| 5 মে 2024
Categories
শারদ অর্ঘ্য ২০২৩

শারদ অর্ঘ্য গল্প: সুলতানপুরীর মনের কথা । কিযী তাহ্‌নিন

আনুমানিক পঠনকাল: 16 মিনিট

মোস্তফা সুলতানপুরীর মনের কথা সবাই বুঝতে পারে।  ঘটনাটা উল্টোও হতে পারতো।  এমন হতে পারতো যে সুলতানপুরী সকলের মনের কথা বুঝতে পারে, এবং সে সুবাদে সে দেশের একজন নামজাদা আলেম পীর হিসেবে পরিচিত হয়েছে।  সুলতানপুরীর বাপের স্বপ্ন তাই ছিল।  নাহলে সরকারি ব্যাংকের ছাপোষা দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মচারী, যার নাম মোফাজ্জল রহমান, সে কেন তার ছেলের নাম রাখতে যাবে মোস্তফা সুলতানপুরী। কারণ সে স্বপ্ন দেখেছিলো, তার ছেলে একদিন এ দেশের, এই  অঞ্চলের নামকরা পীর হবে।  তার মজলিশে ওরস হবে।  দেশ বিদেশের লোক তার ঐশ্বরিক জ্ঞানের কাছে আশ্রয় চাইবে।  তার ছেলে সকলের মনের কথা বুঝবে, সকলের দুর্দশা ঘুচাবে।  ঠিক তার পীরসাহেব  হজরত ওমর সুলতানপুরীর  মতন।  মিরপুরের কাজীপাড়ার দ্বিতীয় গলিতে  প্রতি বৃহস্পতিবার যখন অফিস শেষে মোফাজ্জল যান, তার মনপ্রাণ ঠান্ডা  হয়ে যায়।  যেন বরফকুচি জল কেউ ঢেলে দিচ্ছে পুরো শরীরে, আত্মাও ঠান্ডা হয়ে যায়। এতই শান্তির জায়গা পীরজির এই দরগা। অমন বরফের মতন গলে জল হতে হতে প্রতিবার মোফাজ্জল রহমানের মনে হয়, আমার একটা  ছেলে হলে তাকেও পীর হিসেবে তৈরী করতে হবে।  মানুষের খেদমত করবে।  ক্ষমতা থাকবে, মানুষের মমতা পাবে। আর কী লাগে? 

কোন এক দূর অতীতে দিল্লির সুলতানপুর থেকে আগত পীরজির পরিবার।  সে পুরানো কাহিনী।  ওমর সুলতানপুরের দাদাজানের আব্বা, তার নিজের  নামের সাথে সুলতানপুরী জুড়ে দিয়েছিলেন।  সেই থেকে  চলছে। মোফাজ্জলের মনের ইচ্ছা পূরণ হয়েছিল, তার যখন পুত্রসন্তান হলো, এক মাসের বাচ্চাকে নিয়ে পীরজির কাছে গিয়েছিলো সে।  মোফাজ্জল পীরজিকে বলেছিলো, ” আব্বা, আমার ছেলের মাথায় হাত বুলায় দেন।  সেও যেন পুন্য  আত্মা হয়।” মনের ইচ্ছার কথা আমতা আমতা করে বলেছিলো।  বলেছিলো, “আব্বা আপনি তালিম দেন।  আপনার কাছে রেখে যাই ছেলেরে।”

পীরজির কোনো পুত্র সন্তান নাই।  মোফাজ্জলের ইচ্ছা ছিল, তার পুত্রকে যদি পীরজী মানুষ করে, তো আর কী লাগে? 

ওমর সুলতানপুরী পীরসাহেব ছেলের মাথায় হাত রেখে দোআ করেছিলেন আর বলেছিলেন, “তোর ছেলে, তুই ভালো করে মানুষ কর।  আমার দোআ থাকলো।  শোন আমার নামে নাম রাখলে রাখবি।  কিন্তু মানুষ নামে না কর্মে পীর হয়, বুঝলি।”

মোফাজ্জল রহমান বোধহয় ভালো করে বোঝেনি। ওতো কঠিন কথা কী বোঝা যায়।  সে ছেলের নাম রেখেছিলো মোস্তফা সুলতানপুরী।  মহাপুরুষ, আওলিয়াদের জীবন কাহিনী পড়ে শোনাতো ছেলেকে ছোট থেকেই।  কিন্তু মোফাজ্জল বোঝেনি এই নাম ধাম দিয়ে কিছু হবেনা।  হুজুর ঠিকই বলেছিলো।  কিছু মানুষ জন্মায় তার কর্মকে কাঁধে নিয়ে।  সেটাকে ঠেকানো  যায়না।  এই যেমন তার ছেলে মোস্তফা সুলতানপুরী ছোট থেকে বড় হতে হতে এক হাড়বজ্জাত মানুষ হয়ে উঠছিলো।  পরীক্ষায় নকল, রিপোর্টকার্ডে বাপের সই নকল করার মতন জালিয়াতি,  কী করেনি সে।  জুম্মাবারে একদিন, পাড়ার মুরুব্বি আলী আহমেদ সাহেব সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা পরে নামাজ পড়তে যাচ্ছিলেন।  দোতলার বারান্দা থেকে ১৪ বছরের কিশোর সুলতানপুরে লাইফবয় লিকুইড সাবানের প্যাকেটে  পানি ভরে ছুড়ে মেরেছিলো আলী আহমেদ সাহেবের মাথায় ঝপাৎ করে।  খালি প্যাকেটের গায়ে  লেগে থাকা আঠালো লিকুইড সাবানা  মেশানো থকথকে পানি,  আহমেদ সাহেবের শরীরে মাখামাখি,  বুদবুদের হালকা বেলুন ভাসছিলো হাওয়ায়।  তাই দেখে টিভির লাক্স সাবানের বিজ্ঞাপনের নায়িকাদের কথা মনে করে হেসে কুটিপাটি সুলতানপুরী।  বিব্রত বিধস্ত আহমেদ সাহেব যখন নালিশ করলেন, মোফাজ্জল তার ছেলেকে মেরে প্রায় আস্ত রাখেনি।  

“হারামজাদা কুত্তারবাচ্চা তোর জুম্মার সময় মসজিদে থাকার কথা।  তুই না আমারে বললি মসজিদে আসতেসস।  না আইসা বজ্জাতি করতেসোস।”

বলছেন কম, হাত চলেছে বেশি।  চুল টেনে এক গোছা ছিড়ে ও ফেলেছে একমাত্র ছেলের। চোখের কোণায় হালকা ঘুষি মেরে কালশিটে ফেলে দিয়েছে।  আর পিঠে পেটে  মার তো চলেছেই।  

কথা কম বলেছে, তবে যা বলেছে সবই খুব ধারালো, বিরাট রুই কাতলের মাথা এক পোচে ফাঁক করে ফেলার ছুরির  মতন ধারালো।  বউকে বললো, “তুমি নিশ্চিত এই পোলা আমার? এই কুজাত তো আমার হওয়ার কথা না। নাকি তুমি অন্য কোথাও  …”

খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিলো পরিস্থিতি। মোফাজ্জলের বউ, সুলতানপুরের মা, হামিদা বেগমও কম যায়না।  মুখে চোখে বিদ্যুৎ খেলা করে তার।  লোহায় গড়া।  ঐদিন বাড়ি ছেড়েছিলো  ছেলের হাত ধরে।  যাওয়ার আগে বলছিলো, “খাইচ্চর শুয়োরের বাচ্চা, পোলা তোর রক্ত পাইসে। তোর মতন  বদমাইশ।  তাও বুঝোস না যে তোর পোলা। পোলারে  নিয়ে যাচ্ছি। নাইলে পুরা তোর মতন বেজন্মা হবে।”

যাওয়ার আগে এও বলে গিয়েছিলো যে, ছেলের এই কালশিটে  মুখ পুলিশকে দেখাবে। থানায় যাবে।  মামলা করবে, এমন নির্যাতনকারী বাপ আর স্বামীর বিরুদ্ধে।  

এরপর আট মাস, পাক্কা আট  মাস পর বাড়ি ফিরেছিল হামিদা বেগম ছেলে সুলতানপুরীকে সাথে নিয়ে।  তার জন্য মোফাজ্জলকে যে ঝামেলা পোহাতে হয়েছে, তার এক জন্মের শিক্ষা হয়ে গেছে।  হামিদা বেগম কেস করেনি ঠিকই।  কিন্তু দিনের পর দিন হামিদা বেগমের বাপ-মায়ের বাড়ি যেয়ে ফিরে আসতে হয়েছে মোফাজ্জলকে।  এরপর শ্বশুড়বাড়ির একে  তাকে ধরে যখন দেখা করলো, পায়ে পড়লো স্ত্রীর।  “আমারে মাফ কইরে দাও।  মাথা গরম হইসিলো। অন্যায় করসি গো।”

হামিদা বেগমের শর্ত ছিল তার বাড়ির সকলের সামনে মাফ চেতে হবে।  শুধু তার কাছে না, ছেলের কাছেও।  কোনো বাপ এমন করে ছেলেকে পিটায়? মোফাজ্জল দুর্বল হৃদয়ের মানুষ। এতিম।  সংসারে আছে শুধু বউ  আর ছেলে।  আর মাথার উপর ভরসা তার পীর ওমর সুলতানপুরী।  এদের বাদ দিয়ে জীবন ভাবতে পারেনা।  হামিদা  বেগমের কথা মতনই সে মাফ চেয়েছিলো।  

পীরজিও বলেছিলেন, “স্বামী হল সংসারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি।  বিনা প্রমাণে  এমন কটু কথা স্ত্রীকে বলা গুনাহ।”

হামিদা বেগম আর সুলতানপুরী ফিরে আসার পর কিঞ্চিত বদলে গিয়েছিলো মোফাজ্জল।  আর এমন গভীরে বদলেছিল সে, সেটা বাইরে থেকে কেউ বোঝেনি।  বোঝার মতন কেউ ছিলোও না।  সে বুঝেছিলো তার স্বপ্ন শেষ।  তার এই ছেলে গড়েপিটে বড়জোর এক মাঝারি অফিসের ছোট কর্মচারী হবে, তার মতন।  দিনরাত সবার বকা লাথিগুতা  খাওয়া মানুষ হবে। কিন্তু কিন্তু পীর হওয়ার মতন যোগ্যতা আর মেধা আর সৎবুদ্ধি এই ছেলের নাই।  ছেলেকে তাই আর আলগা শাসন করা ছেড়েই দিলেন।  আর কয়েক বছর বেঁচে ছিলো মোফাজ্জল।  এরপর হার্ট এট্যাকে মরে গিয়েছিলো।  হামিদা  বেগম শক্ত মানুষ। স্বামীর অফিস থেকে পাওয়া খুচরো টাকা, জমানো কিছু টাকা, আর দেশের একটুকরো জমি বিক্রি করে শহরেই থেকে গেলো।  কাপড়ের দোকান দিলো।  নকশিকাঁথার শাড়ি, গায়ের কাঁথা নানারকম জিনিস তৈরী করান কর্মচারীদের দিয়ে।  ডিজাইন, সেলাই সব নিজেই  তদারকি করে।  তারপর বিক্রি করে বড় বড়  দোকানে।  এখন তো বিদেশেও সাপ্লাই দেয় । মাঝে মাঝে খারাপ লাগে, স্বামী বেঁচে থাকতে এই ব্যবসাটা যদি ধরতো, টাকাপয়সার টানাটানি হতো না।  নিজের ব্যবসা আর ছেলে সুলতানপুরীকে নিয়ে সে এতই  ব্যস্ত হয়ে গেলো, যে স্বামীর মৃত্যুর পর তার পীরজিকেও জীবন থেকে বাদ দিলো, কিংবা তার কথা মনেও ছিলোনা আর।  

বাপ মরে যাওয়ার পর সুলতানপুরীর বজ্জাতি তেমন আর দেখা যায়নি।  কিংবা সুলতানপুরী হয়তো আগের মতনই ছিল।  বাপের চোখেই সব বজ্জাতি মনে হতো।  হামিদা বেগম ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায়না।  সে জানে  লুতুপুতু করে মানুষ করলে, ছেলে তার স্বামীর মতন আকাম্মা হবে। যে নিজে কিছু না করে, পীরের উপর ভুত-ভবিষ্যৎ চাপিয়ে দিবে।  ছেলেকে ভুল করতে দিতে হবে।  ভুল করতে করতে সে শিখবে।  শুধু একবার যখন  কলেজ যাওয়ার পথে শেফালির ওড়না ধরে টেনে তার কানে ফু দিয়ে বলেছিলো , “হাই সেক্সি।”, তখন উত্তম মধ্যমপিটিয়ে আস্ত রাখেনি ছেলেকে।  শেফালির মা যখন এসে নালিশ করেছিলো, সে বলেছিলো, “দাঁড়ান ছেমড়া বাড়ি আসুক দেখতেসি।  আপনাকেও বলি ভাবি, মেয়েরে এমন সাইডে ওড়না দিয়ে কলেজ পাঠায়েন না। ছেলেপেলেরা খুব বদ।” 

সে জানে তার ছেলেরই দোষ।  শরীর পাকছে সদ্য, এসব কুকাম কিছুটা করবে।  স্বাভাবিক।  কিন্তু ঠিকমতন শাসন করলে বয়স হতে হতে ছেলে লাইনে আসবে।  খুন্তি  দিয়ে বেদম পিটিয়েছিল সেদিন ছেলেকে। এরপর অবশ্য ছেলে এমন আকাম করেনি মেয়েদের সাথে।  করলেও তার কানে আসেনি।  সুলতানপুরী কলেজ পাশ করতে করতে ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিলো। নতুন শখ হয়েছিল কবিতা লেখা।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো সমাজবিজ্ঞানে।  কবিতা তখন নেশা। লিটল ম্যাগে কবিতা ছাপা  হয়।  একবার কোন বড় ভাইয়ের কল্যানে সূর্যের আলোতে একটা কবিতা  ছাপা  হলো।  হামিদা  বেগম কখনো বাধা দেয়নি। তার ব্যবসা তখন জমজমাট। কুমিল্লায় একতলা বাড়ি তুলেছে বাপের জমিতে।  শেষ বয়সে থাকার আশ্রয় হলো।  ছেলের একটা চাকরি আর ভালো বিয়ে হলেই হয়।  শখ করে কবিতা লিখতে চায়, লিখুক।  

সুলতানপুরীর যদি সামর্থ থাকতো তো চাকরি বাকরি না করে কবিতাই  লিখতো শুধু।  তাদের কোন অভাব নেই।  মায়ের ব্যবসা ভালো চলে।  হাত ভরে খরচও করতে পারে, বিড়ি সিগারেট, মেয়ে বান্ধবী পটানো, আর কবিতা লেখা।  কিন্তু সে তো এখন ছাত্র।  পড়ালেখা শেষ হওয়ার পর কাজ না করলে আম্মা আর টাকা দিবেনা।  কঠিন মানুষ সে।  অগত্যা পাশ করার পর খুচরো কিছু প্রুফ দেখা আর রিসার্চের কাজ করতে করতে এক নামকরা এনজিওতে ঢুকে পড়লো। কবিতা লেখার কারণে তার  লোকজনের সাথে খাতির অনেক বেড়েছে।  সে শান্ত মানুষ হলেও ঠিক জায়গায় তেল কিংবা ঘি ঢালার কায়দাটা ঠিক রপ্ত করেছে।  আব্বার পীরভক্তি ছোটবেলায় দেখেছে। আব্বার ভক্তির মাঝে নিখাদ বিশ্বাস ছিল।  কিন্তু সে যখন কারো প্রশংসা করে তাতে বিশ্বাস নেই।  তবে কেমন করে প্রশংসা করতে হয়, সে কলাটা সে বাপের কাছ থেকেই শিখেছে। কাজেও দেয়।  নইলে এতো বড় এনজিওতে এই সাধারণ রেজাল্ট নিয়ে কি কাজ পাওয়া সম্ভব!কবি  অনিন্দ্য জহির ভাইয়ের কল্যানে কাজ পেয়েছে।  দিন রাতে অনিন্দ্য ভাইয়ের আশপাশ ঘোরা, অখাদ্য কবিতা সম্মেলনে যাওয়া, কী না করেছে।  অনিন্দ্য  জহির ভাইয়ের নিজের ব্যবসা, চিংড়ি কাঁকড়া এসব এক্সপোর্ট করে। শখের কবি।  নামকরা কবিই।  টাকার অভাব নাই। তারপর ও প্রতিবার তার সাথে দেখা করতে যাওয়ার সময় এক প্যাকেট ব্যানসন সিগারেট কিনে নিয়ে গিয়েছে।  কয়েক মাস পিছে পিছে ঘোরার পর কাজ জুটিয়ে দিয়েছে অনিন্দ্যদা।  এত বড় একটা এনজিও, নারীর অধিকার থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর পায়খানা নির্মাণ, সব কিছুতে তাদের একচেটিয়া আধিপত্য।  ফান্ডের অভাব নাই।  চাকরির যাবারও খুব একটা সম্ভাবনা নাই।  ফিল্ডে যেতে হয় প্রায়ই। ফিল্ড সে দারুন পছন্দ করে, প্রকৃতিতে কবিতা খোলে।  কাজের ফাঁকে, আর লম্বা ঘ্যানঘ্যানে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ট্রেইনিং এর ফাঁকে কবিতা লেখে খাতা ভরিয়ে।  আর গ্রামদেশে পেটপুরে খাঁটি খাওয়া দাওয়া,  পুকুরের মাছ, ঘরে পালা হাঁস মুরগি।  এ গ্রামের অনেক উন্নতি হবে, কোন অভাব থাকবেনা, এমন কত স্বপ্নে বিভোর থাকা  গ্রামের লোকেরা, তাদের সবটুকু দিয়ে আপ্যায়ন করে । যত  স্বপ্ন এনজিও দেখায়, তার সব কী আর পূরণ করতে পারে?  ওই যতটুকু পারে তাও কম না।  তার বিনিময়ে রাজার মতন সম্মান পায়।  জোর করে তাই প্রতিমাসে ফিল্ড রাখে সুলতানপুরী। শহর আর ভাল্লাগেনা।  

তবু শহরে তো ফিরতে হয়। তার কবিতার প্রচার প্রসার হচ্ছে বেশ।  অফিসের পর প্রতিদিনই সভা সমিতি কবিতার আসর থাকে। বই প্রকাশের কাজ থাকে। আর বিয়েও তো  করেছে তিন বছর হলো।  ভার্সিটিতে যাদের সাথে ঘুরেছে, তাদের সাথে প্রেম শরীর মন সব দেয়া নেয়া হলেও বিয়েটা হলোনা।  পরে খুব আজব ভাবে বিয়ে হলো।  চার বছর আগে বই মেলায় অনিন্দ্য জহির ভাইয়ের সাথে দাঁড়িয়ে ছিল, লেখক মঞ্চের পাশে।  সেদিন লেখক মঞ্চে অতিথি ছিলেন অনিন্দ্য  জহির ভাই।  জঘন্য বরিশাইল্যা উচ্চারণে কী যে বললেন কিছুই বোঝা যায়নি।  সুলতানপুরী মনে মনে বলছিল, “হালার পুত ছাগল কথাকার, বরিশাইল্লা ভাষাটা যদি ঠিক মতন কইতে পারতি তাও হতো. সেটাও ঠিক মতন কইতে পারোস না।  পাতলা পায়খানার মতন কবিতা লেখস, আর বড় বড় কথা।”

আর সামনে দাঁড়িয়ে বলছিলো, “খুব ভয় হতো অনিন্দ্যদা জানেন, মনে হত রুদ্র মহামূদ শহীদুল্লার পর, আর কাকে পাবো আমরা? ভাগ্যিস আপনি এলেন।  আপনার কবিতায় রুদ্রের আভা।”

এইসব খিচুড়ি মার্কা মেলানো মেশানো মিথ্যা কথা যখন বলছিলো আর বিড়ি ফুঁকছিলো, তখন তার বর্তমান বউ, সামিহা পারভীনের সাথে দেখা।  সামিহা এসেছিলো অনিন্দ্যদার বই হাতে।  

রিনরিনে সুরে বলেছিলো, “অনিন্দ্যদা একটা অটোগ্রাফ দিবেন?”

অনিন্দ্যদা তার সিঙ্গারার মতন তিন কোনা নাক ফুলিয়ে খ্যা খ্যা করে হাসছিলো, “আররে আমার বই কেন? অহেতুক টাকা নষ্ট।”

সামিহার হাত থেকে বই ছিনিয়ে প্রায় নিয়ে অটোগ্রাফ দিয়েছিলো, “কী নাম লিখবো?”

শালা শুয়োর।  মেয়েরা অটোগ্রাফ চাইলেই ব্যাটা এমন নাক ফুলে আর হায়েনার মতন হেসে হেসে বলে, সবসময়,  “আমার বই কেন?”

ভাগ্যিস তখনও সুলতানপুরীর মনের কথা কেউ বুঝতোনা।  তাই প্লাস্টিক একটা হাসি মুখে ঝুলিয়ে কান্ড দেখছিলো, আর সামিহাকেও।  যে কেউ দেখে ভাববে সুলতানপুরীর পুরো জীবন অনিন্দ্যদার লক্ষ্যে।  

এই অটোগ্রাফ ছবি তোলার ফাঁকে অনিন্দ্যদা জেনে নিয়েছিল সামিহা কাঁঠালবাগান থাকে, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ে ।  যেসব মেয়েদের পছন্দ হয় তাদের সম্পর্কে খোঁজ নেয় লোকটা।  তারপর  সুলতানপুরীকেই সব ইনফরমেশন জোগাড় করতে হয়।  মেয়ের ফোন নম্বর, ফেসবুক আইডি  খুঁজে বের করতে হয়। তারপর কখনো  ফেসবুক মেসেজে  কিংবা ফোন করে অনিন্দ্য বাটপারটা মেয়েদের সাথে খাতির জন্মায়।  “আমি জানিনা আমি কেন এই পাগলামি করছি এই বয়সে।  কত কষ্ট করে ফোন নম্বর খুঁজে যে বের করলাম। মনে হচ্ছিলো, তোমাকেই খুজছিলাম এতদিন। তোমাকে ছাড়া আমার কবিতা আর হবেনা।  নইলে কত মেয়ে আমার পিছে ঘুরে, কোনদিন কারো সাথে কথা বলিনা। বৌয়ের সাথে সম্পর্ক ভালো না বুঝলা।” 

সব মেয়েকে এই একই কথা বলে, গলা কাঁপিয়ে কাঁপিয়ে।  সুলতানপুরী  নিজের কানেই কতবার শুনেছে।  মেয়েগুলোকে নিয়ে নিম্ন মানের কিছু কবিতা লেখে, এই, “জল পরে পাতা নড়ে, তোমার কথা মনে পরে।” ধরণের এলেবেলে ছড়া।  তাতেই মেয়েগুলো গলে যায়।  এই বিয়াওয়ালা, ভুঁড়িওয়ালা, তিন বাচ্চার বাপ, পঞ্চাশোর্ধ, প্রায় টেকো লোকটার মধ্যে মেয়েরা কী পায় কে জানে?সবাই যে তার কথায় গলে, তা না।  এই যেমন সামিহা।  গলে নাই।  সুলতানপুরী কয়েকদিন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সামনে ঘুরে অবশেষে একদিন সামিহার দেখা পেয়েছে।  ভাব করেছে হঠাৎ দেখা।  তারপর হটাৎ কী মনে হলো ভাব ধরে বললো, “আচ্ছা ভালো কথা অনিন্দ্যদা বেশ কয়েকবার আপনার কথা বলেছে।  আপনার সাথে কথা বলে মুগ্ধ। আপনার কবিতার রুচির খুব প্রশংসা করেছে।”

ফাঁকতালে দুইজন যখন ফোন নম্বরও চালাচালি করে নিলো। সেদিন রাতে সামিহাই ফোন  করলো, “ভাই শুনেন, আপনি আমার ফোন নম্বর অনিন্দ্যদাকে দিয়েন না প্লিজ।”

“হায় হায়, ক্যান?”

“আমি খোঁজ নিয়েছি আসলে, উনার তো খুবই বদনাম, লুইচ্চা।  অনেক মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করে, প্রেম করে।  তারপর ছেড়ে দেয় কয়দিন পর।  উনার কবিতা ভালো লাগে, আলাদা কথা, প্লিজ ফোন নম্বর দিবেন না।” 

ফোন নম্বর  দেয়নি সুলতানপুরী।  বরং মেয়েটার প্রতি শ্রদ্ধা জন্মেছে।  কী  দারুন ব্যক্তিত্ব।  তারপর যা হয় আর কী, ও  ফোন করে, সেও ফোন করে।  কথা বলতে বলতে দেখা করতে করতে প্রেম।  অনিন্দ্যদা অনেকদিন ধরে ফোন নম্বর চেয়ে  ঘ্যানঘ্যান করার পর স্বীকার করতে হলো ব্যাপারটা।  “তোর সাথে ওই মেয়ের চলতাসে?”

“হু।”

“কতদূর?”

“বহুদূর ভাই।”

“শুইছস?”

“ভাই বিয়া করতেসি।”

অনিন্দ্যদা তব্দা খেয়ে ছিল কয়দিন।  উনাকে ঠিক ক্ষেপানো  যাবেনা। উনি ক্ষেপলে এই কবি সমাজে টেকা মুশকিল  হয়ে যাবে সুলতানপুরীর।  পরে নানা ধরণের ব্যবস্থা করে, নতুন মেয়েদের ফোন নম্বর জোগাড় করে দিয়ে মন পাওয়া গেছে আবার অনিন্দ্যদার।  আর পুরো সময় অকথ্য অসভ্য যা যা  গালি আছে, মনে মনে দিয়েছে বেটাকে। ভাগ্যিস তখনও তার মনের কথা অন্যরা কেউ বুঝতোনা।  

ঘটনা তো ঘটলো এই কিছু মাস আগে। অনিন্দ্যদার ছায়ার থাকতে হয়েছে এতদিন টিকে থাকার জন্য।  তবে সুলতানপুরী বুঝে গিয়েছে যে, তার আসলে অনিন্দ্য জহিরকে তেমন প্রয়োজন নেই আর।  তার কবিতা সমাদৃত হচ্ছে বেশ।  কলকাতার এক ভালো প্রকাশক বই ছাপার আগ্রহ দেখিয়েছে।  বাংলা একাডেমির এক অনুবাদ কবিতা সংকলনে তার একটা কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ হয়েছে।  দুজন প্রকাশক রাজি সামনের বই মেলায় তার বই ছাপাবার জন্য।  এইসব বেশিরভাগ তথ্যই সে অনিন্দ্যদাকে দেয়না। আস্তে আস্তে সরে আসতে হবে এই ছায়া থাকে। এমন ভাবে অনেক সময় ধরে, বছর ধরে, যে কেউ যাতে বুঝতে না পারে।  অনিন্দ্যদাও না।  কাউকে শত্রু বানানো যাবেনা।  কে কখন কাজে আসে?যদি কাল চাকরি চলে যায়, এই অনিন্দ্যদাকেই হয়তো লাগবে, আরেকটা চাকরি জোগাড় করে দেবার জন্য।  কিন্তু এই তেল মাখামাখি করাটা কমাতে হবে।  সুলতানপুরী নিজেও কবি  খারাপ না।  বরং সে বিশ্বাস করে সে অনিন্দ্যদার চেয়ে ভালো লেখে।  

এই যেমন সেই দিনটিতে সে গিয়েছিলো এক সাহিত্য সংবর্ধনা গ্রহণ করতে।  বেশ ভালো একটা সংবর্ধনা,  ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার দিবে, ক্রেস্ট, মানপত্র।  বেশ নামি দামি লোক আসে অনুষ্ঠানে। তার হাতে পুরস্কার তুলে দিলো আতিয়া  পারভীন।  আতিয়া আপা এক নামকরা পত্রিকার সম্পাদক, দারুন কবিতা লেখেন।  বয়স পঞ্চাশ প্রায়।  খুব মার্জিত।  সুলতানপুরী খুব সম্মান করে ভদ্রমহিলাকে, তার গুণের কারণেই।  কিন্তু একটা জিনিস ভারী অস্বস্তি দেয় মনে মনে।  সেদিন পুরস্কার নিতে মঞ্চে উঠলো, আতিয়া আপা যখন ক্রেস্ট দিচ্ছে হাতে তখন সুলতানপুরীর পুরোনো সেই অস্বস্তি পিনপিন  করে বুকে ফুটলো, মনে মনে বললো,  “পুরো গন্ডার একটা। কী নোংরা নখ, ছি।” একদম মনে মনে বললো।  তারপর হাসিমুখে একটা আবেগময় ভাষণ দিয়ে, মাঝারি মাপের হাসি ঝুলিয়ে মঞ্চ থেকে নামলো।  পুরো অনুষ্ঠান আতিয়া আপা কেন যেন আর সুলতানপুরীর  সাথে কথাই  বললোনা।  সুলতানপুরী সেদিন খুশিতে আর  আবেগে ভাসছিলো।  তারপর অনুষ্ঠান শেষে অনিন্দ্যদা আর তার চেলা চামুন্ডাদের বারে নিয়ে যেয়ে মদ খাওয়াতে হলো।  অনুষ্ঠানের দুইদিন পর যখন সুলতানপুরী  এক কাজে আতিয়া আপাকে ফোন দিলো, আপা ধরলোনা।  কত মেসেজ দিলো রিপ্লাই দিলোনা।  আপা তো এমন করেনা  সাধারণত। এরপর একদিন আপার  পত্রিকা অফিস চলে গেলো।  কথাই বলতে চাচ্ছেন না আপা।  

অনেক্ষন চেষ্টা করে সুলতানপুরী জিজ্ঞেস করলো, “কিছু কি হয়েছে আপা? আপনি আজকাল আমার সাথে কথাই  বলতে চাচ্ছেন না। সেদিন অনুষ্ঠান শেষেও  … “

আপা চুপ।  

“আপা আপনি আমারে এতো স্নেহ করেন।  কোন ভুল কি করে ফেলছি? তাইলে বলেন, আমি মাফ চাই।  তবু চুপ করে থাইকেন না আপা প্লিজ।”

“তুমি জানোনা তুমি কি  করসো?”

“আপা জানলে তো আমি মাফ চাইতাম।  আপনার পিছ পিছ  ঘুরতেসি।  জানার জন্যই তো।  বলে ফেলেন আপা।”

“তুমি সেদিন মঞ্চে আমারে গন্ডার বলছো। আই কান্ট বিলিভ ইট। গন্ডার! কত সাহস তোমার?”

সুলতানপুরী ঢোক গিলে। সে গন্ডার বলছে , এ পৃথিবীতে এটা কারো জানার কথা না। কারো না। সে মনে মনে বলছে। বলেছে, তার কারণ আছে।  এতো সুন্দর এক মানুষ আতিয়া আপা, কিন্তু বিশাল বিশাল তার হাত পায়ের নখ।  হলুদ হলুদ।  মনে হয় এখনই আঁচড়ে  শিকার ধরবে।  গা শিরশির করে।  সেই নখ দেখে সুলতানপুরীর খালি মনে হয় গন্ডারের কথা।  যদিও সে গন্ডারের নখ কখনো দেখিনি। গুগল করে দেখা যায়।  কিন্তু দেখেনি। ইন্টারনেটে কী আর দেখার জিনিসের অভাব!  

সুলতানপুরী বলে, “আপা আমি কাকে বলছি  এ কথা যে আপনি গন্ডার, এত খারাপ কথা আমি ক্যান বলবো? ছি।”

“এই ছেলে, সেইদিনের ছেলে, আমারে ভেলকি দেখাও।  কাউকে বলা লাগবে কেন? তুমিই তো সেদিন স্টেজে অ্যাওয়ার্ড নেয়ার সময় ফিসফিস করে বললা গন্ডার একটা।  বলোনাই?”

সুলতান মনে মনে বলে,  “গণ্ডারই তো, উফফ হলুদ হলুদ নোংরা নখ। ” 

“সুলতান, কী বললা  তুমি?  এই এক্ষনি তো বললা! আমার নখ হলুদ নোংরা?”

ও মাই গড।  একথাও তো আমি মনে মনে বলছি। সুলতানপুরী ভাবে।  দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসে। সুলতানপুরীর তার  আব্বার পীরজানের কথা মনে হয়।  যিনি নাকি মানুষের মনের কথা বুঝতে পারতেন, আব্বা বলছে।  আতিয়া আপা ও তো দেখি সেই রকম, আধ্যাত্বিক।  সুলতানপুরী চিন্তা করে, কেমন করে সম্ভব? উনি সব বুঝলেন। আগে বুঝেন নি? আহারে, যতবার আপার সাথে দেখা হয়েছে, উনার নখের দিকে চোখ পড়লে উনাকে মনে মনে গন্ডার বলেছি।  নাকি আগে বুঝলেও বলেননি।  জানিনা, কিন্তু আপার সামনে যাওয়ার সাহস নাই।  ভয় লাগছে সুলতানপুরীর।  

কাউকে বলেনা কথাটা প্রথমে।  প্রথমদিন ভাবে, আতিয়া আপার ঐশ্বরিক ক্ষমতা তৈরী হয়েছে। যদিও সুলতানপুরী  যে  খুব বিশ্বাসী মানুষ তা না।  বরং ছোটখাট পাপ কাজ হরহামেশাই করে।  কিন্তু তার হালকা বিশ্বাস জন্মাচ্ছে যে, আতিয়া আপা বিশেষ ক্ষমতার মানুষ হয়ে উঠছে।  পরের  কয়দিন মনে হলো, এটা নিতান্তই কাকতালীয় ঘটনা।  এমনও  হতে পারে যে অনেকেই এর আগে আপার নখের দিকে তাকিয়ে তাকে গন্ডার বলছে।  সে প্রথম নয়।  এই জন্য সুলতানপুরী যখন নখের দিকে তাকিয়ে ছিল মঞ্চে, আপা নিশ্চিত ছিলেন সুলতানপুরী আপাকে মনে মনে গন্ডার বলছে।  তবে সে নিশ্চিত আতিয়া আপা কাউকে কথাটা বলেনি।  উনার ব্যক্তিত্ব প্রখর, ” জানো  সুলতানপুরী বলেছে যে আমার নখ গন্ডারের মতন”, এ কথাটা উনি বলবেন না।  বলার কথা না।  

এই ভুঙচুঙ ধারণা দিয়ে নিজেকে সামনে নিচ্ছিলো সুলতানপুরী।  কিন্তু এর মধ্যে পরপর এতগুলো ঘটনা ঘটে গেলো যে তার জীবন নিয়ে সকল ধারণা উল্টেপাল্টে গেলো।  আতিয়া আপার ঘটনার তিনদিন পর, অফিসের বস রহমত নেওয়াজ ভাইয়ের একদম পাশে বসে একটা ডকুমেন্ট রিভিউ করছিলো। দুজন মিলেই। একটা প্রজেক্ট এর কনসেপ্ট নোট আর বাজেট। 

রহমত ভাই বললেন, “সুলতান স্যালারিতে এতো টাকা রেখেছো ক্যান? এক প্রজেক্ট থেকে এতো টাকা স্যালারিতে দেয়া যাবে নাকি? আরো প্রজেক্ট আনো, তারপর স্যালারি বাড়ানোর চিন্তা।  প্রকিউরমেন্টে বরং অ্যাড করো টাকাটা।”

মেজাজ এমন খারাপ হলো সুলতানপুরীর।  বাইরে থেকে অবশ্য বোঝা যাবেনা।  বহুদিনের প্রাকটিস। মুখ তেলতেল হাসিতে ভরিয়ে বাজেট কাটছাট করলো।  আর মনে মনে বললো, “শালা খাচ্চর।”

রহমত ভাই কটমট করে সুলতানপুরীর দিকে তাকিয়ে আছে।  “কাকে খাচ্চর বললা তুমি, আমাকে?”

“আমি?” সুলতানপুরী আরেকটু হলে ফিট হয়ে যাবে।  

“এই যে ফিসফিস করে বললা?”

সুলতানপুরীর উপস্থিত বুদ্ধি ভালো।  সে এক ঝটকায় বলে ফেললো, “ও ভাই আপনাকে বলছি নাকি, ডোনারকে বলতেসি।  কী পরিমাণ বাজেট কাট করসে দেখসেন? অথচ ডেলিভারেবল ডাবল করে দিসে।”

বলেই  দৌড়ে বের হয়ে আসলো ওই ঘর থেকে।  বসকে বুঝতে দিলোনা।  বললো বাথরুমে যাবে।  নিশ্বাস আটকে যাচ্ছে।  একই ঘটনা।  আতিয়া আপাও তো একই কথা বলেছিলো যে, সুলতানপুরী  নাকি ফিসফিস করে কথাগুলো বলে।  সে বলে মনে মনে।  সেকথা ফিসফিস করে শোনা যায়? কী আজব! 

চলতেই থাকলো। এরপর ঘটলো আম্মার সাথে।  সুলতানপুরীর আম্মা এখন কুমিল্লা থাকে।  তার ব্যবসা এখন নিজ গতিতে চলে। সে কুমিল্লায় তার নিজের বাড়িতে থাকে।  চারপাশে ভাই বোনের পরিবার থাকে।  ফোনে প্রতিদিন তদারকি করে ব্যবসা।  ম্যানেজার রাখা হয়েছে।  আর দুই মাসে একবার ঢাকায় আসে।  পুত্রবধূ সামিহার সাথে তার খুব একটা বনেনা।  দুইজনের অধিকারবোধ প্রবল।  কেউ কারোরে নাহি ছাড়ে, সমানে সমান।  আর তার মাঝে আটকে হাসফাস করে সুলতানপুরী। তবে এ কথা সত্যি যে আর দশটা শাশুড়ি-বৌয়ের মতন তারা ঝগড়া করেনা।  বিয়ের কয়েকমাস পর হামিদা বেগম নিজেই কুমিল্লা যেয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন।  সারা জীবন নিজের নিয়মে চলা মানুষ, নিজের নিয়মেই বাকি জীবন থাকতে চান।  সুলতানপুরী  বাধা দেয়নি।  বরং সময় পেলেই প্রায় প্রতিমাসে এক দুদিনের জন্য মাকে যেয়ে দেখে আসে।  অফিসের এই ঘটনার পর মন বিক্ষিপ্ত হয়ে ছিল।  শুক্রবারে মায়ের কাছে গেলো।  হামিদা বেগম ছেলেকে পেয়ে পুটপুট করে দিনদুনিয়ার গল্প শুরু করলেন।  গল্প না বলে অভিযোগ বলা  ভালো। ভাই, বোন  দোকানের কর্মচারী সবার নাম অভিযোগ।  আম্মার বয়স হচ্ছে।  দুনিয়ার কিছুই আর তার ভাল্লাগেনা মনে হয়।  মনে মনে ভাবে, “ভাগ্যিস আমার সাথে আম্মা থাকেনা।  আম্মা থাকলে সামিহার সাথে আমার সংসার টিকতোনা।  দিন দিন আরো খাইষ্টা হচ্ছে বুড়ি  …”

ক্যান যে মনে মনে বললো, মনে মনে যে সে ক্যান এখনো ভাবে  ধুর, নিজের চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছা হচ্ছে।  আম্মা সব বুঝছে, যেমন করে বুঝেছে আতিয়া আপা, যেমন করে বুঝেছে  অফিসের বস রহমত ভাই, উফফ। “বেজন্মা পোলা, বাপের মতন হইসোস, ফিসফিস করে আমারে গালি দিচ্ছস? সারাজীবন আমার রক্ত পানি করা টাকা খাইলি, আর এখন বউ বউ করোস।  তোর বউ তো একটা হারামজাদি, আমার ছেলেরে নষ্ট করসে  …”

আর পারা যাচ্ছেনা।  ঐদিন বিকেলে কাজ আছে বলে ঢাকায় ফিরে আসলো সুলতানপুরী।  শরীর খারাপ বলে অফিস ছুটি নিলো।  শেষ কবে টানা ২৪ ঘন্টা বাসায় ছিল সুলতানপুরী  মনে করতে পারেনা।  টানা দুইদিন বাসায় শুয়েই কাটালো।  বৌয়ের ধারেকাছে ও যাচ্ছেনা, নানা কায়দা করে। কখন কী বলে ফেলে মনে মনে।  গেস্টরুমেই দুইদিন শুয়ে ছিল।  সামিহা বিকেলে এসে খোঁজ নিলো, কী হইসে তোমার?সুলতানপুরীর  কপালে হাত রাখলো, ঠোঁট রাখলো।  এইসব ছলাকলা আবার সে খুবই ভালো পারে।  এরপর যা হওয়ার হলো।  সামিহার গলায় মুখ ঘষতে ঘষতে মনে হলো, নাহ জীবনটা আরামের।  একটু ঘরমুখী হতে হবে এখন।  এই বাইরের বাটপারদের সাথে কম মিশতে হবে।  মন নোংরা হয়ে যাচ্ছে। সামিহার কাছে থাকলেই মন শান্ত হয়ে যায় বরফের মতন।  আদর  করতে করতে  হাতটা সামিহার পেটের  কাছে নিয়ে মনটা  খারাপ হয়ে গেলো সুলতানপুরীর।  ভাবলো, “এমন থলথলা পেট হইসে মহিলার।  কাম কাজ না করে সারাদিন বাসায় বসে খেলে এমনই হয়।  কী ছিল আর কী হইসে।”  মুখে বুঝতে দিলো না যদিও।  প্রেমিক প্রেমিক হাসিটা ঝুলিয়ে আদর করতেই চেয়েছিলো, কিন্তু হলোনা।  তুলকালাম হলো সেদিন বাসায়।  “আমার চর্বি হইসে! আমি আরামে থাকি? হারামজাদা।  সারাদিন তোর সংসারের জন্য খেটে মরি।  বাটপার, তুই বাইরে কি কী করোস আমি জানিনা? নিজের চেহারা দেখসোস, ফকিরনীর পোলা…  ” 

চলছে। সুলতানপুরী অনেক বোঝাতে চেষ্টা করলো সে এগুলো বলেনি।  কিন্তু ওই যে একই কথা, ফিসফিস শুনতে পেয়েছে সামিহা। সামিহাকে সমস্যাটা খুলে বললো সব।  “গাঁজা খাইস নাকি? কী বলো এসব।”  ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো সামিহা তাকে।  

বাসার অশান্তি সামলাতে না পেরে দুদিন পর ফিল্ডট্রিপ নিয়ে বান্দরবান চলে গেলো সুলতানপুরী, একা ।  মাথা ঠান্ডা করা জরুরি।  ঘটনাগুলো বোঝা জরুরি। ফিল্ডের কাজ সেরে আরো দুইদিন কাটিয়ে আসলো। মারমাদের ভাষা, সংস্কৃতির বিকাশ  নিয়ে একটা প্রজেক্ট করছে।  কাজের বাইরে বেশিরভাগ সময় ওখানকার মানুষেরা তারা নিজেদের ভাষায় কথা বলতো।  সুলতানপুরী চুপ থাকতো। ওদের নিয়ে আলাদা করে ভাবেনি। শুধু একবার ওখানকার এক লোকাল এনজিওর কোর্ডিনেটর মহিলা যখন তার পাশে বসে ছিল দুপুরে খাবার সময়, সুলতানপুরী  এক ঝলক মনে মনে ভেবেছিলো, “কি সুন্দর ঠোঁট মহিলার।  কমলা লেবুর মতন। মনে হয়  ….”  মহিলা কটমট করে একবার তার দিকে তাকালো। উঠে অন্য টেবিলে বসলো খেতে।  এই মহিলা বাংলা জানে কি না সে নিশ্চিত না, ইনিও কি  ফিসফিস শুনলেন? তার নিজস্ব ভাষায়? কে জানে? জিজ্ঞেস করার মতন সাহস হয়নি।  একবার ভাবলো “সরি” বলে যাবে।  তারপর ভাবলো, কেন? মহিলা যদি উল্টো খেপে যায়।  তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসলো, অর্ধেকে খাওয়া প্লেটে রেখেই।  

একটা জিনিস সে নিশ্চিত, সে যখন কারো কাছে বসে, তখন তারা মনের কথা শুনতে পায়।  আর সেই মানুষকে নিয়ে ভাবা নোংরা কটু অশ্লীল কথাগুলোই শুনতে পায়। ভালো কিছু শুনতে পায়না।  আর সে খেয়াল করেছে, ভালো কথা মুখেই বলা হয়।  খারাপ কথাগুলো বলে মানুষ মনে মনে।  

একটা ঘরে অনেক মানুষ থাকলে সবাই বোধহয় তার মনের কথা  শুনতে পায়না। সে খেয়াল করেছে।  সবাইকে নিয়ে তো সে মনে মনে ভাবেও না। যাকে নিয়ে ভাবে শুধু সেই, যদি অনেক কাছে থাকে, তাহলে শুনতে পায়।  এর একটা বিহিত করতে হবে।  দূরে দূরে থাকতে হবে।  এবং মনে তালা দিতে হবে। এই ব্যাপারটা কীভাবে সম্ভব সে বুঝে উঠতে পারছেনা।  সে একজন কবি, তার উপর একজন মানুষ।  যথেষ্ট বুদ্ধিওয়ালা মানুষ।  মনে মনে সে ভাববেনা? আর মনের এই ভাবাভাবি কী কন্ট্রোল করা যায় নাকি? আজব।  

ঢাকায় ফিরে সে সামিহার কাছে মাফ চায়।  পুরো ঘটনাটা আরেকবার বোঝায়।  “দেখো এখন কিন্তু শুনতে পারছোনা কিছু তাইনা? কিন্তু আমি খারাপ বললেই শুনতে পারবা।”

“তো খারাপ ভাইবোনা।” 

“কী বল এটা? মানুষ সারাক্ষণ ভালো ভাবে? আমি কি সুফী সাধক? সুফী সাধকরাও  সারাক্ষণ ভালো ভাবতো? তুমি খারাপ কথা ভাবো না?”

“ডাক্তার দেখাও, নাজমার ভাই পাগলের ডাক্তার। উনাকে দেখাও।”

“আমি কি পাগল?”

” না আমি সেটা মিন করিনি, সাইক্রিয়াট্রিস্ট।”

সুলতানপুরী  স্পষ্ট বুঝতে পারে যে, সামিহা তাকে পাগল ভাবছে।  সে যায় ডাক্তারের কাছে, নাজমা না কার জানি ভাই।  নাজমা কে সে তাও  চিনেনা। তবু যায়। সামিহাই এপয়েন্টমেন্ট করে দেয়।  ভেতরে ভেতরে আজকাল খুব অসহায় লাগে। ডাক্তার কী বোঝে কে জানে।  বলে, “কই দেন তো গালি আমাকে, দেখি বুঝতে পারি কিনা।” 

“ভাই জোর করে গালি গালাজ করলে শুনবেন না।  পরীক্ষা করে দেখসি আমার স্ত্রীর উপর।”

ডাক্তার এক গাদা ঘুমের ওষুধ দেয়।  “ঘুম লাগবে আপনার।”

ধুর, অহেতুক সময় নষ্ট হলো সুলতানপুরীর। চেম্বার থেকে বের হওয়ার সময় ভুলে গালি দেয়, মনে মনে,  “শুয়োরের বাচ্চা, এত্ত গুলান টাকা নিলো, কোন কাজের না।”

ডাক্তার প্রায় বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে।  সে দ্রুত বের হয়ে আসে। বাসায় ফিরে দেখে সামিহার মুখ কালো।  বলে, “আলম ভাই বলছে তোমার মধ্যে পাগলামি দেখা দিয়েছে।  তুমি উনাকেও ফিসফিস করে গালি দিসো?”

“আলম ভাই কে?”

“কী বলো এসৱ।  ডাক্তার, নাজমার ভাই। যাকে মাত্র দেখায় আসলা।  উনি ফোন করসিলো  … ”  

সুলতানপুরী চুপ করে থাকে।  গেস্টরুম ছেড়ে বের হয়না আজকাল। অফিস যায় কয়েক ঘন্টার জন্য।  এই সেই বলে বের হয়ে আসে।  যতক্ষণ থাকে, মনের মধ্যে তালা মেরে রাখার চেষ্টা করে।  এটা কী সম্ভব!অসহ্য। এর মধ্যে অনিন্দ্যদা নানাজনকে দিয়ে খবর পাঠিয়ে পাগল করে দিচ্ছে।  না গেলে আর চলছেনা।  নিজেকে প্রস্তুত করে বুঝিয়ে সুঝিয়ে যায়।  এভাবে তো আর চলতে পারেনা।  মনে মনে কী বলছে সে ব্যাপারে খুব খেয়াল রাখার চেষ্টা করছে।  

অনিন্দ্যদা তাকে সামনে বসিয়ে ধুমায় গালি দিচ্ছে।  তার পাশে নতুন কিছু চেলা চামুন্ডাও আছে।  সুলতানপুরী নাকি কী এক সাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছে।  দুই লক্ষ টাকা।  তার বই “অচিনপুরের সূর্য” বইটার জন্য।  অনিন্দ্যদা নিশ্চিত সুলতানপুরী লবিং করে পুরস্কার পাচ্ছে।  সুলতানপুরী এতো  ক্লান্ত মনে মনে, এতটুকুও বলে না যে, সে পুরস্কারের ব্যাপারে কিছুই জানতো না। মাত্র শুনেছে। আর মনের এসব স্বাভাবিক ভাবনা তো  কেউ শুনতেও পায়না। হায়রে।  

অনিন্দ্যদা বলেই  যাচ্ছে,”সুলতান বেশি বাড়ছো তুমি না? আজকে তোমারে এখানে আমি আনছি।  এই যে চাকরি করো, কেমনে পাইসো? এই পুরস্কার এবার আমার পাওয়ার কথা। আমারে ল্যাং মেরে পুরস্কার নিবা? এতো সহজ? অনিন্দ্য জহিররে চেনোনি।  আমি এখন বাংলার শ্রেষ্ঠ কবি।”

আর পারেনা সুলতানপুরী।  তার মন বলে ওঠে, “শালার পুৎ তোর নাম হইলো জহিরুদ্দিন মওলা।  নাম লুকায় কবি হস।  অনিন্দ্য উচ্চারণ করতে পারিস তুই? তোর  কবিতা হয়? কুত্তার পায়খানা এরচেয়ে ভালো।  তুই পুরস্কার পাবি কেমনে?”

এর পরের কথা সুলতানপুরীর আর মনে নাই।  সে অজ্ঞান হয়ে পরে গিয়েছিলো।  বাসায় কে দিয়ে গিয়েছে সেটা সে জানেনা।  সে শুনেছে, অনিন্দ্য জহিরের এক আধ্যাত্মিক ক্ষমতা আছে।  সে মানুষের মনের কথা বুঝতে পারে।  সেদিন সুলতানপুরীর মনের কথা সবার সামনে বলে দেয়।  সুলতানপুরী নিজেও স্বীকার করে যে সে এসব বাজে কথা বলেছে, তারপর ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়।  

পুরস্কারের দিন সুলতানপুরে একাই যায়।  সামিহা যেতে চায়না।  দূরে দূরে থাকে আজকাল।  বাপ মায়ের বাড়িতেই বেশির ভাগ সময় থাকে।  পাগল স্বামীর সাথে আর কে থাকে? পুরস্কার নিতে যাওয়ার আগে, আম্মাকে ফোন দেয়।  “আম্মা তুমি কী আমার উপর রাগ করে আছো?”

আম্মা একটুও রাগ করে নাই।  কাঁদে, খুব কাঁদে, “তোর বাপ মরার পর, পীরজির দরগায় আর যাইনি। তাঁরে অসম্মান করসি। সেই বদ দোয়ায় আজকে তোর এই অবস্থা নাকি রে আব্বা আমার  …”

পুরস্কার অনুষ্ঠানে যেয়ে চুপ করে কোণায় বসে থাকে।  প্রায় চোখ বন্ধ করেই পুরস্কার নেয়।  কখন কী ভেবে ফেলে, কে কী শুনে ফেলে।  আতিয়া আপার সাথে দেখা হলো খানিকটা দূর থেকে।  আপা কথা বলেনা।  তবে হাতে পায়ের নখে ঘন লাল নেইলপলিশ মাখা।  অনেক দূরে বসে ভাবে,  “যাক একটা ভালো কাজ তো হলো।  গন্ডারের নখ আর কাউকে দেখতে হবে না।”  অনিন্দ্যদা নাকি দেশের বাইরে। অনুষ্ঠানে আসেনি।  কত মানুষ সুলতানপুরীকে খুঁজছে। সেলফি তুলবে, অটোগ্রাফ নিবে।  মন সামাল  দিতে দিতে সুলতানপুরী বড্ড অসহায় বোধ করে।  এমন বাকহীন জীবন দিয়ে সে কী করবে? অনুষ্ঠানের মাঝখানে বেরিয়ে চলে আসে।  

সেদিনের পর সুলতানপুরীকে আর দেখা যায়নি কোনদিন। সামিহাকে ফোন করেছিলো, “আমি একটু ঢাকার বাইরে যাই বুঝলা।”  “আচ্ছা” বলে ফোন রেখে দিয়েছিলো সামিহা।  অফিসে একটা ইস্তফা ইমেইল পাঠিয়ে দিয়েছিলো।  তারপর হাওয়া।  কেউ  তাকে আর খোঁজেনি।  সুলতানপুরীর নামে কোন হারানো বিজ্ঞপ্তিও হয়নি। যারা তাকে খুঁজেছে পায়নি,  তার ফোন নম্বর বন্ধ, ইমেইল নেই, ফেসবুক নেই, কিচ্ছু নেই। এমনকি দুই লক্ষ টাকার পুরস্কারের চেকটাও সে ব্যাংকে  জমা করেনি।  সে এ শহরে নেই,  তার গল্প দুদিন পর মানুষ ভুলে গিয়েছিলো প্রায়।  

শুধু মাঝে মাঝে “বোবা মন”  নামে এক কবি কবিতা পাঠায় হলুদ খামে,  বিভিন্ন পত্রিকা অফিসে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।  এমন কবিতা নিসর্গের গভীরে না থাকলে লেখা যায়না।  এমন এক কবির জন্যই নাকি সবাই অপেক্ষা করছিলো।  সে কবির কবিতা ছাপা হয় দেশের সাহিত্য পাতায়। ছাপা হলে হই হই আলোচনা হয়  কবি আর পাঠকদের মাঝে ।  আহা এমন কবিতা কে লিখতে পারে? সে কই? সে কখনো লেখার সম্মানী চাইতে আসেনা।  তার কোন ঠিকানা জানা নেই।  তার কবিতা পড়লে কিছু পাঠকের হঠাৎ করে মনে হয়, আহ সুলতানপুরী বলে এক কবি ছিল।  সেও  দারুণ  কবিতা লিখতো।  তারপর আবার ভুলে যায় সবাই, সব।  সবাই ” বোবা মন” এর কবিতা পড়বার অপেক্ষায় থাকে।  এমন কবিতা কেউ আগে কখনো পড়েনি।  

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত