লড়াই করে হারলো বাংলাদেশ

Reading Time: 3 minutes

মুশফিকুর রহিম অপরাজিত সেঞ্চুরি (১০২) রান করেও দলকে বাঁচাতে পারেননি হার থেকে। বিশ্বকাপের ২৫তম ম্যাচে বাংলাদেশকে ৪৮ রানে পরাজিত করেছে অস্ট্রেলিয়া। এই হারে বাংলাদেশের সামনে সেমিফাইনালের স্বপ্ন অনেকটা ঝাপসা হয়ে গেলো। জয় ছাড়া বিকল্পহীন ম্যাচে বাংলাদেশী বোলারদের খরুচে বোলিংয়ে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশকে ৩৮২ রানের পহাড়সম লক্ষ্য দেয় অজিরা। ব্যাট হাতে ডেভিড ওয়ার্নরের (১৬৬) ও ওসমান খাজার (৮৯) রানের ওপর ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৮১ রান সংগ্রহ করে অস্ট্রেলিয়া ব্যাটসম্যানরা।

৩৮১ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩৩৩ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। দলের হয়ে মুশফিকুর রহিমের অপরাজিত (১০২), মাহমুদুল্লাহর (৬৯) ও তামিম ইকবাল (৬২) রান করেন।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামার আগে হাতে চারটি ম্যাচ টাইগারদের। সেমিফাইনালে উঠতে হলে সবগুলো ম্যাচেই ভালো ফল বয়ে আনতে বাংলাদেশ দলকে। এমন চ্যালেঞ্জ নিয়ে ক্যাঙ্গারুদের বিপক্ষে মাঠে নামে বাংলাদেশ। ভালো কিছু করতে পারলে সেমিফাইনালের আশা আরো তীব্রভাবে জাগবে। আর হারলে সমীকরণটা আরো কঠিন হবে। এমন হিসেব-নিকেশ নিয়ে নটিংহ্যাম ট্রেন্ট ব্রিজে বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেনে অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ।

আগে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও অ্যারন ফিঞ্চ ‍মিলে দুর্দান্ত শুরু করে অজিরা। ২০.৫ ওভারে ১২১ রান আসে দুজনের ওপেনিং জুটি থেকে। উইকেট তুল নিতে দলের নিয়মিত সব বোলিং অস্ত্র ব্যাবহার করে যখন ব্যর্থ প্রচেষ্টা টাইগার অধিনায়কের। তখনই আস্থা রাখলেন্ পার্ট টাইম পেস বোলার সৌম্য সরকারের ওপর। কাপ্তানের আস্থার দাম দিতে দেরীও করেননি সৌম্য। ইনিংসের ২১তম ও নিজের প্রথম ওবারের পঞ্ম বলে ৫৩ রান করা অ্যারন ফিঞ্চকে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে রুবেলের ক্যাচের ফাঁদে ফেলে ফেরান সৌম্য। অন্যদিকে আরেক ওপেনার ওয়ার্নার দেখে-শুনে খেলে ১১৩ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১৫তম সেঞ্চুরি। ফিঞ্চের আউটের পর পরবর্তী উইকেট নেয়ার জন্য বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২৩.১ ও্ভার। খাজা-ওয়ার্নার মিলে ১২৪ বলে তোলেন ১৫০ রান তোলেন। সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন ওয়ার্নার। সেঞ্চুরি হাঁকানোর পর পরবর্তী পঞাশ রান ছুঁতে ব্যবহার করেন ২৬ বল। শেষ পর্যন্ত ১৪৭ বলে ১৪ চার ও ৫ ছয়ে ১৬৬ রান করে সৌম্যর দ্বিতীয় শিকার হয়ে রুবেলের তালুবন্দী হয়ে ফেরেন ওয়ার্নার। ওয়ার্নারের ঝড় থামানোর পর, মাঠে নেমে ফের ঝড় তোলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ১০ বলে করেন ৩ ছক্কা ও দুই চারে ৩২ রান করে রান আউটের শিকার হন ম্যাক্সি। ৭২ বলে ৮৯ রান করে ওসমান খাজাও ফেরেন সৌম্যর তৃতীয় শিকার হয়ে। এরপর শেষদিকে মার্কোস স্টয়নিসের ১১ বলে ১৭ ও অ্যালেক্স কেরির অপরাজিত ৮ রানের সুবাধে ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৮১ রান সংগ্রহ করে অস্ট্রেলিয়া।

তবে ৪৯ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ে বৃষ্টি হানা দেয়। কিছু সময় খেলা বন্ধ থাকে। বৃষ্টি বন্ধ হলে বাকি এক ওভারের খেলাও মাঠে গড়ায়।

বাংলাদেশী বোলারদের মধ্যে সৌম্য সরকার ৩টি ও মোস্তফিজুর রহমান একটি উইকেট শিকার করেন।

৩৮২ রানের পহাড়সম লক্ষ্য পাড়ি দিতে নেমে শুরুতেই ভুল বুঝাবুঝিতে ৮ বলে ১০ রান করে অ্যারন ফিঞ্চের থ্রোতে রানআউট হয়ে দলীয় ২৩ রানের মাথায় ফিরে যান বাংলাদেশ দলের ওপেনার সৌম্য সরকার।ওয়ানডাউনে ব্যাট করতে নামেন বিশ্বকাপে এই আসরে আলো ছড়ানো ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান।তামিম-সাকিব মিলে দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার পথে থাকলেও স্টয়নিসের স্লো বলে মিড শট খলতে গিয়ে ওয়ার্নারের তালুবন্দী হয়ে ৪১ রান করে ফিরে যান সাকিব। দুজনের জুটি থেকে আসে ৭৯ রান।দেখে শুনে খেলে ৬৫ বলে ফিফটি তুলে নেন তামিম। অর্ধশতকের পর মাঠে বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি তিনিও। দলীয় ১৪৪ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৬২ রান করে মিচেল স্টার্কের দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ফেরেন তামিম। ৫ নাম্বারে ব্যাট করতে নামেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অপরাজিত (৯৪) রান করা লিটন দাস। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে লিটনও হন ব্যর্থ। ১৭ বলে ২০ রান করে অ্যাডাম জাম্পার শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। শুরু চার ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে অনেকটাই জয় থেকে দল পড়ে। এবার চাপে পড়া টাইগার দলের হাল ধারার জন্য ব্যাট ধরেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দুজনে শুরুতে একটু দেখে-শুনে বল প্রতি রান তোলার চেষ্টা করলেও, শেষদিকে প্রতি বলে টাইগারদের প্রয়োজন দাঁড়ায় দুই রান করে। রানের বোঝা মাথায় নিয়ে দলকে দ্রত রান তুলে বোঝার চাপ কমাতে মুশি-মাহমুদুল্লাহ ফুল শট খেলা শুরু করেন। ৫০ বলে ৩ ছয় ও ৫ চারে ৬৯ রান করে মাহমুদুল্লাহ আউট হন ৩০২ রানের মাথায়। তখন দলের প্ররেয়াজন ৪ ওভার ৩ বলে ৮০ রান। এমন মুহূর্তে সাব্বির রহমান ব্যাট করতে নেমে শূন্য রানে ফিরে যান! তখন শুধু অজিদের জয় উদযাপনের বাকি থাকলো অপেক্ষায়। মিরাজ আউট হন ৬ রানে। অন্যপ্রান্তে একা লড়াই করে ৯৫ বলে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিক। শেষ পর্যন্ত ৯ চার ও এক ছয়ে ১০২ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। মাশরাফি করেন অপরাজিত ৬ রান। লড়াই করেও হেরেছে বাংলাদেশ। তবে বোলারদের ব্যর্থতার দায় এই ম্যাচে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

অস্ট্রেলিয় বোলারদের মধ্যে মিচেল স্টার্ক, মার্কাস স্টয়নিস ও নাথান কোল্টার নাইল ২টি করে এবং অ্যাডাম জাম্পা একটি করে উইকেট শিকার করেন।

১৪৭ বলে ১৬৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন অজি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>