| 25 এপ্রিল 2024
Categories
গল্প সাহিত্য

চার নম্বর

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

১.
বারাসাতের রাখী পালের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই বালিগঞ্জ নিবাসী, রিটায়ার্ড সরকারি অফিসার পরেশ সান্যালের। কিন্তু তবু ওর খবর শুনতেই হবে তাঁকে! তিনি শুনতে না চাইলেও প্রায় কান ধরে টেনে শোনাবে চ্যানেলওয়ালারা! বারবার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাবে সেই কিশোরীর নিষ্পাপ মুখ! পালাবার পথ নেই!
টিভিতে প্রতিটা চ্যানেলে তখনও সেই একই সংবাদ চলছে! সংবাদপাঠিকা নীল ব্লেজার পরে, লাল রঙের লিপস্টিক লাগিয়ে ন্যাকা ন্যাকা কন্ঠে সেই একই শব্দগুলো বারবার বলে চলেছেন। এ ভাষণের আপাতত কোনও বিরাম নেই। যতদিন না ব্র্যান্ড নিউ, আরও গরম কোনও খবর না আসছে, ততদিন এই ধারাবাহিক বিবরণী চলবে। রাখী পাল নামক এক দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রীর ওপরে তিন মদ্যপ, কামার্ত জানোয়ারের নৃশংস অত্যাচার! গ্যাং রেপ ও মার্ডার কেস! দুজন অভিযুক্ত ধরা পড়লেও তিন নম্বর এখনও ফেরার। পুলিশ সবেগে তার জন্য অনুসন্ধান চালাচ্ছে।
‘আপনার কী মনে হয় দিদি?’ সংবাদপাঠিকা এবার ফোনে ধরেছেন এক বিখ্যাত সমাজসেবিকাকে। লাল ঠোঁট বেঁকিয়ে বেঁকিয়ে চুইংগাম চিবোনোর মত চিবিয়ে চিবিয়ে প্রশ্ন করলেন—‘রাজ্যে এভাবে একের পর এক নৃশংস ধর্ষণের ঘটনার কারণ কী?’
সমাজসেবিকা কিছু বলার আগেই পরেশবাবু অস্ফুটে বললেন—‘সানি লিওন’।
পিছন থেকে মেয়ে মিঠির তীক্ষ্ণ কন্ঠস্বর ভেসে আসে। কন্ঠস্বরে প্রতিবাদের সুর স্পষ্ট—‘মেয়েটা স্কুল ইউনিফর্ম পরে ছিল বাবা’।
পরেশবাবু বুঝলেন তাঁর মন্তব্যটা মিঠির কানে গিয়েছে। তিনি দুম্‌ করে সঙ্গে সঙ্গেই টিভি অফ করে দেন। রেপ নিয়ে মেয়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন, এখনও তিনি অত আধুনিক হয়ে উঠতে পারেননি। বরং বাড়াবাড়ি রকমের রক্ষণশীল! মেয়ের যাতে চোখে না পড়ে সে জন্য খবরের কাগজ এলেই কাঁচি দিয়ে সটাসট কেটে দেন পৌরুষবর্ধক ক্যাপসুল বা বক্ষসৌন্দর্যবর্ধক তেলের বিজ্ঞাপনগুলো। টিভিতে অন্তর্বাস বা কন্ডোমের বিজ্ঞাপন দেখাতে শুরু করলেই চ্যানেল পালটে দেন। সন্ধে ছ’টার পরে মিঠির বাইরে থাকা বারণ। বন্ধুদের সঙ্গে ফিল্ম কিংবা বন্ধুর বাড়ির আড্ডা তো নৈব নৈব চ! কলেজ এবং বাড়ির বাইরে মিঠি একমুহূর্তও কোথাও কাটায় তা পরেশবাবুর পছন্দ নয়!
সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই মেয়ের কথার কোনও উত্তর না দিয়ে তিনি আড়চোখে তার দিকে তাকালেন। ড্রেস কোড ঠিক আছে তো? মিঠি স্কুল ছেড়ে কলেজে পদার্পণ করলেও কখনও কাজল, লাইনার, মাস্কারা বা লিপস্টিক ব্যবহার করে না! ওর অন্যান্য বান্ধবীদের মত মিঠিরও যে সাজতে ইচ্ছে করে না তা নয়। কিন্তু বাড়িতে বাবার বিশেষ বারণ আছে।  কলেজে কি মানুষ পড়তে যায় না স্টাইল দেখাতে যায়? ‘ছাত্রাণাম অধ্যয়নং তপঃ’! শারীরীক সৌন্দর্যচেতনা সেই তপস্যার পথে মূর্তিমান ব্যাঘাত। এসব ব্যাপারে মাথা গলালে ছেলে-মেয়ে গোল্লায় যায়! এ বিষয়ে পরেশবাবু অত্যন্ত সতর্ক।
‘ওড়নাটা কাঁধে ফেলে নিয়েছিস্‌ কেন?’ তিনি মেয়ের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বিরক্ত কন্ঠে বললেন—‘ঠিক করে নে’।
মিঠি ওড়না দিয়ে বুক ঢাকল। ইচ্ছে করছিল, খানিকটা মাথায় টেনে, ঘোমটা দিয়ে নেয়। কিন্তু বাবার সামনে বেশি বাড়াবাড়ি করার সাহস তার নেই। সুতরাং ওড়না ঠিক করে নিয়ে থম্‌থমে মুখে বলল—‘ঠিক আছে?’
‘ঠিক আছে’।
‘আসছি’।
‘আয়’।
মিঠি বেরিয়ে গেল। পরেশবাবু অলস চোখে তার গমনপথের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন। তারপর আবার টিভিটা অন্‌ করে দিয়েছেন। ফের শুরু হয়ে গেল সেই একঘেয়ে প্যান্‌প্যানানি—‘গত শুক্রবার দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী রাখী পাল…!’ সঙ্গে সঙ্গেই স্ক্রিনে ভেসে উঠল উদ্ভিন্নযৌবনার পেলব মুখের ছবি।
এবার কিন্তু আর টিভি অফ করলেন না তিনি। একদৃষ্টে তাকিয়ে দেখতে থাকলেন মেয়েটির কোমল ফর্সা মুখ। টানা টানা কালো কুচকুচে ভুরুর নীচে দুটি মায়াবী স্বপ্নালু চোখ। ঈষৎ স্ফুরিত, অভিমানী একজোড়া গোলাপি ঠোঁট…!

২.
রোজ বিকেলবেলায় সামনের পার্কে নিয়ম করে টহল দেওয়া অভ্যাস পরেশ সান্যালের। রিটায়ার করার আগে অবশ্য এই নিয়মটা ছিল না। কিন্তু কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর নেওয়ার পর থেকেই তিনি রীতিমত স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে উঠেছেন। রোজ নিয়ম করে ভোরে উঠে প্রাণায়াম, কপালভাতি—ইত্যাদি নানারকম যোগাসন করেন। সঙ্গে একঘন্টা ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ। চল্লিশের পর সেই যে মিষ্টি খাওয়া ছেড়েছেন, আর কোনওদিন ছুঁয়েও দেখেননি। অবসর নেওয়ার পর থেকেই খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনেছেন। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য কম খান, সব্জী খান বেশি। এমনকি খাবারের তালিকায় মাছ, ডিম-মাংসের পাটও তুলে দিয়েছেন। স্রেফ নিরামিষ বরাদ্দ। স্ত্রী হিমানীর ছলছলে দৃষ্টি, নম্র অনুরোধও তাঁকে আমিষমুখো করতে পারেনি! বিকেলে এই বিরাট মাঠটায় ন্যুনতম পাঁচ পাক চক্কর মারেন। অনেকটা ক্যালোরির সঙ্গে ঝরে যায় ফ্যাট, কোলেস্টেরল জাতীয় উৎপাত।
তাঁর হাঁটার সঙ্গী রতনবাবু মাঝেমধ্যেই বলেন—‘আপনি তো মশাই রীতিমত সাত্ত্বিক মানুষ! আমাকে দেখুন! এত বয়েস হল, তা সত্ত্বেও মিষ্টির ওপর ছেলেমানুষের মত লোভ! রাস্তায় এগরোল ভাজার গন্ধ বা গরম শিঙাড়ার সুবাস পেলেই নোলা সকসকিয়ে ওঠে। তখন বঙ্কিমবাবুর ঐ লাইনটা মনে পড়ে যায়! জীবনে রসগোল্লা, পান্তুয়া নেই! শিঙাড়া, তেলেভাজা দেখলেই মনে হয় পরস্ত্রী’র দিকে তাকাচ্ছি! হে ঈশ্বর—‘এ জীবন লইয়া কী করিব?’
মনে মনে মৃদু হাসেন পরেশ সান্যাল। ‘সাত্ত্বিক’ শব্দটা শুনতে তাঁর ভারি ভালো লাগে। অল্প বিস্তর অহং বোধও হয়। তবে মুখে কিছু বলেন না। শুধু বিশেষণটা উপভোগ করেন।
‘ এখনও পর্যন্ত ক’চক্কর মারলেন দাদা?’
আজ পার্কে ঢুকে গোটা দুয়েক পাক মারার পরই রতনবাবু এসে উদয় হলেন। দ্রুতগতিতে তাঁর পাশে হাঁটতে হাঁটতে বললেন—‘কোটা কম্‌প্লিট নাকি?’
‘না’। হাঁটার গতি না কমিয়েই উত্তর দেন পরেশ—‘আরও তিন পাক বাকি আছে’।
‘আপনি মশাই কিছু মেইনটেইন করেছেন নিজেকে’। রতন বললেন—‘আমার গিন্নী তো রোজ কানের কাছে ক্যাট্‌ক্যাট্‌ করেন। ‘ভুঁড়ি কমাও, ভুঁড়ি কমাও’! কিন্তু ভুঁড়ি বাবাজি আর কমবার নাম নিচ্ছেন না। একেবারে প্রেয়সীর মত কোমর আঁকড়ে বসে আছেন’।
‘হাঁটাহাঁটি তো আপনিও কম করেন না! তবু ভুঁড়ি কমছে না কেন?’
রতনবাবু একটা প্রাণখোলা হাসি হাসলেন—‘কী করে কমবে দাদা! দেহটাকে কষ্ট দিয়ে ক্যালোরি ঝরাচ্ছি, কিন্তু ওদিকে যে চোখ বেয়ে প্রাণের আরাম হচ্ছে। তাতেই ক্যালোরি বেড়ে যাচ্ছে’।
ইঙ্গিতটা বুঝতে পেরে বিরক্ত হন পরেশ। রোজ সকালে ও বিকেলে অল্পবয়সী মেয়েরা এই মাঠেই কবাডি খেলা প্র্যাকটিস করে। টাইট টপ্‌ আর শর্টস পরিহিত মেয়েদের ধস্তাধস্তি চলতেই থাকে। টানা হেঁচড়ার চোটে কারোর টপটা খানিকটা উঠে যায়। চোখে পড়ে কমনীয় কোমর বা পেট। কখনও শর্টসটা উঠে যায় আরও ওপরে! সবার সামনে উন্মুক্ত কচি মেয়ের জঙ্ঘা! পরেশবাবুর অস্বস্তি হয়! রাগও হয়! এটা খেলা, না শরীরের প্রদর্শনী! খেলার চোটে ওদের কারোর খেয়ালই থাকে না যে কখনও নীচু হয়ে আক্রমণ করার সময়ে স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্লিভেজ! টেনে ধরার সময়ে কারোর শর্টস বিপদসীমার ওপরে উঠে যাচ্ছে! মেয়েগুলো কী নির্বিকার! নির্বিকার না নির্লজ্জ! ওদের বাপ-মা কি এসব দেখে না? বরদাস্ত করে কী করে? আর রতনবাবুও বলিহারি! এখানে এসে এইসব দেখছেন! মেয়েরা ছোট ছোট জামা পরে লাফালাফি করছে দেখে ওঁর চোখের নাকি আরাম হচ্ছে!
‘ঐ মেয়েটা দারুণ খেলে’। রতন একটি লম্বা বলিষ্ঠ চেহারার মেয়ের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে বললেন—‘ওকে আমি চিনি। রেলপাড়ের বস্তিতে থাকে। ওর মা লতা আমাদের বাড়িতে ঠিকা কাজ করে। মেয়েটা পড়াশোনায় আহামরি কিছু না। কিন্তু খেলোয়াড় হিসাবে দুর্দান্ত। অসম্ভব পরিশ্রমও করে। লতা মাঝেমধ্যেই বলে, মেয়ে যদি একটা টিমে সিলেক্টেড হয়ে যায়, তাহলে ভালো চাকরি পাবে। ওর বাপটার তো অ্যাক্সিডেন্টে দুটো পা—ই কাটা গিয়েছে! সংসার লতাই চালায়! মেয়েটা যদি কোনওভাবে স্কোপ পেয়ে যায় তবে…!’
রতনবাবুর কথা কানে ঢুকছিল না পরেশ সান্যালের। তিনি মেয়েটির দিকে তাকিয়েছিলেন। লম্বা, চওড়া যথেষ্ট ভরন্ত দেহ। তার ওপর টপটা যেন কেটে বসছে শরীরে। ঘামে ভিজে লেপ্টে গিয়েছে গায়ের চামড়ার সঙ্গে। বুকের ঔদ্ধত্য, কোমরের খাঁজ, মসৃণ উরুর পেলবতা—সব যেন বড় বেশি প্রকট!
মেয়েটার কপাল থেকে টপ্‌টপ্‌ করে ঘাম পড়ছিল! শরীর ক্লান্তিতে ভেঙে আসছে। তবু ঘর্মাক্ত মুখ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। শত্রুকে যে করেই হোক্‌ হারাবে। তার অনেক শত্রু। বাড়িতে পঙ্গু বাপ বসে আছে। মা দশ বাড়িতে খেটে দু বেলা দু মুঠো খাবার জোগাড় করে! ছোট বোনটা গতবছর তিনদিনের জ্বরে বিনা চিকিৎসাতেই মারা গেল। ছোট ভাইটার স্কুল ফি’জ এবার জমা না দিলে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেবে…!
মেয়েটা লড়ছিল প্রতিপক্ষের সঙ্গে! পরেশবাবু তখন তার পরনের ঘামে ভেজা টাইট টপ আর শর্টস দেখে মেয়েটির চরিত্র বিশ্লেষণ করছিলেন! মেয়েটির মুখ এতদূর থেকে ভালো করে দেখা সম্ভব নয়। কিন্তু মনে হল স্পষ্ট দেখছেন—
…সেই কোমল ফর্সা মুখ। টানা টানা কালো কুচকুচে ভুরুর নীচে দুটি মায়াবী স্বপ্নালু চোখ। ঈষৎ স্ফুরিত, অভিমানী একজোড়া গোলাপি ঠোঁট…!
রাখী পালের স্কুল ইউনিফর্ম কী ছিল? টাইট ব্লাউজ? আর হাঁটুর অনেকটা ওপরে তোলা স্কার্ট?

৩.

তখন মধ্যরাত। কোথাও যেন জল পড়ার অবিরাম শব্দ—টুপ্‌ টাপ। তার মধ্যেই দুটো কুকুরের প্রবল আস্ফালন ভেসে আসে। নিজেদের অধিকার নিয়ে চলছে লড়াই। কেউ কাউকে একতিলও জায়গা ছেড়ে দেবে না। হিংস্র দন্তপংক্তি বের করে প্রবল গর্জনে পরস্পরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে দুটি শ্বাপদ। সর্বশক্তি দিয়ে হারানোর চেষ্টা করছে একে অপরকে।
পরেশবাবু বারান্দায় দাঁড়িয়ে একদৃষ্টে দেখছিলেন এই প্রাণান্তকর যুদ্ধ। এ যুদ্ধ অকারণ নয়। দুটি যুযুধান সারমেয়র মাঝখানে বসে আছে এক সুন্দরী। তাকে নিয়েই যুদ্ধ চলছে দুজনের। যে অপেক্ষাকৃত বলবান, সে—ই যুদ্ধ জিতে দখল নেবে সুন্দরীর। আর পরাজিত সারমেয়টি ক্ষত-বিক্ষত হয়ে রাস্তা ছেড়ে দেবে। এটাই নিয়ম! এটাই যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। ক্ষুধা থেকে শুরু করে যৌনতা—সব কিছুর জন্যই ওদের লড়তে হয়। ওরা কুকুর। মানুষ নয় যে ভাগ-যোগ করে ভোগ করবে। মানুষ হলে তো দুজনে মিলেই ঝাঁপিয়ে পড়ত! আফটার অল, সামাজিক প্রাণী!
আজ রাতেই রাখী পাল গ্যাংরেপ ও মার্ডার কেসের তৃতীয় অপরাধীটি ধরা পড়েছে। তার বাবা-মা থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজন, এমনকি প্রতিবেশীরাও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে ঐ আপাতনিরীহ ছেলেটি এমন ভয়ঙ্কর কাজ করতে পারে! প্রত্যেকেই মিডিয়াকে বলছেন—‘ও এমন কাজ করতেই পারে না। ও তো ভালো ছেলে!’
‘ভালো ছেলে’! শব্দটা শুনেই হাসি পেয়ে যায় পরেশের। এ তো সামাজিক বিশেষণ! যেমন রতনবাবু তাঁকে বলেন ‘সাত্ত্বিক মানুষ’!
এখনও বেডরুম থেকে তাঁর স্ত্রী হিমানীর কাতর গোঙানির শব্দ ভেসে আসছে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন যন্ত্রণায়। হয়তো নির্যাতনটা একটু বেশিই হয়ে গিয়েছে। হিমানী চান্‌নি। আপ্রাণ বাধা দিয়েছিলেন। কিন্তু পরেশবাবু তাঁর সমস্ত প্রতিরোধকে দুরমুশ করেছেন নৃশংস ভাবে! তাঁর ভালো লেগেছে স্ত্রী’র ওপর অত্যাচার করতে। সব কাজ শেষ করে এই মুহূর্তে ভীষণ,…ভীষণ পরিতৃপ্ত পরেশ সান্যাল। অনেকদিন পরে সত্যিই এমন আরামদায়ক অভিজ্ঞতা হল।
শুধু একটা কথা কোনওদিন কেউ জানবে না। হিমানীও বুঝতে পারেননি, আগামীতেও পারবেন না। যখন তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন হিমানীর ওপরে, অত্যাচারে তাকে ধ্বস্ত-বিধ্বস্ত করছিলেন, অদৃশ্য দাঁত-নখে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করছিলেন, তখন ওখানে হিমানী ছিল না! ছিল সেই কোমল ফর্সা মুখ! টানা টানা কালো কুচকুচে ভুরুর নীচে দুটি মায়াবী স্বপ্নালু চোখ! ঈষৎ স্ফুরিত, অভিমানী একজোড়া গোলাপি ঠোঁট…!
তিন নম্বর ধরা পড়েছে। কিন্তু তাতে পরেশবাবুর কী? রাখী পালের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই!
তিনি তো শুধু চার নম্বরে আছেন!

(সমাপ্ত)

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত