| 25 এপ্রিল 2024
Categories
গল্প সাহিত্য

গ্রামে তার খাঁটি ও নির্ভেজাল নাম । জিয়া হাশান

আনুমানিক পঠনকাল: 16 মিনিট

সন্ধ্যায় চেম্বারে পা দিতেই সিনিয়রের ডাক- এ্যাই কেসটা তুমি ডিল করো।

ওনারা হাইকোর্টে একটা রিট পিটিশন সাবমিট করতে চান। এ্যাই পেপারগুলায় ডিটেইল লেখা আছে। পড়ে দ্যাখো মেরিট ক্যামন? তিনি আমার দিকে একগোছা কাগজ আগায়ে দিয়া সামনে বসা দুই লোকের পানে ফেরেন, আপনারা ওর সাথে যান। পেপারগুলো দেখে ও সব ব্যবস্থা করে দেবে।

ব্যাস, তারা উঠে দাঁড়ায়। সাথে সাথে আমি তাদের বগলদাবা করি। কেননা আইন-আদালতের এই জিলিপ-জগতে মক্কেলরা যে কত মহার্ঘ-মফিজ তা জানতে এতদিনে আমার আর বাকি নাই।
দেশের সবচেয়ে উঁচা-ধ্বজাধারী আদালতের হাতের নাগালে পুরানা পল্টন এলাকার এই ভবনের পাঁচতলায় চার কুঠুরির পুরা ফ্লোর জুড়ে আমাদের সিনিয়র, মানে কোর্ট কাঁপানো ব্যারিস্টার আফতাব আহমদ চৌধুরীর আরশমহল্লা। ওকলাতি ভাষায় চেম্বার। আমরা জনাতিনেক তার খাস বান্দা, জুনিয়র ল-ইয়ার।

চেম্বারে বসার জন্য সিনিয়রের মাস্টার-মহল, চারদিক হাত-পা ছাড়ানো প্রশস্ত রুম ছাড়াও আমাদের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা ছোটো ছোটো কুঠুরি। আমি তাই মক্কেলদের নিয়া আমার কুঠুরিতে আসি। টেবিলের ওপাশে আমার মুখোমুখি বসায়ে তাদের কাগজপত্রে চোখ বুলাই। তার মেরিট যাচাই, রূপ-গুণ দোষ-ঘাট ক্যালকুলেশন, যোগ-বিয়োগ গুণ-ভাগ করার পথে নামি।

তাতে দেখি দেশের দীর্ঘাঙ্গী স্রোতধারা হিসাবে নাক উঁচু করা মেঘনার বুকে গতর তুলে চারদিকে হাত-পা ছড়ানো ভূভাগ আবুইল্যার চর। তার ঠিক বগলতলা দিয়া দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানীমুখী জলযানের শর্টকাট রুট, কম তেল খরচের সোজাসাপ্টা রাস্তা। ফলে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে জলের এই সব জানোয়ারের দল, লম্বায় একেকটা হাজার ফুট, উঁচায় দুই-তিন তলা, ইদানিং চারেও ঠেকেছে কোনো কোনোটা, তারা ইস্পাতের দেহ নিয়া এসে একের পর এক হাজির হয়। জল কেটে, তারে ছিঁড়েফেড়ে নাস্তানাবুদ করে আগায়। তখন গভীর অন্ধকারে পথ খুঁজে নিতে মাথায় গোঁজা চোখ খোলে। লাখো পাওয়ারের সার্চ লাইট জ্বালায়। তা বিপুল দাপটে আবুইল্যার চরের ওপর ঝাঁপাইয়া পড়ে। তার ঘর-দুয়ার উঠান-বারান্দা মায় গোয়াল-ভাড়ারঘর, সর্বত্র বিপুল বিক্রমে হানা দেয়। আলোয় উদ্ভাসিত করে তোলে পুরা চরাচর। ফলে চরের বাসিন্দাদের দৈহিক মিলনে বিঘ্ন ঘটে। বউয়ের উপর দাপাদাপির ছন্দ মার খায়। আর ছন্দ মার খেলে যেমন কবিতা হয় না, তেমনি দুই দেহের মিলনের সুফল ফলে না। দেখা মেলে না সন্তানের। চরবাসীরা তাই নির্বংশ হবার পথ ধরেছে।
সুতরাং তারা যাতে নির্বিঘে্ন দৈহিক মিলন, সন্তান উৎপাদনের ক্রিয়া-কলাপ সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে পারে তার জন্য তাদের চাই আঁধার, নিরবিচ্ছিন্ন অন্ধকার। মক্কেলদের আনা কাগজপত্রের আগাগোড়া জুড়ে তাই কালো আঁধারের জন্য আকুতি। জলদৈত্যর সার্চ লাইটের ওপর ইনজাংগশন জারির, নিষেধাজ্ঞা বলবতের নিবিড় দাবি।

তবে কাগজপত্রের আগাগোড়ায় আমার নজরের এক দৌড়ের মাথায় গিয়া বুঝে যাই যে, এই রিট পিটিশন টিকবে না। খারিজ হয়ে যাবে। কেননা তার চার হাত-পায়ের দৃঢ় হয়ে দাঁড়ানো তো দূরের কথা দু পায়ে টলোমলোতে থিতু হবার মুরোদটুকুও নাই। বরং সাবমিট করার সাথে সাথে জাস্টিস সাহেব, তিনি যতই আমাদের পক্ষের লোক, সিনিয়রের জিগরি দোস্ত এবং দলের সাবেক ক্যাডার হন না কেন, কলমের এক খোঁচায় তা বাতিল করে দেবেন। এমনকি তারে ময়লার ঝুড়ির খোরাক করে তুলতে, ছিঁড়েফেড়ে এজলাসের তলায় ফেলে দিতেও হয়তোবা কসুর করবেন না।

কেননা আপনারা জানেন, নাগরিকদের তথাকথিত ভদ্রভাষায় তারে দৈহিক মিলন বলা হলেও আদতে তা তো নারী-পুরুষের সঙ্গম। এক দেহের ভেতরে আরেক দেহের প্রবেশ, তার পর তুমুল দাপাদাপির মাথায় ঘন গরম রস ঢেলে দেয়া বইতো আর কিছু নয়। আবার কাগজত্রের কোথাও লেখা না থাকলেও আমারদের জানা গ্রামে তার খাঁটি ও নির্ভেজাল নাম চোদাচুদি।

সুতরাং তার জন্য আকুতি শোনা, রিট পিটিশন গ্রহণ করা, তারপর দাবি অনুযায়ী রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের প্রধানতম রুটে চলাচলকারী জলযানের আলোর ওপর ইনজাংশন জারি, নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করা দেশের সংবিধানের ভাষায় সম্মানের চূড়ায় আরোহী, মোঘল নগরীর মধ্যভুবনে শুভ্র-সফেদ আস্তরণে গা-গতর মুড়ে গুরুগম্ভীর মুখে খাড়া হয়ে থাকা আদালতের পক্ষে কীভাবে সম্ভব?
তাছাড়া দুনিয়া জুড়ে মানুষ আলো চায়। আদম থেকে আমাদের পাড়ার মুদি দোকানী আলী, কার্ল মার্ক্স থেকে আদালতের আর্দালি মতি, এমনকি সতীসাধ্বী সাবিত্রী থেকে কান্দুপট্টির সালমা, সবার আলোর জন্য আকুতি। তার পিপাসায় কাতুরি। কিন্তু এদের কাগজপত্রে, আবেদনের মুসাবিদায় একেবারে উল্টো পথে অন্ধকারের জন্য মিনতি। আলো বন্ধ করে দিয়া তার ওপর আগল ফেলে, সুইচ অফ করে আঁধারের বসতি গড়ে তোলার দাবি।

আবার অন্ধকারে সঙ্গমের বসতি ও বিকাশ সত্য, তাতে আমরা অভ্যস্তও বটে। তাই বলে আলোতে যে অসম্ভব তা তো নয়। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বিয়ের পর পর উত্তেজনা যখন আপাদমস্তকে মাখামাখি তখন তো অন্ধকারের অপেক্ষায় থাকিনি। বরং যখন চাহিদা মাথা চাড়া দিছে, সেটা সকাল হোক কিংবা দুপুর, ঘরের দরজার সিটিকিনি তুলে দিয়া বিপুল আলোতেই কাজ সেরে নিছি। তাছাড়া সিনেমা-নাটকে তো দেখা যায় ফকফকা আলোতেই নায়ক বিপুল বিক্রমে নায়িকার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর পর্নোগ্রাফিতে তো আলোর বন্যার মধ্যেই তাদের জমজমাট আসর বসে। এ আসন সে আসনে মাতে। সুতরাং আলোর দোহাই দিয়া, তার কারণে সঙ্গমে বাধা পড়ার যুক্তি খাড়া করে রিট পিটিশন দাখিল করা হলে তা কোনোভাবেই আদালতে টেকার উপায় নাই।

তাহলে এই বেচারাদের কী হবে। তারা এতো পথ পাড়ি দিয়া, নদী ভেঙে, যে মাটি লগ্ন দেহ, জলজ চেহারা, তাতে সাঁতরেও হতে পারে, এখানে বিপুল আশা নিয়া এসেছে। এখন কি নিরাশ হয়ে, হতাশায় হাবুডুব খেতে খেতে ফিরে যাবে? তা কী করে হয়। তাহলে আমরা বছর পাঁচেক ধরে পড়াশোনা করে দূর দেশ থেকে ঘাড়ে করে ব্যারিস্টারি ডিগ্রি নিয়া এসে এখানে বসে আছি কেন? গুরু-গম্ভীর আদালত ভবনরে চার হাত-পায়ে ঝাপটে ধরে আছি কাদের জন্য? তাছাড়া এদের হতাশ করে দিলে, নিরাশ হয়ে চলে গেলে, ফিসটা হাতিয়ে না নিতে পারলে আমাদের পেটের ভাত, দুচার বছর পর পর গাড়ির নতুন নতুন মডেল জুটবে কোত্থেকে?

আমি তাই কাগজপত্র পানে আরো মনোযাগ থিতু করি। আইনের গা-গতর টিপি। কেননা জানি সে যতই কঠিন হোক, ইটসাইজের বইয়ে বদরাগী চেহারা নিয়া খাড়া হয়ে থাককু না কেন, ফেসবুকের ভাষায় সে স্ত্রীলিঙ্গের অধিকারী। ফাঁক-ফোকরধারী। কিন্তু দরকারের সময় বউয়েরটা মুহূর্তের মধ্যে খুঁজে পেলেও আইনেরটার আর সন্ধান মেলে না।

মিলবে কীভাবে, হিসাব করে দেখি, আমার ব্যারিস্টারি জীবনে, যদিও তার বয়স খুবই কম, বছর চারেকের মতো, তার মধ্যে কখনো এমন, নির্বিঘে্ন সঙ্গম-সাধন করার জন্য আলো বিনাশের আবেদন নিয়া আসা কারো মুখোমুখি হতে হয়নি। শুধু তা-ই নয়, আমার সিনিয়র, যার হাতের মুঠোয় আমাদের পেশাগত জীবন আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা, সেই আফতার চৌধুরী, তার চল্লিশ বছরের আইনজীবী জীবনে, আমার ধারণা, এমন নজিরবিহিন রিট পিটিশনের আবেদন চোখে দেখেননি। তাই নিজে মামলায় হারার রিস্কের ঘরে এতোটুকু বসতি না নিয়া কাগজপত্রের মোড়াটা সরাসরি আমার ঘাড়ে তুলে দিছেন, জুনিয়ারগিরি করতে আইছো! লও, এই আজিব কেসের ঠেলা সামলাও।

শালার সিনিয়র! কাগজপত্রগুলো নাড়তে নাড়তে মনে মনে গজরাই, মাখন খাবার যম। ভালো ভালো কেসগুলা নিজের হাতে রাইখা দাও। তার মোটা মোটা ফিস মুঠায় পোরো। আর জটিল-ঝামেলা দেখলেই জুনিয়ারদের ঘাড়ে চাপাও। সকাল-সন্ধ্যা খাইটায়্যা মারো।

সিনিয়রের এরকম একপেশে কর্মকান্ডে আমার যৌবনের রক্ত টগবগ করে ওঠে, শালার বুইড়া! তোমারে দ্যাখাইয়্যা দিমু। হারি বা জিতি রিট পিটিশন দাখিল কইরা ছাড়মু। সিনিয়রের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়া কাগজপত্রের গা-গতরের গলি-ঘুপচিতে ঢু মারি। বারবার পাঠে নামি। শক্ত খুঁটি, জোরালো যুক্তি খুঁজে বেড়াই। যার উপর ভর দিয়া পিটিশনটা দাখিল করা যায়। কিন্তু খুঁটি তো দূরের কথা সামান্য কঞ্চিরও দেখা মেলে না।
শেষে টেবিলে আমার মুখোমুখি বসা মক্কেল দুজনের দিকে তাকাই। দেখি একজন খুব বয়স্ক, আমার দুনাও হতে পারেন। তার মুখে হালকা-পাতলা দাড়ির আবাদ। লম্বায় তারা মুঠো ছাড়ানো। তবে গোঁফ একেবারে ফকফকা। তাদের বংশাবলি গোড়া থেকে নির্মূল করা। ফলে তার অবয়বজুড়ে ‘তোমরা দাড়ি রাখবে আর গোঁফ ছেটে ফেলবে’-এর আঙুলি হেলনে কোরান-হাদিসের নিখুঁত উপস্থিতি। অপরজনের বয়স কিছুটা কম। তাও আমারে ছাড়ানো নিশ্চয়ই। তার আবার ক্লিনসেভ। তবে দুএকদিনে বোধহয় তাতে খুর কিংবা ব্লেডের কোনো হামলা চলেনি। ফলে দাড়ি-গোঁফেরা অবাধে মুখ বাড়ায়ে খোঁচা খোঁচায় রূপ ধরে আছে।
আমার চোখ তোলা, তাদের পানে তাকানো দেখে দাড়িঅলা নিজেই মুখ খোলেন-মোর নাম গফুর শিকদার। আর্জিতে মোর নাম লেহা আছে। গেরামের হগোলে মিইল্যা চররক্ষা সমিতি বানাইছে। মোরে হ্যার সভাপতি করছে। আর অরে সেক্রেটারি। অর নাম আবুল খায়ের। গেরামের হগোলে মিইল্যা মোগো দুইজনরে পাঠাইছে।’

হ্যাঁ, সিনিয়রের গছিয়ে দেয়া কাগজপত্রের মধ্যে আর্জি বা আবেদনপত্রের মতো একটা আছে। তাতেই মূলত: আলো-বিনাশের কথা জোর দিয়া বলা। তার তলার দিকে, পায়ের কাছে আঁকাবাঁকা অক্ষরে দুজনের স্বাক্ষরও হাজির বটে। কিন্তু রিট করতে অনেক খরচ। হাইকোর্টে বলে খরচও হাই। তার জোগান কে দেবে তার কোনো কথা নাই।

-ট্যাহা-পয়সা নিয়া ভাইবেন না। সমোস্যা তো হগোলের, বংশ রক্ষা করা, পোলাপাইন বানানোর তো হগোলের সাধ। তাই হগোলে মিউল্যা চান্দা দিছে। হেয়া লইয়্যা আইছি। কত লাগবে?
-পিটিশন দাখিল করতে হাজার বিশেক। তারপর তার পিছে ছোটাছুটি, ডেটের দিন হাজির হওয়া। তাতে আরো অনেক খরচ।
– হেয়া লাইয়া চিন্তা নাই। হগোলে মিইল্যা দিমু। রবিশষ্যের ফলন উঠলে ট্যাহা-পয়সার আর কোনো সমোস্যা অইবে না।
– কিন্তু আর্গুমেন্ট কী হবে? কিসের উপর ভিত্তি করে পিটিশন ফাইল করব?
-কী কন? আরগুমেন্ট? কত লাগবে? এ্যাই যে মোরে দ্যাহেন, এতো বয়স অইলো, প্রায় তিন কুড়ি। প্রথম এ্যাক বিয়া করলাম। হ্যার লগে ঘরসংসার করলাম পাঁচ বছর। কিন্তু কোনো মাইয়্যা-পোলার দ্যাহা পাইলাম না। মোনে করলাম বউয়ের দোষ। তাই আবার বিয়া করলাম। এহন দুই বউ নিয়া সংসার। পালা কইরা দুইজনের লগে ঘুমাই। তয় কামের কাম কিছু অয় না। আইজ তামাইত কোনো মাইয়্যা-পোলার মুখ দ্যাখতে পারলাম না। এহন মোর এতো বিষয়-আশায়, আবুইল্যারচরের চাইর আনি মোর এ্যাকলার দহলে। মুই চোখ বুজলে কেডা দ্যাখবে এতো সব, কন? আর অর অবোস্থা তো আরো খরাপ। বেজায় করুণ।
-কী রকম খারাপ?
-একেকটা বিয়া করে তিন-চাইর বছর তামাইত তারে পালে, তার উপর আচ্ছা মতো দাপায়। হেরপরও কোনো পোলামাইয়্যা দিতে পারে না দ্যাইখা ছাইড়া দ্যায়। আরেকটা আনে। এ্যাই রহম কইরা মনে হয় গোটা পাঁচেক জোয়ান জোয়ান মাইয়্যার লগে রাত কাডাইছে। সোহাগে-আদরে সব ঢাইলা দিছে। কিন্তুক কামের কাম কিছুই অয় নাই। আইজও আটকুড়া রইয়্যা গেছে। রাস্তা-ঘাটে বইরাইলে লোকজনে খ্যাপায়। আটকুড়া. . . আটকুড়া. . . বইলা চিক্কুর পাড়ে।
-বাট, এই সব আর্গুমেন্ট দিয়া তো রিট পিটিশন সাবমিট করা যাবে না।
-ছ্যার, অনেক ঘোরাঘুরি কইরা, সাত ঘাটের জল খাইয়্যা, মোরা আপনাগো কাছে আইছি। মোগো আর কারো কাছে যাইতে কইয়েন না। আপনারা এ্যাকটা বেবস্থা কইরা দ্যান।
-আপনারা কোথায় কোথায়, কার কার কাছে গেছিলেন?
-একোবারে পহেলা গেছিলাম পুলিশের কাছে। মোগো থানার আদিল দারোগারে কইছি এ্যাকটা বেবস্থা নেন। গাঙের জানোয়ারগুলার জ্বলন্ত চোখ বন্ধ কইরা দ্যান। অগো কইয়্যা দ্যান- মোগো চরের কাছে আইয়্যা যেনো চোখ না খোলে। সার্চ লাইট না জ্বালায়। আন্ধারা যেমন হাতাইয়্যা-মাতাইয়্যা চলে, হেরহম যেনো যায়। হেয়া না পারলে যেনো অন্য পথ ধরে। এতো বড় গাঙ, পথের অভাব কী? গাঙের ঐ পাড় দিয়া গ্যালেই তো পারে।
– দারোগায় কোনো ব্যবস্থা নেয় নাই?
– হ্যায় তো মোগো উপর উল্টা ঝাড়ি মারছে। কইছে জানেন, এ্যাই সব বিশাল বিশাল লঞ্চ, এগুলার মালিক কারা? তাগো পাওয়ার কতো? সবাই সরকারি দলের বড় বড় লিডার। তারা নামে-বেনামে এ্যাইগুলা চালায়। ঢাকা শহরের বড়লোকগো এলাকায় থাহে। মন্ত্রী-মিনিস্টারগো লগে চা-নাস্তা খায়। হ্যাগো জাহাজরে কিছু কইলে মোর চাকরি থাকবে না। সার্চ লাইট বন্ধ করতে কইলে তো জান-ই হাওয়া কইরা দেবে। আইজকাইল ধরো আর মারো বইলা যে সিস্টেম চালু হইছে, তাতে পুলিশ বইলা মোরে আর মানবে না। এক্কেবারে ক্রসফায়ারে দিয়া দিবো। তয় আপনারা সাম্বাদিকগো কাছে যাইতে পারেন। তাগো কন, আপনাগো সমস্যা তুইলা ধরতে। ঢাকার পেপার-পত্রিকায়, ভিডিও চ্যানেলে রিপোর্ট হইলে, চাইরদিকে হৈ চৈ পইড়া যাইবে। মন্ত্রী-মিনিস্টারগো টনক নড়বে। তহন মোরাও বেবস্থা লইতে পারমু।
-জার্নালিস্টদের কাছে গেছিলেন? তারা রিপোর্ট করেছে?
– মোগো থানা সদরের সাম্বাদিগগো কাছে গেছিলাম। তাগো আড্ডাখানা পেরেসকেলাবে যাইতেই হ্যারা ডকুমেন্টো চায়। তারপর কয়, কোন কোন জাহাজ লাইট মারে, আপনাগো ডিস্টার্ব করে, তাগো নামধাম লাগবে। চৌদ্দপুরুষের ঠিকুজি দিতে অইবে। মোরা কি স্কুল-কলেজের মাস্টার যে এ্যাইগুলা মুখস্তো কইরা রাখমু। আবার এ্যাকজনে কয় ফুটেজ লাগবে। বউয়ের উপর দাপাইতে দাপাইতে পাইরা উঠছি না এমন ভিডিও। তাঅইলে নাকি রিপোর্ট জমবে। হিট খাইবে। দ্যাশ-বিদ্যাশে ভাইরাল নাকি কি অইবে।
-তাহলে আপনাদের এখানে কে পাঠাইছে?
-হ, সাম্বাদিগরাই কইয়্যা দিছে উকিল ধরতে। শ্যাষে মোরা জেলা সদরে গিয়া মইজুদ্দিন উকিলরে ধরি। হেয় কয়, কোনো কিছুতে কোনো কাম অইবে না। জাহাজ কোম্পানির লগে আপনারা পারবেন না। এ্যাকমাত্তর হাইকোর্ট পারবে। তাতে এ্যাকটা রিট পিটিশন কইরা দ্যান। দ্যাখবেন বাপ বাপ বইলা জাহাজ চোখ বন্ধ কইরা ফালাইবে। তাই মইজুদ্দিন উকিল মোগো আপনাগো ছারের ঠিকানা দিয়া দিছে। আর এ্যাই যে কাগজপত্রের লগের আর্জিখান দ্যাখছেন, হেয়াও হ্যায় লেইখা দিছে।
হ্যাঁ, স্বীকার করেতই হয়, কিছু বানান ভুল থাকলেও আর্জিখানা বেশ সাজানো-গোছানো। মূল কথাটা একেবারে ক্লিয়ার করে লেখা। বাট, তারে বেইজ করে তো আর রিট পিটিশন দাখিল করা যায় না।
-ছার, তা অইলে আপনে মোগো গেরামে লন। হাতে কলমে বুইঝা দ্যাখেন। মোরা আপনার লাইগা হগোল বেবস্থা করমু। সহিসালামতে লইয়্যা যামু আবার ফিরাইয়্যা দিমু।
অ্যাঁ, বলে কি? একটা রিট পিটিশন দাখিল করার জন্য এখন আমারে গহীন গাঙের অচিন চরে যেতে হবে? রাত কাটাতে হবে তার কুড়েঘরে? অসম্ভব। দরকার নাই অতো কিছুর। ফিসের সামান্য কয়েকটা টাকার জন্য এতো বড় রিস্ক নেবার দরকার কি? তার চেয়ে বলে দেই, হবে না। আপনাগো আর্জিতে রিট পিটিশন দাখিল করার মতো মেরিট, খুঁটির মতো দৃঢ় কোনো যুক্তি নাই। আপনারা অন্য পথ দেখেন।
– লন, ছার। আপনার নতুন অভিজ্ঞতা অইবে।

হ্যাঁ, তা ঠিক। জীবনে কখনো চরে, নদীর একেবারে কোলের ভেতরে, পানির হাতের তেলোতে বসবাস করার সুযোগ হয় নাই। কিন্তু এদের আর্গুমেন্ট তৈরির বাস্তব অভিজ্ঞতা, রিয়েল এক্সপেরিয়েন্স লাভের জন্য তো মেয়েমানুষ দরকার। তার উপর দাপাদাপির অভিজ্ঞতা চাই। এরা এতো কিছু করছে, আসা-যাওয়ার সব ব্যবস্থা। তাহলে দাপাদাপির করার জন্য মেয়েমানুষের জোগান, সুন্দরী-স্বাস্থ্যবতী দেখে কাউরে দেবে নাকি?
না, সে ব্যাপারে দেখি টনটনে হিসাব। নাজায়েজ, অস্তাগফিরুল্লাহ ভাব, ‘ক্যান, মেমসাহেব আছেন না? হ্যারে নিয়া লন। মোরা হ্যার লাইগাও হগোল বেবস্থা করমু। কন, কি কি করতে অইবে। কোন কোন বেবস্থা লাগবে।’
বাট, তাদের মেমসাহেব মানে সোনিয়া, আমার শয্যার জুড়িদার। একে তো তার নাক উঁচা স্বভাব। তারপর শহরের অলিগলি, রাজপথে বড় হওয়া মেয়ে। সুতরাং তারে ওরকম চরে, বিদ্যুৎ-ইন্টারনেটবিহিন গেরামে যেতে, তারপর অ্যাটাচড বাথরুমবিহিন ঘরে থাকার প্রস্তাব দেয়া তো সূর্যরে পশ্চিমে উদয় হতে বলার মতো দুঃসাধ্য।

তবে যেহেতু চ্যালেঞ্জ নিছি, যে করেই হোক রিট দাখিল করে সিনিয়ররে দেখায়ে দেব। তাই চেষ্টা করতে, সোনিয়ারে অন্তত একবার বলে দেখতে অসুবিধা কি? আমি তাই কল দেই। স্কুলের খাতায় নম্বর বসানোর ফাঁকে ফোন ধরে। ওমা! সে দেখি একবাক্যে রাজি হয়ে যায়। বরং উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে, ‘দারুণ হবে। একেবারে খাঁটি রিসোর্টে থাকার এক্সপেরিয়েন্স গ্যাদার হয়ে যাবে। আমরা যে কক্সবাজারের রিসোর্টে গেছিলাম। একগুচ্ছ টাকা দিয়া ছনে ছাওয়া, কাঠের দরজা-জানালাঅলা কটেজে ছিলাম, তাতো বানানো। একেবারে মেকি। বাট, তুমি যা বলছো, তা তো একেবারে খাঁটি, নির্ভেজাল । চলো, দুটো রাত কাটায়ে আসি। দারুণ অভিজ্ঞাতা হবে। ফেসবুকে ছবি দিলে লাইক-কমেন্টের পাহাড় জমবে। তার পর আবার গল্প করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়া যাবে।
-বাট, বাথরুম একে তো ঘর থেকে দূরে, তারপর আবার হাই কমোডও নাই।
-দুদিনের ব্যাপার তো ম্যানেজ হয়ে যাবে।
-তাছাড়া রাতে কিন্তু গাইগুই করা যাবে না। আজ থাক, ভালো লাগছে না বলে পাশ ফিরে শোয়া চলবে না। চাহিবা মাত্র দিতে বাধ্য থাকিতে হইবে।
-আহা রে! আগে যাবার ব্যবস্থা করো। তার পর দেখা যাবে তোমার কতো মুরোদ।

 

দুই

শুনেছি গ্রামের মেয়েরা ঘন ঘন প্রেগনেন্ট হয়, বছর বছর বাচ্চা বিয়োয়। কিন্তু কই! আবুইল্যার চরে তো তার কোনো আলামত চোখে পড়ে না। এখানে আসার পর রাস্তাঘাটে হাঁটাহাঁটিতে, ক্ষেত-কোলায় কাজ-কামে ব্যস্ত অনেক মেয়ে দেখা হয়েছে। তাদের ওপর নজররে শুলের মতো তীক্ষ্ণ করেও কারো দেহের মধ্যাঞ্চলে চরের মাথা তোলা, উঁচু হয়ে ওঠার কোনো আলামত দেখিনি। বরং শীতের নদীর জলের মতোই সমতল মনে হয়েছে তাদের দেহের মধ্য ভূভাগ।

তাহলে কি এই এলাকা, স্থলভাগের সাথে সংযোগবিহিন যে বিচ্ছিন্ন চর, তাতে এখানে আলাদা নিয়ম-কানুন বিধি- ব্যবস্থা থাকা বিচিত্র নয়, তার আওতায় কি জরায়ুতে ভ্রুণের বাসা বাধার সাথে সাথে, পোয়াতির কোঠায় পড়ার পরপরই মেয়েদের ঘরের বাইরে পা দেয়া মানা? জনসম্মুখে বের হওয়া নিষেধ? তাই তারা সব ঘরে বসে তা দিচ্ছে? ডিম পাড়ার অপেক্ষায় দিন গুনছে?

তার সন্ধানে তাই পাড়া বেড়ানোর ছদ্মনামে সোনিয়ারে পাঠাই-যাও, ঘরে ঘরে ঘুরে আসো।’ সে সোৎসাহে চরের এমাথা থেকে ওমাথার সবগুলো বাড়ির অন্দরমহলে পা দেয়। রাজধানী শহর, কারো কারো কাছে রূপকথার রাজ্য, সেখান থেকে আসা রাজকন্যার মতো কেতাদুরস্ত সুন্দরী পেয়ে সেসব মহলের বাসিন্দারা তারে ঘিরে ধরে। ঘরের হাঁড়ির খবর তো বটেই, পেটের পাতের অবস্থাও ফাঁস করে দিতে কসুর করে না।
তবে তাদের কথা শুনে সোনিয়া হতাশায় ভেঙে পড়ে। তাই ফিরে এসে বলে-‘না, সবার পেটই হাঁড়ির ডালের মতো সমান। এতটুকু উঁচুর কোনো আলামত, প্রেগন্যান্সির এতটুকু লক্ষণ কারো দেহেই নজরে পড়েনি।’
– বাট, তার কারণ কি বলেছে?
– সবাই একবাক্যে বলেছে জল-জানোয়ারের সার্চ লাইট।
অ্যাঁ! তাই নাকি? তাহলে তো কেল্লা ফতে। রিট পিটিশন দাখিলের আর্গুমেন্ট হাজির। কারণ, হিসাব করে দেখি- জল-জানোয়ারের সার্চ লাইটের অত্যাচারে মেঘনার বুকে গা তোলা এক চরে গড়ে ওঠা পুরো একটা গ্রামে একজনও প্রেগনেন্ট মহিলা নাই, সর্বোচ্চ আদালতে রিট দাখিল করার জন্য এর চেয়ে বড় আর্গুমেন্ট আর কিছু হতে পারে না। সোনিয়া হতাশ হলেও আমি তাই খুশিতে আর্কেমিডিসের মতো পোশাক-আশাক ছাড়া নগ্ন দেহে নয়, বরং আচ্ছাদনে পূর্ণ মোড়া অবস্থাতেই ‘ইউরেকা ইউরেকা’ বলে চিৎকার করে উঠি। আনন্দের আতিশয্যে উদ্বাহু নৃত্য জুড়ে দেই।

আর মনে মনে আর্গুমেন্টের পক্ষে পয়েন্ট সাজাই-মাই লর্ড! আমাদের দেশ ঘন বসতিতে ফার্স্টক্লাসের অধিকারী। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এ সম্মান বয়ে আসছি। কিন্তু এখন যদি বিশ্ববাসী জানতে পারে আমাদের পুরো একটা এলাকায় একজনও প্রেগনেন্ট মহিলা নাই, সেখানে মানব চাষ বন্ধ হয়ে আছে। আগামীতে সেখানে কোনো মানবের আগমন ঘটবে না। তাহলে নিশ্চয়ই ফার্স্টক্লাস থেকে থার্ডক্লাসে নামায়ে দেবে। তখন লজ্জা-অপমানে বিশ্বদরবারে আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যাবে। উঁচু করে নয়, বরং নিচু মুখে সবার সামনে আমাদের দাঁড়াতে হবে।’

-দ্যাটস হোয়াই, মাই লর্ড! আপনারা নড়েচড়ে বসুন। আমাদের সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখার পক্ষে পা বাড়ান। তার শুরুর পদক্ষেপ হিসাবে, একেবারে প্রাইমারি স্টেপে আবুইল্যার চরবাসীর রিট পিটিশন গ্রহণ করে জল-জানোয়ারের সার্চ লাইটের উপর ইনজাংশন বলবৎ করুন। তাদের রক্তচক্ষু বন্ধ করে দিয়া চরবাসীর অবাধে দৈহিক মিলনের, তাদের বংশরক্ষার পথ সুগম করে দিন।
আর আদালত যদি আমার যুক্তির জোরে ঘাড় কাতায়, সম্মত হয়ে সার্চ লাইটের ওপর ইনজাংশন জারি করে দেয় তাহলেই কেল্লা ফতে। ছুটির দিন সকালের ঘুম হারাম করে, এতোখানি পথঘাট মাড়ায়ে, এখানে আসা, বিদ্যুত-ইন্টারন্টেবিহিন এলাকায় থাকা, অ্যাটাচড বাথরুমবিহীন ঘরে রাত্রিযাপন করা এবং সবশেষে সোনিয়ার উপর দাপাদাপি করা সার্থক হবে। আর মোটা অঙ্কের ফিসে মানিব্যাগ টইটুম্বুর হওয়াকে না হয় উপরি পাওনা হিসাবে ধরে নেয়া যাবে।

তবে আমি জানি, আমার এ লড়াই আলোর বিরুদ্ধে। খরস্রোতের বিপরীতে নৌকা চালানোর মতো তা বেজায় কঠিন। তাই তারে আগায়ে নেয়ার জন্য চাই সজোরে বৈঠা মারা, দৃঢ়তম প্রমাণ হাজির করা। চরবাসীর মুখের কথা, তাদের বক্তব্য হতে পারে সে নিখুঁত প্রমাণ। নিখাদ দলিল। আমি তাই চররক্ষা সমিতির সভাপতি গফুর শিকদাররে ডাকি-যান, আর্জেন্ট মিটিং কল করুন। সবাইর আসতে বলুন। আমি তাদের কথা রের্কড করে নেব। কীভাবে সার্চ লাইট অত্যাচার করে, দৈহিক মিলনে বাগড়া দেয়, তার তরতাজা লাইভ বক্তব্য আমার চাই। আমি পুরুষদেরটা নেব। সোনিয়া মহিলাদেরটা। তাদের সমস্যা কোথায়, পোয়াতি হতে বাধা কোনখানে ইত্যাদির নিখুঁত বিবরণ তুলে নেবে।’

আমরা ঢাকা থেকে খুব সকালে, ঘড়ির কাঁটার কথা মতো সূর্যের মুখ তোলার পরপরই যাত্রা করি। চরবাসীর ব্যবস্থাপনার আওতায়, রেন্ট-এ-কার থেকে ভাড়া করা গাড়ি আমাদের নিয়া একটানা দৌড়ে, মাঝে গোটা দুই ফেরির বুকে ভর দিয়া নদী পার হয়ে বিকাল নাগাদ ঘাটে পৌঁছে। সেখান থেকে ট্রলারে চেপে আবুইল্যার চরে এসে পা দেই।

নৌকার পিছে যন্ত্র লাগায়ে নুতন নাম নেয়া সে জলযান থেকে চরে নেমেই সোনিয়া উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে-ওয়াও! কি বিশাল খোলা জায়গা। সামনে দূর দিগন্ত ছাড়া আর কোথাও চোখ আটকায় না।’ উপরে তাকায়ে হাঁ-হয়ে যায়-ওমা! পুরো আকাশটাই তো এক নজরে দেখা যাচ্ছে।’ শেষে আমারে ডাকে-জানো! জীবনে কোনোদিন এতো বড় আকাশ দেখিনি। জানালা পথে দরদালানের ফাঁক-ফোকড় দিয়া দেখা টুকরা-টাকরাই ছিল এতোদিন আমার মনে গাঁথা। আকাশ যে এতো বড়, পুরো ভুবনজুড়ে গা-গতর মেলে দিয়া উপুড় করা বাটির মতো আমাদের চারদিকে ঘিরে আছে তা আমার কখনো মনে হয়নি।’ শেষে চোখ নামায়ে বলে-দ্যাখো, সামনে দ্যাখো। কী সুন্দর সবুজ ক্ষেত, ফসলের মাঠ।’

সামনে তাকায়ে দেখি সত্যিই ছবির মতো দৃশ্য। দক্ষিণ দিকের বাড়ি-ঘর ও তাদের ঘিরে কিছু কলাগাছের ঝোপঝাড় ছাড়া পুরো চরজুড়ে ক্ষেতের পর ক্ষেতে নানা জাতের ফসলের আবাদ। গুচ্ছ গুচ্ছ চেহারা নিয়া তারা যেন তায়ে মশগুল মুরগির মতো মাটি আগলে বসে আছে। তবে দূর থেকে তাদের সবুজ গা-গতর ছাড়া আর কিছুই নজরে পড়ে না। কিন্তু দেশের প্রধান ফসল, যাদের মুঠোয় পোরা আমাদের পেটনীতি আর অর্থনীতি, সেই ধান ও পাটের কোনো দেখা নাই। এখন মৌসুম নয় বলে কি?

– না না। তারা খুবই বনেদী ফসল। তাই তাগো মতিগিতি আলাদা। খাঁটি ও নির্ভেজাল মাটি ছাড়া তারা গা তোলে না। নড়েচড়ে ফুইড়া বার হয় না। কিন্তু চরের বয়স তো বেশি না, মাত্তর বছর দশেক। এহনো তার দেহজুইড়া বালুর ব্যাপক আনাগোনা। বলা যায় তার হাতেই গড়া এতো বড় চরের পুরা দেহ। তাই তার গতরে যা ভালো ফলে মোরা কেবল সেই সব ফসলের আবাদ করি।

তখন মনে পড়ে এই চরের ইতিহাস খুবই ছোট। তাই কারোরই অজানা নয়- বছর দশেক আগে সে নদীর গহ্বর থেকে প্রথম মাথা তোলে। তারপর দ্রুত চারদিকে হাত-পা ছড়ায়। ফলে অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই সে পূর্ণ দেহাবয়ব নিয়া হাজির হয়। এখন দৈর্ঘ-প্রস্তে তার আকার-আয়তন প্রায় দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়ানো। তবে তার দক্ষিণ দিকটা বেশি উঁচু। সেখানে আবুল নামের একজন এসে প্রথম বসতি গাড়ে। চাষবাসে লাঙল চালায়। তাই তার নামে আবুইল্যার চর হিসাবে তার খ্যাতি। আর এক থেকে আরেকের দেখা মেলে না মেঘনার এমন দুই বাহুর, কিনারার মধ্যে তুলনামূলকভাবে পশ্চিমেরটা কাছের হওয়ায় তার সাথেই চরের যাবতীয় সখ্যতা। দেশের দক্ষিণের বিভাগীয় শহরের করতলে যাদের দিন চলে এমন ইউনিয়ন ও থানার সাথে প্রসাশনিকভাবে গিট্টু বাঁধা।

আমরাও সে কিনারার ঘাট থেকে ট্রলারে চেপে নদী ভেঙে চরে পা দিয়া স্কুলঘরে আস্তানা গেড়েছি। সেখানেই বসে গফুর শিকদারের জরুরি সভা। পুরুষদেরটা সামনের খোলা চত্বরে আর মহিলাদেরটা ভেতরের কোনো ক্লাসঘরে।
আমার সভায় দেখি যুবকের সংখ্যাই বেশি। তাদের গতরের চাহিদার আধিক্য হেতু তারা দলে দলে এসে হাজির হয়। কিন্তু কোণা থেকে প্রথমে উঠে দাঁড়ান বুড়ো মতো এক লোক। দেখে মনে হয় সত্তুরের উপর বয়স। প্রায় হাড় জিরজিরে শরীর। আমি তাই অবাক হয়ে তার পানে তাকাই, অ্যাঁ! এখনো উনি বউরে পোয়াতি বানানোর চেষ্টা চালান? না পাইরা সাক্ষী দিতে আসছেন?

কিন্তু তিনি তার ধার কাছ দিয়াও যান না। শোনান আরেক কাহিনি, ‘বোজ্জেন! হগোল মাডির দোষ। চরের দেহ বালুতে ভরা। তাগো আবার ছাড়া ছাড়া ভাব। একজনের লগে আরেকজন গলাগলি ধরে না। এ রহম আলগা পিরিতে মানুষের নাহান জগতের সবচাইতে বনেদী ফসল জন্ম লয় ক্যামনে, কও তো বাপু?’
আরেকজন সভার মাঝখান থেকে খাড়ায়- ‘হুজুর! সব পানির কারসাজি। মোরা হ্যার বুকের উপর চাইপা বইছি। ঘর-সংসার করছি। হ্যার হেয়া সইজ্জ হইবে ক্যান। তাই অভিসাপ দিছে এহানে কোনো মাইয়্যা পোয়াতি হইতে পারবে না। সবাইরে নিব্বংশ কইরা ছাড়বে।’

অ্যাঁ! তাহলে আমাদের কী হবে? সোনিয়া তো বাচ্চা নিতে চাইছে। তাই হিসাব করে দেহজুড়ে ডেঞ্জার পিরিয়ড বহন করে নিয়া আসছে। খাঁটি ও নির্ভেজার কটেজে রাত্রিযাপন করে তার রোপন কনফার্ম করতে চাইবে।
তাই অন্দরমহলে সভাশেষ করে এলে জিজ্ঞেস করি, ওদিকের খবর কী?
– জানো, ওরা কেউ অর্গাজম চেনে না। বুঝাইয়্যা বলার পর বলে- ওমা! সে আনন্দ তো সোয়ামীরা পায় দ্যাখছি। গোঙরাইয়্যা গোঙরাইয়্যা মজা লোটে। তাই তো তারা মোগো কাছে আসে, পিছু পিছু ঘোরে। নতুন নতুন শাড়ি-কাপুর কিইন্যা দ্যায়।
অ্যাঁ! কেউ-ই দেখি জল-জানোয়ার কীভাবে অত্যাচার করে তা বলেনি। তাহলে রিট পিটিশনের আর্গুমেন্টের কি হবে? তার পক্ষে দলিল-প্রমাণ কই পাব? আমি তাই ভাবনায় পড়ে যাই। পাশে বসা গফুর শিকদার পানে প্রশ্নবোধক চেহারা নিয়া তাকাই।
– হেয়া তো আপনে নিজে পেরাকটিস করলেই হাতেনাতে ট্যার পাইবেন। হের লাইগা যুৎসই মতো ঘরে আপনাগো থাকনের, রাইত কাটানোর বেবস্থা করছি। লন যাই, আপনারে পৌঁছে দিয়া আসি।

 

।। তিন।।

– মাই লর্ড! আই ট্রাই মাই বেস্ট। আমার ওয়াইফ, আইনসম্মত স্ত্রীর সাথে দৈহিক মিলনের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। বাট স্যাটিসফাইড সেক্স যারে বলে তা সম্ভব হয়নি, মাই লর্ড।
আমার কথায় কোর্টরুমজুড়ে হাসির হল্লা ওঠে। এজলাসে শীতের নদীর মতো থম ধরে বসে থাকা জাস্টিস সাহেব তাই অর্ডার অর্ডার বলে বার দুই সামনের ডেস্কে হাতুড়ি ঠোকেন। তাতে হল্লা মুখ লুকায়, থেমে যায় বটে। কিন্তু আমার কালো গাউন ধরে সহকর্মী ল’ইয়ারদের টানাটানি চলতে থাকে। তারা আমারে বসায়ে দিতে চায়-থাম থাম, কোর্টরুমে সবার সামনে এসব কি বলছিস? বউয়ের সাথে সেক্স করতে পারিসনি।’ আর বিপক্ষের সিনিয়ার ব্যারিস্টার উঠে দাঁড়ান-আর বলতে হবে না। কোর্ট আপনার আর্গুমেন্ট বুঝে গেছেন। ডিটেইলস না বললেও চলবে।’

কিন্তু সবটুকু না বললে আমার সাবমিট করা রিট পিটিশন গ্রহণ করা হবে তার নিশ্চয়তা কোথায়। আমি তাই মুখ চালায়ে যাই, মাই লর্ড! আইনসম্মত স্ত্রীর সাথে অবাধে সেক্স করতে পারা মৌলিক অধিকার। তাতে কোনো রকম বিঘ্ন করা, এতটুকু বাধা দেয়া হিউম্যান রাইটসের চরম লঙ্ঘন। আবুইল্যার চরের পাশ দিয়া চলাচলকারী নিশিত রাতের যন্ত্রযানগুলো চরবাসীদের নির্বিঘে্ন সেক্স করতে দিচ্ছে না। আমি নিজে তার ভুক্তভোগী। একেবারে খাঁটি ও নির্ভেজাল ভিকটিম।

– ইউ আর এ সিটিডুয়েলার, আপনি তো শহরে বাস করেন। তাহলে আপনি ভিকটিম হন কীভাবে?
– ইয়েস মাই লর্ড! আমাদের সৌভাগ্য হয়েছে সেই দুর্গম চরে যাবার। তাতে আবাসগড়া নারী-পুরুষের সাথে খোলামেলা কথা বলার। তারপর তারা আমাদের থাকতে দেয় চরের একেবারে দক্ষিণের একটা ঘরে। ছনে ছাওয়া, বাঁশ-বেতের বাঁধন আর চাঁচের বেড়ায় সম্মৃদ্ধ সে ঘরে ঢুকে সোনিয়া, আমার আইনসম্মত স্ত্রী টগবগিয়ে ওঠে- ওমা! এ দেখি রিয়েল কটেজ। আদত ছনের ঘর।

বিয়ের পর আমাদের হানিমুন হয়েছিল সাগরপাড়ের এক নিরিবিল কটেজে। ছন-কাঠ-বাঁশের তৈরি অতীব ভারী ভাড়ার সে বাসগৃহের অকৃত্রিমরূপের সংস্পর্শে এসেই হয়তোবা সোনিয়ার ভেতরে হানিমুনের অত্যাবশকীয় ক্রিয়া-কর্মের স্পৃহা মাথাচাড়া দেয়। দেহ-মনে তা গুন গুনিয়ে ওঠে। আমার কানের কাছে মুখ এনে তাই ফিসফিসায়-ওহ! আমার তো এখনই ইচ্ছা করছে।

তবে তার ইচ্ছে পুরণে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে ঘরটা ভালোমতো দেখে নেই, তার পরিধি ছোটখাট হলেও লেপা-পোছায় পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। বোঝাই যায় আমাদের জন্য বিশেষভাবে বানানো। ঘরের একপাশে খাট, তাতে দুজনের রাত্রিযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় নতুন বালিশ-তোষক-চাদরের সমাহার। আবার উত্তর পাশে দু কদম দূরের ঘরে দেখি বাথরুম। তাতে ঘটিবাটি-পানিও হাজির। বুঝতেই পারছেন মাই লর্ড! তারা আমাদের জন্য ঘরটাকে কটেজ করে তোলার প্রয়াসে কোনো কার্পণ্য করেনি।

শেষে পশ্চিমের জানালা খুলে দেখি কাছেই নদী। হাত পঞ্চাশেক দূরে একেবারে মেঘনা হাজির। তার ঢালু তীর উপস্থিত। তাতে এসে মুখ খুবড়ে পড়া ঢেউয়ের ছলাৎ ছলাৎ আওয়াজ ঘরের ভেতরেও মুখ বাড়ায়। আর দূরে নিবিড় অন্ধকারের ভেতরে তারার মতো আলোর ফুটকি মেঘনার বুকে জলযানের উপস্থিতি জানান দেয়। তারা যে মন্থর পায়ে আগায়ে আসছে তা বুঝতেও কোনো অসুবিধা হয় না। এখানে, আবুইল্যার চরের ঠিক দক্ষিণ মাথায় এসে তারা ঘাড় ঘোরাবে। পশ্চিম থেকে আগায়ে উত্তর, মানে রাজধানীর পানে মুখ ফেরাবে। এখন তারা তারার বিন্দুর মতো ডিমলাইটে সজ্জিত হলেও তখন তাদের রক্তচক্ষু মেলে, সার্চ লাইট জ্বেলে চারদিক দেখেশুনে তবেই মুখটা ঘোরোতে হবে। তা না হলে যে কোনো মুহূর্তে চরের সাথে তাদের মোলাকাত হবার, তার বালুর হাতের মুঠোয় আটকা পড়ার আশঙ্কা ষোলোআনা।

– লার্নেড ব্যারিস্টার সাহেব! আপনি তো দেখছি ফাঁকা ময়দান পেয়ে এদিক ওদিকে ঘোড়া দাবড়ে বেড়াচ্ছেন। এপাশ ওপাশের কথা বলে যাচ্ছেন। দয়া করে আসল কথায় আসুন। প্লিজ! কাম টু দ্যা পয়েন্ট।
– ইয়েস মাই লর্ড! এবারে আসল কথায় আসছি। আপনি জানেন, চরের রাত একটুতেই, দু কদম আগায়েই গভীরে রূপ নেয়। তাই সন্ধ্যার কিছু পরে আমাদের ঘরে রেখে সবই চলে গেলে চারদিক একেবারে নিজ্জুম হয়ে ওঠে। কোথাও কোনো জন-প্রাণীর সাড়াশব্দ পাওয়া যায় না। এমনকি, বৃহৎ গাছপালার আধিক্য না থাকায় তাতে বসত নেয়া রাতজাগা পাখির ডাক কিংবা ডানা ঝাপটানো, কোনো কিছুই আর কানে আসে না। তাই হেরিকেনের ম্লান আলেটুকুরে গলাটিপে মেরে, নব ঘুরায়ে অফ করে দিয়া বিছানা নেয়া ছাড়া আমাদের আর কিছু করার থাকে না মাইলর্ড।

আপনি জানেন, তখন দুটি দেহের মিলনের জন্য সবচেয়ে মনোহর পরিবেশ, সোনালি-রূপালি মিলিয়ে বর্ণালি সুযোগ এসে হাজির হয়। আমরা তাই তারে সদ্ব্যবহারের পথে পা দেই। প্রাইমারি স্টেপ, প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে শরীর থেকে পোশাক-আশাকরে বিদায় করার উদ্যোগ নেই। দেহ থেকে তার এতোটুকু আভাসও দূর করার পথ ধরি। তা উপর থেকে নামতে নামতে নাভীর নিচে পৌঁছার পর যখন পরষ্পররে জড়ায়ে ধরি ঠিক তখন, আগে থেকে কোনো আভাস-ইঙ্গিত না দিয়া আচমকা আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আলো। তাকায়ে দেখি- জলযানের বহুল আলোচিত সার্চ লাইট। চরবাসীর ভাষায় রক্তচক্ষু। তার পাওয়ারের যেন কোনো কমতি নাই। লাখো ভোল্টেজ ছাড়ানো নিশ্চয়ই। সুতরাং সে তল্লা বাঁশের পিঠ দিয়া তৈরি সামান্য চাঁচের বেড়ারে মানবে কেন? তার বাধারে আমলে নিতে যাবে কোন দুঃখে। সে তাই তারে ভেদ করে, তার ফাঁক-ফোকড় গলে শুধু ভেতরে ঢুকে পড়ে না বরং রীতিমতো হাট বসায়। ঘরের আনাচ-কানাচ, কোনাকাঞ্চিতে একেবারে আসর খুলে বসে। ফলে পুরো ঘর আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। খিলখিল হাসিতে ফেটে পড়ে।

আর উড়ন্ত পাখি তির বিদ্ধ হলে যেমন স্থির হযে যায়। তার সব চঞ্চলতা, ডানা ঝাপটানো নিঃশেষ হয়ে পড়ে। ঠিক তেমনি আলোয় বেধা আমাদের দেহের সব নড়াচড়াও লোপ পায়। আমরা থির হয়ে যাই।
মনে হয় জলযানবাসী, তার হাজারো যাত্রীর লাখো চোখ আমাদের পানে চেয়ে আছে। অপলক চোখে দেখছে। তাই আমরা নড়ে উঠলেই তারা হৈ হৈ করে উঠবে। গ্রাম থেকে আসারা ‘ওই, ওই দ্যাখা যায় চোদাচুদি’ বলে চিৎকার জুড়ে দেবে। আমাদের তাই মিথুন মূর্তির মতো একে অপরকে জড়ায়ে ধরে থির হয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।

তবে আশার কথা, আগে থেকে আমাদের জানা যে, আলোর এই হাজিরা ক্ষণস্থায়ী। মাত্র ত্রিশ-বত্রিশ সেকেন্ড, বড় জোর এক-আধ মিনিট। কেননা সার্চ লাইট খুবই মান্যগন্য দিশারী। ভাব-গাম্ভীর্যে ভরপুর তার মুখ। তাই গাড়ির মতো চলন্ত অবস্থায় সব সময় চোখ মেলে থাকে না। বরং কুম্ভকর্ণের মতো কেবল প্রয়োজনের সময় তার ঘুম ভাঙে। তখন চোখ মেলে চেয়ে, চারদিক দেখেশুনে জলযানরে পথ বাতলে দিয়া আবার ঘুমায়ে পড়ে। বন্ধ করে ফেলে চোখের পাতা। তখন আবার গভীর-নিঝুম আঁধার এসে হাজির হয়। সে যথারীতি ঘন বসতি গাড়ে। আমরা তাই তার অপেক্ষায় নিশ্চল হয়ে থাকি।

তবে দ্বিতীয়বারের উদ্যোগে আরো দু কদম আগাতে সক্ষম হই। প্রথম কদমে আমরা পরস্পরের দেহে ক্ষিপ্র গতিতে হাত-মুখ চালাই। চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে তুলি। তারপর একে অপরে নিষ্পেশনে এক দেহে লীন হবার প্রয়াস চালাই। শেষে দ্বিতীয় কদমে আসে প্রবেশের পালা। মাই লর্ড! বিপুল অভিজ্ঞতায় সম্মৃদ্ধ আপনার জীবন। সুতরাং আপনি ভালো করে জানেন, সে এক জগৎজোড়া আনন্দময় মুহূর্ত। এমনকি তারপর অনবরত বিদ্ধ করা, সেও পরম মনোরম ক্রীড়া। আমি যখন সে খেলার শেষ প্রান্তে, পরম পুলকের আমার মুঠোয় আসে আসে, কেবল কব্জা করা বাকি। ঠিক তখন আবার জলযানের রক্তচক্ষু আমাদের বিদ্ধ করে। আমরা স্থির হয়ে যাই।

বাইরে তাকায়ে দেখি তাদের সারি। একটার পর একটা আলোর বিন্দু। যেন গভীর অন্ধকারে গাঁথা ফুটকির সচল মালা। সারিবদ্ধভাবে তাদের আগায়ে আসার আলামত। সে মালা এতো দীর্ঘ যেন মেঘনার এমাথা থেকে ওমাথায় ছড়ানো। সুতরাং তাদের যাত্রা শেষ হতে নিশ্চয়ই রাত পোহায়ে যাবে। আমাদের দেহ তাই আর্তনাদ করে ওঠে- হায় আল্লাহ! আমাদের তাহলে কী হবে? মিলনের মাথায় পৌঁছা সম্ভব হবে না?

কিন্তু হয় মাই লর্ড! কেননা আপনি জানেন, সে যখন আগমনের পথ ধরে, দুনিয়ার কোনো শক্তিই তারে ঠেকাতে পারে না। হাজারো বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে সে শেষ মাথায় পৌঁছায়। তাই মাই লর্ড! আমার স্খলন হয় বটে, তবে বুঝতে পারি, বিঘি্নত বারি পাতে তার আগের মতো তেজ নাই। নাই স্বাভাবিক গতি। তাতে বরং তার বিপুল ঘাটতি। ফলে সে লাখো-কোটি এক্স ও ওয়াই ক্রোমোজোমে সম্মৃদ্ধ হলেও তার একটারও দৌড়ে গিয়া সোনিয়ার কোনো এক্স ক্রোমোজোমের নাগাল পাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তারপর তার সাথে গলাগলি ধরা, এক দেহে লীন হওয়া এবং শেষে নয় মাসের মাথায় সন্তান হয়ে বের হয়ে আসা অলীক কল্পনা বৈ আর কী কিছু হতে পারে না, মাই লর্ড!

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত