আত্রাহাসিস আখ্যানে মহাপ্লাবন
আক্কাদিয় মহাকাব্য আত্রাহাসিস লেখা হয় খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তদশ শতকের দিকে। তখন হাম্মুরাবির বংশধর আমি-সাদুকা (১৬৪৬-১৬২৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) ক্ষমতায় আসীন। আত্রাহাসিস শব্দের অর্থ প্রগাঢ় জ্ঞানী।
পৃথিবী সৃষ্টির বহু পর। প্রবীণ দেবতারা প্রায়শ নানা ফরমায়েশে পৃথিবীতে ব্যস্ত রাখতেন নবীন দেবতাদের। তাইগ্রিস এবং ইউফ্রেটিস নদী খনন শেষ হলে নবীনরা আর মানতে পারল না। জ্ঞানের দেবতা এনকি দুনিয়ার কাজ করার জন্য নতুন কাউকে সৃষ্টির পরামর্শ দিলো। দেবতা গেশতুও সে নিমিত্তে উৎসর্গ করলো নিজের জীবন। দেবী নিন্তু মৃতের রক্ত, মাংশের সাথে মাটি মিশিয়ে তৈরি করলো সাতজন পুরুষ এবং সাতজন নারী। দেবতারা কিছুটা আয়েশি জীবন পেলো সত্য। কিন্তু খুব শীঘ্রই কোলাহল, বিবাদ আর অনাচারে ভরে উঠলো পৃথিবীর মাটি। দেবরাজ এনলিল সিদ্ধান্ত নিলো কিছু মানুষকে ছাটাই করার।
আরো পড়ুন: সুমেরিয় পুরানে মহাপ্লাবন
খরা, মহামারি এবং দুর্ভিক্ষের পরিকল্পনা হলো। প্রত্যেকবার এনলিল দুর্ভাগ্য নির্ধারণ করে; আর জ্ঞানের দেবতা এনকি বের হবার রাস্তা বলে দেয় মানুষকে। এনলিল দেবতালয়ে মানবজাতির জন্য মহাপ্লাবন প্রেরণে সিদ্ধান্ত পাশ করায়। প্রত্যক্ষভাবে না জড়িয়ে এনকি সতর্ক করে দেয় প্রিয় ভক্ত আত্রাহাসিসকে। প্লাবন শুরু হলো বুনো জন্তুর মতো। চারিদিক নিঃসীম অন্ধকারে ঢেকে গেলো সব। মানুষের দুরবস্থায় দেবতারা অব্দি কেঁদে উঠলেন। কিন্তু পরিস্থিতি শোধরানোর কোনো উপায় নেই। হঠাৎ দেখা গেলো নৌকা। মানুষ আর প্রাণীদের নিয়ে নোঙর করলো আত্রাহাসিস। বলি দিলো দেবতাদের উদ্দেশ্যে। উল্লসিত দেবতারা সাদরে বরণ করলো মানব জাতির বাঁচার প্রচেষ্টা। আত্রাহাসিস স্বর্গে গেলো। দুনিয়ায় নতুন করে আবাদ শুরু করলো মানুষ।
