শারদ অর্ঘ্য অণুগল্প: বৃষ্টি এলো । সর্বানী বন্দ্যোপাধ্যায়
সকাল থেকেই আওয়াজটা শোনা যাচ্ছে।তপু তাও বাসন ধোওয়ার অছিলায় একবার উঠোনটায় নামে।মেঘের গুরগুর আওয়াজটা শুনে কেমন যেন একটা আনন্দ হয়!বৃষ্টি আসছে তাহলে।গতকাল রাতে হাঁসফাস করা গরমে মরে যেতে ইচ্ছে করছিল ওর।তার মধ্যেই মোটামামু ওকে দিয়ে পা টিপিয়েছে।লোডশেডিংএ পাখার হাওয়া করিয়েছে।মোটামামুর নাম বসন্ত মাইতি।সারাক্ষণ গদিতে বসে থাকে, তাও যে কিকরে ওর পায়ে ব্যথা হয় কে জানে?
“তপু, তপু, কানে কথা যায়না?”ওই ডাক এসেছে।ব্যাটা শকুন।এক মুহূর্ত চোখের আড়াল হওয়ার উপায় নেই।হাগতে গেলেও বলে যেতে হবে।
বৃষ্টি এলো বলে।তপু তাড়াতাড়ি বাইরের উঠোনে ডেকচি মাজতে বসে যায়।একবার মোটামামুকে সাড়া দেয়।“আসছি মামু, ডেকচি মাজছি।”
মায়ের কথা মনে হচ্ছিল ওর।গ্রামের বাড়িতে টালির চাল, মাটির দেওয়াল।কিন্তু এত গরম নয়।চারপাশে গাছপালা আছে যে। মা হয়ত এখন রান্না করছে।ভাই ইস্কুলে গিয়েছে।ইস্কুলের কথা মনে হতেই হু হু করে কান্না পেল ওর। করোনা এলো, ইস্কুল বন্ধ হল।বাবা যে কাজ ধরতে কোথায় চলে গেল, আর ফিরল না।তখন পল্টুদাকে বলে মা শহরের এই দোকানে ওকে কাজে পাঠিয়ে দিল।দেড় হাজার টাকা মাইনে, কিন্তু পল্টুদা দুশো টাকা কেটে রাখে।ওকে ভয় দেখিয়ে বলেছে, “মালিককে বা তোর মাকে যদি বলে দিস, চোরের বদনাম দিয়ে তোর চাকরিটাই খেয়ে নেব।” ও বলেনি। বলে লাভ নেই।ও কাজ করে বলে তবু তো বাড়িতে একটা খাওয়ার পেট বাঁচে।কটা পয়সা মায়ের হাতে তুলে দিতে পারে।
পল্টুদা সেদিন বলছিল ওকে, “সামনের বছর তোর মাকে বলে তোর ভাইটাকে কাজে লাগিয়ে দেব।”
ভাইয়ের মুখটা মনে পড়ছিল ওর। আর যাই হোক, ভাইকে ও কিছুতেই একাজ করতে দেবে না। পল্টুদা তো জানেনা, ও একটু একটু করে বকশিসের টাকা জমিয়ে রাখছে।আর একটু জমলেই ও স্টেশনের কাছে টেবিল পেতে চা বিক্রি করবে।এখানে থাকতে থাকতে চা বানাতে শিখেছে ও।সবাই বলে ওর হাতের চা নাকি অমৃতর মত ।
বাসন মাজতে মাজতেই গায়ে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছিল।এবার জোরে এলো।ছাতের দড়িতে মোটামামু, ওর,পল্টুদার জামাকাপড় ভিজছে।ও তুলবে না।যাক্, সব ভিজে যাক্। বদমাশগুলো শাস্তি পাক।
মোটা মামু আবার ডাকছিল, “তপু, তপু রে,…।”
তপু সাড়া দিচ্ছিল না।জোর বৃষ্টিতে দুহাত ছড়িয়ে ও ঘুরছিল,আর মুখে বলছিল, “আনিবানি জানি না।পরের ছেলে মানি না।”
ঐতিহ্যময় শহর চন্দননগরের স্থায়ী বাসিন্দা সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির স্নাতক।১৯৯৬ সালে প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়’দিবারাত্রির কাব্য’ পত্রিকায়।২০০১ সালে ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়।‘আনন্দবাজার’, ‘বর্তমান’, ‘আজকাল’, ‘প্রতিদিন’, ‘তথ্যকেন্দ্র’, ‘উত্তরবঙ্গ সংবাদ’ ছাড়াও, ‘অনুষ্টুপ’, ‘কুঠার’, ‘এবং মুশায়ারা’-র মতো বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনেও তার কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ প্রকাশের ধারা অব্যাহত। প্রকাশিত উপন্যাস পাঁচটি, গল্পগ্রন্থ চারটি, এবং কবিতার বই একটি।