মৃণাল বসু চৌধুরীর কবিতাগুচ্ছ
আজ ১৩ জানুয়ারী কবি মৃণাল বসু চৌধুরীর শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার কবিকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
মেঘের উড়ানে
জলের সন্ত্রাস
প্রেম নয়
প্রেমের কবিতা লিখে যে যুবক
আলৌকিক আনন্দ খুঁজছে
তাঁকে পরজীবী শরীরী উত্তাপ নয়
সকালের কাশবন
জ্যোৎস্নার সমুদ্র দেখাও
দাও কালিমাখা শীতের ঝিনুক
বিষণ্ন তিতির
ক্রমশ ধুসর কিছু মধুমাস
অবগাহনের আগে
তাকে দাও
প্রতিবাদী জলের সন্ত্রাস
ফুলরেণু
উদ্ধত ভ্রমর
প্রেম নয়
অমরাবতীর লোভে
যে যুবক
সারাগায়ে কবিতা মেখেছে
তাকে দাও
প্রতীকী বিরহ
দাও শিল্পময় অলীক সাম্পান
চোখ বুজলেই দহনবেলা
চোখ বুজলেই
তোমার ছবি রঙিন আঁচল
হাওয়ার কাছে নতজানু
একলা শালিক
চোখ বুজলেই
ফুলের আড়াল
বৃষ্টিজলে
একলা শামুক
চোখ বুজলেই
বকুল কুঁড়ি
অস্থিরতা
পাহাড়চুড়ো
চোখ বুজলেই
দহন বেলা
ঘোড়ার গাড়ি
আমের আচার
দুধের বাটি
চোখ বুজলেই
মিষ্টি দুপুর
উদাসী মেঘ
ইচ্ছেমোড়া শীতলপাটিপ্রতিবাদী
আত্মকথা আর আত্মপ্রকাশের মাঝখানে
পড়ে থাকা জমিটা তোমাদের চেনা নয়
সালিশিসভার লোকগুলোকেও চেনো না তেমন
তাই মেয়েটির আত্মকথা শোনার আগেই
তাকে নগ্ন করা হলে তোমরা কোনো প্রশ্ন তুললে না
শাস্তির বিধান নিয়ে
তর্কাতর্কি শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে
তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল
কিছু কামুক সন্ন্যাসী
তোমরা কেউই মেয়েটাকে বাঁচাতে গেলে না
তখনই যখন গ্রামের মোড়ল
গ্রাম
গণতন্ত্র
নির্ভুল বিচার নিয়ে
বলে চলেছেন
তোমরা সবাই চুপ
অথচ তোমরা নাকি একদিন সকলেই
প্রতিবাদী ছিলে
এসো তোমরাও এসো
সেতুটি পুড়িয়ে যারা
অলীক উত্তাপ নিয়ে
আগুনের কাছাকাছি আছ
ছদ্মবেশী পথের বিভ্রমে
ভুল মানচিত্র থেকে
রঙিন মুকুট নিয়ে
নিজেদের বিজয়ী ভেবেছ
স্নিগ্ধ স্বরলিপি নয়
শীতঘুমে শুয়ে থাকা
কিশোরীর কণ্ঠনালী থেকে
যারা কেড়ে নাও মুগ্ধ উচ্চারণ
অদৃশ্য সুতোর টানে
লোভ ও ঈর্ষায় যারা
নদীমুখ ঘোরাতে চেয়েছো
যারা শর্তহীন পারাপারে বিশ্বাস কর না
এসো
তোমরাও এসো
উন্মত্ত দক্ষিণ ঝড়ে
সেতুপোড়া ছাই উড়ে
তোমাদের অন্ধ করে গেলে
ফিরে এসো জোয়ারে ভাটায়
এতদিন
আগুনের উত্তাপ জেনেছো
এবার শরীরে মাখো
উষ্ণতার রঙ
সাত-পাঁচ একটা ভুল রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ভুল প্রাসাদের সামনে দাঁড়াতেই বেরিয়ে এল কয়েকজন শব্দহীন অস্থির মানুষ বাড়ির পেছনে নদীটার কথা জানতে চাইলে তারা হাসল পাহাড়েও ওপারে মন্দিরের কথাতেও তাদের হাসি শুধু রাজা আর অনাথ আশ্রম নিয়ে প্রশ্ন করতেই চোখমুখ কেমন বিষণ্ণ এই ভুল রাজার দেশ থেকে ফিরে যাবার জন্যে পা বাড়াতেই বর্ণময় এক সাপিনীর ফণা এরপর ‘ ভুল ’ শব্দটিকে নিয়ে কোনোদিন সাতপাঁচ কিছুই ভাবি নি কবিতার খাতা কিছু অভিজ্ঞান কিছু অলস স্বীকৃতি স্পষ্ট করে যাবতীয় অস্পষ্ট দহন আজন্ম ইপ্সিত স্বপ্ন দেয় কিছু আচ্ছন্ন অসুখ অভিমানী যে দূরত্ব সর্বদা চেয়েছো যে দূরত্বে পাহাড় পেরিয়ে যায় চাঁদ তেমন দূরত্ব থেকে মেঘরঙা আকাশের দিকে ভীষণ কুণ্ঠায় আমি বাড়িয়েছি হাত রেশমি কাপড়ে ঢাকা সুঠাম শরীর নয় নয় লাবণ্যবিমুখ কোনো উদ্ধত চোয়াল দাও কিছু মন্ত্রগুপ্তি চাঁদের আড়ালে রাখা প্রেমহীন কবিতার খাতা