| 6 অক্টোবর 2024
Categories
ধারাবাহিক

ইরাবতী ধারাবাহিক:ফুটবল (পর্ব-২৫) । দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

অষ্টম শ্রেণির দুই বন্ধু রাজ আর নির্ঝর। রাজ আর অনাথ নির্ঝরের সাথে এইগল্প এগিয়েছে ফুটবলকে কেন্দ্র করে। রাজের স্নেহময়ী মা ক্রীড়াবিদ ইরার অদম্য চেষ্টার পরও অনাদরে বড় হতে থাকা নির্ঝর বারবার ফুটবল থেকে ছিটকে যায় আবার ফিরে আসে কিন্তু নির্ঝরের সেই ফুটবল থেকে ছিটকে যাবার পেছনে কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় নির্ঝরের জেঠু বঙ্কু। কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় বঙ্কু ও তার ফুটবলার বন্ধু তীর্থঙ্করের বন্ধুবিচ্ছেদ। কিন্তু কেন? সবশেষে নির্ঝর কি ফুটবলে ফিরতে পারবে? রাজ আর নির্ঝর কি একসাথে খেলতে পারবে স্কুল টিমে? এমন অনেক প্রশ্ন ও কিশোর জীবনে বড়দের উদাসীনতা ও মান অভিমানের এক অন্য রকম গল্প নিয়ে বীজমন্ত্রের জনপ্রিয়তার পরে দেবাশিস_গঙ্গোপাধ্যায়ের নতুন কিশোর উপন্যাস ফুটবল আজ থাকছে পর্ব-২৫।


আজ একদমই ভাল খেলতে পারল না রাজ। বারবার বল মিস করল। ইমন পর্যন্ত তাকে কাটিয়ে নিল। স্যার একটু বিরক্তির চোখে তাকে বললেন, “এমন খেললে ফাইনালে কি করে খেলবি?”

ইন্দ্রনীলদা ওর হয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল।স্যার তাকে ধমকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,” বন্ধু আসে নি বলে তোর খেলা খারাপ হয়ে যাবে?সৌম্য অ্যাঁ?”

“না মানে।“

স্যার বললেন, “তখন থেকে দেখছি।খেলায় একদম মন নেই। ধর যদি নির্ঝর  না খেলতে আসে তবে কি তুই ভাল করে খেলবি না?”

রাজ চমকে উঠল। স্যার কি জেনে গেছেন? জানবারই কথা।নাকি  নির্ঝর স্যারকে জানিয়ে দিয়েছে।সে বলল,” নির্ঝর খেলবে না?”

স্যার বললেন, “ কি করে জানব? তুই জানিস। আজ খেলতেই এল না তো।আর কদিন পর খেলা কেউ কামাই করে?”

 বুকের ভার রাজের কমে গেল। নির্ঝর খেলবেই না এ খবরটা স্যার বোধহয়  এখনো  পান নি।ভাগ্যিস!  ইমন একটু  দুরে দাঁড়িয়ে। তাদের কথা সে শুনতে পায় নি। সে পেলেই হয়ত আগ বাড়িয়ে স্যারকে সব কথা বলত।

স্যার বললেন,” মন দে। মন দে খেলায়। এই প্রথম আমরা ফাইনালে। জিততে হবেই।“

সে বলল, “সরি স্যার।“

মাঠে সবাই ধীরে ধীরে বেরিয়ে গেল। ইন্দ্রদার তাড়া আছে। সে চলে যেতে রাজও উঠল।একটা উদ্বেগ তাকে ছেয়ে ফেলছে। বঙ্কুজেঠুকে কি বললেন মাকে? মা নিশ্চয় ম্যানেজ করতে পারবেন বঙ্কুজেঠুকে।


আরো পড়ুন: ফুটবল (পর্ব-২৪) । দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়


রাজ ফেরার উপক্রম করতেই  খেয়াল করল তীর্থজেঠু এখনো মাঠ থেকে যান  নি। আবছা  অন্ধকারে চুপ করে একা দাঁড়িয়ে আছেন।লোকটা সারাদিন কি যেন ভাবেন! মাঝে মাঝেই তিনি কেমন যেন দুরে চলে যান। কি ভাবেন  কে জানে? সে বলল,” জেঠু। চললাম।“

 তীর্থজেঠুএকটু চমকে উঠে বললেন, “চললে? আচ্ছা। এসো।“

“আপনি যাবেন না?”

“আমি? হ্যাঁ। যাব।আমার কোনও তাড়া নেই। তুমি যাও।“

রাজ মাথা হেলিয়ে  বলল, “এখানে দাঁড়িয়ে কি ভাবছেন জেঠু?”

“না। কিছু না। তেমন কিছু ভাবছি না।“

রাজ বলল,”নিশ্চয়  খেলার কথা ভাবছেন?”

“তা একটু একটু ভাবি। এ মাঠে কত খেলেছিলাম, মাঝে মাঝে মনে পড়ে বই কি!”

রাজের আগ্রহ বাড়ল। সে বলল, “বলুন না আপনার খেলার গল্প।“

“থাক। তোমার দেরী হয়ে যাবে।“

“না। না। দেরী হবে না। আপনি বলুন।“

তীর্থজঠু হেসে বললেন, “তেমন কিছু নয়। এ মাঠেই আমি বঙ্কু খেলতাম।“

রাজ জিজ্ঞেস করল,- “বঙ্কুজেঠু খুব ভাল খেলতেন?”

“উরিব্বাস। দারুন। আমি আর ও একসঙ্গে খেলতাম কেউ হারাতে পারত না। সে সব কি দিন ছিল !” মাথা ঝাঁকিয়ে তীর্থ জেঠু বললেন।তারপর  বললেন, “বাদ দাও ওসব কথা। এবার চল। অন্ধকার হয়ে আসছে।“

রাজ বুঝল তীর্থজেঠু আর কথা এগোবেন না। সে এগোতে শুরু করল।

তীর্থজেঠুজিজ্ঞেস করলেন “নির্ঝরকে তো আজ দেখলাম না।“

“ও আসে নি?”

“আসে নি কেন? আমি জিজ্ঞেস করব ভেবে তখন ভুলে গেলাম।শরীর খারাপ করল নাকি?”

রাজ বুঝতে পারল না কি উত্তর দেবে? সে কি বলবে আপনি কোচিং করাবেন বলে ওর জেঠু ওকে খেলতে দেবে না?

রাজ  কি একটা বলতে গেল তার আগেই তীর্থজেঠু  বললেন, “ছেলেটা বড় ভাল খ্যালে। তুমিও ওর বেশ পার্টনার। খেলায় পার্টনার খুব প্রয়োজন। আমি আর বঙ্কু ছিলাম পার্টনার। বঙ্কু  যে কোন জায়গা থেকে বল তুলে আনত আর আমাকে দিত। আমি গোল করতাম। উফ! সেসব দিন যে দারুন ছিল।“

রাজ বলল, “বঙ্কুজেঠু  এখন কোথায়?”                                                   

“জানি না। জানতেও চাই না।আচ্ছা, তুমি বল,  রোজ গোল করে নির্ঝর। তুমি কি ফাইনালের দিন ওকে গোল করতে না দিয়ে নিজে গোল করতে চাইবে?”

রাজ হঠাৎ যেন একটা ধাক্কা খেল। এরকম তারও একদুবার মনে হয়েছে। নির্ঝর গোল করে রোজ।ওকে রোজ পাশ বাড়াতে হয়। তার চেয়ে সে যদি নিজে গোল করে! বঙ্কুও এমন ভেবেছিলেন? এ ইচ্ছেটা কি খারাপ? তা তো নয়। অন্য কেউ গোল করতে পারবে না এমন নিয়ম কোথাও নেই।  তবে এটুকুর জন্য দুবন্ধুর গোলমাল হয়েছিল। সে ভাবে জিজ্ঞেস করবে কিন্তু সাহস পায় না।

তীর্থজেঠুএকটা শ্বাস ছেড়ে বললেন,  “থাক সেসব কথা। এবার চল। দেরী হয়ে যাবে।“

সত্যিই দেরী হয়ে যাচ্ছে। রাজ মাথা নাড়ে ।যেতে যেতে সে দাঁড়ায়। তার হঠাৎ মনে হয় তীর্থজেঠুকে সে  নির্ঝরের পরিচয় জানাবে। নির্ঝর যেমন ভয়ে বারন করছে  তেমন কিছু ঘটবে না।বরং  তীর্থজেঠু খুশিই হবেন। উনিই হয়ত একবার নির্ঝরের খেলার  জন্য বঙ্কুজেঠুকে বলতে পারেন। রাজ আর বেশি চিন্তা করল না।সে বলল, “জেঠু। একটা কথা বলব?”

“কি?”

“নির্ঝরের কথা বলছেন না। ও কে বলুন তো?

“কে?”

“বঙ্কুজেঠুর ভাইপো।“

 তীর্থজেঠু শুনলেন। তাঁর চোখ দুটো মুহুর্তে বড় হয়ে গেল।কিছক্ষন স্তব্ধ হয়ে রইলেন।তার মুখ থেকে অস্ফূট শব্দ বেরোল।“তাই?”

রাজ মাথা নেড়ে বলল, “হ্যাঁ।“ ও কেন খেলতে আসছে না জানেন জেঠু?

 তীর্থজেঠু হাত তুললেন। তিনি শুনতে চাইছেন না কোনো কথা। রাজ দেখল টলমল পায়ে মানুষটা অন্ধকারে হাঁটা দিলেন। রাজ একবার কি যেন ভাবল।সে পেছন পেছন দৌড়াল। ওকে বলতেই হবে কথাটা। সে  ডাকল, “জেঠু। শুনুন।“

“আঁ। বিরক্ত করছ কেন? যাও।“

 গলার আওয়াজে রাজ কেঁপে উঠল। সে একটা বড় ভুল করে ফেলল!কেন যে খামোকা কথাটা বলতে গেল! হিতে বিপরীত হয়ে গেল সবকিছু। তীর্থজেঠু ভীষন রেগে গেছেন সে বুঝেছে। তার সামনে যেতে সাহসে কুলোয় না।একটু খ্যাপামতন আছে সবাই বলে। এখন যদি তিনি  হঠাৎ তাকে মারতে শুরু করে্ন। সেদিন ইমন কি একটা বলাতে এমন রেগে গেছিল স্যারকে এসে সামলাতে হয়। রাজ পেছোতে শুরু করে। তীর্থজেঠুর সামনে থাকার সে আর রিক্স নেয় না। সাঁই-সাঁই করে প্যাডেল করে সে সীমানার বাইরে চলে এল। আসার পর সে  হাপঁ ছেড়ে পেছনে তাকাল। তীর্থজেঠু মাঠে দাঁড়িয়ে আছেন একা। ভুতের মত।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত