| 29 মার্চ 2024
Categories
উপন্যাস ধারাবাহিক সাহিত্য

ধারাবাহিক উপন্যাস: ফুলো মুর্মুর সন্তান সন্ততি (পর্ব-২) । বল্লরী সেন

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

বসনচরিত॥

এই ছিল কলি জিয়োনোর কাল, পরব লেগ্যছে সরিলে। গুটাগুটি দিন যেন নিজের আগুন গিলি আর উগড়াই, ঝগড়া হয়, আস্ত ডান চক্ষু দিয়া আরশির মণি গেল্যা দিই, বুঝি ঐটোই মিনসে। বাহির আদমি ওটো, যুগের এঁটো, শকরি দেহের সন্মান টন্মান লাই উহার। সুবিধা একটোই, ও মিনসের কুনো দেমাক নাই, লাট নবাব লয়, কাজ কাম করিয়ে লি কুনো কসুর নাই।

কামকাজের পর বেশ ফুরফুরা লগ্যে, মনে হয় ডানা গজালছে মাথায়, দুই বাজুতে, পায়ুদুয়ারে, খোজা পহরীর শুঁড় তোলা কাবুলিজুতোর মতো কিম্বা খয়েরি চিলের ঠোঁটের মতো চোখা আমার দাঁতাল পরাগদান, পানডাবরের মধ্যে সে খরিশ শুয়ে থাকে — ঘুম জারায়, কিন্তুক নিয়ত সে তার মোক্ষম ডালপালায় মজায়, কাঁপনের তারে।আরশি বলে, ওলো বসন, তুমার যে দেখি যখন তখন খিদা, ডাঁটো হও এত জলদি, এতক্ষণ আগুন চেপ্যা থাকো কিভাবে। বীজ নাই, তবু আগুন? হ তাই। হ, হ। বীজ কি বটেক, পুরুষমানসের বীজ? হারামির পো, মর্ তুই। ছোটকর্তাকে দেখনু, মদ্দাকলেবর এখনও পাঠ হয়নি তার, মুগ্ধবোধেই সর্ব সমর্পণ হৈ গেলা, তারপর কেবলি ময়দা গোলার গন্ধ। আর বসন তো সব্যে গুটি ফোটালেক, তেল ছাড়ছে, কষ ধরছে তার! ক্ষুধার্ত চোখের তারিফ নিয়ে তখন আয়নাপুরুষের দোরে আসি, আয়না আমার হাতের দর্পণ, মাথার ফুল নয় গো শুধু, ওগো বিদ্যাপতি, লছিমার হিদয়টাক তুমহি কত যোজন জরিপ করতে পেরাছিলে? লছিমা যে তুমহের সন্তান জঠরে লিলে, সে তো জানতে পারলা নাই। কৈ তুমহার কলমে রাধাকে তো মা হইতে দাও লাই গো? তাই কলসভরণী নিজের যৈবনের পেথম সওয়ার করলে আরশিকেই। তুমি তাও বুঝলা না, সে তো কিষ্ণ ঠাকুরকে বলেনি, কেবল মিথ্যাকথা লয়। এখ্খনকার টাচ স্ক্রিনের মতো, যা ছোঁবে না তাও হইবেক।

এইরকম হওয়া আর কৈ! এরকম পুরুষের খোঁজে যৈবনের বীজ বুঝি হারায়, বুঝি অমলতাসের যোনিকান্নার মুখ তাই অতলে চেয়ে খাক্ হৈয়া যায়, পথ পায় না কুন্ সে স্তম্ভ। কুথায় তার নরমকে শক্ত করার কোশল, কুন্ পরবে গাছের ঝুরির মতো নীল শিরা টাটিয়ে ডান আর বাম তফাত হৈ।

বাবু তুই ছাড় পাবি ভাবছিলিস লয়, কিসের তরে হামার ইজ্জত্ নিয়ে তুর ঘরে আইলাম, সময় লষ্ট করিলি, হামার খিদা যো অভুক্ত রৈল, শালো।  আর কুনোদিন তুর ডাকে শমন আইলেও যাবো নাই। এঢা মুনে থাকে যেন। কেহ তুকে ভাতার লিবে নাই, দেখস্। তুকে মন চায় মাদ্রীতুক্ করি আর ন্যাংটা কইরে মাদলের বাজনে হেলাই খেলাই। যেন রোগীকে পাকশালে ঢুকিয়েছো। সরহের দিব্বি, কপাল পুড়বে তুয়ার। এই বুইলাম।

হনহনিয়ে মাঠ ভেদ করে কবরডাঙার পশ্চিমপুলের ধারের পোয়াটাক পথ কাটিয়ে আমি যেন ঢেউ গুনি আর পানবরোজে সাপের খোলস দেখতে দেখতে রাস্তা ধামসাই, য্যান একটো আস্ত পুরুষমানসের মতো চৌহদ্দি রাঙিয়ে বেদম সুখ বিছিয়ে ফিরছি, য্যান ধর্ষণ জবরদস্ত্ , য্যান মাইয়াটার ভরাট ঢিপি কাটিয়ে পথ করি আর সুখের উদ্গার তুলি। 

লালন বলেন, “খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কমনে আসে যায়।” ঈষৎ চোখ লেগে গিয়েছিল বসনের। মেয়ের ডাকে ধড়ফড় করে উঠলো। “মা, মা গো, খাইতে দেবা কিছু?” ডাকছে ফুলি। হুঁশ এল। বেগুন আর পটল সব অধিক উনানের তাপে পুড়ে গেছে। গাছের কুল টোমাটো আর কুমড়ো ফালির গন্ধে নুন মাখিয়ে রসুন ও পেঁয়াজ ভেজে মেয়ের খাবার তৈরি করলো। এ সময়ে সদ্য পোয়াতির জন্য সাবু দুধ আর এই রসুন পেঁয়াজ ভাজা কালো জিরাসহ খুব লাগসই। মাটির উনান নিভু হলে আবার কয়লা ভেঙে দিতে থাকে বসন। আর মনকে আর পুড়তে দেয় না। শিশুর দেয়ালা রোদনে ঘর আলো হয়ে ঝংকার তোলে। শিশু যত্ত কান্দে ততটোই তমিজের জন্য বসন মন খারাপ করে, কবে ফেরবে সে জন? আরও কুতো যুগ লাগবেক কে জানে! খবর আইসে না আজিও। খবর নাই কালিও, পরশ্শু ও। চেরাগ আলির শাকরেদের একজন থাকে বেলিয়ার পচ্চিমে। ফুলিকে বলে একদিন তেনার আড্ডায় যাইতে লাগস্। দুদিন সবে পেরলো, এখন শিশু কেবল পুচুক করে হাগে, খায় আর হাগে, সবুজ তার মলের বরণ, ডিবেয় করে হাসে আর দেয়ালা করে। মেয়া হলে কী? সেও তো মটুকসর্দার হইতে পারে, ভাবে বসন।

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত