| 7 মে 2024
Categories
ধারাবাহিক

ধারাবাহিক: শ্রাবন্তীদের দিনরাত্রি ( পর্ব) । ইকবাল তাজওলী

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

১৭.

অর্ণব পুকুরে ডুবে মারা গেছে।

ওয়াহিদ সাহেব সকালে আজ নিজেই বাজার করতে গেছেন। অনেকদিন থেকে নিজ হাতে মাছ কেনা হয় না, তাই সখ করে নিজ হাতে মাছ কিনতে গেছেন। অর্ণবকে সঙ্গে নেননি। অর্ণবও আজ বাবার সঙ্গে যাওয়ার বায়না ধরেনি।

ওয়াহিদ সাহেব বাজার থেকে ছোটোমাছ নিয়ে ফিরেছেন। চচ্চড়ি খাবেন, তাই ছোটোমাছ কিনে এনেছেন। ফিরেই শুনলেন, অর্ণবকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি পাগলের মতো অর্ণবকে ডাকতে শুরু করলেন। পুরো বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজলেন। পাশের সবগুলো বাড়িতে লোক পাঠানো হলো। কিন্তু অর্ণবকে খুঁজে পাওয়া গেল না। নেই, অর্ণব কোথাও নেই!

ওয়াহিদ সাহেব হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন। এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হলো। চোখের পানি ধরে রাখতে পারল না কেউ। আরজুমান্দ বানু, শ্রাবন্তীও হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন।

চারদিকে খবর পাঠানো হলো। খবর এলো না।

সন্ধ্যার দিকে পুকুরে লাশ ভেসে উঠল। ওয়াহিদ সাহেব মুর্ছা গেলেন। তাঁর আর কেউ রইল না।

 

 ১৮.

 

ডা. মির্জা আজিজুল ইসলামের চাকরি হয়েছে বগুড়ার শিবগঞ্জে  একটি এনজিওতে। এনজিওর নাম নিজের ভাগ্য নিজে বদলাই। তাঁর আনন্দের সীমা-পরিসীমা নেই। মোটা অঙ্কের সেলারি অফার করা হয়েছে।

চাকরির সুবাদে ডা. মির্জা আজিজুল ইসলাম মিষ্টি নিয়ে অবন্তীদের বাড়িতে হাজির হয়েছেন। আনন্দের আতিশয্যে আরজুমান্দ বানু ও শ্রাবন্তীকে পেয়ে পা ছুঁয়ে তিনি কদমবুসি করলেন। বললেন,‘খালাম্মা, আপা দোয়া করবেন। মুরুব্বিদের দোয়া আমার পথের পাথেয়। প্রথম চাকরিতে যাচ্ছি, কালকে বাড়ি যাব, বাবা-মায়ের দোয়া নিতে। আগামী সপ্তাহে যোগদান করব।’

আরজুমান্দ বানু, শ্রাবন্তী ডাক্তারকে বসতে বলে ভেতরে গেলেন।

অবন্তী বলল,‘তারপর কী অন্তু ?’

‘তারপর বিয়ে’ বলে সাহস সঞ্চয় করে অন্তু অবন্তীকে জড়িয়ে ধরলেন। অবন্তীও সাড়া দিল।

অবন্তী আজ বেপরোয়া। ডাক্তার চলে যাওয়ার মিনিট বিশেক বাদে মাকে বলেই চলে এসেছে। আপাকে তোয়াক্কা করেনি।

সারাটা দিন দুজনে ঘুরেছে। চাইনিজ খেয়েছে। ফুসকা খেয়েছে। তারপর, অবন্তী অন্তুর সঙ্গে অন্তুর বাসায় চলে এসেছে।

আজ তারা আদম-ঈভ। আদিম নেশায় মত্ত মানব-মানবী।

 

১৯.

নাজমুল হুদা সাহেব পান চিবোচ্ছেন। পকেট থেকে ৩২০ জর্দা বের করে মুখে পুড়লেন। আজ তাঁর নেশা ধরেছে।

তিনি কেরামত আলিকে ডাকলেন। বললেন,‘পিনাক চক্রবর্তীর ফাইল বের কর।’

পিনাক চক্রবর্তী গতকাল আসেননি, খবরও পাঠায়নি। বিষয়টি বড়সাহেবকে অবহিত করা হয়েছে। বড়সাহেব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

পিনাক চক্রবর্তীকে শোকোজ করা হয়েছে। শোকোজের ভাষ্য নিম্নরুপ,‘বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার কারণে অত্র অফিসের নিয়ম-শৃঙ্খলা মারাত্মক বিঘ্নিত হয়েছে, যা অফিসের শৃঙ্খলার পরিপন্থী।

আপনার বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে না, তা সর্বোচ্চ সাত কর্মদিবসের মধ্যে অবহিত করার জন্যে নির্দেশ দেয়া গেল।’

নাজমুল হুদা সাহেব আরেকটি পান মুখে পুড়লেন। তারপর আব্দুল করিমকে বললেন,‘আব্দুল করিম, সাবধানে থাকবা। বড়সাহেব খুব গরম। হট টেম্পারড। জরুরি প্রয়োজনে আসতে না পারলে আমাকে ইনফর্ম করবা। কোনো সমস্যা নাই।’

পিনাক চক্রবর্তী মিইয়ে গেলেন। বড়বাবুর সঙ্গে দেখা করে বললেন,‘আমার ছেলের অন্নপ্রাশন ছিল, তাই আসতে পারিনি।’

‘বড়বাবু স্যার বল। তোমার তো রগ একটা ত্যাড়া। বহুদিনে বান্দরের ঝুলা ( অণ্ডকোশ ) হান্দাইছে চিপায়। টের পাইবায়।’

‘বড়বাবু স্যার, আমি বড়োসাহেবের সাথে দেখা করি।’

‘বড়সাহেব নাই। আজকে আসবেন না।’

‘তাহলে আমাকে একটা পথ বাতলে দেন, বড়বাবু স্যার।’

‘বিষয়টি আমার এখতিয়ারে নাই। যাও, কাজ কর গে ।’

পিনাক চক্রবর্তী সেকশন অফিসার আন্দালিব সাহেবের সঙ্গে দেখা করলেন। বললেন,‘স্যার, আমার ব্যাপারটা তো শুনেছেন।’

‘হ্যাঁ। এগুলো তো হেডক্লার্ক ব্যাটার কাজ। বড়সাহেবকে তো সে ইনফর্ম করেছে। ব্যাটা বদমাশ।’

‘ম্যাডাম, কিছু বলছেন না।’

‘কী আর বলব রে, ভাই। ঠিক আছে, আপনি একটা দরখাস্ত দিন। আমরা সবাই মিলে বড়সাহেব কে বলব।’

কেরামত আলি পিনাক চক্রবর্তীকে এসে বলল,‘বড়বাবু স্যার আপনাকে ডাকে।’

পিনাক চক্রবর্তী মিনিট দশেক বাদে গেলেন।

বড়বাবু দেরি করে তাঁর ডাকে সাড়া দেয়ার জন্যে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। বললেন,‘ তোর ব্যাটা আজ চাকরি আছে, কাল নাই। এত দেমাগ কীসের!’

পিনাক চক্রবর্তী প্রতিবাদ করলেন। বললেন,‘সুন্দর করে বলুন। আমি তো আর ফোর্থক্লাস এমপ্লয়ি না। টাইপিস্ট। বিএ পাশ টাইপিস্ট।’

বড়বাবু হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়লেন।

বললেন,‘টাইপিস্ট চুদাও, মালুর পো। বর্গা পুন্দে দিয়া হান্দাইব।’

দুজনে ভীষণ তর্কাতর্কি লেগে গেল।

আন্দালিব সাহেব চেম্বার ছেড়ে উঠে এলেন।

শ্রাবন্তী ভয়ে কুঁকড়ে গেল। নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে দরজা লাগিয়ে দিল।

আন্দালিব সাহেব বললেন,‘শান্ত হোন আপনারা। কী সব শুরু করেছেন! আর আপনি শিক্ষিত লোক হয়ে কীভাবে অশ্লীল-অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলছেন!’

নাজমুল হুদা আরও বিগড়ে গেলেন। বললেন,‘তুই বুইড়া মাগির নাগর। নাক গলাইস না। খুন-খারাপি হইয়া যাইব।’

তারপর কী থেকে যেন কী হয়ে গেল। আন্দালিব সাহেব আর পিনাক চক্রবর্তী মিলে নাজমুল হুদাকে মারতে শুরু করলেন। নাজমুল হুদাও ছাড়লেন না। শুরু হলো ধস্তাধস্তি। একপর্যায়ে আন্দালিব সাহেব টেবিল থেকে রোলার নিয়ে  এসে নাজমুল হুদার মাথায় প্রচন্ড জোরে আঘাত করলেন।

নাজমুল হুদা মারা গেলেন।

পিনাক চক্রবর্তী পালালেন। আন্দালিব সাহেব পালালেন না। পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন।

লাশের পোস্টমর্টেম হলো।

ফরেনসিক ডাক্তার রিপোর্ট দিলেন,‘ মাথায় তীব্র আঘাতজনিত কারণে তাৎক্ষণিক মৃত্যু ঘটেছে। স্পট ডেড।


আরো পড়ুন: শ্রাবন্তীদের দিনরাত্রি (পর্ব-৭) । ইকবাল তাজওলী


২০.

ডা. মির্জা আজিজুল ইসলাম বগুড়ার শিবগঞ্জে চলে এসেছেন।

আসার সময় অবন্তী বলেছে,‘প্রতিদিন একটি করে চিঠি লিখবে। আমি চিঠির অপেক্ষায় থাকব। বগুড়ায় গিয়ে আমায় ভুলে যেও না। কথা দাও, ভুলবে না। চিঠি লিখবে প্রতিদিন।’

অন্তু কথা দিয়েছে। বলেছে,‘চিন্তা কর না। বছর খানেকের মধ্যে তোমায় ঘরে তুলব। ‘অবন্তী লজ্জায় রাঙা হয়ে গিয়েছে। উপহার হিসেবে একটি ঘড়ি দিয়েছে অন্তুকে।

ডা. মির্জা আজিজুল ইসলাম অফিসে বসে রোগী দেখছেন। সময়টা তাঁর ভালই কাটছে। এনজয় করছেন তিনি।

প্রথম প্রথম তাঁর বেশ খারাপ লাগত। অবন্তীর কথা মনে হতো। চিঠিও একটা লিখেছিলেন, কিন্তু পোস্ট করেননি। নিজেকে প্রবোধ দিয়েছেন। ভেবেছেন। তারপর ভাবনা-চিন্তা করে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছেন, ‘যে মেয়ে বিয়েরে আগে দেহদান করে, সেই মেয়ে অসৎ, সেই মেয়ে দেহপসারিণী। দেহ বিক্রি করে এরা আনন্দ পায়। নজরুল তো বলেই গেছেন, এরা একজনে তৃপ্ত নয়, একে পেয়ে সুখী নয়, চাহে বহুজন।’

 ২১.

অবন্তী বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত। নাওয়া- খাওয়ায় পর্যন্ত বিঘ্ন ঘটেছে। আজ পর্যন্ত অন্তু কোনো চিঠি লেখেনি, ঠিকানাও দেয়নি।

শ্রাবন্তী অবন্তীর ব্যাপারটি বুঝেছে, কিন্তু মুখে কিছুই বলেনি।

আরজুমান্দ বানু একদিন ঝেড়েছেন। বলেছেন,‘বেহায়া বেটি, তোর কি লাজ-লজ্জা নাই! আয়নায় গিয়ে সুরত দেখ। কী অবস্থা হয়েছে তোর!

অবন্তী লজ্জা পেল।

একদিন আজিজের মা সুযোগ নিল। বলল,‘আফায় তো ডাক্তার সাবের লাগি দিওয়ানা হইয়া গেছে। এ নফসি এ নফসি জপেন, আফা। আইব দুলাভাই।’ তারপর হাসতে লাগল।

শ্রাবন্তী রাগ সামলাতে পারল না। চড় মেরে বসল, আজিজের মাকে। বলল,‘তোমার কুলসুমায় কী জন্যে গলায় দড়ি দিল,আমরা জানি না মনে করেছ! আমরা সব জানি। পেট বাধাইছিল তোমার মাইয়ায়।’

আজিজের মা হাউমাউ করে কেঁদে দিল। কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার দিয়ে‘ আল্লাহর গজব পড়ব’ বলে চলে গেল।আরজুমান্দ বানু মেয়েকে বকলেন। বললেন,‘বয়স্ক মহিলা, হাত তুললি কেন? কাজটা ভালো করিসনি।’

শ্রাবন্তী কিছু বলল না। চুপ করে থাকল।

শুক্রবার সকালে শ্রাবন্তী আজিজের মায়ের বাড়ি গেল।

আজিজের মা ঝুপড়ি একটা ঘরে শুয়ে আছে। শ্রাবন্তীকে দেখে উঠে দাঁড়াল। বলল,‘আফায় আইছেন। বহেন।’

শ্রাবন্তী আজিজের মায়ের কাছে ক্ষমা চাইল। বলল,‘আজিজের মা, ওইদিন আমার মন-মেজাজ ভালো আছিল না, তাই কী থেকে কী করেছি, টের পাইনি। আমার ভুল হয়ে গেছে।’

আজিজের মা কেঁদে দিল। বলল,‘আফা, আমরা মুখ্যসুখ্য মানুষ। আমরার কতা ধইরেন না। কুনডা ভালা, আর ‍কুনডা বুরা, আমরা বুঝি না। আমারে মাপ কইরা দিয়েন।’

তারপর শ্রাবন্তীর সঙ্গে আজিজের মা  শ্রাবন্তীদের বাড়ি এল। এবং কাজে মনোযোগ দিল।

 

২২.

অবন্তী শিউলির বাসায় গেছে। চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে সাজগোজ করে গেছে, যাতে শিউলি আপার তার মনের ভাষা পড়তে না পারেন।

শিউলি অবন্তীকে দেখেই বলল,‘কী রে রাঙাদি, এত শুকিয়ে গেলি কীভাবে! মন-টন খারাপ?’

‘না, শিউল আপু।’

‘নে, আমার বাবু ধর। দত্তু দত্তু তোনারে নজর দিও না।’

‘বল, তোর ডাক্তারের খবর বল। চিঠি কেমন চালাচালি চলছে?’

‘ও ভালো আছে।

‘আসবে কবে, বলেছে?’

‘না, বলেনি।’

‘শোন, একটা চিঠি পেলে দুটো চিঠি পাঠাবি। পুরুষ মানুষের কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। দূরে থাকলে মন্ত্র দিয়ে বাগে রাখতে হয়। আর এই মন্ত্রটা হচ্ছে চিঠি। ইনিয়ে-বিনিয়ে বশ করে রাখবি।’

অবন্তী কিছু বলল না। বেশিক্ষণ বসলও না। বলল,‘শিউলি আপু, স্যারের বাড়ি যাব। পড়া আছে। আরেকদিন আসব।’

শিউলি চেয়ে থাকল। কিছু বলতে গিয়েও বলল না।

 

  ২৩.

কোর্টে কেস উঠেছে। পুলিশ চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়েছে। চূড়ান্ত রিপোর্টে আন্দালিব সাহেব আর পিনাক চক্রবর্তীকে আসামি করা হয়েছে। পিনাক চক্রবর্তী এখনও পলাতক। তাঁর অনুপস্থিতিতে বিচার কাজ শুরু হয়েছে।

চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়ার আগে আসামিকে তিনদিনের রিমাণ্ডে নিয়েছে পুলিশ। পুলিশ সাতদিনের রিমাণ্ড চেয়েছিল। বিজ্ঞ আদালত তিনদিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেছেন। আসামি পক্ষের আইনজীবী আসামি উচ্চশিক্ষিত, ভদ্র, আইন মেনে আত্মসমর্পণ করেছেন ইত্যাদি বলে জামিন আবেদন করেছিলেন। আদালত তা নামঞ্জুর করেছেন।

কোর্টে কেস ওঠার প্রথম দিনে আসামি স্বীকারুক্তিমূলক জবানবন্দী প্রত্যাহার করার কথা বলেছেন। বিজ্ঞ আদালতকে বলেছেন, পুলিশ নির্যাতন করে এই জবানবন্দী আদায় করেছে। তিনি স্বেচ্ছায় দেননি।

আদালত বাদীপক্ষকে সাক্ষীদের হাজির করার নির্দেশ দিয়ে একমাসের জন্যে আদালত মূলতবী করেছেন। আগামী মাসের ১০ তারিখ আবার ডেট পড়েছে।

কোর্টে আসামির সঙ্গে দেখা করার জন্যে আসামির বোন আসমা তার ছোটো দুই খালাতো ভাইকে নিয়ে হাজির হয়েছ। আসমার চোখ দিয়ে দর দর করে পানি পড়ছে, কিন্তু আসামি নির্বিকার ও ভাবলেশহীন।

২৪.

শ্রায়ন্তীর শরীর খারাপ। তিন মাস চলছে। খবর পেয়ে আরজুমান্দ বানু শাওনকে সঙ্গে নিয়ে মেয়ের বাড়ি গেছেন। বেয়াই-বেয়াইনের সঙ্গে আনন্দটা শেয়ার করে খেয়ে-দেয়ে বিকেলবেলা বাড়ি ফিরেছেন। শ্রাবন্তী অফিস থেকে ফিরে এলে শ্রাবন্তীকেও এই আনন্দের সংবাদটা দিয়েছেন।

 

২৫.

কোর্টে কেস উঠেছে।

সাক্ষীদের জেরা সম্পন্ন হয়েছে। উভয় পক্ষের সওয়াল-জবাবও সম্পন্ন হয়েছে।

জজ সাহেব আজ রায় ঘোষণা করবেন। এজলাসে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে। আসামিকে হাজির করা হয়েছে। উভয়পক্ষের আইনজীবীরা প্রস্তুত।

জজ সাহেব রায় পড়া শুরু করেছেন। মূল রায় তিনি পাঁচমিনিটে পড়ে শেষ করলেন। আসামি আন্দালিব রশিদ ও আসামি পিনাক চক্রবর্তীকে চৌদ্দ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। পলাতক আসামি যেদিন আত্মসমর্পণ করবেন, সেইদিন থেকেই রায় কার্যকর হবে।

জজ সাহেব তাঁর খাস কামরায় চলে গেলেন।

আদালতও মূলতবী হয়ে গেল।

                                                   

২৬.

অবন্তীর বমি হয়েছে। হঠাৎ দুপুরবেলায় সে বমি করেছে। আরজুমান্দ বানু বিষয়টি বুঝে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলেছেন,‘মারে সত্যি করে বলরে মা, তোর কী হয়েছে? মার কাছে কিছু লুকাস নে রে মা।’

অবন্তী সবকিছু স্বীকার করল। বলল,‘ তিনমাস চলছে।’

আরজুমান্দ বানু তড়িঘড়ি করে বোনের বাড়ি যাওয়ার কথা বলে মেয়েকে নিয়ে ক্লিনিকে গিয়ে ডি এণ্ড সি করিয়ে আনলেন। কাকপক্ষীও টের পেল না।

সন্ধ্যার দিকে শ্রায়ন্তী মায়ের কাছে চলে এলো। শাহেদ জরুরি কাজ আছে বিধায় তাকে নামিয়ে দিয়ে গেল।

ওয়াহিদ সাহেব রাতে ফরমাল ড্রেসে এলেন।

শ্রাবন্তীকে ডেকে বললেন,‘এই শ্রাবন্তী, চা দাও। তোমার হাতে চা খেতে এসেছি।’

তুমি সম্বোধনে শ্রাবন্তী বিষম খেল, তারপর চা বানানোর ছলে কেটে পড়ল।

খবর পেয়ে আরজুমান্দ বানু ড্রয়িংরুমে এলেন। ওয়াহিদ সাহেব আরজুমান্দ বানুকে কদমবুসি করলেন। তারপর ভনিতা না করে শ্রাবন্তীকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিলেন।

আরজুমান্দ বানু ওয়াহিদকে যেতে দিলেন না। তড়িঘড়ি করে শাওনকে বাজারে পাঠালেন। তারপর শ্রাবন্তীকে বললেন,‘শ্রাবন্তী যা তো। ওয়াহিদ একা বসে আছে।’

শ্রাবন্তী চা-নাস্তা নিয়ে এলো।

আশ্বিন মাসের ১৫তারিখ বুধবারে ওয়াহিদ-শ্রাবন্তীর বিয়ে হয়ে গেল।

বিয়ের দিন শেষবেলায় একটি ঘটনা ঘটল। জটাধারী এক বৃদ্ধলোক বিয়ে বাড়িতে এসে‘পানি দে মা, পানি দে মা’ বলে চিৎকার করতে করতে মারা গেলেন।

আরজুমান্দ গলা শুনে পাগলের মতো দৌড়ে এলেন। তারপর আবেগ আর সামলাতে না পেরে হাউমাউ করে কেঁদে লাশের ওপর ঝাপিয়ে পড়লেন। তাঁর একটা কথাই শোনা গেল,‘শ্রাবন্তী রে তোর বাবা।’

 

 

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত