শারদ অর্ঘ্য অনুবাদ: মাহমুদ দারবিশের কবিতা । ফারহানা রহমান
ফিলিস্তিনি গ্রাম বিরোহাতে ১৯৪১ সালে কবি মাহমুদ দারবিশ জন্মগ্রহণ করেন। যদিও তার জন্মের সাত বছর পরেই দখলদার ইসরাইলি বাহিনি গ্রামটি ধ্বংস করে দেয়। কমিউনিস্ট পার্টির সংবাদপত্র রাকার সম্পাদক, অনুবাদক হিসেবে কাজ করার সময় অসংখ্যবার কারাবরণ করেন এবং ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ দ্বারা বিড়ম্বনার শিকার হন। আমি দেশের জন্য গাই না’ একটি কবিতায় দারবিশ বলেছেন, আমি নিজেই একটি দেশ। অস্ত্রহীন ফিলিস্তিনি তরুণরা ইসরাইলি সৈন্যদের রাইফেলের গুলি ও ট্যাংকের গোলার মুখে ছুড়েছে নির্বাক পাথর। মাহমুদ দারবিশ দেখিয়েছেন নিরীহ ভাষা-কবিতা কিভাবে পরাজিত করে দিতে পারে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর পরাশক্তিকে। জীব ছেড়া ফিলিস্তিনিদের চিৎকার ও বিজয়ী ভাষার নাম মাহমুদ দারবিশ। ফিলিস্তিনহীন পৃথিবীর মানচিত্রে দারবিশের কবিতা লাল ফিলিস্তিন। তিনি ফিলিস্তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে মাঠে ছিলেন। তবে লড়েছেন ভাষা কবিতা দিয়ে। এ সময় দারবিশের কবিতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বদল ঘটে। তিনি তার এর আগের কবিতায় যে কাব্যিক জটিলতা ছিল, তা থেকে বেরিয়ে আসেন। তিনি দেখতে পান তার এ ধরনের কবিতাগুলো সাধারণ মানুষ ও যোদ্ধারা বুঝতে পারে না।
মাহমুদ দারবিশ প্রথম কবিতা আবৃত্তি করেন নতুন ইসরাইলি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রথম উদযাপন অনুষ্ঠানে। দারবিশ তখন স্কুলের ছাত্র। প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে দারবিশ স্বরচিত কবিতা পড়ছিলেন—তুমি চাইলেই সোনালি রোদে খেলা করতে পারো, তুমি চাইলেই হাতের নাগালে পাও আলোকিত পুতুল, কিন্তু আমার তা নেই। তোমার আছে ঘর, আমার কিছুই নেই। তোমার আছে উৎসব আর উদযাপন, কিন্তু আমি তার দেখা পাই না। বল কেন আমরা একসাথে খেলতে পারি না? এ কবিতা শুনে পরদিন ইসরাইলি সামরিক সরকারের লোকরা তাকে ডেকে নিয়ে শাসায়। তাকে বলা হয় ভবিষ্যতে এ ধরনের কবিতা লিখলে তার বাবার চাকরি যাবে।
মাহমুদ দারবিশ বুঝে যায় তার কবিতার ভাষা কতটা ক্ষুরধার। তিনি অবিরাম লেখে যান। তিনি লিখেন— শেষ সীমান্ত পার হওয়ার পর আমরা কোথায় যাবো? শেষ আকাশের পর কোথায় উড়বে চড়ুইরা? শেষ বাতাস বয়ে যাওয়ার পর উদ্ভিদরা কোথায় ঘুমাবে? আবিরমেশানো ধোঁয়া দিয়ে লিখে দেব আমাদের নামগুলো, আমাদের গোশত দিয়ে আবার নির্মিত হবে—তাই কেটে নিয়ে যাবো সংগীতের বাহু।
ফিলিস্তিনের ভাষা আরবি। আঞ্চলিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে একটা সময় এবং এখনো আরব অঞ্চলের মানুষ ভাবে, ফিলিস্তিনের মানুষ তাদেরই মতো আরব। প্রকৃতপ্রস্তাবে ফিলিস্তিনের ভাষা আরবি হলেও তাদের মাঝে আধুনিক কবিতার যাত্রা হয়েছে তাদের ওপর নতুন করে নির্যাতন শুরু হবার পর থেকেই। নয়ত এর আগে ‘ফিলিস্তিন সাহিত্য’ বলে আরবি সাহিত্যের মাঝে আলাদা কোনো পার্টিশন ছিল না। ১৯৪৭ সালে যখন এ যুগে নতুন করে ফিলিস্তিনিরা ভূমি হারাতে বসে, তখনই তাদের ভেতর একটা নতুন পরিচয়ের বিকাশ ঘটতে থাকে একটু একটু করে। আরবি সাহিত্যের যেসব শিল্পী ও কবি ফিলিস্তিনের রক্ত ধারণ করেন, ফিলিস্তিনি হওয়ার অপরাধে তাদের অনেকে বন্দি হন, অনেকে হাজার হাজার ফিলিস্তিনির সঙ্গে পালিয়ে বেড়াতে থাকেন কিংবা উদ্বাস্তু হয়ে জীবন যাপন করেন পার্শ্ববর্তী কোনো দেশে। এই অসহায়ত্বই তাদের ভিন্ন একটা পরিচয় দেয়—তারা ফিলিস্তিনি। তাই তাদের রচনায় ফিলিস্তিনের উপস্থিতি প্রকট হয়ে ওঠে। এভাবে দীর্ঘসময়ের পরিক্রমায় একসময় ফিলিস্তিনি সাহিত্যের একটা আদল দাঁড়িয়ে যায়, হয়ত তাদেরও অজান্তে। তবে ফিলিস্তিনি সাহিত্যের প্রাণপুরুষ গাসসান কানাফানি এই সাহিত্যকে আরো একটু মাত্রা দিয়ে নাম দেন— ‘প্রতিরোধ সাহিত্য’।
এ সাহিত্য বেড়ে ওঠে আরবির হাত ধরে। যখন তা বাংলায় রূপান্তর হয়ে আসে, তখন অনুবাদ ও মূলভাষার মধ্যে অন্য একটা ভাষার আড়াল পড়ে যায়। কারণ, বাংলা ভাষায় এর আগেও আরবি ভাষা কিংবা ফিলিস্তিনি সাহিত্যের অনুবাদ হয়েছে। কিছু কবিতা ও গল্প বাদ দিলে তার বেশিরভাগ হয়ে এসেছে ইংরেজি অনুবাদ থেকে। এতে যেমন অনুবাদক কাব্যের দায় নিতে রাজি থাকেন না, তেমনি কবি যদি খোদ এসে তার কাব্যরূপটা কোনোরকম দেখতে পান, তাহলে তিনিও সে কবিতাকে নিজের বলে মানতে রাজি হবেন না নিশ্চিত। কারণ, মূলভাষা ও অনুবাদের মাঝে যদি আরেকটা ভাষার আড়াল পড়ে যায় তখন তার মূলভাবটা বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে। আমিও এর আগে কিছু আরবি ভাষার গল্প ও অনুবাদ দেখে যারপরনাই বিস্মিত হয়েছি। কোথায় কবির কবিতা, আর কোথায় অনুবাদ। যেন আরব আর বাংলাদেশের মতোই দুস্তর মরুর বিস্তর ব্যবধান।
ফারহানা রহমান অনুবাদে রইলো মাহমুদ দারবিশের পাঁচটি কবিতা—
আমাদের দেশের প্রতি
আমাদের দেশে
আর এটি ঈশ্বরের কাছাকাছি একটি শব্দ
এটি একটি মেঘের ছাদ
আমাদের দেশে,
এবং এটি এমনই একটি দেশ
যা বিশেষ্যের বিশ্লেষণ থেকে অনেক দূরে,
এটি অনুপস্থিতির একটি মানচিত্র
আমাদের দেশ,
এবং এটি একটি তিল বীজের মতো ক্ষুদ্র,
একটি স্বর্গীয় দিগন্ত … এবং একটি গোপন খাদ
আমাদের দেশেটিতে,
এবং এটি এমনই দরিদ্র যেন একটি গৃহপালিত পাখির ডানা,
পবিত্র গন্থ… এবং ক্ষতবিক্ষত একটি পরিচয়
আমাদের দেশ
আর এটি চূর্ণবিচূর্ণ পাহাড় দিয়ে ঘেরা একটি দেশ,
একটি নতুন অতীতের অতর্কিত আক্রমণ
আমাদের দেশে, এবং এটি যুদ্ধের একটি পুরস্কার,
আকাঙ্ক্ষা এবং জ্বলন্ত অবস্থা থেকে মরার স্বাধীনতা
এবং আমাদের দেশ, এটির রক্তাক্ত রাতে,
এটি একটি রত্ন যা অনেক দূর থেকে দূরবর্তীর জন্য জ্বলজ্বল করে
এবং এর বাইরে যা কিছু আছে তাকে উদ্দীপ্ত করে
যেমন আমাদের জন্য, ভেতরে ,
আর আমাদের আরও বেশি দমবন্ধ হয়ে আসে
পাসপোর্ট
এই ছায়াচ্ছন্নের ভেতর ওরা আমাকে চিনতে পারেনি
যা এই পাসপোর্টে আমার সব রঙ শুষে নিয়ে গিয়েছিল
এবং ওদের কাছে আমার ক্ষতগুলো ছিল শুধুই নমুনা করা
একজন পর্যটক হিসেবে যে কিনা শুধু ছবি সংগ্রহ করতেই ভালোবাসে
তারা আমাকেই চিনতেই পারেনি
আহ… ছেড়ে যেও না
সূর্যবিহীন আমার হাতের তালু
কারণ গাছেরা আমাকে চেনে
আমাকে ফ্যাকাসে রেখে যেও না চাঁদের মতো
সেইসব পাখির দল যারা আমার হাতের তালু অনুসরণ করেছিল
দূর বিমানবন্দরের দরজা পর্যন্ত
সেই সমস্ত গম ক্ষেতগুলো
সে সকল কয়েদখানা
সেই সমস্ত শ্বেত সমাধিপাথর
কাঁটাতার ঘেরা সকল সীমানা
সেই সমস্ত দুলতে থাকা রুমালগুলো
সকলের চোখ
আমার সাথেই ছিল
অথচ তারা আমার পাসপোর্ট থেকে ওদের ফেলে দিলো
আমার নাম-পরিচয় কেড়ে নিতে চাও?
আমার নিজ হাতে যে মাটিকে আমি পরিপুষ্ট করেছি?
আজ আকাশ কাঁপিয়ে
সমস্ত কার্যক্রম আর্তনাদ করছে
আমাকে নিয়ে আবারও কোন উদাহরণ তৈরি করো না
ওহে ভদ্রলোকেরা, নবীগণ
গাছের কাছে তাদের নাম জানতে চেও না
উপত্যকার কাছে জানতে চেও না তাদের মা কে?
আমার কপাল থেকে আলোর তরবারি বিচ্ছুরিত হয়
আর আমার হাত থেকে নদীর জল ঝর্ণাধারায় বয়ে চলেছে
প্রতিটি মানুষের হৃদয় হচ্ছে আমার পরচয়
তাই আমার পাসপোর্টটি নিয়ে চলে যাও।
পরিচয় পত্র
নিবন্ধন করো
আমি একজন আরব
আমার পরিচয় পত্রের নাম্বার হচ্ছে পঞ্চাশ হাজার
আমার আটটি সন্তান আছে
এবং নবমটি অপেক্ষমান গ্রীষ্মের পরের জন্য
এখানে রাগ করার কী হোলো?
নিবন্ধন করে রাখো
আমি একজন আরব
একটি খনিতে পরিশ্রমী কমরেডদের সাথে কাজ করি
আমার আটটি সন্তান
ওদের জন্য আমি রুটি জোগাড় করি
পোশাক ও ব্যায়ামের বই
এনে দেই পাথর থেকে
আর তোমাদের দ্বারে গিয়ে ভিক্ষা মাগি না
নিজেকে ছোট করি না তোমাদের দোরগোড়ায় গিয়ে
এখানে রাগ করার কী আছে?
লিখে রাখো
আমি একজন আরব
পদমর্যাদাহীন আমার একটি নাম আছে
সহিষ্ণু দেশটিতে সবকিছুই বাস করে
ক্ষুব্ধতার ঘূর্ণিঝড়ে।
আমার শিকড়
প্রোথিত ছিল সময়ের জন্মের পূর্বেই।
এমনকি যুগের সূচনা হওয়ারও পূর্বে,
পাইন ও জলপাই গাছগুলোর জন্মেরও আগে
আগাছা বিস্তারেরও বহু আগে
আমার বাবা কৃষক পরিবার থেকে এসেছেন
কোনো সুবিধাভোগী শ্রেণি থেকে নন
আমার দাদা ছিলেন একজন হালচাষি
ছিল না কোনো বংশপরম্পরা বা কুলজি
তিনি আমাকে গৌরবউজ্জ্বল সূর্য সম্পর্কে শিখিয়েছিলেন
আমার পড়তে শেখার আগেই
আর আমার বাড়িটি ছিল প্রহরীর কুঁড়েঘর
ডালপালা ও বেত দিয়ে তৈরি
তুমি কি আমার এই পরিচয়ে খুশি?
কোনো পদমর্যাদা ছাড়াই আমার একটি নাম রয়েছে।
লিখে রাখো
আমি একজন আরব
আমার পূর্ব পুরুষদের ফলের উদ্যান তোমরা চুরি করেছো
এবং সেই ভূমি যা আমি চাষাবাদ করেছিলাম
আমার সন্তানদের নিয়ে
আর আমাদের জন্য কোনোকিছুই আর অবশিষ্ট রাখনি
শুধুমাত্র এই পাথরগুলো ছাড়া
তাহলে রাষ্ট্র কি তাদের নিয়ে যাবে
ঠিক যেমনটি বলা হয়েছে?
অতএব!
প্রথম পৃষ্ঠার উপরে লিখে রাখো
আমি মানুষকে ঘৃণা করি না
আর না আমি জরদখল করি,
কিন্তু আমি যদি ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ি
ছিনতাইকারীর মাংসই হবে আমার খাবার
সাবধান! সাবধান! সাবধান!
আমার ক্ষুধার ব্যাপারে
আর আমার ক্রোধের ব্যাপারে!
জেরুজালেমে
জেরুজালেমে। এবং আমি বোঝাতে চাচ্ছি প্রাচীন দেয়ালগুলোর মধ্যে,
কোনো স্মৃতি ছাড়াই আমি এক যুগ থেকে অন্য যুগে হাঁটি নিজেকে পথ দেখাতে
নবীগণ সেখানে পবিত্র ইতিহাস বলে বেড়ায়… স্বর্গে আরোহণ করা
এবং কম নিরুৎসাহ ও বিষণ্ণ হয়ে ফেরে, কারণ ভালোবাসা এবং শান্তি
পবিত্র এবং তারা শহরে আসছে।
আমি ঢালু পথে হাঁটছিলাম এবং মনে মনে ভাবছিলাম; কীভাবে সম্ভব?
একটি পাথর সম্পর্কে আলো কী বলে, তা নিয়ে কি বর্ণনাকারীরা দ্বিমত পোষণ করে?
এটি কি একটি অস্পষ্ট আলোকিত পাথর যা থেকে যুদ্ধগুলো ছড়িয়ে পড়ে?
আমি ঘুমের মধ্যে হাঁটি। আমি ঘুমের মধ্যেই তাকিয়ে থাকি। আমি দেখি
আমার পিছনে কেউ নেই। আমি দেখি আমার সামনেও কেউ নেই।
এই সমস্ত আলো আমার জন্যেই। আমি হাঁটি। আমি হালকা বোধ করি। আমি উড়ি
আর তারপর অন্য কেউ হয়ে যাই। আমি রুপান্তরিত হয়ে যাই। শব্দগুলো
ঘাসের মতো অঙ্কুরিত হয় আজাইয়ার বার্তাবাহকের মুখ থেকে—
“যদি তুমি বিশ্বাসী না হও তবে তুমি নিরাপদে থাকবে না।“
আমি এমনভাবে হাঁটি যেন আমি একজন অন্য মানুষ।
আমার ক্ষতগুলো যেন বাইবেলের সাদা গোলাপ।
আর আমার হাতগুলো যেন দুইটি ঘুঘুর মতো ,
কুরুশে ঝুলতে থাকে এবং পৃথিবীকে বহন করে।
আমি হাঁটি না। আমি উড়ে যাই, আমি অন্য একজনে পরিণত হই।
রূপান্তরিত হয়ে যাই।
কোনো স্থানে না আর কোনো সময়েও নয়। তাহলে আমি কে?
উত্তরণের উপস্থিতিতেও আমি নেই। কিন্তু আমি
মনে মনে ভাবি; আমি একা, মহানবী মুহাম্মদ
শাস্ত্রীয় আরবিতে কথা বলতেন। “ এবং তারপর কী তাহলে?”
তারপর কী? একজন মহিলা সৈনিক চিৎকার করে উঠলো ;
ওটা তাহলে আবার তুমিই? আমি কি তোমাকে খুন করিনি?
আমি বললাম; তুমি আমাকে খুন করেছিলে…আর আমিও
তোমার মতোই মরতে ভুলে গেছি।
লাইলাক সুরভিত তোমার রাত
তুমি যেখানেই থাকো না কেন, রাত এসে তোমার পাশেই বসে।
লাইলাক ফুলে সুরভিত হয় তোমার রাত। প্রতিনিয়ত তোমার গালের
জ্যোতিময় টোল থেকে ব্যাঞ্জনা নির্গত হয়, মদের গ্লাস ভেঙে পড়ে আর
আলোকিত হয় নক্ষত্রলোক। এবং তোমার রাত হচ্ছে তোমারি ছায়া—
আমাদের স্বপ্নগুলোকে অভিন্ন করার জন্য রুপকথার
গল্পের ভূমি। আমি কোনো ভ্রমণকারী নই, নই কোনো অধিষ্ঠাতা তোমার
লাইলাক রাতের, আমি সেইজন যে একদিন ছিলাম আমাতেই। যখনই তোমার
ভেতর রাত বাড়তে থাকে আমি অনুমান করি
হৃদয়ের পদমর্যাদা দুভাবে ভাগ হয়ে যায়;
এটি না নিজের স্বত্বাকে গ্রহণ করে , না এটি এর আত্মার কাছে আশ্রয় পায়।
কিন্তু আমাদের দেহগুলোতে স্বর্গ ও মর্তের মিলন ঘটে।
এবং তোমার রাতই সবটুকু তুমি।
জ্যোতিষ্কের কালির মতো প্রতিভাসিত রাত।
রাত হচ্ছে রাতেরই অঙ্গীকারনামা, হামাগুড়ি দিয়ে আমার দেহে প্রবেশ করছে।
শেয়ালের তন্দ্রাচ্ছন্নতার মতো চেতনা নাশক।
রাত রহস্য ছড়িয়ে দেয় যা আমার ভাষাকে উদ্ভাসিত করে
এটি যখন আরও উন্মুক্ত হয়, আমি আগামীকালকে
আঁকড়ে ধরার জন্য আরও ত্রস্ত হয়ে পড়ি।
রাত্রি নির্বিঘ্নে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকে আর
নিজের অসীমতাকে নিশ্চিত করে,
রাত তার নিজের প্রতিরূপ ব্যাতিত
কোনোকিছুই উদযাপন করে না।
আর সম্রাটদের গ্রীষ্মের প্রাচীন মেষপালকের গানগুলো
যারা প্রেমে পাগল হয়ে পড়ে।
রাত্রি যে ইম্রুল কায়েস এবং অন্যদেরও
ইচ্ছে-খেয়ালের জাহিলি কবিতার উপর বিকশিত হয়,
এবং ক্ষুধার্ত চাঁদের কাছে যাওয়ার জন্য দুধের রাস্তা
প্রশস্ত করে স্বপ্নচারীদের কথার দূরত্বে…
কবি ও গল্পকার।
প্রধানত কবি, গল্পও লিখে থাকেন। চলচ্চিত্র সমালোচনাতেও আগ্রহ অনিঃশেষ। ১৯৭২ সালের ১৩ আগস্টে ঢাকায় জন্ম। পিতা- মরহুম শেখ রহমত উল্লাহ ও মাতা- সালমা বেগম। বেড়েও উঠেছেন ঢাকায়। পড়াশোনা প্রথমে পল্লবী মডেল হাই স্কুলে, লালমাটিয়া মহিলা কলেজ থেকে এইচ,এস,সি পরে ইডেন মহাবিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। উদার সংস্কারমুক্ত উচ্চ শিক্ষিত পিতা শেখ রহমতউল্লাহর ছায়ায় নাগরিক অনুষঙ্গে বেড়ে উঠবার কারণে নিজেকে একজন সংস্কারমুক্ত মানুষ হিসেবে ভাবেন। মাঝে কয়েক বছর শিক্ষকতা এবং একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করার পর এখন পারিবারিক ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ অপরাহ্ণের চিঠি (২০১৬), অপেরার দিনলিপি (২০১৭) ও লুকিয়ে রেখেছি গোপন হাহাকার (২০১৯), শ্রেণীশত্রু (গল্পগ্রন্থ) ২০২০, বিশ্বসেরা সিনামা কথা(চলচ্চিত্রের উপর লেখা গদ্যের বই) ২০২০। এছাড়া, দিপাঞ্জলি (যৌথ) ২০১৭ ও মনোরথ (যৌথ) ২০১৮। তিনি বই পড়তে, মুভি দেখতে ও ভ্রমণ ভালোবাসেন।
ই-মেইল : [email protected]