Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,World famous museum

ইরাবতী সাপ্তাহিক গীতরঙ্গ: বিশ্বখ্যাত জাদুঘর

Reading Time: 7 minutes

জাদুঘর মানেই ইতিহাসখ্যাত পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনের সংগ্রহশালা। অন্যভাবে বলা যায়, পৃথিবীর বুকে মানুষের জয়যাত্রার আগে থেকে আজ পর্যন্ত সব ইতিহাসের প্রতিচ্ছবিই হলো জাদুঘর। জাদুঘরে প্রবেশ করলে আপনি হারিয়ে যাবেন অন্য এক সময়ে। সভ্যতার ইতিহাস আপনি খুব ভালো করে জানতে পারবেন এখানে। পৃথিবীর কিছু বিখ্যাত জাদুঘর নিয়ে আজকের রকমারি—

প্রাদো মিউজিয়াম [স্পেন]

প্রাদো মিউজিয়াম।

স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে এ জাদুঘরটি অবস্থিত। পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত জাদুঘর এটি। এই জাদুঘরে এলে আপনি স্পেন সভ্যতার নানা দিক সম্পর্কে জানতে পারবেন। আর স্পেনের প্রাচীন সভ্যতাগুলোর মধ্যে অন্যতম যা সমৃদ্ধ করেছে জাদুঘরটিকে। এ ছাড়া স্পেনের সেরা চিত্রকরদের আঁকা ছবিও রয়েছে এই জাদুঘরে। বিখ্যাত ইউরোপিয়ান চিত্রকলার বিশাল এক সংগ্রহশালা বলা হয় প্রাদো মিউজিয়ামকে। বিখ্যাত চিত্রকর ভেলাজকুয়েজের ‘লাস মেনিয়াস’ চিত্রকর্ম থেকে শুরু করে বিখ্যাত সব চিত্রকরদের আঁকা ছবিতে সমৃদ্ধ এই জাদুঘর। পুরো পশ্চিমা চিত্রকর্মের এক অসাধারণ সংস্করণ বলতে পারেন প্রাদো মিউজিয়ামকে। ফলে জাদুঘরটি পেয়েছে বিশ্বজোড়া খ্যাতি। এই জাদুঘরের প্রধান আকর্ষণ হলো রুবেনসের ‘দ্য থ্রি গ্রেসেস’। বিখ্যাত জুয়ান দে ভিলানুয়েভা এই জাদুঘরটি ডিজাইন করেছেন। ১৮১৯ সালে ফার্নেন্দো সপ্তম সংগ্রশালাটি উন্মুক্ত করেন জনসাধারণের জন্য। এরপর কালক্রমে এটা প্রাদো মিউজিয়ামের রূপ নেয়।

উফিজি গ্যালারি [ইতালি]

উফিজি গ্যালারি অবস্থিত ইতালির ফ্লোরেন্সে। এই জাদুঘরজুড়ে ছড়িয়ে আছে নানা রকম দর্শনীয় বস্তু। এটিকেই বলা হয় রেনেসাঁ যুগে প্রথম চিত্রকর্মের সংগ্রহশালা। এ ছাড়া জাদুঘরে প্রবেশের শুরু থেকেই দেখা যায় বিখ্যাত সব ভাস্কর্য। পাথরের ওপর খোদাই করা সব মূর্তি আপনাকে অভিভূত করবে। যেন একেকটা মূর্তি একেকটা ইতিহাসের কথা বলছে। জাদুঘরটির দেয়ালের পরতে পরতেও স্থান পেয়েছে এসব মূর্তি। আপনি নিশ্চিত হারিয়ে যাবেন অজানা-অচেনা কোনো সময়ে। জাদুঘরের ভিতরে প্রবেশের শুরুতেই চোখে পড়বে বিখ্যাত ভাস্কর বোত্তিসেল্লির ‘বার্থ অব ভেনাস’ এবং ‘প্রিমাভেরা’সহ অন্যান্য নয়নাভিরাম সব ভাস্কর্যগুলো। এখানে এলে আপনি আরও দেখতে পাবেন বিখ্যাত চিত্রকর মাইকেল অ্যাঞ্জেলো, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মতো কালজয়ী সব চিত্রশিল্পীর আঁকা বিখ্যাত সব ছবি।

ইজিপশিয়ান জাদুঘর [মিসর]

মিসরের বিখ্যাত সম্রাট তুতেনখামেনের সমাধিসহ বিখ্যাতদের সব সমাধি রয়েছে ইজিপশিয়ান জাদুঘরে। ইজিপশিয়ান জাদুঘরের নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এটি মিসরে অবস্থিত। মিসরীয় সভ্যতা অনেক পুরনো আর অনেক বেশি সমৃদ্ধ। ফলে এই জাদুঘরটিও অনেক বেশি বিখ্যাত পৃথিবীজুড়ে। এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৮৫৩ সালে। আরও রয়েছে বিখ্যাত সব ভাস্কর্য। যার মধ্যে স্ফিংস দৈত্যের ভাস্কর্য সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে দর্শনার্থীদের। আকর্ষণীয় বস্তুগুলোর মধ্যে রয়েছে মিসরীয় সভ্যতার হাজার বছরের ইতিহাসের সাক্ষী সব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। ব্রিটিশ মিউজিয়ামের অনেক কিছুই এই মিসরীয় সভ্যতা থেকে সংগ্রহ করা। তারপরও এই জাদুঘরে যা অবশিষ্ট আছে তার সংখ্যাটা বিশাল। শুনলে অবাক হবেন যে, প্রায় ১ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি ঐতিহাসিক সভ্যতার প্রত্নসামগ্রী রয়েছে এই জাদুঘরে।

মেট্রোপলিটান মিউজিয়াম [যুক্তরাষ্ট্র]

এই জাদুঘরটি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ওয়েস্টার্ন হেমিসফেয়ারে অবস্থিত। জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৭০ সালে। এখানে এলে আপনি আধুনিকতা এবং ঐতিহ্যের এক অসাধারণ সংমিশ্রণ পাবেন। কারণ আধুনিককাল এবং প্রাচীনকাল মিলিয়ে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি দর্শনীয় বস্তু রয়েছে এই জাদুঘরে। এখানে আপনি ইসলামী সভ্যতার বিভিন্ন চিত্রকর্ম যেমন পাবেন তেমনি পাবেন ইউরোপিয়ান অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসহ আরও অনেক কিছু। ইতিহাসভিত্তিক অস্ত্র এবং বর্মের সব চিত্রকর্ম আপনাকে ভাবিয়ে তুলবে পৃথিবীর ইতিহাস সম্পর্কে। আর এ কারণেই এই মেট্রোপলিটান মিউজিয়াম পেয়েছে বিশ্বজোড়া খ্যাতি। এই মিউজিয়াম শুধু নির্দিষ্ট কোনো জাতি বা গোষ্ঠীর ইতিহাস তুলে ধরেছে তা নয়, বরং সমগ্র পৃথিবীর এক সংক্ষিপ্ত ঐতিহাসিক রূপ আপনি দেখতে পাবেন এখানে। বিখ্যাত জার্মান পেইন্টার আলব্রেস্ট দুরের খোদাই করা অ্যাডাম এবং ইভের মূর্তির জন্যও এই জাদুঘরটি বিখ্যাত।

ভ্যাটিকান জাদুঘর [ভ্যাটিকান]

মূলত ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের জন্য এই জাদুঘর বানানো হয়। তবে এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। ভ্যাটিকান সিটিতে এই জাদুঘরটি অবস্থিত। এই জাদুঘরে যে একবার প্রবেশ করেছেন সেই বলেছেন কেউ এখানে এসে সিসটাইন চ্যাপল এবং র‌্যাফেল-এর সংগ্রহশালাটি যেন মিস না করে! আসলে এরকম প্রায় ২২ ধরনের আলাদা আলাদা সংগ্রহশালা নিয়েই এই ভ্যাটিকান জাদুঘর। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতা থেকে শুরু করে মিসরীয় চিত্রকর্ম সবই প্রায় রয়েছে। এই জাদুঘরও কোনো নির্দিষ্ট জাতি বা গোষ্ঠীর ইতিহাস ধারণ করেনি। বরং এটি ধারণ করছে সমাজ ও সংস্কৃৃতির এক অপূর্ব ঐতিহাসিক নিদর্শন। বিভিন্ন মানচিত্র এবং আধুনিককালের ধর্মীয় অনেক চিত্রও সংগ্রহশালায় আছে। দীর্ঘ ৯ মাইলজুড়ে রোমান ক্যাথলিক চার্চ-এর ভ্যাটিকান সংগ্রহশালা নিয়ে এই মিউজিয়াম। বছরে প্রায় ৪০ লাখেরও বেশি দর্শনার্থী এই মিউজিয়ামে যান। এ মিউজিয়ামেও লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, রাফায়েল এবং মাইকেল অ্যাঞ্জেলোদের মতো বিখ্যাত চিত্রকরদের আঁকা ছবি আছে।

ল্যুভর মিউজিয়াম [ফ্রান্স]

পৃথিবীর বিখ্যাত সব জাদুঘরের তালিকায় ওপরের সারিতেই থাকবে ল্যুভর মিউজিয়ামটি। পৃথিবীর সেরা স্থাপত্য সৌন্দর্যের মধ্যেও এটি সেরাদের তালিকায় রয়েছে। এটি একসময় দুর্গ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। একসময় ল্যুভর ফ্রান্সের রাজপ্রাসাদ হিসেবেও ব্যবহার করা হতো। কিন্তু বর্তমানে এই জাদুঘরটির সামনে কাচের তৈরি পিরামিড বসিয়ে নতুন রূপ দেওয়া হয়েছে। প্যারিসের ল্যুভর মিউজিয়াম, যাতে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর ও মহামূল্যবান অনেক চিত্রকলা এবং ভাস্কর্য।

প্যারিসের সিন নদীর তীরে অবস্থিত এই বিশাল স্থাপনা আজকের সমকালে এক মহাকালের ধারক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে সগৌরবে। প্যারিস শহরটা গড়ে উঠেছে সিন নদীর তীর ঘেঁষে। অনেকটা উত্তর-দক্ষিণে আড়াআড়িভাবে অবস্থিত এই নদীর তীরেই গড়ে উঠেছে ল্যুভর। ১২০০ সালে নির্মিত যে ভবনকে ঘিরে এটি প্রথমে গড়ে ওঠে তা ছিল ফরাসি সম্রাট দ্বিতীয় ফিলিপের রাজকীয় দুর্গ ও প্রাসাদ। শিল্প সংগ্রহশালা হিসেবে ল্যুভরের সার্বিক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হতে সময় লাগে মোট ২০০ বছর। ল্যুভর হচ্ছে নানা ভবনের এক বিশাল সমাহার। ১৫৪৬ সালে এর পশ্চিম দিকের ভবনের কাজ শুরু হয় সম্রাট প্রথম ফ্রান্সিসের নির্দেশে। শুরুতে এতে কেবল বিভিন্ন রাজকীয় দ্রব্যসামগ্রী প্রদর্শনের জন্য রাখা হতো। সম্প্রসারিত ভবনগুলোর কাজ শুরু হয় ১৬২৪ সালে। তখন এ কাজের নির্দেশ দেন সম্রাট ত্রয়োদশ লুই। শিল্প সংগ্রহশালা হিসেবে ল্যুভরের ভবনগুলোর সামগ্রিক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয় আরও অনেক পরে। সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়নের আমলে এই জাদুঘরের সামগ্রিক নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ল্যুভরের স্বর্ণযুগ সম্রাট প্রথম নেপোলিয়নের শাসনামল। তার নেতৃত্বে সপ্তদশ শতাব্দীজুড়ে সমগ্র ইউরোপে ফ্রান্সের প্রাধান্য বিস্তৃত হলে ল্যুভরের সংগ্রহ সম্ভার নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু তার পতনের পর এসবের অনেক কিছুই বিজিত দেশগুলোকে পুনরায় ফেরত দেওয়া হয়। ফলে ফরাসি দেশপ্রেমিক ও বিশ্বের শিল্পানুরাগী ব্যক্তিদের দানে ল্যুভর ক্রমেই সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। ১৮৪৮ সালে ল্যুভর রাষ্ট্রের সম্পত্তিতে পরিণত হয়। বর্তমানে এতে ছয়টি প্রশাসনিক বিভাগসহ পৃথক গ্যালারিতে গ্রিক, রোমান, মিসরীয় ও প্রাচ্য দেশীয় অসংখ্য শিল্প নিদর্শন রয়েছে। এ ছাড়া মধ্যযুগ, রেনেসাঁ এবং আধুনিককালেরও বহু বিখ্যাত শিল্পী ও ভাস্করের শিল্প ও ভাস্কর্য কর্ম রয়েছে। বিশ্বনন্দিত শিল্পীর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য রেম্বান্ট, রুবেন্স, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি ও টিশিয়ানের নাম। দ্য ভিঞ্চির বিশ্ববিখ্যাত শিল্পকর্ম ‘মোনালিসা’ রয়েছে এখানেই। মোনালিসার অবস্থান ডেনন উইংয়ের দোতলায়। আরও রয়েছে প্রাচ্যের নিদর্শন এবং কিছু অংশে গ্রিক ও মিসরীয় নিদর্শন। আরও একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে ফরাসি ভাস্কর্যের বিশাল সমাহার।

গিমে মিউজিয়াম [ফ্রান্স]

ল্যুভর মিউজিয়ামের মতো আরেকটি সমৃদ্ধ জাদুঘরের নাম বলতে গেলেই সবার আগে চলে আসে গিমে মিউজিয়ামের নাম। গিমে জাদুঘর তৈরির পেছনে ছিলেন ফ্রান্সের বিশিষ্ট শিল্পপতি এমিল গিমে। তারই নামানুসারে এই জাদুঘরের নাম করা হয়েছে গিমে জাদুঘর। তিনি ১৮৭৬ সালে জাপান, চীন, ভারতবর্ষ, মিসর, গ্রিস ভ্রমণ করেছিলেন। তার ছিল প্রত্নসামগ্রী সংগ্রহ করার শখ। ফলে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের সময় তিনি বিপুল পরিমাণ প্রত্নসামগ্রী সংগ্রহ করেছিলেন। যা তিনি পরবর্তীতে পুরোটাই নিজ দেশে নিয়ে এসেছিলেন। আর এই বিশাল সংগ্রহশালাটি জনসম্মুখে প্রদর্শনের জন্য ১৮৭৯ সালে ফ্রান্সের নিজ শহরে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেন। পরে প্যারিসে বর্তমান গিমে জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করে সব সংগ্রহই এখানে স্থানান্তর করেন। প্রতিষ্ঠার প্রায় এক দশক পেরিয়ে যাওয়ার পর ১৮৮৯ সালে প্যারিসে শুরু হয় গিমে জাদুঘরের নতুন যাত্রা। এ জাদুঘরটি বিশেষভাবে পূর্ব ও দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর প্রত্নসামগ্রী দিয়ে সাজানো হয়েছে।

মাদাম তুসো জাদুঘর [যুক্তরাজ্য]

বিখ্যাত জাদুঘরগুলোর কথা বলা হবে আর সেখানে মাদাম তুসো জাদুঘরের নাম  আসবে না এমনটা হতেই পারে না। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থিত এই জাদুঘরে খ্যাতিমানদের  মোমের মূর্তি তৈরি করে রাখা হয়। এই জাদুঘর ধারণ করে সময়কে। ধারণ করে মানুষকে। আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ এই জাদুঘর, কারণ এর সময়োপযোগিতা। সেই এরিস্টটল থেকে শুরু করে অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান কিংবা স্টিফেন হকিং— কে নেই এই মাদাম তুসো জাদুঘরে। এ কারণেই এই জাদুঘরটি বিখ্যাত হয়েছে পৃথিবীজুড়ে। তবে এর শুরুটা একটা ইতিহাস। ফরাসি বিপ্লবের সময় নিজেই এই সংগ্রহের সূচনা করেন মাদাম তুসো। কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে তার কাটা মাথাটিকে দিয়ে মোমের প্রতিকৃতি তৈরি করতেন তুসো। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত নমুনাটি হচ্ছে প্রথম ফরাসি রাজার কাটা মাথার প্রতিকৃতি। এরপরই শুরু হয় মাদাম তুসো জাদুঘরের পথচলা।

ব্রিটিশ মিউজিয়াম [যুক্তরাজ্য]

হাজার বছরের ইতিহাস সংবলিত নানা নিদর্শন সংরক্ষিত আছে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে। লন্ডনের এই বিখ্যাত জাদুঘরটি মানব সভ্যতা ও ইতিহাসের এক অনন্য নিদর্শন। সংগ্রহের সেই তালিকায় পৃথিবীর পুরো ইতিহাসটাই যেন লুকিয়ে আছে। এটি প্রাচীন জাদুঘরগুলোর একটি। জাদুঘরটি ১৭৫৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত নানা চিত্রকর্মের বিশাল সংগ্রহ নিয়ে এটি বর্তমানের অন্যতম সেরা মিউজিয়াম। পদার্থবিজ্ঞানী স্যার হ্যান্স স্লোয়েনের সংগৃহীত জিনিসপত্রের ওপর ভিত্তি করেই জাদুঘরটি শুরুতে গড়ে ওঠে। তিনি প্রায় ৭১ হাজারেরও বেশি বস্তু প্রদান করেছিলেন। বর্তমানে পুরো জাদুঘরটির সংগ্রহশালা ৭০ লাখ ছাড়িয়েছে। তবে এর মধ্যে মাত্র ৪০ লাখ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। প্রতিবছর গড়ে ৬০ লাখ দর্শনার্থী এই জাদুঘর দেখতে যান। মিসরীয় সভ্যতারও বিশাল অংশ রয়েছে এখানে।

হার্মিটেজ মিউজিয়াম [রাশিয়া]

এটি পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম ও প্রাচীন জাদুঘর। শুরুতে এরমিতাজ ভবন ছিল সেন্ট পিটারসবুর্গের মিখাইলব প্রাসাদে। পরবর্তীতে সরকারি অর্থায়নে সেন্ট পিটারসবুর্গের শ্রেষ্ঠ তিনটি প্রাসাদ বরাদ্দ করা হয়। বিশ্বের জনপ্রিয় জাদুঘরগুলোর তালিকায় প্রথম সারিতেই রয়েছে জাদুঘরটি। ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে সেন্ট পিটারসবুর্গের তৎকালীন রানী দ্বিতীয় ক্যাথরিনের নির্দেশে জাদুঘরটির নির্মাণ শুরু হয়। ১৮৫২ সালে এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। শিশকিন, লেভিতান, আইভাজোতুস্কি, কুইনজি, রোপিনসহ আরও অনেক বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পীর আঁকা চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে এখানে। প্রতিবছর দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ এ বিখ্যাত জাদুঘর দেখতে আসেন। জাদুঘরটির তিন মিলিয়ন আইটেমের সামান্য কিছুই প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে। ছয়তলা বিশাল ভবনটিতে উইন্টার ভবন, ছোট আশ্রম, নিউ আশ্রম, প্রাচীন আশ্রম ও হার্মিটেজ নামের ভবনটি সবার জন্য উন্মুক্ত।

রঁদ্যা জাদুঘর [কানাডা]

ভাস্কর্য নিয়ে কথা বলা মানেই বিখ্যাত রঁদ্যাকে নিয়ে কথা বলা। আসলে এটিকে ভাস্কর্য না বলে নানা ভাস্কর্যের সমাহার বলাই উচিত। উঁচু সুবিশাল এক দরজা খুললেই দেখা যাবে অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। বিশ্বের যে কোনো জাদুঘর রঁদ্যার ভাস্কর্য সংগ্রহে রাখতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করে। প্যারিসে একাধিক জাদুঘরে রঁদ্যার ভাস্কর্য আছে। তবে মূল সংগ্রহটিই রয়েছে প্যারিসের রঁদ্যা জাদুঘরে। ইউরোপের বিভিন্ন চিত্রকলার জাদুঘর পরিদর্শনে নানা শিল্পীর অসংখ্য অতি নিখুঁত, সুন্দর, শৈল্পিক ভাস্কর্য রয়েছে, কিন্তু রঁদ্যার দ্য থিঙ্কার অদ্বিতীয়! একজন মানুষ নগ্নগাত্রে বসে আছে, একটি হাত আলতোভাবে পড়ে আছে হাঁটুর ওপর অন্যটি থুঁতনিতে লাগিয়ে গভীরভাবে চিন্তামগ্ন! এ যেন অদ্ভুত ভাস্কর্য, যেন পাথর প্রাণ খোদাই করে ফোটানো! রঁদ্যা ছিলেন সর্বদাই জীবনের নানা দিক নিয়ে উত্সুক। সারাজীবন তিনি নানা সংগ্রহে মত্ত ছিলেন, যার মধ্যে গ্রিক-রোমান সভ্যতা অন্যতম। জাদুঘরের বিভিন্ন দেয়ালে তার নিজস্ব সংগ্রহ ও চিত্রকর্ম ঝুলছে। এর মধ্যে রেনোয়া, অ্যাডভার্ড মুসস্ক, ক্লদ মোনের অমূল্য পেইন্টিং রয়েছে।

One thought on “ইরাবতী সাপ্তাহিক গীতরঙ্গ: বিশ্বখ্যাত জাদুঘর

  • সাহিত্যের ‘জাদুবাস্তবতা’ আর বাস্তবের ‘জাদুঘর’, দুটোর প্রতিই একটা আগ্রহ বোধ করি। স্বভাবতই আগ্রহ নিয়ে পড়লাম ‘গীতরঙ্গ’। উপভোগ্য আয়োজন। বাংলাদেশসহ, এশিয়ার অন্যান্য দেশের জাদুঘর সম্পর্কে জানতে পারলে বেশ হতো। রকমারি কাঁথা নিয়ে এর আগে ইরাবতীতে দারুণ সমৃদ্ধ একটা আর্টিক্যাল পড়েছিলাম। দারুণভাবে নিজেকে মেলে ধরছে ‘ইরাবতী’- ঋদ্ধ হচ্ছে প্রতিনিয়ত তার সম্ভার। আরো সমৃদ্ধি ঘটুক। ইরাবতী টিমের প্রতি শুভকামনা।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>