১৯ তারিখ শেষপর্বের নির্বাচনের হওয়ার পরই বুথ ফেরত সমীক্ষা নিয়ে গোটা দেশ তোলপাড় হয়েছিল ৷ বুথ ফেরত সমীক্ষার দিকে একটু নজর দিলে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে, এই সমীক্ষায় বিশেষ কিছু রাজ্যের ফলাফল বেশ জটিল ৷ কিছু বুথ ফেরত সমীক্ষায় উত্তরপ্রদেশে বিএসপি-এসপি জোটকে দেওয়া হয়েছে ২০, তো আবার কিছু বুথ ফেরত সমীক্ষায় এই সংখ্যা ১৭, কেউ কেউ আবার ৪০ টি আসন পাওয়ার কথাও বলেছে ৷ বুথ ফেরত সমীক্ষায় এত জটিলতা কেন? তাহলে কি এই জটিলতার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে কোনও নতুন তথ্য ৷ অন্যদিকে, ইঙ্গিত রয়েছে তামিলনাড়ু ও পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন কিছু ঘটারও ৷
বাংলার দিকে পাখির চোখ বিজেপির, কিন্তু কেন?
এবারের লোকসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল পশ্চিমবঙ্গ ৷ ভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক তরজা, ভোট প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য, দেশের রাজনীতিকে আরও বেশি রোমাঞ্চকর করে তুলেছিল ৷ কিন্তু বিজেপি কেন বাংলা দখলে এতটা বেশি আগ্রহী? উত্তরটা খুব একটা কঠিন নয় ৷ পশ্চিমবঙ্গ ও দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে নিজেদের প্রভাবকে শক্তিশালী করার তাগিদই বিজেপির কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৷ সঙ্গে ২০১৪ সালে হিন্দিভাষী অঞ্চলগুলোকে নিজেদের হাতের মুঠোয় করে নিয়েছিল বিজেপি ৷ তাই এই অঞ্চলগুলো ছাড়াও, দেশের অন্যান্য প্রান্তে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করাটা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে বিজেপির কাছে ৷ এই কারণেই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির প্রভাব বাড়ানোটা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে ৷ বুথ ফেরত সমীক্ষা ইঙ্গিত দিচ্ছে, বিজেপির এই পরিশ্রম বৃথা যাবে না ৷ ইঙ্গিত রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের ভোট গুলিও বিজেপির তরফেই যাবে ৷ আর যার ফলে বিজেপি আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
এখানে উল্লেখযোগ্য পশ্চিমবঙ্গে জাতির ভিত্তিতে ভোট হয় না ৷ বরং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের নানা প্রকল্প যা নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও সংখ্যালঘু সম্প্রদ্বায়কে প্রভাবিত করে, তাই প্রভাবই পড়ে নির্বাচনে ৷ এমনকী, এই প্রকল্পগুলিই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনের লড়াইয়ে তুরুপের তাস ৷
সত্যিই কি বাংলায় বামফ্রন্টের ভোট বিজেপির দিকে গিয়েছে?
রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, এবারের লোকসভায় বামফ্রন্টের ভোট নাকি বিজেপির দিকে গিয়েছে ! এর নেপথ্যে নাকি রয়েছে বামফ্রন্টের নতুন রাজনৈতিক নীতি ৷ বাংলায় মোট রয়েছে ৪২ টি আসন ৷ বামফ্রন্ট এর মধ্যে শুধুমাত্র ২২টি আসনেই নজর দিয়েছিল ৷ বাকি ২০ টিতে নিজেদের প্রার্থী দেয়নি বামফ্রন্ট ৷ এই সব আসনেই বিজেপির নিজেদের ফায়দা তুলতে সমর্থ হবে ৷ এতকিছুর পরেও বামফ্রন্টের ঝুলিতে আসতে পারে ভোট ৷ তবে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বামফ্রন্টের দুর্বল অবস্থার মূল কারণ হল উপযুক্ত পার্টি ফান্ড না থাকা ৷ বামফ্রন্ট সম্প্রতি কৃষকদের নিয়েও জনসভা, মিছিল করেছিল ৷ যা কিনা প্রভাব ফেলেছিল দক্ষিণবঙ্গে ৷ শুধু তাই নয়, বামের এই পদক্ষেপে এগিয়ে এসেছিল নব প্রজন্মও।
উত্তরপ্রদেশের সমীকরণ
এবারের লোকসভা নির্বাচনকে সত্যিই রোমাঞ্চকর করে তুলেছিল সপা-বসপার জোট ৷ করানা, ফুলপুর ও গোরখপুরের পর এই জোটের ম্যাজিক সম্পর্কে একটি ধারণা আগেই ছিল ৷ তবে লোকসভা নির্বাচনে এই জোটের বিস্তারকে আরও বাড়িয়ে তুলতে ভোট প্রচারে কোনওরকম আপসে যায়নি এই জোট ৷ এক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়াও শক্তিশালী ভূমিকা নিয়েছিল ৷ বিজেপি আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিল উত্তরপ্রদেশে ৫০ শতাংশের ভোট না পেলে সপা-বাসপার জোটের এগিয়ে যাওয়াটা আটকানো যাবে না ৷ এই কারণেই উত্তরপ্রদেশে প্রত্যেকটি আসনের ফলাফল ঘোষণাই হয়ে উঠবে রোমাঞ্চকর ৷ রাজনৈতিক মহল মনে করছে উত্তরপ্রদেশের প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি আসনে হার-জিতের ব্যবধান অনেকটাই থাকবে কম ৷ আর এই কারণেই বুথ ফেরত সমীক্ষায় উত্তরপ্রদেশের ফলাফল নিয়ে এতটাই জটিলতা ৷
ডিএমকে-র উত্থান
তামিলনাড়ুর অঙ্কটা বুথ ফেরত সমীক্ষার ক্ষেত্রে অনেকটাই পরিষ্কার ৷ মোটামুটি সবাই প্রায় নিশ্চিত যে এআইএডিএমকে-কে ভোটের ফল একহাত নেবে ডিএমকে ৷ এটা নিশ্চয়ই কংগ্রেসের পক্ষে বেশ সুখকর খবর ৷ কেননা, ডিএমকের স্ট্যালিন এখনও অবধি কংগ্রেসের জোরদার সঙ্গী ৷ এখানে উল্লেখযোগ্য, এই সেই রাজ্য, যেখান থেকে এআইএডিএমকের ৩৬ টি পূর্বে বিজেপি সরকারের কাছে ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷ তাই এই রাজ্যের ফলাফল সরকার তৈরির অঙ্ককে যথেষ্টভাবে প্রভাবিত করবে ৷
.