| 19 এপ্রিল 2024
Categories
প্রবন্ধ লোকসংস্কৃতি সাহিত্য

লোক সাহিত্য ও মৈমনসিংহ গীতিকা

আনুমানিক পঠনকাল: 10 মিনিট

 

 

 

ময়মনসিংহ জেলার অদূরেই নেত্রকোণা, গারো পাহাড় আর হাওড় ঘেরা তার একটি ছোট্ট গ্রাম হেলোচিয়া, বাড়ির সামনে দিয়ে চলে গেছে মেঠো পথ। যত দূর চোখ যায় সবুজে ঘেরা জমি আর জমি, পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নদী, এ গল্প আমরা শুনেছি বেদান্তের দাদুর মুখেই। তখনো অবিভক্ত ভারত।

‘গ্রামের সব সম্পত্তি বিনিময় করে চলে এলাম আসাম, বেদান্তের বাবা গারো পাহাড় ডিঙ্গাতে গিয়ে পা ভাঙলো, তাকে সামলে বিশাল পরিবার নিয়ে কোন রকমে নওগাঁয়ের  শিয়ালমারিতে এসে পৌঁছালাম, পড়ে রইলো স্মৃতি মায়া আর টান, স্বপ্ন ছেঁড়া চোখ সইতে শিখছে সবে।

‘নয়া বাড়ি লইয়ারে বাইদ্যা লাগাইল বাইঙ্গন। সেই বাইঙ্গন তুলতে কইন্যা জুড়িল কান্দন।’ আমার দশাও এমন। নতুন জায়গা নতুন বাড়ি আমিও বাড়ির সামনে বেগুন চাষ করলাম। এভাবেই চলছিলো দিন, সপ্তাহ, বছর, কালো মেঘ উড়ে এলো আসাম জুড়ে শুরু হলো বাঙালি খেদাও আন্দোলন, আবার ছাড়তে হলো বসত। আসাম ছেড়ে চলে এলাম কোচবিহার।’

বেদান্তের দাদু ছোট্টবেলায় আমাদের তার জীবনের এইসব গল্প শোনাতো, আমরা বিমুগ্ধ শ্রোতা গল্প গিলতাম। তখন থেকেই মূলত ময়মনসিংহের সাথে আমাদের চেনা জানা। আমাদের সাথেই বড় হয় ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা।

সময় নিরন্তর হাঁটে তার পায়ে ধুলো ওড়ে না। একটি সেমিনারে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছি অসম। মঞ্চে বাংলা লোকসাহিত্য নিয়ে কথা বলছে অধ্যাপক নবারুণ বসু। বয়স কম কিন্তু বলার ধরন, জানার ব্যাপ্তি সারা ঘরময় মুগ্ধতা ছড়িয়েছে আমিও ডুবে যাই তার কথার জাদুতে। ঘর ময় প্রতিধ্বনিত হচ্ছে তার বলা প্রতিটি শব্দ-

লোক-সাহিত্যের সংজ্ঞা বলতে গিয়ে একটি বিষয়ের উপর কেউ কেউ অতিরিক্ত জোর দেন। লোক-সাহিত্যের সংজ্ঞা বলতে গিয়ে কেউ কেউ সাধারণভাবে বলেছেন ‘unwritten literature of any group, whether having writing or being without it.’ -M.J Herskovits SDFML p.400  অর্থাৎ এটা কোন সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর অলিখিত সাহিত্য—এই সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর মধ্যে লেখার ব্যবহার প্রচলিত থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে। এই সংজ্ঞানুযায়ী অলিখিত সাহিত্য মাত্রই লোক-সাহিত্য। ইংরেজিতে এটাকেই oral literature বলা হয়। 

এই সম্পর্কে আরও একজন সমালোচক আরও একটু সামান্য বিস্তৃতভাবে বলেছেন যে, ‘embraces those literary and intellectual phases of culture which are perpetuated primarily by oral tradition: myths, tales, folk-song, and other forms of oral’ traditional literature.’ – G. Hersog, ibid. অর্থাৎ জাতীয় সংস্কৃতির যে সকল সাহিত্যিক ও মননশীল সৃষ্টি মুখ্যতঃ মৌখিক ধারা অনুসরণ করে এগিয়ে যায়, সেটাই লোক-সাহিত্য। যেমন গীতিকা, কথা, সঙ্গীত ইত্যাদি।

লোকসাহিত্যের এই সংজ্ঞাই যদি গ্রহণ-যোগ্য বলে মনে হয়, তবে এই সম্পর্কে স্বভাবতঃই একটি কথা মনে হতে পারে যে, ষেভাবেই তার উদ্ভব হউক না কেন, সমাজের মধ্যে তা যেভাবে প্রচার লাভ করে, সেভাবেই যদি তাকে লেখা যায়, তবে তার লোক বৈশিষ্ট্য (folk-characteristic) বিনষ্ট হয়ে যায় না।

লোক-সাহিত্যের সংজ্ঞা সম্পর্কে এ পর্যন্ত যে আলোচনা করলাম, তা থেকে নিশ্চয়ই এই কথাটি স্পষ্ট হয় যে, লোক-সাহিত্য কেউ লিখে রচনা করতে পারেনা; যখন তার উদ্ভব হয়, তখন তা মুখে মুখেই রচিত হয় এবং প্রথম অবস্থায় সেটা মুখে মুখেই প্রচারিত হয়। কিন্তু বহু সমাজেই যখন লেখার এখন ব্যাপক প্রচার হয়েছে, তখন তা লিখে নেবার পথও বন্ধ করা যায় না। প্রকৃত পক্ষে পূর্ববর্তী সময়ে সমাজ যখন সম্পূর্ণ নিরক্ষর ছিল, তখন সকল দেশেই স্মৃতিশক্তির যে রকম অনুশীলন হতো, আজ আর কোথাও তেমন হয় না। সেইজন্যই একদিন যা স্মৃতির উপর নির্ভর করে চলেছে এসেছে, আজ তা লিখিত হয়ে সমাজের স্মৃতির ভার দূর করছে। লোক-সাহিত্যের উপরোক্ত সংজ্ঞা স্বীকার করে নিলে  এই অবস্থার মুখোমুখি হতে হয় অর্থাৎ লিখিত হলে এটার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য লুপ্ত হয়ে যাবে কি না, তা আলোচনা করে দেখা প্রয়োজন।

নবারুণ বসু বক্তব্য শেষ করতেই করতালিতে ফেটে পড়ল গোটাঘর।

অনুষ্ঠান শেষ করে এসে দাঁড়িয়েছি। গবেষক সুচিরা রায় কথা বলছেন, নবারুণ বাবু একজন পাশ্চাত্য সমালোচক বলেছেন যে, এটা লিখিত হলে আপত্তি নেই, কিন্তু তা অভিজ্ঞ বা বিশেষ ভাবে শিক্ষিত গবেষক (“trained investigators’) দ্বারা লেখা (“committed to writing’) হতে হবে। অনভিজ্ঞ বা অসতর্ক লেখক দ্বারা লেখা হলে তা বিকৃত হবার আশঙ্কা আছে। কিন্তু এখানে একটি কথা উল্লেখ করা যায়। বহিরাগত কোন গবেষক যদি স্বতন্ত্র কোন জাতির লোকসাহিত্য সংগ্ৰহ করতে চান, তবে তাহা সংগ্ৰহ করবার যে বিশেষ শিক্ষা তার প্রয়োজন, কেউ যদি নিজস্ব লোক-সাহিত্য সংগ্ৰহ করতে চান, তবে তার সেই বিশেষ শিক্ষার প্রয়োজন নাও হতে পারে। আমাকে দেখে এগিয়ে এলো সুচিরা রায়।পেছনে নবারুন বসু।

কি নিয়ে কথা হচ্ছে?

নবারুন উত্তর দিলো, লোকসাহিত্য নিয়েই কথা হচ্ছিলো। দাদা, একটা প্রশ্ন ছিলো। আপনাকে দেখার পরই করবো ভেবেছি।

-হ্যাঁ নিশ্চয়, কি প্রশ্ন?

-বাংলা সাহিত্যে লোকসাহিত্যের প্রভাব কতটুকু মনে করেন?

বাংলা সাহিত্যের শেকড় প্রথিত রয়েছে বাংলার লোকসাহিত্যে। বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যে বাংলার লোকসাহিত্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এবং এখনো রাখছে। যদিও এর সৃষ্টি হয়েছে তথাকথিত অশিক্ষিত মানুষদের দ্বারা এবং প্রসার ঘটেছে মৌখিকভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। তবুও এই লোকসাহিত্য বাংলা সাহিত্যকে করেছে সমৃদ্ধ, দান করেছে ব্যাপ্তি। লোকসাহিত্যের মাধ্যমে প্রকাশ ঘটেছে গ্রামবাংলার মানুষের ভালবাসা, আবেগ, অনুভূতি ও চিন্তা-চেতনার। লোকসাহিত্যের মাধ্যমেই প্রকাশিত হয় গ্রামবাংলার মানুষের জীবন দর্শন। বাংলার লোকসাহিত্যের পরিধি অনেক বিস্তৃত, এর শাখা-প্রশাখা অগণিত। বাংলার লোকসাহিত্যের মধ্যে রয়েছে লোকগান, ছড়া, যাত্রা, প্রবাদ, লোকগল্প ইত্যাদি। তবে বাংলার একেক স্থানের লোকসাহিত্যের ধারা একেক রকম। কোনোটার সাথে কোনোটার যে একেবারেই মিল নেই, তা নয়। তবে প্রত্যেক অঞ্চলের লোকসাহিত্যের রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্ট। কখনো গ্রামীণ সমাজের পালা-পার্বণ হয়েছে এসব সাহিত্যের মূল বিষয়, আবার কখনো আর্থসামাজিক আবহ প্রভাবিত করেছে বাংলার লোকসাহিত্যকে। এক কথায় বলা যায়, বাংলার লোকসাহিত্য ছিল গ্রামীণ জীবনের আয়না। গ্রামীণ সমাজের সুখ-দুঃখের কাহিনীই বর্ণিত হয়েছে বাংলার লোকসাহিত্যে। 

-আমি শুনেছি আপনার পূর্বপুরুষের ভিটে ময়মনসিংহে? সুচিরা রায়ের প্রশ্ন।

-না, একদমই না। তবে আমার এক বন্ধুর পূর্বপুরুষ ছিলেন ময়মনসিংহ জেলার নেত্রকোণা বাসী। সেই বন্ধুর দাদুকে আমরা পেয়েছিলাম আমার ও আমাদের শৈশবে। নেত্রকোণা এখন জেলা হলেও তখন জেলা ছিলো না। সেই দাদুর কাছে লোক গল্প শুনেছি অনেক ছোটবেলায় তখন যেমন গল্পের প্রেমে পড়েছি তেমনি জায়গারও। দাদু গত হলেন কিন্তু সেইসব গল্প ও জেলা প্রীতি আমার গেলো না।

 

তিনজনের আড্ডায় জটলা বেড়েছে। কথা বলতে বলতে খেয়াল করিনি ইয়াং একজন সাংবাদিক তার মোবাইলে আমার কথা রেকর্ড করছে।

স্যার আমি একটা ইন্টারভিউ করতে চাই আপনার।

-এখন?

-হ্যাঁ।

আমি কবজিতে বাঁধা ঘড়ির কাটায় চোখ রাখলাম।আজ তো সম্ভব না। আমার অন্য একটা জায়গায় যাবার আছে।

-কাল আসি তবে?

আগামীকাল সকালে আমি শিলঙ যাবো বলে ঠিক করেছি। অসম এসেছি কয়েকবার কিন্তু শিলং যাওয়া হয়নি কখনো।

-বেশ তো, তবে রাস্তায় যেতে যেতেই না হয় ইন্টারভিউটা নিয়ে নেবো। আপনারাও যদি কাল থাকেন খুব কৃতজ্ঞ থাকবো। নবারুণ বসু ও সুচিরা রায়কে অনুরোধটা করেই নিজের ভিজিটিং কার্ডটা আমার দিকে এগিয়ে দিলো ইয়ং সাংবাদিক। সুন্দর ডিজাইন করা কার্ডে জ্বলজ্বল করছে সুমেধা ভট্টাচার্য নামটি কার্ডের ঠিক মধ্যেখানে।

সুচিরা রায় ও নবারুণ বসুকেও রাজি করিয়ে ফেললো সুমেধা। সকালে অন্যদিনের চেয়ে আগেই ঘুম ভাঙলো। রেডি হয়ে বাইরে এসে দেখি হোটেলের লবিতে বসে সুমেধা, কানে হেডফোন, কপালে তুলে রাখা স্নানগ্লাস ডেনিম ব্লু শার্ট ও জিন্সের সাথে ম্যাচিং। বাঁহাতে রুদ্রাক্ষের মালা পেঁচানো, ডানহাতে বড় ডায়ালের চেইনের ঘড়ি। আমাদের যাত্রা শুরু হলো। টোল পেরোনোর আগে আমরা এদিক সেদিকের গল্প করছিলাম। টোল পেরিয়ে মেঘালয়ের পাহাড়ে চোখ আটকে যেতেই সুমেধার প্রশ্ন ভেসে এলো।

স্যার আমার প্রথম প্রশ্ন বাংলার লোকগীতি মৈমনসিংহ গীতিকা নিয়ে আপনি অনেক বছর ধরে কাজ করছেন। লোকগীতি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ময়মনসিংহ গীতিকাকেই বেছে নিলেন কেন?

বাংলার লোকগীতি বা গীতিকার ইতিহাস অনেক প্রাচীন ও সমৃদ্ধ। এগুলোর বিষয়বস্তুতে যেমন আছে বৈচিত্র্য, তেমনই বর্ণনা। কখনো প্রকৃতি আবার কখনো মানবীয় অনুভূতি— প্রেম-বিরহ, সুখ-দুঃখ, এমনকি গ্রাম বা সংসারের কলহ এসেছে বিষয়বস্তু হয়ে। তৎকালীন সামাজিক অবস্থা, ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন রূপকথা, উপকথা, যুদ্ধও রয়েছে এর মাঝে। এ রকম অনেক কিছুই ধরা আছে আমাদের গীতিকায় সরল ভাষায়, কখনো রূপক-উপমায়।

বিষয় যা-ই হোক, সে পালাগুলো গীত হয়েছে এক ছন্দময় পুঁথি পাঠে। কোনো এক বড় ঘরের দাওয়ায়, কখনো ধান কাটা মাঠে আসন্ন শীতের গা-শিউরানো বাতাসের চাঁদোয়ায়, চন্দ্রালোকে ভিজে অথবা হয়তো হ্যাজাক বাতির কিছুটা আলোতে আর বাকিটা আঁধারে ঢাকা কোনো রহস্যঘেরা রাতে। এসব গীতিকাব্যর মধ্যে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ -‘মৈমনসিংহ গীতিকা’। চন্দ্রকুমার দে, কেদারনাথ মজুমদার আর ড. দীনেশচন্দ্র সেনের অক্লান্ত সাধনার ফসল এ গীতিকা। তা শুধু বাঙালি নয়, সারা বিশ্বের সাহিত্য-গবেষকদের জন্য এক অমূল্য রত্নসম্ভার। দাদুর মুখে ছোটবেলায় যখন গল্প শুনেছি তখনও জানতাম না, সেসব গল্পের অনেক গল্প ছিলো মৈমনসিংহ গীতিকার অংশ। অনেকটা বড় হয়ে যখন বেদান্তের দাদুর ট্রাঙ্ক ঘেটে এক বৃষ্টিস্নাত দুপুরে পেলাম মৈমনসিংহ গীতিকা তখন আমরা কলেজে পড়ি, বন্ধুদের কেউই সে ভাষা বুঝতে পারছিলো না, বেদান্ত দু-চারটা বুঝতে পারছিলো, আমিও। যেমন ধর-

ভানুশ্বর = ভানুর ঈশ্বর। (ভানু-সূর্য)।

পশর = প্রসার (?) প্রকাশ, আলোক।

মালামের = পদচিহ্নের।

এন = চিহ্ন।

উরদিশে = উদ্দেশে।

বাড়ায় = হাত বাড়িয়ে (সেলাম করা)।

মমিন = বিদ্বান।

ইন্দু = হিন্দু।

কুনা = কোণা। ময়মনসিংহ প্রভৃতি কতকগুলি স্থানে ‘ও’ কারের বদলে ‘উ’ কার ব্যবহারের রীতি আছে, যেমন চোর = চুর ।

 

পির্‌থিমি = পৃথিবী।

বইন্ধ্যা = বন্দনা করে।

সুন্দর বন = সুন্দরবনের বাঘের দেবতা দক্ষিণরায়ের সঙ্গে গাজির যুদ্ধের কথা অনেক পুস্তকেই আছে। পুঁথির নাম ‘রায়-মঙ্গল’।

সুরুয = সূর্য।

আলাম-কালাম = ঈশ্বরের কথা । কুরাণ = কোরান ।

মিন্নতি = মিনতি।

সেই শুরু।

মৈমনসিংহ গীতিকার মধ্যে এক অমর প্রেমকাহিনী ‘মহুয়া’ পালা। এটি দৃশ্য কাব্য। আপনি কিভাবে দেখেন?

সব পালার মতো এর শুরুও বন্দনার মধ্য দিয়ে। সে সময়ের বাংলার হিন্দু-মুসলমান ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সংস্কৃতির চমৎকার সহাবস্থানের নিদর্শন বন্দনা।

পূবেতে বন্দনা করলাম পূবের ভানুশ্বর ।

এক দিকে উদয়রে ভানু চৌদিকে পশর ।।

দক্ষিণে বন্দনা গো করলাম ক্ষীর নদী সাগর ।

যেখানে বানিজ্‌জি করে চান্দ সদাগর ।।

উত্তরে বন্দনা গো করলাম কৈলাস পর্‌বত ।

যেখানে পড়িয়া গো আছে আলীর মালামের পাথ্‌থর ।।

পশ্চিমে বন্দনা গো করলাম মক্কা এন স্থান ।

উরদিশে বাড়ায় ছেলাম মমিন মুসলমান ।।

সভা কইর‌্যা বইছ ভাইরে ইন্দু মুসলমান ।

সভার চরণে আমি জানাইলাম ছেলাম ।।

চাইর কুনা পির্‌থিমি গো বইন্ধ্যা মন করলাম স্থির ।

সুন্দর বন মুকামে বন্দলাম গাজী জিন্দাপীর ।।

আসমানে জমিনে বন্দলাম চান্দে আর সুরুয ।

আলাম-কালাম বন্দুম কিতাব আর কুরাণ ।।

কিবা গান গাইবাম আমি বন্দনা করলাম ইতি ।

উস্তাদের চরণ বন্দলাম করিয়া মিন্নতি ।।

 

এর পরই উঠে আসে মূল কাহিনী মহুয়া।

ইউরোপের কালজয়ী রোমান্স কাহিনীর সাথে এর মিল পাওয়া যায়,কি যেন নাম,মনে করতে পারছি না।

নবারুন বসু চুপচাপ শুনছিলো, সুমেধা কে নামটা মনে করিয়ে দিলো পাশ থেকে, ‘ট্রিস্টান অ্যান্ড ইসল্ড’। সুচিরা রায় যোগ করলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সোনালী দুঃখ ও তো মহুয়ারই ছায়া।

-হ্যাঁ, অনেক ইউরোপীয় পণ্ডিত মনে করেন, প্রায় ৪০০ বছর আগের আমাদের মহুয়া পালার সঙ্গে দ্বাদশ শতাব্দীর ইউরোপের কালজয়ী রোমান্স  ‘ট্রিস্টান অ্যান্ড ইসল্ড’ কাহিনীর বিস্ময়কর সাদৃশ্য আছে। এ কাহিনী বিভিন্ন ভাষা ও নামে অনূদিত হয়েছে (সুনীলের রচনায় ‘সোনালী দুঃখ’) বিভিন্ন সময়। চলচ্চিত্র নির্মাণও হয় এ গল্প নিয়ে। অজেয় প্রেমকথা ‘ট্রিস্টান অ্যান্ড ইসল্ড’-এর বাংলা সংস্করণ যেন ‘মহুয়া’!

আমরা জানি,কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক  দীনেশ চন্দ্র সেন বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার স্থানীয় সংগ্রাহকদের সহযোগীতায় স্থানীয় প্রচলিত পালাগানগুলো সংগ্রহ করে ১৯২৩ সনে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন মৈমনসিংহ গীতিকা। এর রচনাকার কে? কবে নাগাদ এর রচনা হয়েছিলো?

ধারনা করা হয় ১৬৫০ সালের দিকে মৈমনসিংহ গীতিকা রচনা হয়,রচনা করেন দ্বিজ কানাই।

একটি ধাবার সামনে আমাদের গাড়ী থামলো। চায়ের অর্ডার করে আমরা দাঁড়িয়েছি ধাবার বাইরে।সুচিরা রায় প্রশ্নটা তুললেন। মৈমনসিংহ গীতিকাতে মুসলমান গীতিকবিরও রচনা যুক্ত হয়েছে, আপনি তা কিভাবে দেখেন?

গীতিকার বন্দনাগীতির ১৬ ছত্রই তো মুসলমান গীতিকবির রচনা। ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’য় মুসলিম ভাবনার স্বীকৃতি খোদ ড. দীনেশ চন্দ্র সেন দিয়েছেন ‘তাহারা সিংহবিক্রমে সিংহাসন দখল করিয়া লইয়াছে…।’—এ উক্তির মধ্যেই প্রমাণিত হয়। বাংলার সাহিত্য, শাসন অথবা স্থাপত্য আর সৃষ্টিনৈপুণ্যে মুসলমানদের অবস্থান সব সময়ই গর্বিত। তাই বাংলার মুসলমানদের মধ্যে বাঙালিয়ানা, বাউল ভাবনা, ধর্মীয় সংস্কার ও স্বদেশ ভাবনা একাকার হয়ে গেছে আলাদা ও আপন যোগ্যতায়।অন্যদিকে ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’য় হিন্দু-মুসলিম সহাবস্থানের অন্য রকম চেতনা পাওয়া যায়। বাংলা ভাষার সৌন্দর্য, সমৃদ্ধি ও সম্প্রসারণে হিন্দু-মুসলমান বিভাজন যে সত্য নয়, তার প্রমাণ আমাদের পুঁথি, যাত্রা, কথক-কাব্য, লোকগাথা-গীতিকা ও পালা সাহিত্য। ড. দীনেশচন্দ্র তাঁর মূল্যায়নে ভাষার ক্ষেত্রে হিন্দু-মুসলমান উদারতার সন্ধান দিয়েছেন ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’য় আমরা বাঙালা ভাষার স্বরূপটি পাইতেছি। বহু শতাব্দীকাল পাশাপাশি বাস করার ফলে হিন্দু ও মুসলমানের ভাষা এক সাধারণ সম্পত্তি হইয়া দাঁড়াইয়াছে। ইহা সব বঙ্গবাসীর ভাষা। এ ক্ষেত্রে জাতিভেদ নাই। এই ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’য় উর্দু উপাদান ততটা ঢুকিয়াছে, যতটা প্রকৃতপক্ষে এ দেশে আসিয়া বাঙালা হইয়া গিয়াছে। এই গীতি সাহিত্য হিন্দু-মুসলমান উভয়ের, এখানে পণ্ডিতগণের রক্তচক্ষে শাসাইবার কিছু নাই…।’   এ যেন রাবীন্দ্রিক চেতনার অনুরণন—‘পশ্চিম আজি খুলিয়াছে দ্বার সেথা হতে সবে আনে উপহার/দেবে আর নিবে, মিলিবে মেলাবে—যাবে না ফিরে…।’

আমাদের গাড়ী আবার ছুটছে, শিলং আমি আগে কখনো যাইনি। পাহাড়ের স্তব্ধতা ছিঁড়ে আমরা ছুটে চলছি, নবারুণ নীরবতা ভেঙ্গে বললেন, কাহিনীতে যে সব স্থানের উল্লেখ পাই সেসব স্থানের সত্যতা কি মেলে?

গীতিবর্ণিত ঘটনার স্থান নেত্রকোণার নিকটবর্ত্তী। খালিয়াজুরি থানার কাছে—রহমৎপুর থেকে ১৫ কি.মি উত্তরে “তলার হাওর” নামে বিস্তৃত ‘হাওর’-এর পূর্বে বামনকান্দি, বাইদার দীঘি, ঠাকুরবাড়ীর ভিটা, উলুয়াকান্দি ইত্যাদি স্থান এখন জনমানবশূন্য কেবল রাজকুমার ও মহুয়ার স্মৃতি বহন করছে। এখন সেখানে  কতগুলি ভিটার আদল পড়ে আছে। কিন্তু কাছের গ্রামগুলোতে এই প্রেমকাহিনী ও প্রেমিক যুগলকে নিয়ে অনেক কিংবদন্তী এখনও লোকের মুখে মুখে শোনা যায় । যে কাঞ্চনপুর হইতে “হোমরা” বেদে মহুয়াকে চুরি করে নিয়ে যায়—তা ধনু নদীর তীরে অবস্থিত ছিল ।সবগুলো জায়গার স্থানিক সত্যতা মেলে।

পুলিশ বাজারে যখন আমরা ঢুকলাম তখন ঘড়ির কাটায় দশটা। মেঘালয় যে আদতেই মেঘেদের বাড়ি, তা বেশ টের পেলাম আকাশের দিকে তাকিয়ে।

এই রাজ্যকে দ্বিধাহীন কবিদের অনুপ্রেরনার ও চিত্রকরদের ক্যানভাস বললে ভুল বলা হবে না।বেড়ানোর জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় জায়গা। মেঘালয় ছবির মত সুন্দর একটি রাজ্য। ২১ জানুয়ারী ১৯৭২ সালে রাজ্য হিসাবে ঘোষনা হয়।  ক্যালচার ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ, মেঘের সমাবেশ, জীবনের কিছু রঙ্গিন মুহুত্ব কাটানোর জন্য উপযুক্ত জায়গা। মেঘালয় সেভেন সিস্টার খ্যাত উত্তর পূর্ব অঞ্চলে অত্যতম একটি সুন্দর রাজ্য। মেঘালয় পাঁচটি প্রশাসনিক জেলায় ভাগ হয়েছে- জয়িন্তা পাহাড়, পূর্ব এবং পশ্চিম গারো পাহাড়, পূর্ব এবং পশ্চিম খাসি পাহাড়।শিলং ইংরেজী (Shillong), উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় রাজ্যেও পূর্ব খাসি পাহাড় জেলার একটি শহর ও পৌরসভা এলাকা। এটি মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী। শিলং বাংলাদেশ -ভারত সীমান্ত থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার উত্তরে এবং ভূটান-ভারত সীমান্তের প্রায় ১০০ কিমি দক্ষিণে অবস্থিত। এটি খাসি পাহাড়ে প্রায় ১৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত।এখানে রয়েছে পাইন অরণ্য, জলপ্রপাত এবং পার্বত্য জলধারার সমারোহ। এক সময় এটি ”প্রাচ্যেও স্কটল্যান্ড’’ নামে পরিচিত ছিল। ১৮৯৭ সালে এক ভূমিকম্পে শহরটি ধবংস হয়ে যায় এবং এরপর এটিকে পুনরায় গড়ে তোলা হয়।সুমেধার তথ্য সমৃদ্ধ কথা গুলো স্টুরিসগাইডের মতো বেশ কায়দা করে বলেছে। আমরা তিনজন ও গাড়ীর ড্রাইভার বেশ মনযোগ দিয়ে শুনছি। সুমেধা কে যত জানছি তত মুগ্ধ হচ্ছি। আশা জাগছে আগামী প্রজন্মের প্রতি। আমার মনের কথা যেন সুচিরা পড়ে ফেলে বললেন, সুমেধা তোমাকে দেখে কিন্তু বোঝা যায় না তুমি এত পড়ো। আমি তো এতদিন ভাবতাম এই প্রজন্ম ফেইসবুক, ওয়াটস এপ ছাড়া কিছু জানে না। কিন্তু তোমায় যত দেখছি সে ভুল ভাঙছে আমার। আমি শিলং প্রায়ই আসি সত্যি বলতে কি আমি এত তথ্য জানলাম আজই।ব্রেকফাস্ট শেষ করে কফিতে চুমুক দিতে দিতে নবারুণ ও বললেন, আমি অবাক হয়েছি মৈমনসিংহ গীতিকা নিয়ে ওর প্রশ্ন শুনে। কফি শেষ করে আমরা আবার গাড়িতে উঠে বসেছি। সুমেধা বললো এলিফেন্ট ফলস যেতে যেতে আমি ময়মনসিংহ গীতিকার মহুয়া কে জানতে চাই, সুচিরা বললেন ময়মনসিংহ এর আঞ্চলিক উচ্চারণ মৈমনসিংহ তাই মৈমনসিংহ গীতিকা।

তিনজনের জোড়াজুড়িতে গীতিকার গল্পটা আমাকেই শুরু করতে হলো-

ছয় মাসের পথের দূরত্বে গারো পাহাড়ের ওপর হিমানী পর্বত। এর উত্তরের সাগর পাড়ে— চান্দ সূরুয নাই আন্দারিতে ঘেরা গভীর বনে বাস করে ডাকাত সর্দার বেদে- হুমরা বাইদ্যা। ১৬ বছর আগে ধনু নদীর পাড়ের কাঞ্চনপুর গ্রামের এক ব্রাহ্মণের ছয় মাসের কন্যাকে চুরি করে আনে সে। তাকে লালন-পালন করে বড় করে, বিভিন্ন কসরত শেখায় আর খেলা দেখিয়ে বেড়ায়। সে কন্যার বয়স এখন ১৬। উপচে পড়া রূপ ‘আন্দাইর ঘরে থুইলে কন্যা জ্বলে কাঞ্চা সোনা’ নাম মহুয়া সুন্দরী।

যাযাবর জাতি তারা। একবার বামনকান্দা গ্রামের ব্রাহ্মণ নদ্যার চান ঠাকুরের (নদের চাঁদ ঠাকুর) বাড়িতে খেলা দেখাতে যায় বাপ-বেটি। খেলা, বিশেষ করে মহুয়ার কসরত দেখে সবাই মুগ্ধ। হুমরা বেদের অনুরোধে তাকে সদলবলে উলুইয়াকান্দা নামক স্থানে বসতের অনুমতি দেন রূপবান নদ্যার ঠাকুর।

‘নয়া বাড়ি লইয়ারে বাইদ্যা লাগাইল বাইঙ্গন। সেই বাইঙ্গন তুলতে কইন্যা জুড়িল কান্দন।’

এখানেই এক সন্ধ্যাবেলা জলের ঘাটে নদের চাঁদ ঠাকুরের সঙ্গে মহুয়ার মন দেয়া-নেয়া হয়। কিন্তু অসম অবস্থানের প্রেম নিয়ে হুমরা বাইদ্যার মনে জেগে ওঠে ভয় আর শঙ্কা। পরিস্থিতি এড়াতে সে গভীর রাতে মহুয়া আর দলবল নিয়ে পালিয়ে যায়। ওদিকে মহুয়ার বিরহে চাঁদ ঠাকুরের পাগলপ্রায় দশা। তীর্থের নামে সে বেরিয়ে পড়ে মহুয়ার খোঁজে। বহু দেশ ঘুরে অবশেষে সে দেখা পায় মহুয়ার, কংসাই নদীর পাড়ে।

হুমরা এবার মহুয়ার হাতে তুলে দেয় বিশলক্ষের ছুরি। ‘বইক্ষেতে হানিয়া ছুরি মারহ পরাণে।’ বাপের শপথের ওপর জিতে যায় মহুয়ার প্রেম। সে মারতে পারে না চাঁদকে। তারা পালিয়ে যায়। পথে খরস্রোতা পাহাড়ি নদী। পার হওয়ার জন্য তারা ওঠে সওদাগরের এক নায়ে। কিন্তু সেখানে আরেক বিপদ। মহুয়ার রূপে মুগ্ধ হয়ে সওদাগর চাঁদকে নদীতে ফেলে দেয়। উপায়ান্তর না দেখে মহুয়া সওদাগরের প্রস্তাবে রাজি হওয়ার ভান করে। তার কাছে থাকা পাহাড়ি তক্ষকের বিষ মিশিয়ে পান বানিয়ে খাওয়ায় ডিঙ্গার সবাইকে। সবাই অজ্ঞান হয়ে পড়লে পালিয়ে যায় সে। বাঘ-ভালুক, দেও-দানো, সাপখোপের ভয় না করে সে খুঁজে বের করে মৃতপ্রায় চাঁদকে। এক সন্ন্যাসীর সাহায্যে সে চাঁদকে সুস্থ করে তোলে। এদিকে সংসারত্যাগী সন্ন্যাসী মহুয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। ‘পায়ে ধরি মাগি কন্যা তোমার যইবন।’ সেখান থেকেও দুর্বল চাঁদকে কাঁধে নিয়ে মহুয়া পালায়। এভাবে কাটে ছয় মাস। তারা এখন বনেই পেতেছে সুখের সংসার। কিন্তু প্রেম যেখানে খরস্রোতা, ভাঙনও সেখানেই মারাত্মক। একদিন সে বনেই হাজির হয় যাযাবর হুমরা বেদের দল।

 

শিকারি কুকুরের সাহায্যে তারা খোঁজ পেয়ে যায় মহুয়ার। এবার সামনে দাঁড়িয়ে মহুয়ার হাতে বিষলক্ষার ছুরি তুলে দেয় হুমরা চাঁদকে মারার জন্য। অসহায় মহুয়া সে ছুরি নিজের বুকেই বসিয়ে দেয়, আর বেদের দল হত্যা করে চাঁদকে। অবশেষে দুজনের মিলন হয় একত্রে মাটিচাপা পড়ে

 

‘হুমরার আদেশে তারা কয়বর কাটীল।

একসঙ্গে দুইজনে মাটী চাপা দিল।’

বিরহের ভেতরেই মিলন ঘটল দুই হতভাগ্য প্রেমিক-প্রেমিকার। আর এভাবে শেষ হয় পালাটি।

সুচিরা রায় এলিফেন্ট ফলসের একদম নীচের ধাপে নামতে নামতে বললেন‘মহুয়া’ গীতিকার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য— পড়া শেষ হলে পাঠকের মনে করুণ সুর জেগে থাকে।

নবারুণ বসু আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, একটি প্রশ্ন ভাবাচ্ছে— চাঁদ-মহুয়ার পাতা বনের সংসার, পাতার কুটির তৈরি, পাখিদের সঙ্গে গান, কুকুর দিয়ে খুঁজে তাদের বের করা— অদ্ভুত মিল ইউরোপীয় ‘ট্রিস্টান ও ইসল্ড’-এর সঙ্গে। এ কীভাবে সম্ভব?

সুমেধা আমার পেছন থেকে উত্তর দিলো ময়মনসিংহের এক দরিদ্র পালাকার ব্রাহ্মণ দ্বিজ কানাই তার কুঁড়েঘরে বসে একদিন পড়েছে ভিন্ন ভাষার ট্রিস্টানের কাহিনী। এটা একেবারে অতি কল্পনা বিলাসীর শত কষ্ট কল্পনায়ও আসে না। তাহলে কি করে মিললো স্যার?

বিরহকাতর অমর সব প্রেমগাথাই এক দেশ থেকে অন্য দেশে বয়ে যায়, ভাষা পরিবর্তন করে, সময়ের পাখায় চড়ে? মাথায় জট লেগে যায় ঠিকই।কিন্তু আমার মনে হয় দানিকেন সাহেবকে জিজ্ঞেস করলে তিনিও হয়ত ঠিক বলে বসতেন, ‘ওরাই এসেছিল সুদূর থেকে, একই কথা লিখে গেছে, কালে কালে !’

 

 

তথ্য সূত্রঃ-

বাংলার লোক সাহিত্য  খন্ড-১,আশুতোষ ভট্টাচার্য

 মৈমনসিংহ গীতিকা,ডঃ দীনেশ চন্দ্র সেন

উইকিপিডিয়া ও সঙ্গীত কোষ

 

 

 কৃতজ্ঞতা: মায়াজম

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত