| 1 সেপ্টেম্বর 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত প্রবন্ধ

আধুনিক যুগের জন্ম কাহিনি (পর্ব -১১)। হোমেন বরগোহাঞি

আনুমানিক পঠনকাল: 9 মিনিট

১৯৩২ সনে লক্ষ্মীমপুর জেলার ঢকুয়াখনায় হোমেন বরগোহাঞির জন্ম হয়। ১৯৫৪ সনে কটন কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যের স্নাতক। সাময়িকভাবে সরকারি চাকরি করে সাহিত্যচর্চা এবং পরবর্তীকালে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। ‘নীলাচল’, ‘জনক্রান্তি’, ‘নাগরিক’,’অসম বাণী’ইত্যাদি কাগজের সম্পাদনা করেন। ‘পিতাপুত্র’ উপন্যাসের জন্য ১৯৭৭ সনে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। ‘আত্মানুসন্ধান’,‘বিভিন্ন নরক’,‘সুবালা’, ‘মৎস্য গন্ধা’, ‘সাউদর পুতেকে নাও মেলি যায়’ লেখকের অন্যতম গ্রন্থ। লেখকের ছোট গল্প উপন্যাস প্রবন্ধ এবং আত্মজীবনী মূলক রচনা অসমিয়া সাহিত্যকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করে তুলেছে। ১২ মে ২০২১ সনে এই মহান লেখকের মৃত্যু হয়

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস


 

 

ইমানুয়াল কান্ট নামের একজন দার্শনিক বলেছিলেন—’ দুটো জিনিস আমাকে সব সময় বিস্ময়ে অভিভূত করে রাখে।একটি হল মাথার ওপরে তারায় ভরা আকাশটা; দ্বিতীয়টি হল আমার নিজের অন্তরে থাকা নৈতিক অনুশাসন।’

    কেবল দার্শনিক নয়, ছেলে বুড়ো জ্ঞানী মূর্খ সমস্ত মানুষকেই রাতের রহস্যময় আকাশটি বিষ্ময়েঅভিভূত করে রাখে। জ্ঞান হওয়ার মুহূর্ত থেকে মানব শিশু যখন সন্ধ্যার আকাশের দিকে মাথা তুলে তাকিয়ে স্নিগ্ধ আলো দান করা চাঁদটি এবং তার চারপাশে জ্বলজ্বল করতে থাকা তারাগুলি দেখে তখন তার মনে কল্পনার পাখা গজায়। কখনও সে চাঁদটিকে বোন বলে কল্পনা করে একটি তারা খোঁজে, কখনও আবার সে চাঁদের গায়ে তুলসি গাছের নিচে হরিণ শিশু ঘুরে বেড়াতে দেখে। পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাবের দিন থেকে মানুষ আকাশের দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ে শিহরিত হয়েছে এবং সূর্য চন্দ্র তারকারাজির বিষয়ে নানা কথা কল্পনা করতে চেষ্টা করেছে। এভাবে আকাশের দিকে দেখতে দেখতে আজ থেকে ছয় সাত হাজার বছর আগেই মানুষ আবিষ্কার করেছিল যে আকাশের তারাগুলি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে আকাশে ঘুরে বেড়ায়। অর্থাৎ তারাগুলির গতিবিধি বহুদিন ধরে ভালোভাবে নিরীক্ষণ করতে থাকলে ওরা বছরের কোন সময় কোথায় থাকবে সে কথা আগেই বলে দেওয়া সম্ভব। এভাবে মানব সভ্যতার উষালগ্নে অর্থাৎ সভ্যতার বিকাশের প্রাথমিক অবস্থায় জ্যোতির্বিজ্ঞানের সূচনা হল। সেই জন্য বলা হয় যে বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের সবগুলি শাখার ভেতরে জ্যোতির্বিজ্ঞানই হল প্রাচীনতম।

    কিন্তু প্রাচীনকালে ইজিপ্ট এবং ব্যবিলন প্রভৃতি যে সমস্ত দেশে জ্যোতির্বিজ্ঞানের চর্চা হয়েছিল সেই সমস্ত দেশে জ্যোতির্বিজ্ঞান আধা-বিজ্ঞান এবং আধা কুসংস্কার হয়েছিল। তখন জ্যোতির্বিজ্ঞানের চর্চা করত কেবল পুরোহিতরা। তারা বিভিন্ন সময়ে আকাশে সূর্য চন্দ্র এবং তারাদের সংস্থান লক্ষ্য করে মাস এবং বছরের ধারণা করতে পারত। তার ভিত্তিতে তারা ক্যালেন্ডার তৈরি করেছিল। এটা ছিল আদিম জ্যোতির্বিজ্ঞানের বৈজ্ঞানিক দিক। কিন্তু এই পুরোহিত বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন যে আকাশের সূর্য চন্দ্র এবং তারাগুলি মানুষের ভাগ্যও নিয়ন্ত্রণ করে। এই ভুল বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে তারা জ্যোতির্বিজ্ঞানকে জড়িয়ে রেখেছিল জ্যোতিষ বিদ্যার মতো নকল বিজ্ঞানের সঙ্গে। গত সাত হাজার বছরে মানুষ যদিও সভ্যতার পথে অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছে এবং গত পাঁচশো বছরে জ্যোতির্বিজ্ঞানের চমকপ্রদ আবিষ্কার সমূহ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের গঠন এবং প্রকৃতি সম্পর্কে অনেক নতুন সত্যের সঙ্গে মানুষকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে, তথাপি জ্যোতিষ বিদ্যার মতো নকল বিজ্ঞানের প্রভাব থেকে এখনও সমস্ত মানুষ মুক্ত হতে পারেনি। এমনকি আমেরিকার মতো যে সমস্ত দেশে বিজ্ঞানের চরম বিকাশ ঘটেছে এবং প্রায় সমস্ত মানুষই উচ্চশিক্ষার সুযোগ লাভ করেছে সেই সমস্ত দেশেও অনেক মানুষই এখন ও জ্যোতিষ বিদ্যায় বিশ্বাস করে। জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ড সাগান তার ‘কসমস’ নামের বহু পঠিত গ্রন্থে লিখেছেন —’সমসাময়িক পশ্চিমী সমাজে জ্যোতিষ শাস্ত্রের বিষয়ে একটি পত্রিকা কিনতে পাওয়াটা যত সহজ, জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিষয়ে একটা পত্রিকা কিনতে পাওয়াটা ততটাই কঠিন। আমেরিকার প্রায় প্রতিটি দৈনিক কাগজেই প্রতিদিন রাশিফল প্রকাশ করে, কিন্তু কোনো একটি কাগজেই সপ্তাহে একবারও জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিষয়ে একটিও প্রবন্ধ প্রকাশ করে না।’ 

    কিন্তু জ্যোতিষ শাস্ত্রের যে কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই সে কথা প্রমাণ করে কার্ল সাগান একটি গ্রন্থে লিখেছেন:’জ্যোতিষশাস্ত্র দাবি করে যে মানুষের জন্মের সময় গ্রহ-নক্ষত্র গুলি আকাশের কোন জায়গায় অবস্থান করে তার ওপরের ভিত্তি করে সেই বিশেষ মানুষটির জীবনে ভবিষ্যতে কী কী ঘটনা কখন ঘটবে সে কথা আগে থেকেই জানা এবং বলে দেওয়া সম্ভব। যমজ মানুষের জীবন অনুধাবন করে এই দাবির সত্যাসত্য  পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে এরকম দেখা দিয়েছে যে একজোড়া জমজ শিশুর মধ্যে একটি খুব কম বয়সে আকস্মিক দুর্ঘটনায় মারা গেছে কিন্তু অন্যটি দীর্ঘ আয়ুতে সুখে সন্তোষে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত বেঁচে আছে অথচ দুটি শিশু ঠিক একই সময়ে এবং খুব বেশি হলে মাত্র এক মিনিটের ব্যবধানে জন্ম হয়েছিল। দুজনের জন্মের সময় একই গ্রহ আকাশে অবস্থান করছিল। জ্যোতিষশাস্ত্র যদি অভ্রান্ত হয় তাহলে দুটি শিশুর ভাগ্য আলাদা আলাদা হল কেন?’

    প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞান এভাবে একটি অপবিজ্ঞানের জন্ম দিল—যার ফলে অনেক প্রাচীন সভ্যতায় জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিকাশে শুদ্ধ পথে এগিয়ে যেতে পারল না। প্রাচীনকালে জ্যোতির্বিজ্ঞানের চরম বিকাশ ঘটল গ্রিকদের হাতে। মহাবীর আলেকজাণ্ডার আলেকজান্ড্রিয়ায় খ্রিস্টপূর্ব ৩৩২ সনে স্থাপন করা বিশ্ব বিখ্যাত আলেকজান্ড্রিয়ার গ্রন্থাগারের কথা আগেই বলা হয়েছে। এই গ্রন্থাগারে যে সমস্ত বিজ্ঞানী অধ্যয়ন এবং গবেষণা করেছিলেন তাদের মধ্যে একজন ছিলেন ক্লডিয়াস টলেমি। এর আগে একবার ইজিপ্টে রাজত্ব করা টলেমি বংশের রাজাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্লডিয়াস টলেমি(৯০–১৬৮ খ্রিস্টাব্দ) অবশ্য সেই রাজবংশের মানুষ ছিলেন না। তার জন্ম এবং শৈশবের বিষয়ে কিছুই জানা যায় না। কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তিনি যে মত প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছেন সুদীর্ঘ দেড় হাজার বছর ধরে তার সেই পথ প্রায় সমগ্র সভ্য জগৎ বেদবাক্যের মতো মেনে চলেছিল। অর্থাৎ ইতিহাসের অতি বিখ্যাত এবং প্রভাবশালী লেখকদের মধ্যে ক্লডিয়াস টলেমি ও একজন।

    টলোমি কেবলমাত্র একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানীই ছিলেন না। তিনি ছিলেন প্রাচীন জগতে সবচেয়ে বিখ্যাত ভূগোল বিজ্ঞানী। সেই সময়ের পৃথিবীর যতগুলি জায়গার খবর গ্রিকদের কানে পড়েছিল সেই সমস্ত জায়গার অবস্থান শুনে সন্নিবিষ্ট করে টলেমি পৃথিবীর একটি মানচিত্র এঁকেছিলেন। টলেমির সেই মানচিত্রে ভারতবর্ষও জায়গা করে নিয়েছিল। স্বাভাবিক কারণেই টলেমির সেই মানচিত্রে নানা ভুলভ্রান্তি থাকা সত্বেও বহু শতাব্দী ধরে সেই মানচিত্রই ছিল নাবিক এবং সওদাগরদের একমাত্র অবলম্বন।।

    কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে টলেমি প্রতিষ্ঠা করা যে মত প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে সমগ্র সভ্য জগত বিনাবাক্যে মেনে চলেছিল সেই মত কিন্তু ছিল সম্পূর্ণ ভুল। টলেমির মতে মানুষের বাসভূমি এই পৃথিবী একটি স্থির গ্রহ এবং এই গ্রহ সমগ্র জগতের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। সূর্যকে ধরে নিয়ে আকাশের সমস্ত গ্রহ পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিণ করে অর্থাৎ সমগ্র বিশ্ব চরাচরে  সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রহ হল আমাদের এই পৃথিবীটা।

    আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগারের বসে টলেমি বিশ্বজগত সম্পর্কে এই ভুল তথ্য প্রচার করার প্রায় তিনশো বছর আগেই এরিষ্টারকাছ নামে অন্য একজন গ্রিক বিজ্ঞানী স্পষ্টভাবে এই মত পোষণ করেছিলেন যে পৃথিবী নয় সূর্য আমাদের এই গ্রহ মন্ডলীর কেন্দ্রে বিরাজ করছে এবং প্রতিটি গ্রহই সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে অর্থাৎ আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগেই কোনো যন্ত্রপাতির সাহায্য না নিয়ে কেবল নিজের বিচার বুদ্ধির ওপরে নির্ভর করে এরিষ্টারকাছ পৃথিবী এবং সৌরজগৎ সম্পর্কে এরকম একটি শুদ্ধ ধারণায় উপনীত হতে পেরেছিলেন।

    টলেমির তত্ত্ব ছিল মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং সাধারন বুদ্ধির ওপরে প্রতিষ্ঠিত। সমস্ত মানুষই নিজের প্রতি মুহূর্তে বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে অনুভব করে যে পৃথিবীটা কখনো নড়াচড়া করে না; এটা সব সময় এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকে। অন্যদিকে মানুষ প্রতিদিন দেখতে পায় যে সূর্য সকালবেলা পুবের আকাশে উঠে বিকেলে পশ্চিমে অস্ত যায় এবং পুনরায় পরের দিন সকালবেলা পূর্বের আকাশে দেখা যায়। অর্থাৎ সূর্যই পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে বেড়ায়। এই বাস্তব অভিজ্ঞতার উপরে ভিত্তি করে পৃথিবী বিশ্বজগতের কেন্দ্র চিরকাল স্থির হয়ে বিরাজ করছে বলে বলতে বিশেষ বৈজ্ঞানিক বিচার বুদ্ধির দরকার হয় না।


আরো পড়ুন: আধুনিক যুগের জন্ম কাহিনি (পর্ব -১০)। হোমেন বরগোহাঞি


    কিন্তু এরিষ্টারকাছ কেবল ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য বাস্তব অভিজ্ঞতার উপরে নির্ভর না করে যুক্তি এবং পর্যবেক্ষণের সাহায্যে আসল সত্যটা আবিষ্কার করেছিলেন। ইতিহাসে তিনিই প্রথম মানুষ—যিনি সূর্য কেন্দ্রিক বিশ্বজগতের ধারণা প্রচার করেছিলেন অর্থাৎ পৃথিবী নয় সূর্য বিশ্ব জগতের কেন্দ্র বলে ঘোষণা করেছিলেন।

কী আশ্চর্যের কথা।এরিষ্টারকাছ এই শুদ্ধতত্ত্ব আবিষ্কার করার প্রায় তিনশো বছর পরে টলেমি একটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা তুলে ধরলেন এবং সুদীর্ঘ দেড় হাজার বছর ধরে সমগ্র সভ্য জগত এরিষ্টারকাছের শুদ্ধ তত্ত্বের বিপরীতে এই ভুল মতটাকে মেনে নিয়েছিল।কিন্তু কেন এমন হল?

    আর এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হল এই যে সেই সময়ের গ্রিসের সবচেয়ে প্রভাবশালী পন্ডিত এবং চিন্তা নায়করা এরিষ্টারকাছের মতের বিরোধিতা করেছিলেন। তারা বিশ্বাস করেছিলেন যে বিশ্ব স্রষ্টার সর্বোত্তম সৃষ্টি হল মানুষ, আর সেই মানুষের বাসভূমি পৃথিবী নিশ্চয় হতে হবে সমগ্র বিশ্ব চরাচরের কেন্দ্রবিন্দু। প্রাচীন গ্রিসের সবচেয়ে প্রভাবশালী দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী এরিস্টটল এই মতে বিশ্বাস করতেন। টলেমির তত্ত্ব ছিল এরিস্টটলের চিন্তাধারার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমরা আগেই বলেছি যে স্পেনের আরব পণ্ডিতরা বারো শতকে এরিস্টটলের রচনাবলীর সঙ্গে খ্রিস্টধর্মী ইউরোপকে পরিচিত করে দেবার পরে ইউরোপীয়রা এরিস্টটলের রচনাবলীকে ঠিক বাইবেলের পরেই শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছিল। মধ্যযুগের ইউরোপে দার্শনিক বললে একমাত্র এরিস্টটলকেই বোঝাত। তারা জীবন এবং জগৎ সম্পর্কে যাবতীয় সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছিল বাইবেল এবং এরিস্টটলের মধ্যে। সেই এরিষ্টটলের চিন্তাধারা এবং টলেমির তত্ত্বের সঙ্গে যখন মূল বিষয়ের সম্পূর্ণ মিল দেখা গেল, তখন মধ্যযুগের ইউরোপ বিনা বাক্য ব্যয়ে টলেমির তত্ত্ব শুদ্ধ বলে মেনে নিল। অর্থাৎ বাইবেলের সৃষ্টিতত্ত্ব যতটা শুদ্ধ টলেমির জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কিত তত্ত্ব ও ততটাই শুদ্ধ। এই বিষয়ে কোনো প্রশ্নই উঠতে পারেনা। কেউ প্রশ্ন করতে চাইলে সেটা হবে চরম ধর্মবিরোধী কাজ। এবং মধ্যযুগের ইউরোপে ধর্মের বিরোধিতা করার চিন্তাও ছিল মানুষের কল্পনার অতীত।

    এভাবেই শতাব্দীর পরে শতাব্দী ধরে মানুষ বিশ্বাস করতে থাকল যে সূর্যই পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিণ করে—যে কথা শুনলে আজকের দিনে বর্ণপরিচয় আরম্ভ করা ছেলেমেয়েরা হয়তো হেসে উঠবে।

নিকোলাস কোপার্নিকাস

    টলেমির ভুল তত্ত্ব খন্ডন করে যে মানুষটি সত্যকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করলেন তিনি হলেন নিকোলাস কোপার্নিকাস(১৪৭৩-১৫৪৩)।

    ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দের তুর্কি আক্রমণকারীদের হাতে কনস্টানটিনপলের পতনের পর থেকে ইউরোপে নবজাগরণের ঢল নেমেছে বলে আমরা আগে বলে এসেছি। তার কুড়ি বছর পরে ১৪৭৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করা নিকোলাস কোপার্নিকাস ছিলেন নবজাগরণের যুগের বিরাট মনীষী— সেই যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ইউরোপীয় কয়েকজনের অন্যতম। নবজাগরণে অন্ধবিশ্বাস এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। প্রচলিত মতবাদ গুলিকে যুক্তির আলোতে নতুন করে পরীক্ষা করে দেখার জন্য মানুষকে নৈতিক সাহস জুগিয়েছিলেন। সেই বিদ্রোহ এবং নৈতিক সাহসের একটি জীবন্ত প্রতীক ছিলেন কোপার্নিকাস। তাছাড়া তিনি ছিলেন নবজাগরণের যুগে অন্য একজন পূর্ণ মানব। একাধারে ধর্মতত্ত্বজ্ঞ ,জ্যোতির্বিজ্ঞানী ,চিকিৎসক, অর্থনীতিবিদ, আইনজ্ঞ, কবি এবং চিত্রকর।

    ‘বিজ্ঞানের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ নামের গ্রন্থে স্যার উইলিয়াম সেসিল ডাম্পিয়ার লিখেছেন:‘পনেরো শতকের প্রথম ভাগে প্রাচীন সাহিত্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পেতে লাগল এবং তারা গ্রিক ভাষা শেখার উদ্দেশ্যে গ্রিক পন্ডিতদের আমন্ত্রণ করতে লাগলেন। এভাবে পূব দিক  থেকে বহু গ্রিক ভাষা জানা পন্ডিত এসে ইউরোপের জ্ঞান পিপাসু মানুষকে আধুনিক গ্রিক ভাষার সাহায্যে প্রাচীন গ্রিক ভাষার জ্ঞান দিতে লাগলেন। ৫৩ খ্রিস্টাব্দে তুর্কিদের কনস্টান্টিনপল দখল করার পর থেকে পশ্চিমে পালিয়ে আসা গ্রিক পন্ডিতদের সংখ্যা হঠাৎ খুব বেড়ে গেল। তাদের সঙ্গে অনেক পান্ডুলিপি অর্থাৎ হাতে লেখা পুঁথি নিয়ে এসেছিলেন। ইউরোপের গ্রন্থাগার গুলি তন্ন তন্ন করে খুঁজে আরও অনেক প্রাচীন পুথি পাওয়া গেল। এভাবে প্রায় আট নয়শো বছরের বিরতির পরে গ্রিক ভাষার সঙ্গে ইউরোপের নতুন ভাবে ঘনিষ্ঠ পরিচয় ঘটল। যে সমস্ত মানবতাবাদী পন্ডিত গ্রিক ভাষায় রচিত প্রাচীন পুঁথি গুলি প্রথমে অধ্যয়ন করলেন, তারা মানুষের মনের দিগন্ত প্রসারিত করায় একটি বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করল। এভাবে মানুষের মনের দিগন্ত প্রসারিত হওয়ার ফলেই বিজ্ঞানের নবজন্ম সম্ভব হল।’

    প্রাচীন গ্ৰিসের জ্ঞানভান্ডাদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ইউরোপের যে সমস্ত মনীষী জীবন এবং জগৎ সম্পর্কে অনেক নতুন কথা চিন্তা করতে আরম্ভ করলেন এবং তা করে মানুষের জীবন চর্চার ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটালেন তাদের ভেতরে একজন অগ্রগণ্য ছিলেন নিকোলাস কোপার্নিকাস।

    কোপার্নিকাস পোল্যান্ডের মানুষ। পোল্যান্ডের থর্ন নামের একটি ছোটো শহরে তার জন্ম হয়েছিল। পোলিশ ভাষায় তার পিতৃদত্ত নাম ছিল নিকলাছ কপা নিগক । পরবর্তীকালে তিনি নিজেই নামটা পরিবর্তিত করে গ্রিক ধাঁচে তার নতুন রূপ দিয়ে করলেন নিকোলাস কোপার্নিকাস। শৈশবে কোপার্নিকাসের পিতৃ বিয়োগ হওয়ায় তার প্রতিপালনের দায়িত্ব ছিল কাকুর কাঁধে। সেই সময় পোল্যান্ডের ক্র্যাকাও বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ইউরোপের একটি প্রধান শিক্ষ কেন্দ্র। উচ্চশিক্ষার জন্য কোপার্নিকাস ক্র্যাকাও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় সেখানে এলবার্ট ব্রডজিউস্কি নামের একজন বিখ্যাত গণিতজ্ঞ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী অধ্যাপনা করতেন । তার সংস্পর্শে আসার ফলে বিজ্ঞানের এই দুটি শাখার প্রতি কোপার্নিকাসের মনে প্রবল আগ্রহের সৃষ্টি হয় কিন্তু কাকার পরামর্শ মেনে নিয়ে তিনি সেখানে চিকিৎসাশাস্ত্র পড়তে বাধ্য হন।

    কোপার্নিকাস যে সময় ক্রাকাও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন সেই সময় গ্রিক জ্ঞানভাণ্ডারের পুনরাবিষ্কারে ইউরোপে একটি বিপুল চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছিল। একদিন একজন পথিককে  কোথাও যেতে থাকা অবস্থায় দেখে একজন পরিচিত মানুষ জিজ্ঞেস করল‘তুমি কোথায় যাচ্ছ বন্ধু?’ পথিক উত্তর দিল—’ মৃত মানুষকে প্রাণ দিতে যাচ্ছি।’ আসলে তিনি বলতে চাইছিলেন যে কোনো একটি জায়গায় প্রাচীন গ্রিক পুথি থাকার খবর পেয়ে সেই পথির সন্ধানে তিনি সেখানে যাচ্ছেন। এই প্রাচীন পুঁথিগুলিই ইউরোপের মৃতদেহে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছে। ব্যাকুল জ্ঞান তৃষ্ণা এভাবেই সেই সময় ইউরোপের মানুষের মনে ব্যাকুলতার সৃষ্টি করেছিল। আর এই প্রাণচাঞ্চলের প্রধান কেন্দ্র ছিল ইতালি।

ক্রাকাও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা সমাপ্ত করে ইতালিতে পড়তে যাবার জন্য কোপার্নিকাস কাকুর কাছে অনুমতি চাইলেন। কাকু সানন্দে অনুমতি দিলেন। কোপার্নিকাস ইতালির বলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হিসেবে ভর্তি হলেন।১০৮৮ খ্রিস্টাব্দে গ্রেটিয়ান নামের একজন খ্রিস্টান সন্ন্যাসী স্থাপন করা এই বিশ্ববিদ্যালয় ছিল সেই সময়ের ইউরোপের সবচেয়ে বিখ্যাত বৌদ্ধিক কেন্দ্র গুলির অন্যতম। বলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোপার্নিকাস গণিত এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের উচ্চ শিক্ষা লাভ করা ছাড়াও গ্রিক ভাষার জ্ঞানও ভালোভাবে আয়ত্ত করলেন। নবজাগরণের যুগের জ্ঞানপিপাসু পণ্ডিতদের একটি প্রধান লক্ষ্য ছিল গ্রিক ভাষা আয়ত্ত করা যাতে তারা নতুন করে আবিষ্কৃত হওয়া গ্রিকপুথি গুলি পড়তে পারে ।স্বভাবতই কোপার্নিকাসও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না।

    গ্রিক ভাষায় পন্ডিত হওয়ার পরে  কোপার্নিকাস তার মনে বহুদিন ধরে জমে থাকা প্রশ্নগুলির উত্তর চেয়ে প্রাচীন গ্রেট দার্শনিক এবং বিজ্ঞানীদের পুঁথি গুলি পড়তে শুরু করলেন। এভাবেই তিনি ওপরে বলে আসা এরিষ্টারকাছের  জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কীয় তথ্যগুলির সঙ্গে পরিচিত হলেন।বলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা সমাপ্ত করার পরেবলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা সমাপ্ত করার পরে তিনি রোম বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। সেই সময় জ্যোতির্বিজ্ঞান মানেই টলেমির জ্যোতির্বিজ্ঞান। টলেমির তত্ত্ব অনুসারে পৃথিবী একটি স্থির গ্রহ আর পৃথিবীকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করে সূর্য চন্দ্র এবং পাঁচটি গ্রহ(সেই সময় পর্যন্ত সৌরজগতের মাত্র পাঁচটি গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছিল।) রোম বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে কোপার্নিকাসকেতাঁর ছাত্রদের এই ভুল তত্ত্বকেই শেখাতে হয়েছিল যদিও ভেতরে ভেতরে তার মনে নানা প্রশ্নের উদয় হল— যে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর টলেমির তত্ত্বের মধ্যে ছিল না। উদাহরণস্বরূপ ঋতুর পরিবর্তন কেন এবং কীভাবে হয় তার কোনো ব্যাখ্যা টলেমির তত্ত্ব দিতে পারেনা। সেইভাবে গ্রহ এবং নক্ষত্র গুলি কেন আকাশে জায়গা পরিবর্তন করতে থাকে সেই বিষয়েও টলেমির তত্ত্ব নীরব। মনে মনে এই সমস্ত প্রশ্ন চিন্তা করতে করতে টলেমির তত্ত্বের অভ্রান্ততা সম্পর্কে কোপার্নিকাসের মনে গভীর সন্দেহের সৃষ্টি হল। যে তত্ত্ব তিনি নিজে সত্য বলে অন্তর থেকে গ্রহণ করতে পারেননি সেই তত্ত্বকে ছাত্রদের সামনে তোতা পাখির মতো আওড়াতে থাকাটা তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ল। অবশেষে তিনি একদিন রোম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকের পদ ত্যাগ করে স্বদেশ পোল্যান্ডে ফিরে গেলেন। তিনি এখানে গির্জার কেনন তথা কার্যাদক্ষ পদে নিযুক্ত হলেন।

    গির্জার সন্ন্যাসীর জীবন বরণ করলেও এই সময়ে কোপার্নিকাসকে তাঁর স্বদেশ পোলান্ডের নানা সরকারি কাজে আত্মনিয়োগ করতে হল। কিন্তু মনের মধ্যে সব সময় তার প্রধান চিন্তার বিষয়ে ছিল এটাই: বিশ্বজগতের রহস্য উদঘাটন করা। সেই উদ্দেশ্যে তিনি প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের গ্রন্থ পরম মনোযোগের সঙ্গে অধ্যয়ন করা ছাড়াও রাতের পরে রাত আকাশের গ্রহ নক্ষত্র গুলি পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। সেই সময়ে দূরবীক্ষণ  যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়নি; কেবল খালি চোখের ওপরে নির্ভর করে কোপার্নিকাস সমগ্র আকাশটা তন্ন তন্ন করে খুঁজতেন। বছরের বিভিন্ন সময় গ্রহ-নক্ষত্র গুলি আকাশের কোন কোন জায়গায় থাকে সেই সমস্ত তথ্য তিনি বছরের পর বছর ধরে সাবধানে নোট করে রেখেছিলেন। তাছাড়া তিনি ১৫০৯ এবং ১৫১১ খ্রিস্টাব্দে পঠিত দুটি গ্রহণও সুক্ষভাবে অধ্যয়ন করেছিলেন। এভাবে বহু কষ্টে সংগৃহীত তথ্যগুলি গাণিতিক সূত্রের সাহায্যে বিশ্লেষণ করে কোপার্নিকাস অবশেষে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে সমগ্র সভ্য জগত দেড় হাজার বছর ধরে বিনা বাক্যব্যয়ে গ্রহণ করে আসা টলেমির তত্ত্ব সম্পূর্ণ ভুল; বরং টলেমির চেয়ে কয়েকশো বছর আগে পিথাগোরাসএবং এরিষ্টারকাছ উদ্ভাবন করেযাওয়া তত্ত্বই শুদ্ধ।সৃষ্টির প্রথম মুহূর্ত থেকে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষিণ  করে আসছে, কিন্তু এই চিরন্তন সত্যটা কে মানুষের চেতনায়  দৃঢ় ভাবে প্রতিষ্ঠা করে গেল কোপার্নিকাস।

    মহা বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর মতে কোপার্নিকাস কোনো নতুন তত্ত্ব আবিষ্কার করেন নি; তার জন্মের প্রায় আঠারোশ বছর আগে পিথাগোরাস এবং এরিষ্টারকাছ আদি গ্রিক বিজ্ঞানীরা যে সত্য আবিষ্কার করেছিলেন এবং যে সত্যকে মানুষ চরম নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়ে আঠারোশ বছর ধরে অস্বীকার করে আসছিল সেই সত্যকে কোপার্নিকাস বিস্মৃতির গর্ভ থেকে উদ্ধার করে পুনরায় নতুন করে প্রতিষ্ঠা করলেন মাত্র। কথাটা মিথ্যা নয় কিন্তু সঙ্গে এই কথাও সত্যি যে দেড় হাজার বছর ধরে মানুষ মেনে চলা একটি তত্ত্বকে সিংহাসন চ্যুত করার জন্য  যে সাহস সত্যানুরাগ এবং প্রতিভার প্রয়োজন , সেই সমস্ত কিছুই ছিল বলেই তার পক্ষে সত্যকে এভাবে পুন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছিল। এই ক্ষেত্রে তিনি নবজাগরণের একজন সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি।

    কোপার্নিকাস তাঁর সমগ্র জীবনের গবেষণালব্ধ তথ্য এবং তত্ত্ব সন্নিবিষ্ট করে যে গ্রন্থটি রচনা করেন সেটি ১৫৪৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশ করা হল। কোপার্নিকাস তখন মৃত্যুর শয্যায়। কিন্তু সূর্য পৃথিবীর চারদিকে প্রদক্ষিণ করে না পৃথিবী সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষিণ করে এই সরল সত্যটা প্রকাশ করার জন্য মানুষের তখনও এত ভয় ছিল যে প্রকাশক কারও মাধ্যমে বইটির ভূমিকা লিখিয়ে ঘোষণা করলেন কোপার্নিকাসের গ্রন্থটি কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণামূলক গ্রন্থ নয় ,এটি একটি কাল্পনিক প্রস্তাব মাত্র!

    মৃত্য শয্যয়শায়িত কোপার্নিকাসের হাতে ছাপা বইটি দেওয়া হল যদিও বই পড়ার অবস্থা তখন তার ছিল না ।১৫৪৩ খ্রিস্টাব্দে ২১ মে তার মৃত্যু হল।

    আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভিত প্রতিষ্ঠা করে গেলেন কোপার্নিকাস— যার উপরে গড়ে উঠেছে বিশ্বসৃষ্টি সম্পর্কে গত তিনশো বছর ধরে পুঞ্জিভূত হওয়া জ্ঞান ভান্ডার। এই জ্ঞান ভান্ডারে বিপুল অবদান জুগিয়েছেন গ্যালিলিও, নিউটন এবং আইনস্টাইন প্রমুখ মহাবিজ্ঞানীরা। কোটি কোটি আলোকবর্ষের দূরত্বে ছড়িয়ে থাকা কোটি কোটি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বিষয়ে আমরা যে আজ অনেক কথা জানতে পারছি তার মূলে রয়েছে মানুষের প্রশ্ন করার দুঃসাহস। সঙ্গে আছে আধুনিক মানুষের এই দুর্মর বিশ্বাস যে এই বিশ্ব সৃষ্টি সম্পূর্ণ দুজ্ঞেয় নয়,– জ্ঞানের সাধনার দ্বারাই মানুষ বিশ্ব প্রকৃতি সম্পর্কে অনেক কথাই জানতে পারে। অন্ধবিশ্বাসের গাঢ় কুয়াশা যে সত্যকে মানুষের চোখ থেকে আড়াল করে রেখেছিল বিজ্ঞান এবং যুক্তিবাদের উজ্জ্বল রশ্মি রেখা কুয়াশা ভেদ করে সেই সত্যকে মানুষের চোখের সামনে প্রতিভাত করে তুলল। এই নতুন যুগের অন্যতম অগ্রদূত ছিলেন কোপার্নিকাস। তিনি চিরনমস্য।

    কোপার্নিকাসযদিও ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে সূর্যকে সৌরজগতের কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠা করলেন কিন্তু এই তত্ত্ব খ্রিস্টান জগতের ধর্মগুরু পোপের অনুমোদন পেতে আরও বহু বছর অপেক্ষা করতে হল। ১৮২২ সনে পোপ এক  অনুজ্ঞা পত্রের দ্বারা সূর্যকে সৌরজগতের কেন্দ্রে বিরাজ করার জন্য অনুমতি দিলেন।

    সে এক অন্য কাহিনি।

 

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত