আকাশ ছোঁয়ার উড়াননামাঃ প্রথম নারী প্রকৃতি বিজ্ঞানী জেন ব্যারে

Reading Time: 2 minutes

নারীর বিচরণ পৃথিবীর সর্বত্র, বহু বিস্ময় জাগানিয়া কৃতিত্বের সাথে স্বর্ণাক্ষরে জড়িয়ে আছে অসংখ্য গুণী নারীর নাম। এমনই কিছু অসমসাহসী, বীরাঙ্গনা নারীর গল্প নিয়ে আমাদের এই ধারাবাহিক আয়োজন ‘আকাশ ছোঁয়ার উড়াননামা‘।আজকের পর্বে থাকছেঃ-

 

জেন ব্যারে (Jeanne Baret)

জেন ব্যারে (Jeanne Baret)

অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে, ফ্রান্সের “ল্যা কোমেল” নামে এক গ্রামে জন্ম নেয়া সাহসী নারীর গল্প বলবো আজ । তার নাম জোন ব্যারে।সাগরের নীল দিগন্ত বিস্তৃত ঢেউ তাকে বড্ড টানে, ডাঙ্গায় এই সাদামাটা জীবনে তার মন হাঁপিয়ে উঠলো।সেকালে নারীদের জন্য ঘরের বাইরে বের হওয়াই ছিল দুষ্কর, আর সমুদ্র পাড়ি দেওয়া তো আকাশ কুসুম কল্পনা। কিন্তু ব্যারের চঞ্চল মন তো এত কিছু মানে না! তাই একদিন দারুণ এক বুদ্ধি আঁটলেন ব্যারে। মুখে নকল গোঁফ লাগিয়ে, মাথায় টুপি পরে পুরুষ সেজে চাকরি নিলেন এক উদ্ভিদ বিজ্ঞানীর সহকারী হিসেবে!

বিজ্ঞানী মশাই সমুদ্র সফরে যাচ্ছেন অজানা দ্বীপের সন্ধানে, এমন চটপটে একটি সহকারী পেয়ে দারুণ খুশি হলেন তিনি।গবেষণার যন্ত্রপাতি, এলাহি লস্কর বাহিনী নিয়ে জাহাজে চেপে বসলেন তিনি সদলবলে, ঘুণাক্ষরেও টের পেলেন না জলজ্যান্ত একটি রমণীও রয়েছে তাদের সাথে, একই জাহাজে! দিব্যি সবার চোখের ডগায় সানন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ছদ্মবেশী ব্যারে, প্রতিদিন নতুন কিছু আবিষ্কারের উত্তেজনায় আর জীবনে প্রথমবারের মতো সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার আনন্দে বিভোর তিনি, জান-প্রাণ দিয়ে খাটছেন গবেষণার কাজে বিজ্ঞানীর সাথে।

পৃথিবীর এপার ওপার চষা হয়ে গেল তাদের, অজস্র নাম না জানা উদ্ভিদের নমুনা দিয়ে বোঝাই তাদের জাহাজ, এবার ঘরে ফিরবার পালা। কিন্তু মাঝ দরিয়ায় আচমকা আকাশ-পাতাল একাকার করে দেওয়া তুফান উঠলো, ঝড়ো ঢেউয়ের তীব্রতায় কে যে কোথায় ছিটকে গেল তার আর হদিস পাওয়া গেল না। জোন ব্যারে অতিকষ্টে প্রাণ বাঁচিয়ে ফিরলেন প্যারিসে, সাথে সেই অজানা বিচিত্র সব উদ্ভিদের নমুনা।

প্রকৃতি বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় জাদুঘরের কাছে গেলেন তিনি সেই নমুনা নিয়ে, গুণে দেখা গেল প্রায় তিন হাজার অচেনা সব নমুনা নিয়ে এসেছেন ব্যারে, যেগুলো সভ্যদুনিয়ার কেউ কোনদিন দেখেনি আগে, বিজ্ঞানীরা সবাই তো অবাক! ধন্য ধন্য পড়ে গেল এই দুঃসাহসী বীর “পুরুষ” টির নামে! এমন সময় সকলের সামনে একটানে মুখের নকল গোঁফ তুলে ফেললেন ব্যারে, ছুঁড়ে ফেললেন মাথার টুপি, সবার চোখ কপালে তুলে দিয়ে নেমে এলো ব্যারের কোমর পর্যন্ত দীঘল বিস্তৃত কেশরাজি।

“নারীরাও সমুদ্র বিজয় করতে পারে” দৃপ্তকণ্ঠে সমবেত অতিথিবৃন্দের সামনে ঘোষণা করলেন তিনি, শ্রদ্ধায় করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠলো গোটা হলঘর। রাজকীয় সম্মানে এবং পুরষ্কারে ভূষিত হলেন জোন ব্যারে, পৃথিবীর বুকে রেখে গেলেন অদ্বিতীয় এক সাহসিকতার দৃষ্টান্ত।

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>