| 9 মে 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত প্রবন্ধ

অসমিয়া অনুবাদ: সর্বগুণাকর শ্রীমন্ত শঙ্করদেব । নুরুল সুলতান

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

অসম সাহিত্যসভার কর্ণধার সমিতির প্রাক্তন সদস্য। বর্তমানে অসম সাহিত্য সভার ‘তথ্য চিত্র কোষ’এর আহ্বায়ক।প্রাক্তন ছাত্র নেতা এবং বর্তমানে একজন বিশিষ্ট সমাজকর্মী, সাহিত্যিক, শ্রীমন্তশঙ্করদেব সঙ্ঘের ৮৭ সংখ্যক বার্ষিক অধিবেশনের আদরনী সমিতির একজন উপ সভাপতি নুরুল সুলতান ১৯৬৯ সনে জন্মগ্রহণ করেন।‘জেতুকাপাতর দরে’অসমিয়া চলচ্চিত্র প্রযোজনা করে ২০১১ সনে রজত কমল বঁটা লাভ করেন।লেখকের প্রকাশিত চব্বিশটি গ্রন্থ এবং ছয়টি সম্পাদিত গ্রন্থ রয়েছে।‘নদীর দরে উপন্যাসটি ইতিমধ্যে বাংলায় অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে।


মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ- বাসুদেব দাস

 

 

(দুই)-ক

শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের সাহিত্য

১৫৪৬ সন থেকে ১৫৬৮ সনের ভেতরে গুরুজনারবেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ কাব্য এবং নাটক সৃষ্টি হয়েছিল বলে জানা যায়।বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য -ভাগবতের দশম স্কন্দের আদিভাগ,কীর্তনঘোষার অন্তিম ভাগগুলি,বরগীত এবং ভটিমার কিছু গীত।

(ক)গীতি-সাহিত্য

এটা প্রত্যেকেই জানেন যে ‘কাব্য চর্চা’র মাধ্যমে গুরুজনা আরম্ভ করেছিলেন ‘সাহিত্য চর্চা’।প্রথম রচনা-

করতল কমল দল নয়ন।

ভবনবদহন গহন বন শয়ন।।

নপরনপর পর সতরতগময়।

সভয় মভয় ভয় মমহরসততয়।।

খরতর বর শর হত দশ বদন।

খগচরনগধরফণধর শয়ন।।

জগদঘমপহর ভবভয় তরণ।

পরপদ লয় কর কমলজ নয়ন।।

আর তারপরে?  অগণনীয়’রচনা’।’ সৃষ্টি’। আজকের তারিখে কোনো পন্ডিতই গুরুজনার সম্পূর্ণ সৃষ্টিকর্ম বিষয়ে স্পষ্টভাবে বলতে পারেনা। অবশ্য ডঃ মহেশ্বর নেওগদেব ২৬ টি গ্রন্থের একটি তালিকা দিয়েছেন( শ্রী শ্রীশঙ্করদেব)। কিন্তু এই তালিকাটি ও সম্পূর্ণ নয় বলে মনে হয়। উদাহরণ হিসেবে বরগীত সমূহের কথা বলতে পারি। আগুনে ছাই হয়ে থাকল না কি বেশিরভাগবরগীত।

বরগীতের অনুশীলন আরম্ভ হয়েছিলবরপেটায়। বরপেটার কমলা গায়নকেশেখানোর জন্য গুরুজনা বারো কুড়ি ‘ বরগীত’ দেবার তথ্য পাওয়াযায়।( একটি রচনা কমলাবারী সত্যের প্রতিষ্ঠাতা পদ্ম বদুলা আতার উদ্ধৃতি দিয়েবেগারাম দাস লিখেছিলেন‐-‘ বারো কুড়ি নয় , শ্রী শ্রীশঙ্কর গুরু কমলা গাউন কে দেওয়াবরগীতের সংখ্যা বারো কুড়ির কম হবে না। গীত সমূহ একসঙ্গে দেননি। কখনও একটি, কখন দুই -তিনটি এভাবে দিয়েছিলেন। তাই প্রকৃত তথ্য পাওয়াযায় না।’ সেই বরগীত সমূহ আগুনে পুড়েযায়। দেড় কুড়ির মত ভক্তদের মুখেমুখে থেকে যায়। গুরুজনা মনে দুঃখ পেলেন। পুনরায় লিখতে আগ্রহ প্রকাশ করলেন না। দুঃখিত মনে শ্রী শ্রীমাধবদেবকেডেকে এনে বললেন‐’বঢ়ার পো , অনেকে শ্রম করি গীত  খানি কৈলো,পুইলে। গীত কিছু করা। আমি নকরোঁ  আরু।’ সে যাই হোক না কেন, বরগীতগুরুজনার সৃষ্টি, আজ আমাদের মধ্যে বরগীত  গুরু দুজনের জন্য। বরগীত প্রসঙ্গে কিছু তথ্য এই ধরনের‐-

ভোররাতে: পূর্বী আদি।

ভোরবেলা: অহির ,ললিত, শ্যাম, কৌ, কল্যাণ আদি।

দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত: গৌরী, বসন্ত, তুর বসন্ত, ভাটিয়ালি, গান্ধার, শ্রীগান্ধার, ধনশ্রী, বরাড়ী, কেদার, শ্রী মাহুর ইত্যাদি।

গোধূলি: আশাবরী, বেলোয়াড়, সারঙ্গ ইত্যাদি ।

আগরাতে: সুহাই, সিন্ধুরা, কানাড়া, মল্লার, নাট- মল্লার।

শেষ রাতে: ভুপালী, কামোদ, ইত্যাদি।

বরগীত গুলিতে তাল বাধা থাকে না কারণ রাগটা ঠিক করে রেখে যে কোনো তালে গাওয়াহয়। খোলের সহযোগে রাগে গাওয়াবরগীতকে বন্ধনের গীত বা খোল অবিহনেরাগবিহীনভাবেগাওয়াবরগীতকেমেলানোর গীত বলা হয় ।

গুরু দুজন বরপেটা অঞ্চলে থাকার সময় বরপেটাতে বহুল ভাবে বরগীতের চর্চা হত। মহাপুরুষ মাধবদেব নিজে মথুরাদাসবুঢ়াআতা, লক্ষ্মণ ওজাপ্রভৃতিকেগীতপ্রসঙ্গ শেখাতেন। সেই জন্য বরপেটায় বরগীতের মূল রূপটি থেকে যাওয়া স্বাভাবিক। অবশ্য বরগীতের তিনটি থুল থাকার কথা জানা যায়। যেমন বদদোয়া কমলা বারী থুল এবং বরপেটা থুল। শ্রী শ্রী পদ্ম বদূলা আতা বরপেটা সত্রে এক বছর থেকে বরগীত,নাম প্রসঙ্গ ইত্যাদশিখিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে বদুলা আতা হরিচরণ আতৈক বরপেটা সত্রে কৃষ্টির প্রশিক্ষণ নিতে পাঠায়। মথুরাদাসবুঢ়াআতা বরপেটা সত্রে কাজলা মাঝিকে, সত্রিয়া  কৃষ্টির প্রশিক্ষণ দান করে। কাজলা মাঝিকে বুঢ়াআতা’সূত্রধার’  উপাধি দান করে এবং বাসুদেবকে ‘পাঠক’ উপাধি দান করে। এই সূত্রধার এবং পাঠক বংশরাই নিত্য প্রসঙ্গে সক্রিয়ভাবে ভাগ মৃত এবং আজও সেই পরম্পরা অব্যাহত রয়েছে । সূত্রধার বংশরা পালন করা কর্তব্য ছিল–১) গুরু আসনের  দিনটির চৌদ্দ প্রসঙ্গের ছয়টি প্রসঙ্গ২) বিকেলের পাঠ ( বারোটি অংকের গীত নাম ঘোষা বরগীত) ৩) গুণমালা ৪) লীলা মালা ৫) ভটিমা ৬) সেবা কীর্তনের পরিবর্তে দুটো বরগীত ৭) রাতের প্রসঙ্গ ৮) বৈশাখের সাত দোমাহীতে খোল বাজিয়ে গান গাওয়া ৯) জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ মাসে বিকেলে খোল তালে গীতগেয়ে সেবা কীর্তন,১০) কীর্তন মহোৎসবে রাতে গীতের পালা গাওয়া ১১) প্রতি চার বছর পরে পরে পাট বাউসীর শ্রী শংকরদেবের থানে করভার দান ,১২) দৌলত খোল- তাল, গীত বাদ্য ছাড়া প্রতি তিন বছর যাত্রা গান ইত্যাদি।( বরপেটা সত্রের ইতিবৃত্ত ডক্টর ভুপেন্দ্ররায় চৌধুরী )

এখানে একটি কথা উল্লেখ করার প্রয়োজন রয়েছে। গুরু জনা ‘বরগীত’ শব্দটি ব্যবহার করেন নি। সেটা গুরুজনামাধবদেবকে বলা কথায় স্পষ্ট হয়ে রয়েছে—’… গীতখানি কৈলো,পুইলে।’ আমরা যতদূর জানি ‘বরগীত’ শব্দটির প্রথম ব্যবহার হয়’কথা গুরু চরিত’এ। উপেন্দ্র চন্দ্র লেখারু সম্পাদিত ‘কথাগুরু চরিত’ এ পাওয়াযায়— প্রভুজন বরগীত  করোঁতে গুরু …দিবলৈ …  … … খাই থাকে খেদ প্রেমতে…, ছোটো আতাই গীত কৈলৈ ন কুড়ি এগারোটা বরগীত, ছয় রসে চোর চাতুরি।'( এখানে স্পষ্ট হচ্ছে ‘বরগীত’)–- বরগীত  কেন? অসমিয়া ভাষার একজন প্রথম সারির শংকরী পন্ডিত ডঃ মহেশ্বর নেওগের’ অসমীয়া সাহিত্যের রূপরেখা’য় পাওয়াযায়—’ গুরু দুজন রচনা করা শাস্ত্রীয় রাগ- তাল বিশিষ্ট, চৌদ্দ প্রসঙ্গের পরিক্রমায় স্থান লাভ করা ব্রজবুলি ভাষায় রচিত এবং শৃঙ্গারাদি লৌকিক ভাব বিমুক্ত গীতই বরগীত।’ ভাষাবিদজনেরব্যাখ্যায়পাওয়াযায়— গুরু দুজনের গীতগুলি উঁচু এবং নৈতিক আধ্যাত্মিকভাবেবুনিয়াদে প্রতিষ্ঠিত বলে বরগীতআখ‍্যাদেওয়াহয়েছে। ইংরেজ কবি হেরিকে লেখা আধ্যাত্মিকভাবে পুষ্ট কবিতাগুলিকে যেভাবে, যে যুক্তিতে বলা হয়—’ Noble Numbers’ বলে সেভাবেবরগীত ও Noble Numbers’.

যে সমস্ত গীতে রাগের বাঁধাধরা নিয়ম মানতে হয় না, সংগীত শাস্ত্রের অবয়ব, অঙ্গ বিচারের বিধান মানতে হয় না, কেবল স্বর এবং তালে গাওয়াযায়, তাকে ‘ক্ষুদ্র গীত’ বলা হয়। কীর্তনঘোষা,ভটিমার গীত এই পর্যায়েপড়ে। অঙ্কীয়া নাটের কিছু গীত ধ্রুপদের অন্তগ্ত এবং সেগুলিতে রাগ, অবয়ব, অঙ্গ ইত্যাদি মানা হয়েছে তাই সেগুলি বরগীত।’

অন্যদিকে, সঙ্গীতজ্ঞদের বিশ্লেষণে পাওয়াযায় বা স্পষ্ট হয়– বরগীতে  ধ্রুবপদ জাতীয় গীতের  গুণ স্পষ্ট, সীমাবদ্ধতা বারো কুড়ি( ২৪০ টা) গীতের মধ্যে আলাদা আলাদা শরীর সংযোজন একদিকে যদি পরম্পরা গীত, অন্যদিকে ধ্রুপদী সংগীত।

কয়েকজন পন্ডিত এভাবেও বলতে চান শ্রী শ্রী শংকর গুরুর বারো কুড়ি এবং শ্রী শ্রী মাধব গুরুর নয় কুড়ি ১১টা গীতকে বরগীত  বলা হয়। গীত সমূহে প্রথম রাগ নির্বাচন করে নেওয়াহয়, নির্বাচিত রাগে আলাপ অংশ গাওয়াহয়। ‘তা না নানা, হরিনাম বা কৃষ্ণ শংকর গুরু হরিরাম’ আদির সাহায্যে আলাপ বা   রাগ দেওয়াহয়। একই বরগীতেভিন্নতাল সংযোজন হতে পারে। কেবল সঙ্গীত বলেই নয়, গুরু দুজনের বরগীত সমূহ ‘সাহিত্য’ হিসেবেও অমূল্য সম্পদ। বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়ে পড়ে’ছবি’ আছে, ‘বাণী’ আছে, ‘শব্দের খেলা’ আছে ;যেগুলোকে বলা হয়– মহৎ সাহিত্যের উপাদান। উদাহরণ হিসেবে কয়েকটি গীত উল্লেখ করলাম।

রাগ- আশাবরী

ধ্রুং : শুন শুন রে, সুর বৈরী প্রমাণা, নিশাচর নাশ নিদানা।

রাম নাম যম,সমরকসাজিয়ে

সমদলেকয়লিপয়াণা।।

পদঃ ঠাট প্রকট পটু, কোটি কোটি কপি,

গিরি গড়গড় পদ ঘায়ে।

বারিধি  তীর তরী,করে গুরুতর গিরি,

ধরি ধরিসমরকধায়ে।।

হাট ঘাট বহুবাটবিয়াপি,চৌগড়েবেঢ়লিলংকা।

গুরু ঘনঘন ঘোষ, ঘরিষণ গর্জন,শ্রবণেজনময়শংকা।।

ধীর বীর শূর শেখর রাঘব, রাবণ তুয়া পরি ঝাঁম্পে।

সুর নর কিন্নর ফনধর তরতর, মহীধর তরসিপ্রকাম্পে।।

অন্ধ মুগুধদশস্কন্দ পাপ বুধ, জানকীকশিরত চরাই।

রঘুপতিপদবর  ধর রজনীচর, শংকর কহতুউপায়।।

রাগ- ধনশ্রী

ধ্রুং: পামরু মন রাম চরণে চিত্ত দেহু।

অথির জীবন রাম, মাধব কেরি  মরণক সম্বল লেহু ।।

পদঃ  রয়নী দিবসে দূর আয়িযায়ত 

আয়ত অনন্ত গরজি।

কথিতনুপাত     মিলত মতিমানি

রাম ভজহু সব বরজি ।।

আশ পাশ পরশি       মানস পশু

      পরলি বন্দিবেরিবেরি

ভব কারাগার             তারক নাহি আর  

       বিনে ভকতি তেরি।।

অবনিশিসেবহু           রাম পরম পহু

       রহু  হৃদি  পঙ্কজ মেরা।

কৃষ্ণ কিঙ্কর ভন           রাম পরম ধন

       মরণ হি সঙ্গ নাছোরা।।

             রাগ- মাউরধনশ্রী

ধ্রুং: গোপিনী প্রাণ, কাহানুগেয়োরে গোবিন্দ।

হামু পাপিনী পুনু, পেখবো নাহি আর, সোহি বদন অরবিন্দ।।

পদঃ কনক ভাগ্যবতী ভয়োরেসুপরভাত

        আজু ভেটব মুখচান্দা।

উগত সুর দূর  গেয়োরে গোবিন্দ  

         ভয়োগোপবধূআন্ধা।।

আজুমথুরাপুরে       মিলব মহোৎসব

         মাধব সাধব মান।

গোকুলকমঙ্গলক।     দূর গেয়ো নাহি 

         বাজত বেণু  বিষাণ।।

আজু যত নাগেরী     করত নয়ন ভরি

         মুখ পঙ্কজ মধুপানা।

হামারিবংকবিধি         হাতে হরল নিদি

          কৃষ্ণ কিঙ্করে রস ভানা।।

রাগ- তুর বসন্ত

ধ্রুং: কহরেউদ্ধব কহ প্রাণের বান্ধব হে,

প্রাণ কৃষ্ণ কয় আবে।

পুছয়ে গোপী প্রেম আকুল ভাবে

নাহি চেতন গাবে।।

পদঃবাছুরী ধ্বনি গো- বৎসপেখি।

লাগে আগে গাবে উদ্ধব সখি।।

কালিন্দী পেখি সখি ফুটয়ব্লক।

এথায়েখেলাইছিলো সে চান্দমুখ।।

হরিল নয়ন সুখ।

বিরিন্দাবন বৈরী হামারি ভেলি

পেখিতে না বিছুরু গোপাল কেলি।।

ধ্বদ বজ্র যব পঙ্কজ চাই।

তথায়েকান্দোহামোলোটায়া কায়।

     গুণ গোবিন্দ গায়।।

কৃষ্ণ সূর্য বিনে বজ্র আন্ধার,

নেদেখোএদুখআবরি পার।

আরু কি পেখবো গোপাল প্রাণ।।

কৃ্ষ্ণ কিঙ্কর শঙ্কর ভাণ।

হারিক হৃদয়ে জান।।

রাগ-বসন্ত

      ধ্রুংঃকা করু মনুয়া বিষয় বিলাস।

      দুর্লভ মানবী তনু তরণি উপাম।।

      দেহ ভরা কলিকোধ্রমহারিনাম।।

      গুরু কেরুয়ালী রাম অনুকূল বায়।

      হরিগুণগায়া ভব সাগর কুলান।।

      আশা সকলো করো দূর।

      নাম অমিয়া পানে মন করো পূর।।

      কহয় মাধব দাস গতি নাহি আন।

      সজ্জন জনের সংগলেহুঅগিয়ান।।

রাগ-ধনশ্রী

ধ্রুংঃ হরিপদ কমলে বিছুরি বহু এ মন পামরা।

হরি বিনে ঝুন্টাওহিগয়লসংসারা।।

পদঃহরিসেআতমা নিজ হরি বন্ধু মোই।

হরি বিনে সুহৃদ আয়রি নাই কোই।।

হরিপদ সেবা বিনে তেজু সব কাম।

নিগম নিগূঢ় বিত্ত জপ হরি নাম।।

কহয় মাধব মন ছোড়ি ভব পাশা।

ভকত সম্পদ হরি পদে করু আশা।।

রাগ-শ্রী

ধ্রুংঃমাই,মাইভূষণ করাও হামারি।যবহুঁসারত্তর

পুছত,নাহিপাওব দোষ বিচারি।।

পদঃ এক গোয়ারিনীমাতিয়াহামাকু

দেলহবুলি মিঠাই।

তাহেকভোজনকরিয়ে শয়ন কহো

       চেতন হরুয়ালো মাই।।

শির ফিরায়ত           নয়ন বুলায়ত

       ঘন ঘনআওত হামি

জ্ঞান বিরহিতহুইকদম্বতলে

       একা শুতায়লো আমি।।

রাধা ভূষণচোরিকরিয়ে

       কহো পুছত  বাত হামারি।

হামুথিক            অচেতন হোই

       কি কহবু বচন বিচারি।।

কহতু মাধব          দাস নারায়ণ

       তুয়া পায়ে শরণ গোঁসাই।

তুমহি অখণ্ডিত       জ্ঞান নিরঞ্জন

ঝুন্টা কহিতে নুযুয়াই।।

রাগ-শ্রী

ধ্রুংঃ কানু ভাল মুরতি মাধুরী।

এক সঙ্গে চূড় করে বিধির চাতুরী।।

পদঃ শ্যাম তনু শোহে চারু কাচ চল চল।

দেখিয়া মুদ্রিত ভয়ো নীল উতপল।।

গগনে অথির চান্দ কানু মুখ দেখি।

পঙ্কজ রহিল জলে নয়ন নিরেখি।।

পীত বসন শ্যাম শরীর বিরাজে।

বিজুলী চঞ্চল ভয়ো মেঘে সাজে।।

সুবলিত ভুজ যুগ দেখি লাজ পায়া।

পাতাল ভিতরে রৈলবাসুকীলুকায়া।।

রূপের মাধুরী ত্রিভুবন শান্ত করে।

অমৃত লুকাইয়া রৈল দুর্গম সাগরে।।

কানুর উপমা দিতে পারে কেবা জন।

কহয় মাধব গতি নন্দের নন্দন।।

রাগ-মাউর

ধ্রুংঃ দেখত নাগর

বালক মহ কানু সাজতরি।

ভুবন সুন্দর বর শ্যাম মনোহর চান্দ

কোটি জিনিরাজতরি।।

পদঃ রতন ভূষণ চারু   অঙ্গ বিভূষিত

চরণে মঞ্জীর মণি রাজতরি।

ভ্রু সুবলিত চারু          বঙ্কিম লোচন

পেখি মদন কোটি লাজতরি।।

ঈষত মধুর হাসি         বাঁশী বিনোদিত

মোদিত পঞ্চম গাওতরি।

নন্দ কুমার      চরণ মুগ রাজীব

        মাধব মন রহুভবতরি।।

গীত-রাগ-ভাটিয়ালী

ধ্রুংঃ ভাল কলীয়া কানু খেলান খেলায়।

খেড়ার মাধুরী হরি ভুবন ভুলায়।।

পদঃলয়লাসেরঙ্গা দুই চরণ চলায়।

রুনুঝুনু করিয়া নূপুর বাজে পায়।।

আভীর বালকে বেঢ়িচাপরি বজায়।

পাক ফিরিফিরিয়ানাচয়যদুরায়।।

চন্দনে লেপিত অঙ্গ দৌলায়ে গোপাল।

উরে ঝলমল কেলি কদম্বুক মাল।।

গজ মুকুতার হার গান্ঠি গলে দুলে।

মোহন কনক বেণু উরিয়া ধরে হাতে।

ময়ূরের চূড়া ঝলমল করে মাথে।।

নেতেরআঞ্চলখানিহালয়বতাসে।

সুহৃদ গোপের মুখ মুখচায়া হাসে।।

মানিক জিনিয়া জলে দন্ত দুই পান্তি।

দিশ পাশ শোহে শ্যাম শরীরর কান্তি।।

বঙ্কিম নয়নে চায়া অমিয়া বরিষে।

মাধবের মন রহু এরূপ হরিষে।। 

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত