Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

তিনটি অণু রহস্য গল্প

Reading Time: 7 minutes

আজ ৩১ অক্টোবর কবি ও কথাসাহিত্যিক যশোধরা রায়চৌধুরী’র শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।


 সিরিয়াল

পরিস্থিতি চোপরাকে ভাল লাগে না তোমার অনমিত্রাদি? কী সেক্সি। এ্যাই রুরু, দ্যাখ টুশকিদিদিকে? স্ট্রাইপ পাজামায় শুদ্ধ দেসি মহব্বতের হিরোইনটার মত দেখাচ্ছে না?
উত্তর আসেনা। বাচ্চাটা ছোট্ট, পা দোলাচ্ছে। একটু অন্যমনস্ক। রোগা লিকপিকে । কথাগুলো শুনলো কিনা বোঝা গেল না। টুশকি, অনমিত্রার মেয়ে , একটু অস্বস্তিতে সরে গেল। কী আর বলবে । সবেমাত্র তেরো। পরিস্থিতি চোপরার পোস্টার আড়চোখে দেখেছে।
রম্যার চোখ ঘুরছে। ও কথাটা বলেছে, বলেই আবার অন্যকিছু ভাবছে। হাতে কোকের গ্লাস ধরা।
এই পাড়ায় বেশি আসা হয়না রম্যার। অনমিত্রাদির বাড়ি এলে নিজেকে অনেকটা উচ্চস্তরের মনে হয়। এই জীবন বড় বেদনার। টাকাপয়সার চিন্তা রম্যার পিছু ছাড়ল না আজীবন কাল। ওকে কুরে কুরে খায় এই অবস্থাটা। দ্বিতীয়বার বিয়ে করেও বরের উপার্জন এমন হল না কোনদিন যে হাঁপ ছাড়বে। শমীক চাকরিতে স্থিতু হল না । কেন, কেন , কেন?
শমীকের সঙ্গে ওর বিয়ের আগে অনমিত্রাদিরাই শমীকের বন্ধু হিসেবে অনেকটা বড় একটা ভূমিকায় ছিল। প্রায় পাত্রপক্ষই বলা যায় ওদের।
শমীক কেমন ছেলে, কতটা ভাল চাকরি করে, জানতে, রম্যার বাবা এসেছিলেন অনমিত্রার অফিসেই।
কিন্তু অনমিত্রা তো তখন বলেইনি, শমীক এতটা অন্যমনা, এতটা অগোছালো।
ওর তো পার্সোনালিটি প্রবলেম আছে।
অনমিত্রাও জানে, এখন রম্যা এসেছে মানেই টাকা চাইতে এসেছে।
ট্যাক্স তুলতে এসেছে রম্যা। শমীক যে বিবাহযোগ্য, ভাল ছেলে , এই সার্টিফিকেট দিয়ে যে ভুল করেছে একদা অনমিত্রা, আজ তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে আবার। প্রায় প্রায়ই করতে হয়। হাল সেভাবে না ধরলেও, সংসার-গাড়ি আটকে গেলে তখনকার মত ফুয়েল দিতে হয় অনমিত্রাকে।
ওটাই ট্যাক্স। ভালমানুষির। বিপদ বুঝে কেটে না পড়তে পারার।
রুরু কিছু খায়না। মিষ্টি, সিঙাড়া। ওর নাম কী? টুশকি জিগ্যেস করেছিল। রম্যা খুঁচিয়েছিল ছেলেকেঃ বলো নাম বল রুরু। উত্তর না পেয়ে বলেছিল, ওর নাম রোহিতাশ্ব। রুরু। বাপের মতই গেঁতো হয়েছে।
অনমিত্রাদি, জানো নিশ্চয়ই, ওটা মল্লিকা সেনগুপ্তের ছেলের নাম। কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত। এক সময়ে অনেক আবৃত্তি করেছি ওর কবিতা। আজকাল জীবনে কবিতা নেই।
কথাটা বলার সময় রম্যার মুখ কঠোর, কঠিন। শক্ত। শমীক এবারের চাকরিটাও ছাড়ল। পরে অন্য কিছু চাকরি ঠিকঠাক না পেলে…। আবার একটা স্কুলে চেষ্টা করছে। তুমি একটু চেষ্টা কর না গো? আমার অবস্থাটা কীরকম জানো ত, রুরু জানে, সেই ‘ দিন আনি দিন খাই’ সিরিয়ালের মিনতির মায়ের মত। না রে রুরু?
রুরুর সামনে সিনেমা নিয়ে আলোচনা? সিরিয়াল নিএ? ওদিকে সোফায় বসা অনমিত্রার মন ছনছন করে।
রুরু অন্যদিকে তাকিয়ে। মায়ের কামিজের কাপড় ধরে গোঁজ হয়ে বসে থেকেছে।
অনমিত্রাদি, যেজন্য এলাম সেটা বলি। শমীকের মায়ের প্রচন্ড শরীর খারাপ। ঘা টা তো ছিলই, ওঁর ঘরে দুর্গন্ধে ঢোকা যায়না। আয়া কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে যাবে। এখন পা পচে উঠেছে। পোকা উড়ছে ।
নির্বিকার মুখ করে বিভীষিকার গল্প বলে রম্যা। অনেকদিন আগে এভাবেই শুনিয়েছিল ওর প্রথম বিয়ের কথা। ওর প্রথম বরের প্রতিরাতের অত্যাচারের পুংক্ষানুপুংক্ষ বিবরণ। তখন পাশে দাঁড়িয়েছিল অনমিত্রা। আজও দাঁড়াবে।
শমীকের তো কিছু হল না। বুঝতেই পারছ। বাবার কাছে থেকে কতবার আর টাকা নিয়ে নিয়ে চালাব? মা ত লোভী, নোলা এমন। সব খেয়ে নেয়। বিস্কুট, কেক, চকোলেট আমি রুরুর জন্য রাখি। সুগারের রুগি তো। ঘা আরো বাড়ে। তাই বুড়িকে বাড়িতে রাখা চলবে না।
উফ বীভৎস। আর পারছে না অনমিত্রা। এই বিবরণ কখন শেষ হবে? কী চায় মেয়েটা , তাড়াতাড়ি পয়েন্টে এলে পারে।
গতকাল আবার আমার পিশেমশাই মারা গেছেন। আমাদের যা সময় যাচ্ছে।
বালি ময়লায় দাঁত কিচকিচ করা কিছু রাস্তার ধারের হোটেলের ভাতের মত, এত কথা আর হজম করতে পারছে না অনমিত্রা। বিরক্তি, অস্থিরতা। খারাপ লাগা। অপরাধবোধ। কিছু কিছু লোক খুব ভাল মনে করাতে পারে, জগতে সে ছাড়া আর সবাই কী জব্বর আরামে আর আনন্দে আছে। অনমিত্রার জীবনে যে কোন দুঃখ কষ্ট নেই, ও যে আরামসে বসে আছে সুখের মগডালে, এটা বিশ্বাস করিয়ে দিতে পেরেছে রম্যা।
বাবা কাল পিশের খবরটা পেয়ে আসানসোল চলে গেছে । ফিরলেই টাকাটা শোধ দিয়ে দেব। এখন হসপিটালাইজ করতে খুব খুব দরকার গো, দশ হাজার টাকা।
এইবার ঝুলি থেকে বেড়াল বেরোল। অনমিত্রা, সোফাতে পা বদলে বসল।
সেই ট্যাক্স।
শমীকের চাকরি নেই, বাবার থেকে ধার নেবার লজ্জা। পুজো আসছে। সেইকারণে মাসিমাকে হসপিটালাইজড হবার মত অসুস্থ হতে হল। পিশেমশাইকে মরতে হল। গল্প দিচ্ছিস ভালই, রম্যা। তোকে ত গত পনেরো কুড়ি বছর ধরে দেখেছি। তোর এই দ্বিতীয় বিয়েটার আগের থেকে তোকে চিনি। আমার টাকা ফিরবে না।
জানত অনমিত্রা, উপায় ছিল না। এ টি এম থেকে দশ হাজার তুলে নিয়ে এসে রেখেছে। তারও সংসারে চাপ আছে। কিন্তু ভদ্রতাবোধ থেকে নিস্তার নেই যার, সে জানে মুখ ফুটে কিছুতেই বলতে পারবে না রম্যাকে, না রে পারব না, পারছি না।
রম্যা ফোনে যখন আসার কথা বলেছিল, আগেই বলেছে, সব কথা তোমাকে দেখা হলেই বলব গো, তবে দশ হাজার টাকা যদি বাড়িতে থাকে, তাহলেই একমাত্র যাব। দমদম থেকে একঘন্টা ট্র্যাভেল করে টালিগঞ্জ যাওয়ার কোন মানেই হয়না।
টাকা নেই, তবে এটিএমে আছে, এটি এম ত আর খুব দূরে নয়, কাজেই ওই অজুহাত কাজে লাগেনা।
আচ্ছা শমীক না হয় চাকরি করেনা। রম্যা এত ধুরন্ধর মেয়ে, এভাবে কন্ডিশন করিয়ে একদম দশ হাজারই নিতে পারে। রম্যা কেন চাকরি করছে না?
তুই একটা চাকরি দেখ নিজে, রম্যা । শমীক যেটা করছে, ঠিক করছে না। কিন্তু তুই কেন বাড়িতে বসে আছিস?
তাহলে শমীকের সব চাড় চলে যাবে অনদি।ও তখন বসে বসে আমার ঘাড়ের ওপর খাবে। ও পুরুষমানুষ । ওকেই সংসার টানতে হবে।
তুই মল্লিকা সেনগুপ্তর কবিতা পড়িস, আর এসব বলছিস?
হুঁ:। কবিতা বেরিয়ে যায় যখন কোন মেয়ের বর চাকরি ছেড়ে দেয়। আমার ছেলেও মানুষ হবে না গো, আমি চাকরি করলে। জানো, শমীকের মায়ের কথা? মহিলা আমাকে বলে, তুই শমীকের সঙ্গে শুবি না। ও তোকে টাকা দেয়না যদি এনে। দিবি না। কুড়ি বছর বয়সে বিধবা ত। খিদেগুলো মেটেনি। রোজ বলে বুড়ি, শমীক চাকরি করে না, ওর সঙ্গে আছিস কেন? মনের মতন নাগর জুটিয়ে চলে যা না।
এসব অকাতরে ছেলের সামনে বলে রম্যা।
অনমিত্রা গিয়ে টাকাটা বার করে আনে, বান্ডিলে।
এ টি এম থেকে আজই তুলে এনেছিল টাকাটা।
রুরু, ওর দিকে চেয়ে থাকে। তারপর রুরু রম্যার দিকে তাকায়।
উঠে দাঁড়ায়। এই প্রথম গোটা বাক্য বলে।
মাম্মা, চলো চলো। সিরিয়ালের টাইম হয়ে যাবে ত। দিন আনি দিন খাই? আন্টি টাকা দিয়ে দিয়েছে তো। এবার চলো তাড়াতাড়ি। মিস করে যাবে তো, তখন তোমার ঠাম্মার থেকে গল্পটা শুনতে হবে। আজ ওরা মিনতির মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেবে না?

স্মৃতি

শুরু থেকে শেষ সবটা মন দিয়ে শুনবেন কিন্তু। নইলে ধরতে পারবেন না।
লোকটা বলল আমায়।
গা সামান্য গুলোচ্ছে এখনো। মাথা টলছে। বসে আছি পা ঝুলিয়ে , হাসপাতালের বেডে।
পাশের বেডেই ওই লোকটা। মাথার ব্যান্ডেজ। দেখতে পাগড়ির মত। বড় একটা অপারেশন হয়ে গিয়েছে। এখন পথ্যি পাচ্ছে। এখন তার সেরে উঠতে হবে খুব দ্রুত। বাড়ি ফিরতে হবে।
নিজের জীবনের গল্পটা বলছিল আমাকে। কেন ? আমি জানতেও চাইনি, কিন্তু যেন আমাকে শুনতেই হবে। এভাবে, ওর স্ত্রীর কথা বলছিল। ওর স্ত্রী কত ভাল ক্যারামেল পুডিং বানাত তার কথা বলছিল। চিনি গলিয়ে নাকি কালো করা যায়… সেইভাবেই , খুব ধরে ধরে বানাত নাকি বৌটা।
বছর দশেকের বিয়ে ওদের। এখনো ছেলেপিলে হয়নি। বউ প্রথমটা খুব ভালবাসত ওকে, বলছিল। তারপর কেন যেন, পরের দিকে ওর মনে হত ও বেশি সাদাসিধে, একটু গাঁইয়া ভাবে ওকে তাই ওর বউ…
শুনে আমার একটু একটু শরীর খারাপ লাগছিল। এত খুঁটিয়ে আমাকে এসব বলছে কেন। কেমন যেন অদ্ভুত লোকটা।

শুরু থেকে শুনেছেন, ম্যাডাম? মন দিয়ে শুনেছেন?
হ্যাঁ শুনছি। কিন্তু আপনি উত্তেজিত হবেন না যেন। আপনার শরীর এখনো ত ভাল না। সারেন নি ত পুরো। এই তো কাল অপারেশন হল।
হ্যাঁ হ্যাঁ সে খেয়াল আছে আমার। আমার অপারেশন হয়েছে আমার খেয়াল থাকবে না ত কী। তারপর শুনুন না, প্লিজ…
শুনতেই হল। যদিও আমার মাথা ঘুরছিল। ক্লান্ত লাগছিল। চোখের ওপর এরা বড় বড় আলো জ্বেলে রাখে এমন…
সেদিন আমরা লং ড্রাইভে গেসলাম, বুইলেন? ও তো খুব বেড়াতে চায়। আমিও গাড়ি কিনেছি ওরই জ্বালায়। আসলে ওর হাঁ খুব বড়। যতটা খেতে পারবে তার চেয়ে বেশি কামড়ে ফেলে। আমাকেও বলল, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওনি তো কী হয়েছে? খালপাড়ের রাস্তাটায় চল। ওদিকে গাড়িফাড়ি বিশেষ থাকেনা।
ওহ। তারপর? অ্যাক্সিডেন্ট হল বুঝি?
আরে দাঁড়ান, দাঁড়ান। আমি তো হেব্বি চালাচ্ছিলাম। প্রথমটা বেশ আস্তে। তারপর ও-ই আমাকে ঠেলতে লাগল, আরো জোরে, আরো জোরে… বলে। এদিকে হঠাৎ দেখি উল্টোদিক থেকে একটা ট্রাক আসছে, আর সঙ্গে সঙ্গে বাঁদিকে স্টিয়ারিং ঘোরাতে গিয়ে, দেখলাম গোটা রাস্তা জুড়ে শুকনো লঙ্কা বিছিয়ে শুকুতে দিয়েছে কারা যেন…
ওহ্‌…
মাথা ঝুঁকিয়ে ফেললাম আমি। বমির মত টকটক কীসব উঠে আসছে আমার মুখ দিয়ে… আর পারছি না। চরাচর ভরে গেছে শুকনো লঙ্কার ঝাঁঝে।
নার্স ছুটে এসে গামলা ধরল সামনে। ঝলকে ঝলকে টক জল। লালচে রং মাথার মধ্যে।
কী, সিস্টার! ঠিক বলেছিলেন ত তাইলে, ডাক্তারবাবু। ওর অপারেশন লাগবে না। এমনিই মনে পড়ে যাবে সবকিছু…
ওই গলাটা শুনলাম। দশ বছরের চেনা গলা।

টেপ

কে , কে ওখানে?

পর্দাটা সামান্য দুলে উঠতেই সচকিত হয়ে বলে উঠলেন রিঙ্কি রায়। নাহ কিছু না হাওয়া বোধ হয় । নিজেকে সামলে নিল। বড় বড় চোখ মেলে অন্ধকারে শুয়ে শুয়ে আকাশ পাতাল ভাবছে। টেবিলের পাশে বিছানা । টেবিলে ছড়ানো বই পত্র। কত যে মেটিরিয়াল। কোনটার কাজ হয়ে গিয়েছে, কোনটা আধখানা । এখনো ধরাই হয়নি কিছু ক্যাসেট, ডায়েরি, অনেক গুলো বান্ডিল করা চিঠি।

তিন যুগের কথা একত্রে লিপিবদ্ধ করতে হবে তাঁকে। একই সঙ্গে পেন ড্রাইভে, সিডিতে এবং ক্যাসেটে এত রকমের ম্যাটার। আত্মকথন । সেই যারা, হোমে থাকে। সাদা আলখাল্লা জামা পরে। আজানুলম্বিত। মাথায় ঝাঁকড়া চুল। অ্যান্টি ডিপ্রেসেন্ট খায়। চোখে দৃষ্টি ছিল না এই কদিন আগেও কিন্তু হোমের সযত্ন চেষ্টায় ক্রমশ ভাষা ফিরে পেয়েছে কেউ কেউ। বয়ান দিয়েছে ডিজিট্যাল ফরমাটে।

পঞ্চাশ বছর আগের যারা। এখন অশরীরী। গলায় দড়ি দিয়েছিল অথবা মরে গিয়েছিল কোন না কোন ভাবে! “আন্ডার আন ইউজুয়াল সারকামস্ট্যান্সেস?” বাড়ির লোকের এগিয়ে দেওয়া দুধের গেলাস। অথবা শশায় মাখান সায়ানাইড?

দুনিয়া থেকে লোপাট হবার আগে তারাও লিখে গিয়েছিল ত। বলে গিয়েছিল। নিজেদের কথা। চিঠিতে ডায়েরিতে আঁকাবাঁকা অক্ষরে এবং শিথিল অযৌক্তিক ও অসংলগ্ন ভাষায়। ক্যাসেটে বলেছিল, যে ক্যাসেট পাওয়া গেছে ডাঁই করা। কারুর আলমারিতে, কারো সিঁড়ির নিচের ময়লা জিনিস রাখার ঘরে।

মৃতদেহের সঙ্গে যে ডকুমেন্টগুলো পুড়ে গিয়েছিল, সেগুলোর জন্য বুক ভাঙা কষ্ট হয়। রিংকি জানেন, সেগুলো ফিরে না পাওয়া তার কাছে কত বড় ক্ষতি।

হান্ড্রেড ইয়ারস অফ রেপ কালচার। এমন একটা টাইটেল মাথায় ঘুরছে তার। একশো বছরের ধর্ষিতাদের বয়ান লিপিবদ্ধ করার গুরুদায়িত্ব । আজকের ২০৫০ থেকে ব্যাক টু ১৯৫০। এইভাবে পিছিয়ে। কেউ কেউ ত বিশ্বাসই করতে চান না যে ২০০০ সালের আগেও মেয়েদের ধর্ষণ হত!

আসলে ডকুমেন্টের অভাব। যাবতীয় ডকুমেন্টেশন সহজলভ্য হতে শুরু করল ডিজিট্যাল জমানার পর থেকে।

সমস্যা একটাই। সেই কোন দূর ১৯৬০ বা ১৯৮০ সালের ডকুমেন্টের অর্ধেক স্পুল ক্যাসেটে বা চৌকো ক্যাসেটে। ফিতেয় পোরা সেসব আত্মকথন কী করে রিঙ্কি তুলে নেবে তার খাতায়। সেগুলোকে বাজিয়ে শোনার যন্ত্রই যে অমিল।

এখন রাত সাড়ে নটা। ক্লান্ত, অবসন্ন, সারাদিন নানা সমস্যার সঙ্গে ধস্তাধস্তিকে পর্যুদস্ত রিংকি শুয়ে শুয়ে অন্ধকারে তাকিয়ে মাথার মধ্যে চিন্তাগুলো গুছিয়ে নিচ্ছিল। আবার একটু পরেই উঠবে। চমকে, প্রায় আঁতকে উঠল একটা কলিং বেলের শব্দে। ক্যাঁ-ক্যাঁ করে কাকের মত ককিয়ে ওঠে তার এই নতুন বেল।

সিকিউরিটির স্ক্রিনে আগন্তুকের মুখ দেখতে উঁকি দেয় উঠে গিয়ে। মুখ দেখা যায় না। শুধু একটা সাদা আলখাল্লা চকিতে সরে যায়।

কী হল ব্যাপারটা? দ্রুত ছুটে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখল , দরজার সামনে একটা বিশাল প্যাকেট। বোমা রেখে গেল নাকি কেউ? আজকাল প্যাকেট বম্বের যুগ। আর এই ধর্ষিতাদের নিয়ে কাজ করতে গিয়েই রিংকি অনেক শত্রু বানিয়েছে ত।
নিচু হয়ে সন্তর্পনে প্যাকেট তুলল। নাহ, কী সব খটখট করেছে। খুলতেই বেরল, একটা হদ্দ প্রাচীন ক্যাসেট প্লেয়ার । যেরকমটা সে খুঁজছিল। এক গোছা ক্যাসেট! গায়ের ময়লার আস্তরণ থেকে স্পষ্ট এগুলো সেই ১৯৮০ নাগাদের।

একটা চিরকুট ঝরে পড়ল পায়ের কাছে।

আপনার সঙ্কলনে ধর্ষিতারা আছে। ধর্ষিতদের ও ভুলবেন না। ইশকুলের বড় দাদা, বাড়ির প্রাইভেট টিউটর এবং পরে অফিসের বসের দ্বারা ক্রমান্বয়ে রেপড হয়েছিলাম আমি। এই আমার বয়ান। ইতি, শশাঙ্ক সামন্ত। আশা করি কাজে লাগবে।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>