শারদ অর্ঘ্য গল্প: অশ্বমন্ডিত । নাহার মনিকা
ঝিম ধরা গরমের দুপুর বেলায় রাস্তার মাঝখানে ঘোড়ার কি এমন মুখ থুবড়ে পড়ার কথা?
না কি শরীফুলের সঙ্গেই এমন হওয়ার কথা!
এমন হঠাৎ করে ঘোড়া শুয়ে পড়বে, আর শরীফুলের মাথার মধ্যে কাঠচেড়াইয়ের মত ব্যথা শুরু হবে, কে ভেবেছিল? কতক্ষণ বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে মেজাজ খাপ্পা হতে শুরু করলে ঘোড়ার লেজে মোচড় দিয়ে শরীফুল ধমকে ওঠে- ‘কারিশ্মা, হেই শুইলি ক্যান? ওট, ওট’।
কারিশ্মার খোলা চোখে বোবা রোদের প্রতিবিম্ব, কিন্তু শরীফুলের ধমকে তার কোন হেলদোল হয় না।
টনক অবশ্য শরীফুলের অনেকক্ষণ থেকেই নড়ছিল। ঘোড়ার সঙ্গে সে আছে, এসেছে। পিঠে চড়ে নয়। সেই গাধার মালিক বোকা বাপ-ছেলের মত তার দিকেও মানুষজন বিস্মিত হয়ে দেখেছে- ঘোড়ায় না চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল। হেঁটে তারা যে কারণে এসেছিল সে কাজ সেরে ফিরেও যাচ্ছিল। ঘোড়ার শরীর গতিক সুবিধার না, যে কোন সময় একটা অঘটন ঘটতে পারে এমন আবছা চিন্তা মনের ভেতর ঘুম পাড়িয়ে রেখে শরীফুল যাচ্ছিল। কিন্তু তেমনটা যে ঘটেই যাবে অতটা আশা করেনি। কিন্তু এখন!
পৌরসভার ইটগাঁথা রাস্তায় পৌঁছাতে এখনো আরো ঘন্টাখানেক হাঁটা, ছাতিরহাট কবিরাজ বাড়ি ছাড়িয়ে তিন কিলোমিটার মত চলে এসেছে। পড়বি পড় এখানে এসেই ঘোড়া মুখ থুবড়ে পড়লো! এসব ভেজালের কোন মানে হয়!
উঁচু মাটির রাস্তার দু’পাশে নিচু জমিতে কচকচে সবুজ ক্ষেত, ধানের বীজতলা। দূরে মাঠের মধ্যখানে শ্যালো টিউবওয়েলের থিতু হয়ে আসা শব্দ। কোন কৃষক তার ক্ষেতে লাগাতার সেচ দিচ্ছে। দূরের নুয়ে পড়া আকাশে খাবলা খাবলা সাদা মেঘ। কোথাও জনমনিষ্যি দেখা যায় না।
সকালবেলা রোদের এমন চড়বড়া ছিল না। বরং আকাশ দেখে শরীফুল বৃষ্টির আশংকা করেছিল। এখন আশপাশে কোন বড় গাছও নেই যে ঘোড়াটাকে টেনে নিয়ে সেখানে বসে জিরিয়ে নেয়। টেনে নামাতে হলে পাশের নিচু ঢালে নামতে হয়, সেখানে থেকে আবার তুলবে কি করে? চারপেয়ে জন্তুকে নামানো ওঠানো দুটোই একা মানুষের পক্ষে অসম্ভব যদি না সে পায়ের ওপর দাঁড়াতে চায়!
ঘোড়া শুয়ে পড়লে কি করতে হয় জানে না শরীফুল। এই বিড়ম্বনা থেকে কি করে রেহাই পাবে সেটাই বড় চিন্তা। নাহ, গ্রামে নিয়ে আসা বোকামী হয়েছে।
তা, শরীফুল চালাক ছিল কবে? হতো তার জায়গায় মাজেদুল, সরাসরি শহরে পশু হাসপাতালে চলে যেত। যদিও সেখানেও ডাক্তার থাকতো কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তবুও শহরে অন্তত মানুষজন, ঠ্যালা ভ্যান কত কি আছে।
গত পরশু থেকে বেগড়বাই করছিল কারিশ্মা। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে, নড়ে না, মাঝে মাঝে জ্বরাক্রান্ত রোগীর মত কাঁপে। সে কারণে সকাল সকাল উঠে মুসলেউদ্দীন কবিরাজের বাড়ি আসা। বুড়ো কবিরাজ নিজেই অসুখে ভুগছে। তাও লাঠি ভর করে বাইরে এসে কাজের লোককে দিয়ে একটা পাঁচন বানিয়ে বোতলে ভরে ঘোড়াকে খাইয়ে দিলো। প্লাষ্টিকের পানির বোতলে ভরে দিয়ে দিলো আরো দু’বোতল। বাসায় ফিরে দু’দিন খাওয়াতে হবে। কাঁচা ঘাস নিষেধ। পাঁচশো টাকার কড়কড়ে নোটটা পাঞ্জাবীর পকেটে ভরে লাঠি আঁকড়ে ঘরে ঢুকে গেলে শরীফুলও ঘোড়া নিয়ে সন্তষ্ট মনে ফেরার পথ ধরেছে। সঙ্গে ওষুধ পথ্য থাকা মানেই নিশ্চিন্তি। তা সে ঘোড়া বা মানুষ যারই হোক।
অল্প ঘুরপথ হবে তবু আনুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল। প্রায় দিন দশেক আনু মা’র কাছে এসে আছে। বাড়ির রাস্তায় এসে ফোন করেছিল। হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে রাস্তার ওপর এসেছিল আনু, ওর পেছন পেছন ঘোড়া দেখতে বাড়ির আরো লোকজন, বাচ্চাকাচ্চা। বাড়িতে ঢুকে ঘরের বারান্দায় বসে শরীফুল আনুর মুখ দেখছিল, আর আনু কারিশ্মার কেশর হাতাচ্ছিল, তার দিকে ফিরেও চাইছিল না। কিন্তু শরীফুল জানে আনু আসলে তাকেই দেখছিল, মনের সবটা দিয়ে দেখছিল। কথা বলছে ঘোড়ার সঙ্গে, গলা হাতিয়ে দিচ্ছে ঘোড়ার কিন্তু প্রশ্নগুলো তাকে। ঘোড়া দেখে ভীড় করে আসা বাচ্চাকাচ্চা লোকজন সবার সামনের আনু দু’এক মুহূর্তের জন্য বদলে গিয়ে শরীফুলের দিকে, শরীফুলের জন্য তাঁকাবে, যে চাউনি সর্বাঙ্গে এক পশলা শান্তি মেখে দেবে। অপেক্ষা করছিল শরীফুল। কিন্তু আনু সেভাবে তাঁকালো না। বরং একটা কুলা নিয়ে ঘোড়ার খাবারের জন্য উঠান পার হয়ে দৌড়ে গেল। ঘোড়ার পাশে দাঁড়িয়ে আনুর মা সাবধান করলো,‘ পোয়াতি মেয়্যা অমন দৌড়াইস না’।
শরীফুল ভেতরে ভেতরে চুপসে গেল।
কারিশ্মাকে হাতিয়ে দেখে সবার সামনের আনু রাগ করলো-‘যাওয়া উচিৎ পশু হাসপাতাল, তা না তুমি কবিরাজ বাড়ি নিয়া আইসলা!’
পশু হাসপাতালের কথা যে সে ভাবেনি তা না। কিন্তু সেখানে কি করনীয়, কি বৃত্তান্ত কিছু জানে না, আর কবিরাজ তার নিজের গ্রামের। আনুকে একটু দেখে যাওয়ার ইচ্ছেতেও লাগাম দিতে পারেনি।
শার্ট ঘামে ভিজে এখন শুকিয়েও গেছে। পিঠে ঘামাচি চড় চড় করছে। একহাতে যতটুক নাগাল পাওয়া যায়, শরীফুল পিঠ চুলকে নিলো।
সকাল থেকে তিন কিলোমিটার হাঁটা হয়ে গেছে। আরো এক বাকী। আসতে দুই, যেতে দুই। যাওয়ার সময় অতটা গায়ে লাগেনি। কারিশ্মার চোখে ঠুলি না থাকায় প্রথম প্রথম সদ্য জন্মানো শাবকের মত হকচকিয়ে রাস্তায় হাঁটছিল। আসার পথে কিন্তু শরীফুল ওকে পথ ঘাট চিনিয়েছে। বলেছে- দ্যাখ, চায়া দ্যাখ, সবুজ আর সবুজ। সবুজ দেখলে চউখ ভালো থাকে’।
কারিশ্মা ডানে বায়ে মাথা দুলিয়েছে- যেন বলেছে-‘হুহ, চউখ ভালো থাকে। সারাক্ষণ যার চউখ বান্ধা, তার আবার ভালো আর মন্দ’। ওর গলার ঘণ্টা টুং টুং করে বেজেছে। শব্দ করে না বললেও শরীফুল জানে, এমনটাই বলেছে। ওর নিজেরও কি এভাবে চোখমুখে ঠুলি পরিয়ে রাখতে ভালো লাগে! প্রায় দিনই কি ইচ্ছে করে না ওকে মুক্ত করে দিয়ে আনুকে সঙ্গে নিয়ে দিগন্তের শেষ নাই যেখানে তেমন এক দিকে চলে যায়! খুরের ধাক্কায় ধূলোর একটা নদী তাদের পেছন পেছন অনেক দূর অব্ধি আসতে থাকুক। তাই দেখে মানুষজনের ভীড় জমে যাক, প্রচন্ড ভীড়।
কিন্তু তার বড়ভাই মাজেদুল দেখতে পেলে বাঁশের বাতা দিয়ে বানানো লম্বা ঘোড়া পেটানোর লাঠি ছোটবেলার মত শরীফুলের পিঠে না ভাঙ্গলেও আস্ফালন যে করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
তবে সুবিধা হলো মাজেদুল এখন ঢাকায়, বায়িং হাউসের পুরানো চাকরীতে ফেরত গেছে। মাসে একবার আসে। আগে প্রতি বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার সময় রিকশা এসে থামতো বাড়ির সামনে। শুক্রবার দিনটা থেকে রাতের বাসে আবার ফিরে যেতো। আনু তখন শুক্রবারে ভালোমন্দ রান্না করতো। বাড়ির বাতাসে মশলা মাংসের সুঘ্রাণ ভেসে দুপুরবেলায় ঈদ ঈদ আমেজ হতো।
খেতে বসে চুপচাপ শরীফুলের দিকে হালকা ধমক ছুড়ে দিতো মাজেদুল,‘দেবর-ভাবী তোরা ঠাট্টা মস্করা করবি তা না খালি চুপ থাকা!’
মাথা নিচু করে ভাত খাওয়া থেকে তখন চোখ তুললে বিদ্যুৎ চমক, আনুর চোখ তার দিকে স্থির। যে চাউনি দেখলে বুকের ভেতরে ঘুঙ্গুর বেজে ওঠে, শরীফুল কথা ভুলে তোতলাতে থাকে।
তা, সেই মুহূর্তের চাউনি পরমুহূর্তেই বদলে গিয়ে রোজকার কেজো হয়ে ওঠে।
আনু এখন আর তেমন সময় পায় কোথায়? কারিশ্মার দেখাশোনা আছে। শরীফুলের ওপর চাপ কমাতে দিনভর ঘানিতে গাধার খাটাখাটনি।
রোগাটে শরীর নিয়ে শরীফুল মাঝে মাঝে ঠাট্টা করে-‘কারিশ্মা হইল ঘোড়া আর আমরা হলাম গাধা, ঘানি চালাইতে দুইটাই লাগে’।
তখন মানুষজনের সামনের আনু এক পলকের জন্য বদলে গিয়ে তার দিকে গাঢ় মায়ার দৃষ্টিতে দেখে।
টিউবওয়েলের পানি চেপে চেপে ঘোড়ার গা ধুয়ে দেয়া সোজা কথা! তারপর খাওয়ার বন্দোবস্ত। যেদিন ছোলা ফুরিয়ে যায়, আনু কোথা থেকে যে কত কি সংগ্রহ করে! সবজীওয়ালাকে বলে রাখে যেন বিক্রি না হওয়া গাজর,বাঁধাকপি তার কাছে সস্তায় দিয়ে যায়। খইলের সঙ্গে ভাতের মাড় মিশিয়ে ছোট কচি আখগাছের মাথা টুকরো করে কেটে মিশিয়ে দেয়। ঘাস আর খড়ের যোগাড় কোন মন্ত্রবলে যে করে! কিছু বললে তার একটাই কথা- শরীফুল যেন কলেজ কামাই না দেয়।
মাঝে মাঝে একদৃষ্টে চেয়ে আনুকে দেখে শরীফুল। ছোটখাটো, জোড়া ভ্রু, শংখের মত শাদা সমান দাঁতের সুন্দর হাসির মেয়েটা খাটতে খাটতে তামা তামা হয়ে গেল এই কয়েক মাসে।
অথচ ওরও তো শরীফুলের সঙ্গে কলেজের পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। এই রাস্তা দিয়ে একসঙ্গে হেঁটে তারা হাই স্কুলে গেছে, এক ক্লাসে পড়েছে। অংকে ভালো মাথা ছিল আনুর। এস এস সি পরীক্ষা দিয়ে পাশও করে ফেললো। আর তার সবচে কাছের বন্ধু, চাচাতো ভাই শরীফুল সায়েন্স পড়ে, উঠোনে টেবিল পেতে তাতে জ্যান্ত ব্যাঙের চার হাত পা পিন দিয়ে গেঁথে কেটেকুটে প্র্যাক্টিক্যাল করেও ফেল করলো! ফিজিক্স পরীক্ষার প্রশ্নগুলো নাকি একেবারেই কমন পড়েনি।
তো শরীফুল যখন দ্বিতীয়বার পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন ঢাকায় বায়িং হাউসে চাকরী করা মাজেদুল থানা শহরে সস্তায় একটা বাড়ি কিনে বসলো। বাড়িতে কাঠাল গাছ, পাকা মেঝে, টিনের চাল, টিউবওয়েল। সেখানে কে থাকবে? মাজেদুল দূরদর্শী। সারাজীবন কি গ্রামে থেকে পচবে? শরীফুল তো দু’দিন বাদে স্কুল পাশ করে কলেজে পড়বে। সেও কি বড়ভাইয়ের মত জায়গীর থাকবে? বিরাট গৃহস্থ না তারা, তবু কিছু ধানী জমি বিক্রি হলো। চাকরী করা ছেলের মতামত উপেক্ষা করা যায় না।
এরপর, যে ই দেখে বা শোনে, বলে যে মাজেদুলের উন্নতি হবে।
সম্ভবনাময় ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মাজেদুলের সঙ্গে তাদের দুই পরিবার মিলে আনুর বিয়ে পড়িয়ে দিলো এক শুক্রবার। আনু যতটাই পড়ালেখায় মনোযোগী ততটাই মেয়ে হিসেবে বাধ্য- এ দুয়ের মেলবন্ধন শরীফুলের অসহ্য মনে হলেও তার নিজের তখন পরীক্ষা ফেলের কারণে না দেখানোর মুখ ছিল, না কথা বলার। তখন আবারো পরীক্ষায় ফেল করার উপক্রম হতে নিলে আনু এসে সামলেছিল। বাড়ির মধ্যেই বিয়ে, তাই কাজ কম, কিন্তু হুলুস্থুল বেশী। মানুষজন বেহুদাই আমোদ শুরু করলো।
শরীফুলের বিমর্ষ চেহারা যার নজরে পড়ছে, ভাবছে স্কুল ফাইনালে ফেল করার জের।
দেবদাসের পার্বতী ষ্টাইলে সন্ধ্যার দিকে চট করে একবার আনু স্বয়ং এসেছিল। মেন্দী রাঙ্গানো হাত দিয়ে শরীফুলের হাত ধরে অনুনয় করেছে- ‘মন দিয়া পড়, পরীক্ষা দেও’।
কান্নাভরা সেই বাক্যের মধ্যে শরীফুল যে তাকে গোপনে কারিশ্মা সম্বোধন করে চিঠি লিখেছিল, এবং আনু যে তার জবাব বাংলা ব্যকরণ বইয়ের ভেতর গুজে দিয়েছিল সে কথা যেন যে কোন মূল্যে ভুলে যায়, চিঠিগুলি যেন যত দ্রুত সম্ভব পুড়িয়ে ফেলে- ইত্যাদি বিষয় ছিল, শরীফুল বুঝেছে। সত্যিই পড়ায় মন দিয়েছিল সে। এমনই মনযোগ যে আনু তার ভাবী হিসেবে নিজেদের উঠান পার হয়ে তাদের ঘরে এসে ঢুকলেও সে পড়ার টেবিল ছেড়ে ওঠেনি। ভাইয়ের বৌ হলে কি হবে, আনু তো আগে শরীফুলের চাচাতো বোন। একক্লাসে পড়তো। বড় ভাইয়ের সঙ্গে তো প্রেম ভালোবাসা না। সম্বন্ধ করে, মাজেদুল শরীফুলদের মা’র অন্তিম ইচ্ছা পূরণ করার নিমিত্তে এই বিয়ে।
বিয়ের দিন ঘোমটা ঢাকা মেয়ের কবুল শুনতে অধৈর্য্য হয়েছে মৌলবী কাজীসাহেব। শেষটায় উকিল বাবার ভূমিকায় থাকা রাজ্জাক চাচা পাশ থেকে বলেছে- ‘কবুল বলছে, কবুল বলছে, আমি শুনছি’।
সূর্য যেমন পশ্চিমে অস্ত যায়, আসরের ওয়াক্তে মসজিদের মাইকে আজান হয়, লাউয়ের জাংলায় যেমন শাদা শাদা ফুল থাকে তেমনি আনু আর মাজেদুলের বিয়ে যেন অবধারিত স্বাভাবিক।
বিয়ের পরের দিন আনু তার বাবা মা’র ঘরের আলনা থেকে নিজের জামা কাপড় মাজেদুলের ঘরে এনে ভাঁজ করেছে।
চোখের সামনে বড় ভাইয়ের সঙ্গে দরজায় খিল তুলে দেয়া দেখতে গিয়ে মনের বিস্তর ঝড় থামানো কষ্টকর হতো। আনু ভাত বেড়ে দিলে শরীফুল তার বাড়িয়ে দেয়া বাহু চোরাচোখে দেখে, গোসল করে এসে গামছায় চুল ঝাড়লে তার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠে।
তবু শরীফুল মানিয়ে চলছিল, আর পরীক্ষা পাশের অপেক্ষা করছিল। কলেজে ভর্তি হয়ে দূরে থাকলে, আনুকে সারাক্ষণ চোখের সামনে দেখতে না হলে পরিস্থিতি বদলে যাবে, এই আশায় ছিল।
কিন্তু সে ভাবে এক, আর ঐ কপাল ব্যাটা আছে না, সে আরেক রকম করে নিজের লেখন লেখে।
হলো কি, এর মধ্যে দুম করে মাজেদুলের চাকরীটা চলে গেল। সে বাড়ি ফিরে দিনকয় মনমরা থেকে কি করা যায়, কি করা যায় করে প্রায় রাতারাতি থানা শহরে তার বাড়ির উঠানের ডানদিকে একটা একচালা তুলে শরষের তেলের ঘানি বসিয়ে দিলো। গ্রামের বাড়ির বিশাল কড়ই গাছ, নিজেদের গোয়ালের গাই গরু, এসব মিলিয়ে বাড়তি খরচ খুব একটা লাগলো না।
তবে ঘানি তো শুধু চালালেই হয় না, আনুষঙ্গিক কাজ থাকে, যেমন শরিষা খরিদ করা, মৌসুমে সস্তায় কিনে জমিয়ে রাখলে আক্রার দিনে দ্বিগুণ লাভ। এসবের খবরদারি মাজেদুল ভালো পারে।
যে কোন সংশয়ে সে তার টাঙ্গাইলে থাকা পরিচিত এক লোকের ঘানি দেখে আসার গল্প পাড়ে। ইয়া বড় গাছের সঙ্গে গরু জুতে দিয়ে দিনভর তাদের ঘানি চলতো। প্লাষ্টিকের গ্যালন ভরে সরিষার তেলের ঝাঁঝালো গন্ধে চোখ নাক দিয়ে পানি পড়তো।
মাজেদুল তো শরিষা কেনা, দোকান পাটে সাপ্লাই দেয়া এসব নানান কিসিমের কাজ করবে, ঘানির পাশে সারাক্ষণ থাকবে কে?
কেন, শরীফুল!
কিন্তু তার তো কলেজ আছে।
তাতে কি, কলেজের আগে পরে সময়ও তো আছে।
অগত্যা শরীফুলই সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার হাঁটিয়ে তাদের গরু লালিকে নিয়ে বাসায় পৌছে গেল। ঘানির নানা সরঞ্জাম নিয়ে রিক্সায় গেল মাজেদুল।
সস্তা কাঁচামালের খোঁজ পাওয়া মাত্র সাইকেল নিয়ে বড়ভাই বেরিয়ে যায়। শরীফুলকে তখন পড়ার টেবিল থেকে উঠে আসতে হয়। শুরুতে একহাতে বই নিয়ে অন্যহাতে গরু দাবড়ানো চেষ্টা করে দেখেছে, হয় না।
শহরের বাসায় শরীফুল থাকতে এলো একা, কিন্তু উৎকীর্ণ কান ও চোখ আনুকে সঙ্গে নিয়ে এলো। মাজেদুল যখন গ্রামের বাড়ি থেকে টিফিন ক্যারিয়ার ভর্তি খাবার নিয়ে আসে, বাটি খুললে তরকারীর ঘ্রাণে বোতলবন্দী পরীর মত আনু তার স্নিগ্ধ মুখ নিয়ে শরীফুলের সামনে এসে বসে। শরীফুল মুখ নিচু করে নিবিষ্ট মনে ভাত মাখে। কথা বলে না দেখে মাজেদুল খেকিয়ে উঠে ধমকায়- ‘এত বেখেয়াল, কোথায় থাকিস তুই? গরু যে ঘানিতে ঠিকঠাক পাক খায় না, সেদিকেও খেয়াল নাই’!
শরীফুল মিন মিন করে- ‘লালির পেটে বাচ্চা। ঘানি টানতে পারে না’।
লালির বাচ্চা হবে, এ আনন্দের খবর, কিন্তু তেলের উৎপাদন কম হওয়ার চিন্তায় মাজেদুলের কপালে ভাঁজ পড়ে।
একদিন অবশ্য সে খুশী হয়ে বাসায় ঢোকে। আক্কেলপুরের হাট থেকে আসা ভালো ঘোড়ার সন্ধান পেয়েছে। পোয়াতি লালিকে আর ঘানি টানতে হবে না। গাধা কিংবা গরুর চেয়ে ঘোড়া সব অর্থেই বেশী পারঙ্গম। হর্স পাওয়ার বলে একটা কথা আছে।
মাজেদুল বলতে থাকে- ‘অশ্বশক্তি হইলো শক্তির একক। এর মান ধরে গাড়ি থেকে শুরু করে কত মেশিনপত্র চলে দুনিয়ায়!’ ঘানি তো সামান্য জিনিস। সুতরাং ঘানি এখন থেকে অশ্বশক্তিতে চলবে। আগের তুলনায় তিনগুণ বেশী তৈল উৎপাদন হবে।
বড় ভাইয়ের স্বপ্নের তোড়ে শরীফুল এইচ এস সি’র বইখাতা একপাশে সরিয়ে ঘোড়া আনতে যাওয়ার যোগাড়যন্ত্র করে।
প্রথম দেখায় অবশ্য কিছুটা আশাহত হয়েছিল।গরুর বদলে মহিষ দিয়ে ঘানি টানালেও বুঝি এর চেয়ে ভালো ছিল। ঘোড়া বললে সিনেমায় দেখা যে ছবি চোখের সামনে ভাসে তার সঙ্গে এর ঠিক অমিল না, তবে আরেকটু তাগড়া জোয়ান আশা করেছিল সে। মাজেদুলের জহুরী চোখে ধুলো দিয়ে একটি দুবলা ঘোড়া গছিয়ে দিয়েছে পাইকার। নিজের সঙ্গে কোথায় যেন মিল আছে, প্রাণীটিকে প্রথম দেখায় ভালো লেগে গেল শরীফুলের।
প্রতিদিনের মত সন্ধ্যেবেলা যখন মাজেদুল সাইকেল নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল, তখন আনু’র ঘরের কপাট বন্ধের দৃশ্য তার ভেতরে যে অসূয়া জন্ম দেয়, সেদিন কোন বিচিত্র কারণে তা হলো না।
এর কয়েকদিন পর তেলেসমাতির মত মাজেদুল ঢাকার অফিস থেকে ডাক পেল, সে যদি আবার চাকরীতে জয়েন করতে চায়, তার মত দক্ষ কর্মচারী ইত্যাদি। সে যে সঙ্গে সঙ্গে রাজী হয়ে বসবে ভাবা যায়নি।
এখন, ঘানির সঙ্গে সঙ্গে ঘোড়ার যত্ন আছে না? কাঁচামাল আনতে কে দৌড়াদৌড়ি কে করবে? হাটেই বা কে যাবে?
এবার আনুকে স্বশরীরে এই বাড়িতে আসতে হয়। একটু শিখিয়ে দিলে সে এসব কাজে সাহায্য করতে নিশ্চয়ই পারবে। ঘরে বসে পয়সা উপার্জনের ওপর মাজেদুল তার বক্তব্য দেয়।
আনু এসে ঘোড়ার দিকে পলকহীন চেয়ে থাকে। চোখে মুগ্ধতা। ঘোড়ার নাম রাখার বায়না ধরে।
শরীফুল বললো- ‘দুলদুল রাখা যায়’।
পছন্দ হয় না আনুর,সে বলে- ‘নাম দিলাম কারিশ্মা’।
শরীফুলের বুকের ভেতর ধরাস ধরাস করে, আনু মাজেদুলকে কিছু বলে দেয়নি তো!
মাজেদুল অবশ্য প্রতিক্রিয়াহীন সায় দেয়- ‘আচ্ছা, তাইলে কারিশ্মাই থাকুক’।
শরীফুল চোরাচোখে আনুর ঠোঁট টেপা হাসি দেখতে পায়, যে হাসি শুধু তার জন্য।
**
আশপাশে মানুষজনের ছায়া দেখা যাচ্ছে না। গরমের ভাপে বাতাসও বুঝি ভয় পেয়ে লুকিয়ে আছে। অথচ দিগন্তবিস্তারী সবুজ ক্ষেত চারপাশে।
এবার রাস্তায় পড়ে থাকা কারিশ্মাকে জড়িয়ে ধরে শরীফুল, সব শক্তি দিয়ে ঠেলে ওঠাতে চেষ্টা করে। কিন্তু যতই অসুখ হোক, যতই গত তিনদিন না খেয়ে খেয়ে শক্তি কমে আসুক, ঘোড়ার ওজন তো শরীফুলের ওজনের চেয়ে কয়েক গুণ বেশী। সুতরাং কাজ হলো না। নড়ার ইচ্ছে বা শক্তি কোনটার লক্ষণ দেখা গেল না।
সঙ্গের গামছা দিয়ে মাথার তালু ঢেকে নেয় শরীফুল। এবার আনু’র দেয়া টিফিনবাটি খোলে। এত হুলুস্থুলেও কখন যেন তার জন্য রুটি ভাজি এনে দিয়েছে! ঘোড়ার জন্য চানাবুট ভিজিয়ে দিলেও তো পারতো। ভাবতে গিয়ে থেমে যায়। আনু দিতে চেয়েছিল, সে ই নেয়নি, বলেছে- ‘এই তো একটু রাস্তা, ঘোড়ার শরীল ভালো না, হাঁটার সোময় খালি খালি বোঝা বাড়ানি’।
আসলে তার মাথায় তখন তাড়াহুড়ার চিন্তা ছিল। যত দ্রুত ঘোড়া নিয়ে ফিরে এসে আবার ঘানিতে জুতে দেয়া যায়। উপস্থিত না থেকেও ফোনে ব্যবসার হাল হকিকত জেনে নেয় মাজেদুল। বুধবারে ছওলার হাটে যেতে বলেছে তাকে। যদিও বাড়ির সামনে “ঘানিভাঙ্গা খাঁটি শরিষার তৈল” লেখা টিনের সাইনবোর্ড আছে, কিন্তু বাড়ি এসে আর কয়জন খরিদ্দার তেল নেয়? এমনিতেই গরমকালে শরষের তেলের বাজার বেশী ভালো না। মানুষ গায়ে তেল মাখে শীতের দিনে। খাবারের বিলাসিতাও শীতের দিনে বেশী। হাটে খইলও বিক্রি হয়ে যায় ধমাধম। তবে শরষের তেলের দিনকাল বহুদিন হয় ভালো না। সয়াবিন তো সেই কতকাল হয় রান্নাঘরের দখল নিয়ে নিয়েছে। হাতে পায়ে মাখার জন্য এখন বাজারে লোশন, ভেসলিন কত কি! শরীফুলদের ছোটবেলায় তাদের দুই ভাইকে আব্বা কেমন আটা ছানার মতন করে তেল মাখিয়ে গোসল দিতো, সেসব দিন এখন কেবলই স্মৃতি।
এবারের সরিষা বেশ ভালো। শরীফুল আশায় ছিল যে আড়াই কেজি সরিষা দিয়ে এক লিটার তেল পাবে। আনু মা’র কাছে গেলে শরীফুল চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করেও সব সামলে নিচ্ছিল। কিন্তু এ কি বিপদ! কারিশ্মা নড়তে চায় না। সে না নড়লে ঘানি চলবে কি করে?
মাথায় হাত দিয়ে যে বসে চিন্তা করবে তারও উপায় নাই। আনুর দেয়া রুটি গোল করে পেচিয়ে ঘোড়ার মুখে দেয়ার চেষ্টা করে শরীফুল। কবিরাজের দেয়া বোতলের পাঁচন মুখের সামনে ধরে, একটু যদি খায়, কোনমতে যদি পায়ের ওপর দাঁড় করানো যায়। কিন্তু ঘোড়া দাঁত ফাঁক করে না, মাঝখানে থেকে বোতলের প্রায় সবটা পাঁচন পরে গিয়ে রাস্তা শুষে নিল। নিজের যে তৃষ্ণা পেয়েছে মনে ছিল না। মেজাজ চড়ে যায় শরিফুলের। ঘোড়ার কান বরাবর দুটো থাপ্পড় দিলে সে শুধু সামনের পা ছুড়ে মারে। হতাশ হয়ে রাস্তার কিনারে বসে পড়ে শরিফুল। এখন কি করা?
দূরে একটা সাইকেল এঁকেবেঁকে এগিয়ে আসছে।
শরিফুল উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে।
কাছাকাছি এসে সামনের চাকা বাঁকিয়ে ব্রেক করে সাইকেল থামে। সামনের জনের পরনে জিন্সের প্যান্টের সঙ্গে হাফ শার্ট, পেছনে পাঞ্জাবী টুপি মাথায় দাড়িওয়ালা চালক। সামনের ক্যারিয়ারে পাউরুটির প্যাকেট ঝুলছে। কোথাও পানির বোতল নেই।
-‘ঘোড়ার কি হইছে ভাই?’
-‘একটু অসুস্থ্য ছিল। কবিরাজ বাড়ি নিয়া গেছিলাম, কিন্তু এখন যে মাথা ঘুরায়া পড়ল’।
– ‘কবিরাজ আবার কবে থেক্যা ঘোড়ার ওষুদ দেয়?’ –দু’জনে একচোট হেসে নেয়।
-‘মারা গ্যাছে মনে কয়’। – দাড়িওয়ালা পিঠ ঝুকিয়ে এগিয়ে আসে।
– ‘না না মরে নাই। শ্বাস নিতেছে রীতিমত’।– শরিফুল প্রতিবাদ করে তার হাত ঘোড়ার নাকের কাছে ধরে।
তার কথায় কান দেয় না লোকটা, বলে–‘ঘোড়া মরলে কিন্তু দাফন করা লাগে’।
-‘গরু ছাগল মরে তখন দাফন হয় নাকি? ঘোড়ার দাফন করা লাগে?’ হাফ শার্ট তেছড়া করে বাক্য বলে।
-‘জানো কিচ্ছু? খালি প্রশ্ন করে! দাফনের নিয়ম আছে।’-ঘোষণা দিয়ে শরিফুলের দিকে ফেরে লোকটা।
-‘মৃত ঘোড়া যেখানে সেখানে ফালায় রাখা যাবে না’।
-‘আরে ঘোড়া তো মরে নাই এখনো। কি কইতেছেন তখন থেকে?,’-ধৈয্যচ্যুতি ঘটে যায় শরিফুলের।
সব রাগ গিয়ে পড়ে মাজেদুলের ওপরে। এই বেয়াক্কেলে লোকের ঘানি টানতে টানতে তার এই অবস্থা। তাকে ফোন করবে। এক্ষুণি সে আসুক, ঘোড়া ঘানি সবকিছুর ভার নিয়ে নিক।
শরীফুল ঘোড়ার পাশে বসে। ওপাশে একটা রিক্সা এসে থেমে পড়লো, কারিশ্মার কারণে রাস্তার এদিকে আসা অসুবিধাজনক। একটা ঠ্যালা ভ্যান পেলে সুবিধে হতো! লোকজনকে দিয়ে হাতে হাতে ঘোড়াকে তুলে নেয়া যেতো। দ্রুত চিন্তা করে শরীফুল, তার ভীষণ পিপাসা পেয়েছে। আনুকে খবর দেবে? একবার মোবাইলে কল দেবে?
কিন্তু আনু তো সে আগের মত দৃষ্টি দিয়ে তাকালো না। ওর মা’যে বললো এসময় দৌড়ঝাপ করে হাঁটতে হয় না। কোন সময়? মাজেদুল শেষ কবে এসেছিল ঢাকা থেকে? শেষ কবে শরীফুলের নাকের ডগায় ঘরের কপাট বন্ধ করেছিল?
শেষবার কবে শরীফুল ক্লান্ত হয়ে ঘানির পাশে নিজেও বসে পড়েছে? কারিশ্মা দাঁড়িয়ে ঘুমাচ্ছিল। আনু এসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘরে নিয়ে গিয়েছিল। শরীফুল হঠাৎ ডুকরে কেঁদে উঠলে তার মাথা বুকে চেপে ধরেছে। সে রাতে জানালায় জোৎস্না ফিনকি দিয়ে ঘরে ঢুকে তাদের দু’জনের অলীক মুহূর্তগুলোর সাক্ষী হয়েছিল। সেসব কি মাজেদুল শেষবার আসার আগে, না কি পরে? সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যায় শরীফুলের।
আচ্ছা, কোন মন্ত্রবলে কারিশ্মা উঠে দাঁড়াতে পারে না! সে তাহলে পিঠে চড়ে এই লোকগুলোকে পেছনে ফেলে ছুটে যেতো! চারপাশে আস্তে আস্তে মানুষজন জড়ো হচ্ছে, তাদের কথাবার্তা যাচাই করতে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় শরীফুল। রোদের দাপটে সবুজ ক্ষেতের রং শাদাটে।
এ রাস্তায় রিক্সা বা ভ্যানগাড়ি চলে, একটা চলে আসতে পারে না? না হলে তো আরো কয় ঘন্টার ধাক্কা কে জানে! কারিশ্মা ততক্ষণ টিকবে?
-‘শ্বাস ধরে রাখ কারিশ্মা’!- বিড় বিড় করে শরীফুল।
আকাশের কোনার দিকে একথালা মেঘের উদয় হয়। কারিশ্মাও যেন ক্ষুদে চোখ পিটপিট করে তাকায়, এই বুঝি গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পেছনের পা খটখটাবে। এই বুঝি তার কেশরে সোনালী রং ছলকে ছলকে উঠবে। শরীফুল আরো একবার তার গলা জড়িয়ে ধরলে কারিশ্মা সহসাই গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। তার রং বদলে গেছে, সাদা ঝকঝকে স্বাস্থ্যবান, সড়সড় মসৃণ কেশরের ঘোড়া গাঢ় গভীর চোখ দিয়ে শরীফুলকে দেখে। চোখে চোখ পড়লে চারপাশে জমে যাওয়া ভীড়ের ভেতর থেকে একলাফে কারিশ্মার পিঠে চেপে বসে শরীফুল। লাগাম টেনে চলতে শুরু করলে ধুলোর নদীর মধ্যে পেছনের মানুষের হৈ চৈ ডুবে যায়। সফেদ ঘোড়াটি নিয়ে শরীফুল উড়তেই থাকে।

জন্ম, বেড়ে ওঠা বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে। পড়াশোনা করেছেন প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরবর্তীকালে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস এবং স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনে। রিসার্চার, কর্পোরেট এক্সিকিউটিভ, এনজিও কর্মকর্তা ইত্যাদি পেশার অভিজ্ঞতা নিয়ে বর্তমানে কানাডার কুইবেক সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত। ছোটগল্প, কবিতা এবং অন্যান্য গদ্য লিখছেন দীর্ঘদিন ধরে। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : চাঁদপুরে আমাদের বর্ষা ছিল (২০০৮)। গল্পসংকলন : পৃষ্ঠাগুলি নিজের (২০১১), জাঁকড় (২০১৩)।