শারদ অর্ঘ্য: তিনটি কবিতা । মঈনুস সুলতান
দোল পূর্ণিমা
শ্বেতপাথরের মেঘপরশ স্থাপত্যে
আজ ঝেঁপে নামে দোল পূর্ণিমা,
স্থাপিত শুভ্র মূর্তি সবুজ ঘাসে
তাকাতেই খুলে যায়—
অদৃশ্যের সুদৃশ্য সীমা।
আর দেখি মনুমেন্টের শুভ্র ডোম
হরেক রেখায় বিবর্তিত হয়—
অরণ্যের বিভূতিমাখা ছত্রাক,
ভাস্কর্যের শুভ্র মুকুট নিধুয়া পাথারে উড়ে
সংবেদনের সাদা হয় আজ কালো কাক।
সরোবরের পাড়ে বসে বৃদ্ধ দম্পতি
খেলে চীনা পুতুল,
ল্যাম্পপোস্ট বৃক্ষ হয়—বালবে ঝুলে
সিগ্ধ নিষ্প্রদীপ ফুল।
মরমের মেঘমহলে আজ নেমেছে দোল পূর্ণিমা—
এ ভুবনে তুমি নেই…
আছে পূরাকীর্তি, তিমি মাছ
আর অশরীরি উপমা।
এ বাতাবরণ ভরা মায়াচ্ছন্ন ভুলে
মৌন রাত… পুষ্পহীনতায় মাকড়শা
বাতাস ঝুরে যায় ছলনা বকুলে।
জলের রূপালিতে বৃক্ষের সবুজ ছায়া
নৃত্যরত নর্দান লাইট… মেরুজ্যোতি বিভাময় সোনালি,
আজ দোল পূর্ণিমা
বন্ধঘরের অন্ধকারে বাজে রঙের করতালি।
শিশিরের অনুভবে
মন্দিরের সিঁড়িতে বাতাসা ঘিরে পিঁপড়া—
পাশে একাকী তুমি… ঘোর নির্জনে বসে থাকো,
ইট ফুঁড়ে বেরিয়েছে অশত্থের নরোম অংকুর
সবুজ পাতায় রোদ আঁকে কলকাপাড় ময়ূর
চাঁদকুড়া মাছের ঘাইয়ে ঘোলাজলে কী যে আঁকো?
দেউলের ধ্বসে পাড়া দর দালান—
শ্বেতপাথরের আঙিনায় পাপড়ি ঝরা রজনীগন্ধা,
সন্ধ্যামালতির ঝোপে… পতঙ্গের ধ্বনিতে
বয়ে যায়— জলের হৃদয় ঝোরায় অলকানন্দা;
অর্ঘ রেখে বেদীতে… পিছনের কপাট দিয়ে
বেরিয়ে এসেছো তুমি…খুব নীরবে,
তোমার মনমেঘে বৃষ্টি.. .সুরভিত ধূপ
ঘাসফুল ভিজে যায় শিশিরের অনুভবে;
দিবসে গল্পের প্রচ্ছদপট…
অজগরের ত্বকে দিনযাপনের ছাপরেখা,
মসলিনের নেকাব পরে রতিকর্পূর রাত্রি এসে
চুপিসারে দেয় দেখা;
তুমি হদিস করো রূপালি গন্তব্যের
যে কালোয়াত রাজ্য অস্তিত্ত্বের অতীত,
নিঃশব্দে বেজে ওঠে তোমার চেতনার
সৌরভ–জল— স্মৃতিতটে সূর্যমুখি সংঙ্গীত।
শিশিরে স্নাত জলসত্র
শিশুটি তোমার বড় হবে আমার অনুপস্থিতিতে
কিছু দিন নিমগ্ন ছিলাম যুগলে—মনে আছে
ব্লু গ্রাসের বিদগ্ধ গীতে,
বাচ্চাটি বিছানায় ছোটাবে নীল সবুজ রেসকার
মেঝেতে ছড়ানো থাকবে—
প্লাস্টিকের আণুবীক্ষণিক ডাইনোসর;
কথা হয়েছিলো— চিমনি রকের কাছাকাছি
বনানীর ছোট্ট কটেজে আমরা বাঁধবো ঘর।
শর্ট স্কার্ট পরেছিলে তুমি— ঝরাপাতার মোটিফে চিত্রিত
টপের ব্রোচে ঝলমল করছিলো রূপালি প্রজাপতি,
তোমার বুককেস থেকে নীরলে সরিয়ে নেব—
আমার বইপত্র— দিনপঞ্জিকাতে ধৃত ভাবনার নথি;
পার্সের ছোট্ট আয়নায় তুমি আঁখিতে বুলাবে
বনানীর সবুজ মাসকারা—
ড্যাফোল ব্যাগ গোছাতে গোছাতে
দেখবো কাউন্টারের আয়না থেকে ওঠে যাচ্ছে পারা।
শেষবারের মতো আমরা বাজাবো টেইলার সুইফটের সিডি
নিকেস করে লেনদেন— স্মৃতি হবে তোমার সহিষ্ণুতা অপার,
‘ইউ নো, উই আর নেভার, এভার, গেটিং ব্যাক টুগেদার’
ভিন্ন সরনীতে হাঁটবো আমি অজানা ভাষায় পড়বো বইপত্র,
দেখবো শিশিরে স্নাত হয়ে—
গোলাপের পাপড়িতে টলমল করছে জলসত্র।

জন্ম সিলেট জেলার ফুলবাড়ি গ্রামে। সত্তর দশকের মাঝামাঝি থেকে কবিতা ও গল্প লিখছেন। হালফিল লিখেছেন কিছু ভ্রমণ-ভিত্তিক আলেখ্য। প্রাচীন মুদ্রা, সূচীশিল্প, পান্ডুলিপি, ফসিল ও পুরানো দিনের মানচিত্র সংগ্রহের নেশা আছে।