র বিরোধী বা পুঁজিবাদ অর্থনীতিতে বিশ্বাসী ছিলো। উত্তর ভিয়েতনামের সরকার এই ২ ভিয়েতনাম একত্রিত করে একটি অখণ্ড ভিয়েতনাম গঠনের জন্য চেষ্টা শুরু করেছিল। যা অনেক আগেই করা দরকার ছিলো। এই সময় উত্তর ভিয়েতনামের এই প্রচেষ্টা কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাধা দেওয়া শুরু করে। এবং স্পিল অভার এর ভয়ে থাকে (Actually this kind of theory refers the situation where Communism will be over flowed from a state to another state)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করেছিল যে, যদি উভয় ভিয়েতনাম মিলিত হয়ে একটি শক্তিশালী সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠিত হবে। কেননা, ভিয়েতনাম ছিলো চীনের প্রতিবেশী এবং চীনের প্রভাব ছিলো খুব বেশী। ফলশ্রুতিতে  সমাজতন্ত্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়বে বা স্পিল অভার হবে। এবং এই সূত্রে ওই অঞ্চলে তাদের আধিপত্য ক্ষুণ্ণ হবে এবং একই সাথে সোভিয়েত রাশিয়া বা চীনের প্রভাব বৃদ্ধি পাবে। যদি এই অঞ্চলে বৃহৎ সমাজতাত্ত্বিক ব্লক গড়ে উঠে, তবে তা যুক্তরাষ্ট্র নিজের হুমকি মনে করবে।


ভিয়েতনাম যুদ্ধ

ভিয়েতনাম যুদ্ধ


এই ভাবনা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ভিয়েতনাম সরকারকে সহায়তা দেয়। যদিও দক্ষিণ ভিয়েতনামের সাধারণ মানুষদের একটি বিশাল অংশ সমাজতান্ত্রিক (সমাজতাত্ত্বিক সমাজ হলো যেখানে অর্থনৈতিক কার্যাবলী থাকে সরকারের হাতে) শাসন ব্যবস্থার প্রতি অনুরক্ত ছিল। দক্ষিণ সরকার সমাজতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন মানুষের উপর নিপীড়নমূলক আচরণ শুরু করে। এরই প্রতিবাদে দক্ষিণ ভিয়েতনামে আন্দোলন শুরু হয়, এবং শুরু হয় যুদ্ধ!

ভিয়েতনাম যুদ্ধের কারণ

১. উত্তর ভিয়েতনাম – দক্ষিণ ভিয়েতনাম দ্বন্দ্ব: প্রাথমিক ভাবে আভ্যন্তরীণ ব্যাপার হলেও তা দুই ব্লকে ছড়িয়ে পরে।

২. মার্কিনিদের সমাজতাত্ত্বিক ভয়: যেখানেই যখন সমাজতত্ত্ব মাথা চাড়া দিয়েছে, সেখানেই মার্কিন নাশকতা পরিলক্ষিত হয়।

৩. চীন – রাশিয়ার মদদ: এই যুদ্ধে এই দুই পরাশক্তির প্রত্যক্ষ সাহায্য করেছিলো। যা যুদ্ধকে আরো গতিশীল করে ছিলো।

৪. মার্কিন আধিপত্য বিস্তারের মানুষিকতা: মার্কিনীদের একটি মানুষিকতা হলো অন্যের বিষয়ে নাক গলানো।

৫. শো অফ: মার্কিনিরা দেখাতে চেয়েছিলো তাদের শক্তি। এবং তাদের যা অপছন্দ তা তারা করতে দিবে না যদিও তা অন্যায়।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের ফলাফল

১. যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্রের পরাজয়: এই যুদ্ধে মার্কিন সেনা মারা যায় প্রায় ৬০ হাজার। পরে মার্কিন জনগণ আন্দোলন করে যে তাদের ছেলেদের ঘরে ফিরিয়ে আনতে হবে।

২. এই অঞ্চলে চীন-রাশিয়ার আধিপত্য বিস্তার: স্পষ্টত এই ভিয়েতনাম যুদ্ধ চীন এবং রাশিয়ার জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনে। এই দুই পরাশক্তি নিজ মহিমাময় আসার সুযোগ পেয়ে যায়।

৩. বিশ্ব দরবারে মার্কিন বিরোধী জনমত: এই ভিয়েতনাম যুদ্ধ মার্কিনী বিরোধী মনোভব জাগিয়ে তুলে।

৪. নাপাম বোমার ব্যবহার: পৃথিবী অবলোকন করে এক মারণাস্ত্র। আর এই সব রাসায়নিক অস্ত্র মানবতার জন্য সরাসরি হুমকি।

৫. স্নায়ু যুদ্ধ নতুন রূপে: কিউবান মিসাইল ক্রাইসিস, বার্লিন প্রাচীর সমস্যা বা অন্যান্য ঠাণ্ডা যুদ্ধের মত এই ভিয়েতনাম যুদ্ধ ছিলো না। এটা ছিলো সরাসরি যুদ্ধ। যা কোল্ড ওয়ারের সব থেকে রক্তাক্ত উদাহরণ।

৬. ভিয়েতনামের স্বাধীনতা: দুই ভিয়েতনাম একত্রিত হবার পথে যাত্রা শুরু করে। আজ যে স্বাধীন এবং একক ভিয়েতনাম দেখতে পাচ্ছি তা এই ভিয়েতনাম যুদ্ধ ফল।

 

কৃতজ্ঞতাঃ ফেক্টবিডি

 

.

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত