| 6 মে 2024
Categories
শারদ অর্ঘ্য ২০২৩

শারদ অর্ঘ্য গল্প: ধানের গন্ধ । রাজকুমার শেখ

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

 

মাগরিবের আজান হয়ে গেছে। পতু তাড়াতাড়ি মাঠের কাজ সেরে নিতে চায়।  ধান রোয়া আর একটু বাকি আছে। পুবে মেঘও করেছে। যে কোনো সময় বৃষ্টি নামবে। বেশ কদিন ধরে এক ভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টির মধ্যেই ওরা জমিতে চাষ দিয়ে ধান রুইছে। এবার বৃষ্টি ভালোই হচ্ছে। গত বারে বৃষ্টির জন্য ভালো ধান ফলেনি। বছরটা খুব কষ্টে গেছে।ছেলেপেলের দুবেলা খাবার জোগাড় করতে গিয়ে পতুর মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়েছে। ওর দিন গুজরান কাল হয়ে গেছিল। এমনিতেই বর্ষার ধান চাষ করতে ধার দেনা করতে হয়। গত বারের টাকা এখনো পাবে আলিম মোড়ল। এবারে ধার করতে গেলে ওকে ফিরিয়ে দেয়। পতু কত কাকুতি মিনতি করে বলে, মোড়ল, এবার দাও। আমি ধান হলি সব মিটিয়ে দেব।
আরে যা তো এখান থেকি। বেটা আগের কানাকড়ি ফেল। তা না হলি জমির দখল নেব।
মোড়ল, এমনটি করোনি। আমরা না খেতি পেয়ি মরবো!
পতু কাঁদতে থাকে। ওর বুক ভেসে যায় চোখের জলে। 
যা তো এখান থেকি। তুর চোখের পানি এখানে ফেলবি না। শালা যত্তসব!
পতুকে বার করে দেয়। এখানে যত চাষি আছে তারা আলিম মোড়ল এর কাছে চাষের সময় টাকা ধার করে। এবার ও অন্য গাঁয়ে গিয়ে টাকা ধার করে এনে চাষ করছে। ধান টুকু না হলে ওদের চলবে না। ওদের ধানই সব। গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ। এতেই ওরা খুশি। এভাবেই ওরা বেঁচে আছে। মাটির সোঁদা গন্ধ আর ধানের সবুজ গন্ধ ওদের বুক ভরে থাকে। সারা বেলা কেটে যায় মাঠে। ঘাম আর রক্ত মিশে থাকে ফসলে। আর  সেই ফসল যখন ঘরে আসে তখন তাদের মহা আনন্দ। বাড়ির বউরা ধান তুলে গোলায়। তার পর অল্প অল্প করে সেদ্ধ ভাপা করে রোদে শুকিয়ে ঢেঁকিতে ভেনে চাল করে। বাড়ির সকলে কাজে ব্যস্ত থাকে।
পুবের মেঘটা আস্তে আস্তে গোটা আকাশ ছেয়ে ফেলছে। আর একটা ফালি আছে। ধানটা আজ না পুঁতলে দেরি হয়ে যাবে। পতু হাত চালায়। এমনিতে ওর টাকা মেনেজ করতে গিয়ে চাষটা দেরি হয়ে গেছে। ধান নামলা হলে ভালো ফসল হবে না। পতুর একটা বিড়ি খেতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু ও তেমন পাত্তা দিচ্ছে না। মাঠ থেকে সেই কখন চাষিরা সব চলে গেছে। পতু আর দেরি করে না। বৃষ্টি নামার আগেই সব সারতে হবে।
ও এক সময় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বাড়ি ফেরে। তমুল বৃষ্টি নেমেছে। আজ যেন সব ভাসিয়ে দেবে। হঠাৎ ওর বুকটা এক অজানা আশঙ্কায় ঢিপঢিপ করতে থাকে।

দুই.

ধানের দিকে চেয়ে ছিল পতু। এবার তার খোদা কথা শুনেছে। ধানে ভরে গেছে। গোটা মাঠ যেন সবুজে ঢাকা। আর কদিন পরেই ধান পাকবে। সোনার ধান ঘরে উঠবে। গোলা এবার ভরে যাবে। দেনাটাও কিছু ধান বেচে শোধ করে দেবে। পতু মনে মনে ভাবে কথাটা।
ও ধানের গায়ে হাত বুলিয়ে দেয়। ওর মন খুশিতে ভরে ওঠে। এমন সময় কালু চাচা এসে পাশে দাঁড়ায়।
কি— রে পতা, ধান তো ভালোই হয়িছি। তুর বছরটা ভালোই হবি।
চাচা, দোয়া করো। খোদা তেমনটি চাইলে হবি।
নারে পতা, তুর ধান এবার খুব ভালো হয়েছি। মাঠের মধ্যে সেরা ধান। তুর কপাল ভালো।
কথা শেষ করেই কালুচাচা আল দিয়ে চলে যায়।
পতু সেদিকে তাকিয়ে থাকে।  বেলা বাড়তে থাকে। একটা ঘাস ফড়িং উড়ছে। সবুজ ধানের ওপর দিয়ে সে উড়ে উড়ে চলে। পতু ঘাস ফড়িং এর ওড়াউড়ি দেখছে।

তিন.

পতু,  দৌড়ি যা। তুর ধান দখল নিয়েছে আমিন মোড়ল।
পতু বাড়িতেই ছিল। কেবলে ভাতের গরাস  মুখে দেবে আর অমনি খবরটা দিয়ে গেল পচাচাচা। ভাত রেখে পতু মাঠের দিকে ছুটছে। গিয়ে দেখছে আমিন মোড়ল এর লোকজন তার জমির ধান কাটছে। মোড়ল আলে ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে।  পতু গিয়ে বাধা দেয়।
মোড়ল, এমন কাজটি তুমি করোনি। আমি না খেতি পেয়ি মরবো!
পতু আকুতি মিনতি করতে থাকে।
এরে পতা, তু টাকা দিবিনি। আর ধান তুলবি ঘরে? তুর মুখ ভেঙে দেবনি। টাকা ফেল।
ধান বেচে দেব মোড়ল।
তুর কথা লেবনি। এই তুরা ধান কাট।
আমিন মোড়ল হুকম দেয়
পতু বাধা দিতে গেলে ওকে লাঠি দিয়ে ওকে আঘাত করে। পতুর কমজোরি শরীরটা টাল সামলাতে পারে না। ও জমিতে পরে যায়। পতুর রক্ততে মাখাকির কোল ভেসে যাচ্ছে।  

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত