আমার ওয়েট লস জার্নি: সুস্থ জীবনযাত্রাই দিতে পারে সুস্থ শরীর

Reading Time: 2 minutes

ছোট থেকেই আমি গোলগাল।বিয়ের পর আরো বেশ গোল হলাম।সেখানেই বাধলো গোল।বিয়ের সময় আমার ওজন ৬৫, অনির্বানের ৫৮। মা যেদিন অনির্বানকে প্রথম দেখলো,দেখে আমায় ফোনে বললো,”ওজন কমা।নইলে কদিন পর তোকে ওর দিদি লাগবে।” বোঝ কান্ড।নিজের মা ই যদি এমন বলে,তাহলে সেই দুঃখ রাখি কোথায়।কিন্তু মানুষটা তো আমি।একেবারেই দু’কান কাঁটা। বয়েই গেছে ওজন কমাতে।বিয়ে কেঁচিয়ে গেলে যাক গে।বয়েই গেল।ওই সকাল বিকেল জিম এ যাওয়া,এর চেয়ে মেরে ফেলো আমায়।জাস্ট পারলাম না।

তা বিয়ে তো হয়ে গেল।বিয়ের আগে ও পরে টুকটাক এদিক ওদিক থেকে আমার ওজন নিয়ে টুকরো টাকরা ভেসে আসা কথা ছাড়া কোন গোল বাধলো না।নির্বিঘ্নেই শুভ বিবাহ সম্পন্ন হল।দেখা গেল নব পরিনীতা বউয়ের ওজন নিয়ে আমার বরের খুব একটা মাথা ব্যাথা নেই।থাকবেই বা কেন?ইশ।ইল্লি আর কি।আমি কি জিজ্ঞাসা করতে গিয়েছি যে তুমি এমন প্যাংলা পটাস কেন?৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতায় ৫৮ কেজি।ভাবা যায়?উফ্। বিয়ের পর এবাড়ি ওবাড়ি নেমন্তন্ন খেয়ে ওজন এদিকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।বছর ঘোরার আগেই ৬৯ কেজি।একা ওজন নয়,সাথে সঙ্গী সাথিও জুটেছে।পলিসিস্টিক ওভারি,থাইরয়েড, গ্যাস্ট্রিটিস ইত্যাদি ইত্যাদি।দিনে খাবারের থেকে ওষুধ বেশী খেতে হচ্ছে।আমার হেলদোল নেই।এখন লোকজন মুখের উপরেই মোটা বলছে।তাতে আমার কাঁচকলা এল গেল।দুখখু যে একটুও হয় না,সেটা বললে মিথ্যে বলা হবে।পছন্দের পোশাকটা এক্সট্রা লারজ সাইজের না পেলে দুঃখ হয় বই কি।কিন্তু ওই পর্যন্তই।

যাই হোক,আমার ডাক্তারেরাও বলেই যাচ্ছিলেন ওজন কমাতেই হবে। চেষ্টা করেছি অনেকবার।সাত দিনের বেশি আমার মোটিভেশন থাকেনি।আবার যেই কে সেই।শরীরও ভাল যাচ্ছিলো না।অতিরিক্ত ওজনের সাথে সাথে অনাহূত অতিথি রোগগুলো কাবু করে ফেলছিলো।

এক রাতে গ্যাস্ট্রাইটিস এর প্রবল যন্ত্রনা নিয়ে হসপিটালে ভর্তি হলাম।তিন চার দিন পরে বাড়ি ফিরলাম।মনে হল,অনেক হয়েছে।অব বস। সেই শুরু। নিয়ম করে ক্যালোরি মেপে খাওয়া,যোগাসন,ছাদে হাঁটা।আট মাসে আঠেরো কেজি কমালাম।

কন্সিভ করলাম।ওমির জন্মের পর আবার ওজন বেড়ে ৬৯ কেজি।পরের দুই বছরে বাইশ কেজি কমালাম আবার।ততদিনে আমি স্বাস্থকর জীবন যাপনে অভ্যস্ত।

আমার দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের পর এখনও আমি প্রেগন্যান্সির আগের ওজনে ফিরে আসতে পারিনি। আরেকটু সময় লাগবে। কিন্তু আমি এখন জানি, আমায় সুস্থ থাকতে হবে,আমার নিজের জন্য,আমার পরিবারের জন্য। ওজনের সাথে সাথে সব রোগগুলো বিদায় নিয়েছে নিজে থেকেই।সুস্থ, নিরোগ থাকাটা প্রত্যেক মানুষের নিজের জন্যই জরুরি।

আজকাল ওজন কমানোর হাজার কিসিমের ওষুধ বিষুধ পাওয়া যায়।জানি না কি কাজ হয়, বা আদৌ হয় কি না।জানার ইচ্ছেও নেই।আমি এটুকু বুঝি,জীবনে কোন কিছুর শর্টকাট হয় না।সুস্থ থাকতে গেলে সুস্থ জীবনযাত্রা দরকার।রোগা হওয়াটাই সব নয়,সুস্থ শরীর দরকার।আর সবচেয়ে বড় কথা মানসিক সন্তুষ্টি। এক্সট্রা লার্জ থেকে এক্সট্রা স্মল এর জার্নিটা সহজ ছিল না আমার।কোনদিন ভাবিও নি,যে পারবো।কিন্তু পেরেছি।এখন আমি জানি আমি পারি।আশা করছি এই বছর শেষ হবার আগেই আমি আমার সেই ইমনের জন্মের আগের পোশাকগুলো গায়ে চাপাতে পারবো।

আজ এই লেখাটা লিখতে বসা তাদের জন্য,যারা আমার মত পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে।অনেকেই বলেছিলো,এই লেখাটা লিখতে।তাই আজ লিখেই ফেললাম।অনির্বান মাঝে মাঝে মজা করে বলে ওকে আমার জন্য xl থেকে xs পর্যন্ত সব সাইজের পোশাক কিনতে হয়েছে।কিন্তু সত্যি কথা বলতে,ওর সাহায্য ও নিয়মিত সাহস যোগানো ছাড়া আমিও হয়তো পারতাম না আমার লক্ষ্যে পৌছতে।ও জীবনে কোনদিন এক মুহুর্তের জন্যেও আমায় বডিশেম করেনি।

অনেকে অনেক কথা বলেছে।কিন্তু ও পাশে থেকেছে।কখনো কখনো আমি ভেঙে পড়েছি।অনির্বান সাহস ও শক্তি জুগিয়েছে,এই জন্য নয় যে আমার ওজন কমলে ও আমায় বেশি ভালবাসবে,এই জন্য যে আমার ওজন কমলে আমি নিজে নিজেকে বেশি ভাল বাসবো।আমি সুস্থ থাকবো।

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>